আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নির্বাচনকালীন সরকারের শুরুতে অস্থির প্রশ

নির্বাচনকালীন সরকারের শুরুতে প্রশাসনে পদোন্নতি ও পদায়নবঞ্চিত কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্ষোভ অসন্তোষ বিরাজ করছে। দীর্ঘদিন ধরে পদোন্নতি ও পদায়নবঞ্চিত কর্মকর্তারা সরব হয়ে ওঠায় এক ধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে। এ ক্ষোভ, অসন্তোষ এবং অস্থিরতা ধীরে ধীরে প্রকাশ্যে রূপ নিচ্ছে। ইতোমধ্যে গত বুধবার বঞ্চিতদের মধ্য থেকে কিছু কর্মকর্তা মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও জনপ্রশাসন সচিবের সঙ্গে দেখা করে তাদের ক্ষোভের কথা জানিয়েছেন। দাবি জানিয়েছেন পদোন্নতি ও পদায়নের। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, বঞ্চিত কর্মকর্তারা এখন থেকে নিয়মিত মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও জনপ্রশাসন সচিবের সঙ্গে দেখা করে তাদের দাবি জানানো অব্যাহত রাখবেন।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব আবদুস সোবহান সিকদার গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, পদোন্নতিবঞ্চিত কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্ষোভ-অসন্তোষ থাকতেই পারে। বঞ্চিত কর্মকর্তারা আগেও দেখা করেছেন। এখনো করছেন। ভবিষ্যতেও করতে পারেন। তবে নিয়মিত দেখা করার ক্ষেত্রে তাদের দেখা করার ধরন এবং বক্তব্য বুঝে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ নিয়ে প্রশাসনে অস্থিরতা দেখানোর কিছু নেই। কারণ বঞ্চিত হঠাৎ করে হচ্ছে না। এটা দীর্ঘ দিন ধরে চলে আসছে। তাছাড়া সবাইকে তো পদোন্নতি দেওয়া যায় না বা সবাই পদোন্নতি পায় না। ১৯৯৬ সাল থেকে প্রশাসনে এরকম একটি রেওয়াজ প্রচলিত হয়ে আসছে যে, নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় দায়িত্ব নেওয়ার শুরুতেই প্রশাসনে বড় ধরনের রদবদল করে থাকেন। একই সঙ্গে রাজনৈতিক কারণে দীর্ঘদিন পদোন্নতি এবং পদায়নবঞ্চিত কর্মকর্তাদের বিষয়টি গুরুত্বসহকারে বিবেচনায় নিয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হয়। কিন্তু এবারই এর ব্যতিক্রম ঘটেছে। সূত্র জানায়, নির্বাচনকালীন বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বড় ধরনের কোনো রদবদলের ঘটনা ঘটেনি। এমনকি দীর্ঘদিন ধরে যারা পদায়নবঞ্চিত তাদেরকেও পদায়নের কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি। প্রশাসনের বঞ্চিত কর্মকর্তারা বলছেন, দীর্ঘদিন বঞ্চিত থাকার পর তারা নির্বাচনকালীন সরকারের অপেক্ষায় থাকেন। এই সরকারের সময়েই তাদের ভাগ্য খুলে। কিন্তু এবারই তার ব্যতিক্রম। তারা এখন পর্যন্ত প্রশাসনের উচ্চপর্যায় থেকে কোনো রকম সাড়া পাননি। এই অবস্থায় গত বুধবার একজন ওএসডি সচিবের নেতৃত্বে অন্তত অর্ধশত কর্মকর্তা মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব সোবহান সিকদারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাদেরকে পদোন্নতি ও পদায়নের দাবি জানান। কিন্তু দুই সচিবের কারও পক্ষ থেকেই তারা কোনো ইতিবাচক সাড়া পাননি। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এরকম একজোট হয়ে কর্মকর্তাদের দাবি জানানোর ঘটনাও ঘটেনি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দফায় দফায় পদোন্নতিবঞ্চিত একজন যুগ্ম-সচিব বলেন, আমরা একেবারেই হতাশ। এই অবস্থায় দাবি আদায়ে আন্দোলন ছাড়া আর কোনো বিকল্প আমাদের সামনে নেই। আজ থেকে প্রতিদিন সকালে পদোন্নতি ও পদায়নবঞ্চিত কর্মকর্তাদের প্রতিনিধিরা মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও জনপ্রশাসন সচিবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। যতক্ষণ পর্যন্ত তাদের দাবি মেনে নেওয়া হবে না, ততক্ষণ পর্যন্ত একেক দিন একেক দল কর্মকর্তা সাক্ষাৎ করবেন। অভিযোগ আছে, বঞ্চিত কর্মকর্তাদের বিএনপি-জামায়াতের সমর্থক হিসেবে চিহ্নিত করে পদোন্নতি ও পদায়নবঞ্চিত করে রাখা হয়েছে। তবে ঘটনা যাই হোক না কেন, প্রশাসনের সূত্রগুলো বলছে, দীর্ঘদিন ধরে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের একটা অংশকে পদোন্নতি ও পদায়নবঞ্চিত করে রাখার কারণে প্রশাসনে এক ধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে। সদ্য বিদায়ী মহাজোট সরকারের আমলে কয়েক দফায় সচিব, অতিরিক্ত সচিব ও যুগ্ম-সচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া হলেও একটা অংশ বরাবরই বঞ্চিত থেকেছেন পদোন্নতি থেকে। এসব বঞ্চিত কর্মকর্তা বিভিন্ন সময়ে নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করলেও প্রতিকারের জন্য সংঘবদ্ধভাবে দাঁড়াতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত বর্তমান নির্বাচনকালীন সরকারের আমলে গত বুধবার তারা প্রথমবারের মতো ঐক্যবদ্ধভাবে নিজেদের বঞ্চনার প্রতিকার চেয়ে দেখা করেন গুরুত্বপূর্ণ দুই সচিবের সঙ্গে। তাতে ফলপ্রসূ কোনো কিছু পাওয়া না যাওয়ায় প্রশাসনের অস্থিরতা আগের চেয়ে বাড়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। নির্বাচনকালীন বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর পরই বঞ্চিত কর্মকর্তাদের হঠাৎ সক্রিয় হয়ে ওঠায় অস্থিরতার বিষয়টি এখন প্রকাশ্যে চলে এসেছে। কারও কারও ধারণা এতদিন চুপ মেরে বসে থাকা প্রশাসনে বিএনপি-জামায়াতপন্থি কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত কর্মকর্তারা নিজেদের উপস্থিতি জানান দিয়েছেন। সামনের দিনগুলোতে দেশের রাজনৈতিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে তারাও নিজেদের দাবি আদায়ে ধীরে ধীরে আরও সামনে আসতে পারেন। কর্মকর্তাদের পাশাপাশি সচিবালয়ের কর্মচারীদের একাধিক সংগঠনের নেতারাও বুধবার তাদের দাবি-দাওয়ার বিষয়ে জনপ্রশাসন সচিবকে স্মারকলিপি দেন। প্রসঙ্গত, সদ্য বিদায়ী মহাজোট সরকারের সময়ে প্রশাসনে সচিব, অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম-সচিব এবং উপসচিবসহ আড়াই হাজার কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ আছে, একই সময়ে বিএনপি-জামায়াত অনুসারী বিভিন্ন স্তরের সহস্রাধিক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি-বঞ্চিত করা হয়েছে।

সোর্স: http://www.bd-pratidin.com/index.php     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.