আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আবার সংকটের মুখে থাইল্যান্ড

আবার সংকটের মুখে পড়ল থাইল্যান্ড। আবার বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে রাজধানী ব্যাংকক। চলতি সপ্তাহের কয়েক দিন ধরে ব্যাংককের রাস্তায় রাস্তায় হাজারো মানুষ বিক্ষোভ করে। একপর্যায়ে বিরোধী দলসহ সাধারণ মানুষের আন্দোলনের মুখে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে ক্ষমতাসীন দল পুয়ে থাই পার্টি (পিটিপি)।
সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীরা বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের পাশাপাশি সামরিক ও পুলিশ বাহিনীর ঘঁাটি এবং টেলিভিশন চ্যানেল দপ্তরের সামনে বিক্ষোভ করে।

প্রধানমন্ত্রী ইংলাক সিনাওয়াত্রাকে ক্ষমতাচ্যুত করতে প্রয়োজনে রাজধানী ব্যাংককে আরও প্রতিষ্ঠান অবরোধের হুমকি দিয়েছে বিরোধীরা। ২০১০ সালের পর থাইল্যান্ডে এটিই সবচেয়ে বড় গণবিক্ষোভ।
২০১০ সালে থাইল্যান্ডে গত কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ রাজনৈতিক সংঘাত হয়। এতে অন্তত ৯০ জন প্রাণ হারায়। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ইংলাক সিনাওয়াত্রার ভাই সাবেক প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রা ২০০৬ সালে এক অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হন।

এর পর থেকে দেশটি দফায় দফায় রাজনৈতিক অস্থিরতার মুখে পড়ে।
এবারের বিক্ষোভের মূল কারণ থাকসিনের বোন ইংলাকের ক্ষমতাসীন পিটিপি বিতর্কিত বিল পাসের উদ্যোগ। রাজনৈতিক দায়মুক্তির বিলটি পাস হলে দলটির সাবেক নেতা থাকসিন সিনাওয়াত্রা নির্বাসন থেকে দেশে ফিরে আসার পথ উন্মুক্ত হতো। ওই বিতর্কিত বিলের কারণে বিরোধী দলসহ সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। থাইল্যান্ডের পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ সিনেট বিলটি প্রত্যাখ্যান করেছে।

কিন্তু তার পরও সরকারবিরোধী আন্দোলন থামছে না।
ব্যাংকক চুলালংকর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক বিশ্লেষক থিটিনান পংসদহিরাক বলেন, বিক্ষোভ এখন এতটাই বড় আকার ধারণ করেছে যে সরকারের নীতিনির্ধারণের ক্ষেত্রে এটি সরাসরি অংশ নিতে না পারলেও প্রভাব রাখতে সক্ষম। তিনি মনে করেন, নতুন নির্বাচন ঘনিয়ে আসছে।

বিরোধী দল ডেমোক্রেটিক পার্টি সরকারের দিকে বেশ কয়েকটি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ইংলাক সিনাওয়াত্রাকে সরকারের নীতি নিয়ে বিতর্কে অবতীর্ণ হতে হবে।

এ ছাড়া ইংলাকের দল পিটিপির ছয় হাজার ৯০ কোটি মার্কিন ডলার ব্যয়সাপেক্ষ অবকাঠামো উন্নয়ন পরিকল্পনা নিয়ে অভিযোগের মোকাবিলা করতে হবে।

চিয়াং মাই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্লেষক পল চেম্বারস বলেন, আদালতের নির্দেশ দেশের ক্ষমতা থেকে আইনের মাধ্যমে পিটিপিকে সরিয়ে দেওয়ারই ইঙ্গিত। ক্ষমতা থেকে ধীরে ধীরে দূেরে সরে যাচ্ছে দলটি।

১৯৩২ সালে সাংবিধানিক রাজতন্ত্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার পর থাইল্যান্ডে এ পর্যন্ত ১৮টি অভ্যুত্থান বা অভ্যুত্থানের উদ্যোগ হয়েছে। তবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রার সময়ে স্থিতিশীলতা আসে।

দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল ও খেটে খাওয়া মানুষের মধ্যে টেলিকম ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদ এই প্রধানমন্ত্রীর ব্যাপক সমর্থন ছিল। ওই সমর্থকেরা লাল শার্ট পরে সমাবেশে যোগ দেয় বলে তাদের নাম হয়ে যায় লাল শার্ট। তবে ধনকুবের থাকসিনের শত্রুরও অভাব ছিল না। তাদের মধ্যে শীর্ষে ছিল অভিজাত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষ। তারাই থাকসিনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনেছিল।

সামরিক বাহিনীর সমর্থনে থাকসিনবিরোধীরা হলুদ শার্ট হিসেবে একজোট হয় এবং অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করে। দেশের বাইরে নির্বাসিত হন থাকসিন।

অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ের নির্বাচনেও জয়ী হয় পিটিপি। কারণ অভিজাত সমাজ-সমর্থিত ডেমোক্রেটিক পার্টি দু্ই দশকেও উল্লেখযোগ্য ভোট অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে। থাকসিনের দল ও তঁার শরিকেরা সিংহভাগ ভোট অর্জনে সক্ষম।

পিটিপির বর্তমান প্রধান থাকসিনের বোন ইংলাকের ২০১৫ সালে নির্বাচন দেওয়ার কথা রয়েছে।

থাইল্যান্ড বিশ্লেষক পল চেম্বারসের মতে, থাইল্যান্ডের সব ভোটারের মধ্যেই নিঃসন্দেহে ব্যক্তি হিসেবে থাকসিনই বেশি জনপ্রিয়। তবে তঁার দল পিটিপি অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে বর্তমানে কম জনপ্রিয়।

থাইল্যান্ড পর্যবেক্ষক সিঙ্গাপুরের ইনস্টিটিউট অব সাউথইস্ট এশিয়া স্টাডিজের বিশ্লেষক মাইকেল মন্টেসানোর মতে, সরকারবিরোধী বিক্ষোভ ও লাল শার্টধারীদের কিছু অংশের ক্ষোভ এটাই বোঝাচ্ছে যে বর্তমান সরকার– সমর্থকদের এক বিশাল অংশের সন্তুষ্টি ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়েছে।

সূত্র: এএফপি

 



সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.