আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গুচ্ছ পরিক্ষা সিলেটী আর নন সিলেটী কোনো ইস্যু নয়। এটা হচ্ছে ন্যায় এবং অন্যায়ের বিষয়।



গুচ্ছ পরিক্ষার মাধ্যমে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সিদ্বান্ত সিলেটবাসীর জন্য আত্মঘাতী । আমরা কেন গুচ্ছ পরিক্ষার বিরুদ্ধে কথা বলতেছি তা কিছু মাথা মোটা লোকেরা বুঝেনি অথবা বুঝে ও না বুঝার ভান করতেছে বিশেষ কোন স্বার্থে। । গুচ্ছ পরিক্ষার মাধ্যমে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে যদি বুয়েট,কুয়েট অথবা চুয়েট এর পরিক্ষা হত তাহলে আমাদের তেমন আপত্তি ছিলো না কিন্তু তা না করে যশোরকে আমাদের সাথে দেওয়ায় কারা লাভবান হলো। যশোরে শাবিপ্রবির মত এত ভালো বিষয় নাই।

শাবিপ্রবিতে যেখানে ৪৯০০০ পরিক্ষার্থী পরিক্ষা দিবে সেখানে যশোরে মাত্র ৫০০০ জন পরিক্ষার্থী পরিক্ষা দিবে। অথচ যশোরের ছাত্ররা সেখান থেকে পরিক্ষা দিয়ে শাবিপ্রবিতে ভর্তি হতে পারবে। (A.R.C) সিলেটের শতকরা ৭৫% ছাত্রছাত্রী বাহিরের বিভাগের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরিক্ষা দেয় না। তার অনেক কারন আছে। সিলেটের ছাত্রছাত্রীদের যদি যশোরের সব চাইতে ভালো বিষয় দেওয়া হয় তার পরও তারা সেখানে যাবে না নানা কারনে।

আর এই সুযোগটাকে কাজে লাগানোর জন্যই মরিয়া হয়ে উঠেপরে লেগেছেন আমাদের জাফর ইকবাল স্যার। কারন তিনি নাকি কথা দিয়েছিলেন যেকোন মূল্যে যশোরের শিক্ষার্থীদের সুযোগ করে দিবেন শাবিপ্রবিতে ভর্তির। আমরা জানি কেন তার এতটান যশোরের জন্য। সিলেটের শতকরা ৭৫% ছাত্রছাত্রী শাবিপ্রবিতে ভর্তি পরিক্ষা দিয়ে যোগ্যতা অনুযায়ী স্থান করে নেয় এই বিশ্ববিদ্যালয়ে। কিন্তু যশোরের সাথে গুচ্ছ পরিক্ষায় মারাত্নক ক্ষতিগ্রস্ত হবে সিলেটের শিক্ষার্থী পক্ষান্তরে লাভবান হবে যশোরের শিক্ষার্থী ।

তাই দলমত ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকল সিলেটীদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন করতে হবে। সাধারন নিরপেক্ষ লোকদের বুঝার স্বার্থে কিছু তত্ব দিলাম। শাবিপ্রবি প্রতিষ্ঠা হয়েছে ১৯৮৭ সালে আর যবিপ্রবি প্রতিষ্ঠা হয়েছে ২০০৭ সালে। অর্থাৎ শাবিপ্রবি যেখানে প্রতিষ্ঠিত হয়ে বিরদর্পে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে সেখানে যবিপ্রবি মাত্র পথচলা শুরু করেছে। বাংলাদেশের একটি বিশ্ববিদ্যালয় উন্নতি করুক আমরাও তা চাই।

কিন্তু তাই বলে আমাদের নিজেদেরকে বিসর্জন দিয়ে তো আমরা যবিপ্রবিকে তুলে ধরতে পারি না। আপনারা যারা গুচ্ছ পদ্ধতির পক্ষে আর আমাদের বিপক্ষে দন্ডায়মান হয়েছেন তারা হয়তো প্রশ্ন করবেন যে এখানে বিসর্জন দেওয়ার কি হল? বলি কি ভাই, আপনি কি তবে চোখ বন্ধ করেই গুচ্ছ পদ্ধতির পক্ষে আন্দোলনে নামলেন ? ভর্তি পরীক্ষার সার্কুলারটা কি ভালভাবে পড়েছিলেন? মনে হয়তো পড়েন নি। *** পড়লে তো আপনাদের লক্ষ করার কথা, যে মাতৃভাষা বাংলার জন্য অগণিত মানুষ মিছিলে নেমেছিলেন আর জীবন দিয়েছিলেন সেই বাংলা ভাষার কোনো ডিপার্টমেন্ট যবিপ্রবি তেই নেই অথচ তা আমার শাবিপ্রবিতে আছে। *** এরপর আপনাদের কি আরও দৃষ্টি আকর্ষণের প্রয়োজন আছে, থাকলে আরও যেনে নিনঃ 1. শাবিপ্রবিতে “B” – UNIT, এ আর্কিটেকচার বিষয় আছে যা যবিপ্রবি তে নেই। 2. শাবিপ্রবিতে “A” – UNIT, এ বিবিএ, ইকোনোমিক্স বিষয় আছে যা যবিপ্রবি তে নেই।

আমি জানি আপনারা এতেও সন্তুষ্ট নন। আপনাদের কে আরও জানাতে চাই যে, শাবিপ্রবিতে “B” UNIT এ CEE,FET,GEE,BMB এবং “A” UNIT এ SOC,PSS,PAD,ANP,SCW বিষয়গুলো আছে যা যবিপ্রবিতে নেই … আপনারাই বলুন যেই বিশ্ববিদ্যালয়ে এত নেই আর নেই এর সমাহার তার সাথে কি করে শাবিপ্রবিকে মেলানো সম্ভব? শাবিপ্রবিতে “B” UNIT এ আসন সংখ্যা ৮০০ আর যবিপ্রবিতে আসন সংখ্যা মাত্র ৫৪০। আমি ভাল করেই জানি আপনারা একেও এড়িয়ে যাবেন, কিন্তু আপনারাই ধাক্কা খাবেন আরেকটা কথা যদি বলি, “A” UNIT এ যেখানে ৬০০ আসন সেখানে যবিপ্রবিতে মাত্র, মাত্র এবং মাত্র ৭০ টি আসন। ( “মাত্র” শব্দটি তিনবার লেখা লাগছে কারণ পাবলিক ভার্সিটিতে যেখানে একটা সিট পাওয়াই মানে সোনার হরিণ পাওয়া সেখানে আপনারা আসন সংখ্যার সমস্যায় জর্জরিত যবিপ্রবি’র সাথে আমাদের মেলাচ্ছেন। ) এরপর আসা যাক অন্য কথায়, আপনারা সবাই বলছেন ভার্সিটিটা কি সিলেটীদের বাপের সম্পত্তি যে তারা বললেই গুচ্ছ পদ্ধতি বাতিল করতে হবে ? বলি ভাই, ভার্সিটিটা কি শুধু কতিপয় স্যার আর শাবিপ্রবি’র কতিপয় বর্তমান ছাত্রছাত্রীদের সম্পত্তি ( সব ছাত্রছাত্রীদের বলছি না ) যারা একটা অন্ধ ধারণার মাঝে আছেন।

শাবিপ্রবি প্রশাসন প্রথমে গুচ্ছ পরীক্ষা বাতিল করলেন আর যখনই মাননীয় ও শ্রদ্ধেয় জাফর ইকবাল স্যার পদত্যাগ করলেন ও শাবিপ্রবি’র বর্তমান কতিপয় ছাত্রছাত্রীরা আন্দোলন করলেন আপনারা আবার গুচ্ছ পদ্ধতি পুর্নবহাল করলেন। তাহলে তো বলতে হবে ভাই শাবিপ্রবি’র উপরে কারও কোনো অধিকার নাই, আপনারাই বিশ্ববিদ্যালয়ের মা-বাপ। এরপর আসছি অন্য আরেকটি কথায়, আপনারা আপনাদের গুচ্ছ পদ্ধতির দাবি নিয়ে বৃদ্ধ থেকে শুরু করে স্কুল ও কলেজের বাচ্চাদের মগজ যে ধোলাই করতে শুরু করেছেন, ভাই আপনাদেরই বলছি আপনারা নিজেরাই আসলে বিভ্রান্ত। শুধু শুধু এসব উল্টা-পাল্টা জিনিস বুঝিয়ে স্কুল কলেজের বাচ্চা গুলোকে আপনাদের দাবি’র পক্ষে এনে বিভ্রান্ত করবেন না। বাস্তবতা বোঝার চেষ্টা করুন।

পরীক্ষার হলে নিশ্চই আপনি নিজে না লিখে আপনার পিছের মানুষটির খাতায় লিখে দিবেন না? যদি দেন তবে বুঝতে হবে আপনার অসৎ উদ্দেশ্য আছে। আর যদি অসৎ উদ্দেশ্য থেকে থাকেই তবে জেনে নিন বাঙ্গালী জাতি প্রয়োজনে জান দিয়ে দিবে তারপরও আপনাদের এতবড় অসৎ উদ্দেশ্য সফল হতে দিবে না। কারণ আমরা আমাদের প্রাণপ্রিয় শাবিপ্রবি’র নিম্নগমন কখনোই নিজ চোখের সামনে দেখতে পারব না। পরিশেষে বলব, আপনারা যদি সমন্বিত পরীক্ষা নিতে চান তবে মেডিকেলের মত সব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়কে একসাথে করে পরীক্ষা নিন। হুট করে দেশের অন্যতম প্রাচীন ও নামকরা একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে মাত্র কয়েক বছর আগে প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের গুচ্ছ পদ্ধতির পরীক্ষা কোনো ভাবেই গ্রহণ যোগ্য হতে পারে না এবং তা শাবিপ্রবি’র সফলতা ও গৌরবজনক অতীতকে অবশয়ই প্রশ্নবিদ্ধ করবে।

আর একটা জিনিস পরিষ্কার করে বলতে চাই, এটা সিলেটী আর নন সিলেটী কোনো ইস্যু নয়। এটা হচ্ছে ন্যায় এবং অন্যায়ের বিষয়। আমরা ন্যায় বিচারের জন্য সোচ্চার হয়েছি আর আপনারা যারা বুঝতে পারছেন না বা বিভ্রান্তির মাঝে আছেন তারা আমাদের ভুল মনে করছেন।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।