আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ধারাবাহিক নাশকতায়  রেল যোগাযোগ বিপর্যস্ত

বৃহস্পতিবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় চলন্ত ট্রেনে হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে অবরোধকারীরা। ঢাকা-ময়মনসিংহ রুটে ট্রেন চলাচল শুরু হলেও প্রায় ১১ বন্ধ থেকেছে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেল যোগাযোগ। রেললাইনের ফিসপ্লেট উপড়ে ফেলা হয়েছে লালমনিরহাটে। আর লাইন উপড়ে ফেলায় রেল চলাচল ব্যাহত হয়েছে বগুড়ায়।
রাজধানীর কমলাপুর রেল স্টেশনের ব্যবস্থাপক খায়রুল বশীর জানান, বেলা ১২টা পর্যন্ত দেশের সব রুটে ট্রেন ছাড়া হলেও ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-ময়মনসিংহ রুটে কোনো ট্রেন যায়নি।

আর যেসব রুটে ট্রেন ছাড়া হয়েছে সেগুলোও চলছে ধীর গতিতে।
ট্রেনের ধীর গতির কারণ সম্পর্কে খায়রুল বশীর বলেন, “প্রথমত সতর্কতা। যাত্রীর নিরাপত্তাতো আছেই। কারণ ট্রেন লাইনের কোথায় কী অবস্থা তা রাতে বা দিনে বোঝা যায় না। এছাড়া অনেক ক্ষেত্রে সিগন্যাল পেতে দেরি হচ্ছে।


নাশকতা ঠেকাতে রেললাইনজুড়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
দেশের বিভিন্ন স্থানে রেললাইনে নাশকতার কারণে রেলের সূচিতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে বলে কর্মকর্তারা জানান।
গত মঙ্গলবার থেকে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের এই অবরোধের মধ্যে সারা দেশে রেলপথ লক্ষ্য করে ব্যাপক নাশকতা চালানো হচ্ছে। বিভিন্ন স্থানে লাইন উপড়ে ফেলায় এবং ফিসপ্লেট খুলে ফেলায় দুর্ঘটনায় পড়েছে বেশ কয়েকটি ট্রেন।
কয়েকটি ট্রেনে হামলা চালিয়ে আগুনও দিয়েছে অবরোধকারীরা।

   
ব্রাহ্মণবাড়িয়া
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা সিলেটগামী পারাবত ট্রেনকে লক্ষ্য করে চারটি হাতবোম ছুড়েছে অবরোধকারীরা। এ ঘটনায় দুজনকে আটক করা হয়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেশন মাস্টার অমৃত লাল সরকার জানান, বৃহস্পতিবার বেলা সোয়া ১১টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া স্টেশন থেকে সিলেটের উদ্দেশ্যে যাত্রা করার পর রেলগেট পার হওয়ার সময় এ ঘটনা ঘটে। তবে ট্রেনের জানালা বন্ধ থাকায় এতে কেউ হতাহত হয়নি।
বিস্ফোরণের পরপর টহলরত বিজিবি সদস্যরা দুই যুবককে আটক করে।


সদর মডেল থানার সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) শফিকুল ইসলাম জানান, ঘটনার পর রেলগেট এলাকায় পুলিশ পাঠানো হয়েছে।
লালমনিরহাট
লালমনিরহাট সদর উপজেলার মহেন্দ্রনগরে রেললাইনের ফিসপ্লেট খুলে ফেলায় প্রায় পাঁচ ঘন্টা ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকে।
মহেন্দ্রনগরের স্টেশন মাস্টার ওমর আলী জানান, অবরোধকারীরা স্টেশনের কাছেই লাইনের ফিসপ্লেট খুলে ফেলায় বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
পরে লাইন মেরামত শেষে বেলা ১টার দিকে ফের ট্রেন চলাচল শুরু হয় বলে জানান লালমনিরহাট রেলওয়ের বিভাগীয় ট্রাফিক সুপারিনটেন্ড মুস্তাফিজুর রহমান।
স্টেশন মাস্টার ওমর আলী জানান, সকালে রেল চলাচল বন্ধ থাকায় জেলার তিনটি স্টেশনে পাঁচটি লোকাল ট্রেন আটকা পড়ে।

পার্বতীপুর থেকে দিনাজপুরগামী তিনটি ট্রেন লালমনিরহাট স্টেশনে, বুড়িমারি থেকে দিনাজপুরগামী একটি ট্রেন মহেন্দ্রনগর স্টেশনে এবং লালমনিরহাটগামী আরেকটি ট্রেন কিউনিয়ায় দাঁড় করিয়ে রাখা হয়।
এদিকে মহেন্দ্রনগর রেল স্টেশন এলাকায় অবরোধকারীদের সঙ্গে পুলিশের কয়েক দফা সংঘর্ষ হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে  রাবার বুলেট ও কাঁদুনে গ্যাসের শেল ছোড়ে পুলিশ।
সদর থানার ওসি জমির উদ্দিন সরকার  বলেন, মহেন্দ্রনগরের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশের পাশাপাশি বিজিবি ও র‌্যাব মোতায়েন করা হয়েছে।
বিরোধী দলের অবরোধের প্রথম দুই দিনও মহেন্দ্রনগর স্টেশনে ভাংচুর ও রেলপথ অবরোধের ঘটনা ঘটে।


কুমিল্লা
রেললাইনের ফিসপ্লেট খুলে ফেলায় কুমিল্লার অশোকতলায় উদয়ন এক্সপ্রেস লাইনচ্যুত হওয়ায় প্রায় ১১ ঘণ্টা  চট্টগ্রামের সঙ্গে ঢাকা ও সিলেটের রেল যোগাযোগ  ব্যাহত হয়।
লাইনচ্যুত ট্রেন উদ্ধার ও লাইন মেরামত শেষে বৃহস্পতিবার  বেলা সাড়ে ১২টায় এই পথে ফের ট্রেন চলাচল শুরু হয় বলে কুমিল্লা রেলওয়ের স্টেশনের ভারপ্রাপ্ত মাস্টার শফিকুর রহমান।
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম থেকে সিলেটগামী উদয়ন বুধবার রাত দেড়টায় দিকে অশোকতলা লেভেল ক্রসিং এলাকায় পৌঁছানোর পর ট্রেনের ইঞ্জিন ও দুটি বগি লাইনচ্যুত হয়।
ফলে তাৎক্ষণিকভাবে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও চট্টগ্রাম-সিলেট পথে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
এদিকে লাইন বন্ধ থাকায় চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা ঢাকা মেইল লাকসাম এবং তূর্ণানিশিথা ফেনী স্টেশনে আটকা পড়ে।


বগুড়া
রেললাইন উপড়ে ফেলায় বগুড়ায় আট ঘণ্টা ট্রেন চলাচল ব্যাহত হয়।
বগুড়া রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির এসআই বিমল কুমার জানান, বুধবার গভীর রাতে বগুড়ার সাবগ্রামের ছাতিয়ান তলায় ৭২ ফুট রেললাইন উপড়ে ফেলে দুর্বৃত্তরা।
এ কারণে রাত ১টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত বগুড়ার সঙ্গে লালমনিরহাট ও সান্তাহারের রেল চলাচল বন্ধ থাকে।   
বগুড়া রেল স্টেশনের সুপারিনটেনডেন্ট বেলাল আহমেদ জানান, লাইন মেরামত করার পর সকাল সোয়া ৯টার দিকে ওই রুটে পুনরায় ট্রেন চলাচল শুরু হয়।
এদিকে রেল চলাচল বন্ধ থাকায় লালমনিরহাট এক্সপ্রেস, করতোয়া এক্সপ্রেস, রংপুর এক্সপ্রেস ও একটি লোকাল ট্রেন আশপাশের চারটি স্টেশনে আটকা পড়ে।


গাজীপুর
রেললাইনের নাট-বোল্ট ও ক্লিপ খুলে ফেলায় মঙ্গলবার রাতে গাজীপুরের শ্রীপুরে ট্রেন লাইনচ্যুত হওয়ার ৩৭ ঘণ্টা পর ঢাকা-ময়মনসিংহ পথে ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে।
জয়দেবপুর রেলওয়ে জংশনের মাস্টার মো. জিয়া উদ্দিন সরদার  জানান,  লাইনচ্যুত বগি ও রেললাইন মেরামত শেষে বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে জয়দেবপুর থেকে একটি কমিউটার ট্রেন জামালপুরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে গেছে।
নির্বাচনের তফসিল প্রত্যাখ্যান করে গত মঙ্গলবার ভোর ৬টা থেকে সারা দেশে সড়ক, রেল ও নৌপথ অবরোধের ডাক দেয় বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দল।
এরপর ওই দিন রাত সোয়া ১০টার দিকে শ্রীপুরের বনখড়িয়া এলাকায় লাইনচ্যুত হয় অগ্নিবীণা এক্সপ্রেসের ইঞ্জিন ও পাঁচটি বগি। রেললাইনের ফিসপ্লেটের নাট-বোল্ট এবং প্রায় ২৫০টি পিন খুলে রাখায় ট্রেনটি লাইনচ্যুৎ হয় বলে কর্মকর্তারা জানান।


এর পর থেকে ঢাকা-ময়মনসিংহ রুটে চলাচলকারী তিস্তা এক্সপ্রেস, ভাওয়াল এক্সপ্রেস ও কমিউটারসহ সব ধরনের ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

সোর্স: http://bangla.bdnews24.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।