আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রাজনৈতিক অস্থিরতায় সংকটে ব্যাংকিং খাত

রাজনৈতিক অস্থিরতায় চরম সংকটে পড়েছে দেশের ব্যাংকিং খাত। বিনিয়োগ, ঋণ, আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে স্থবির হয়ে পড়েছে দেশের ব্যাংকিং খাত। দেশের সব তফসিলি ব্যাংকের প্রতিদিনের লেনদেন কমেছে প্রায় ৮০ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের গড় লেনদেন ৪০০ কোটি থেকে মাত্র চার কোটি টাকায় নেমে এসেছে। ঋণপ্রবাহ না থাকায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে টাকা নিচ্ছে না অন্যান্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাজনীতির এ প্রবণতা থাকলে অর্থনৈতিক সব অর্জন ধ্বংস হয়ে যাবে।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, গত সপ্তাহের মঙ্গল ও বুধবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের (মতিঝিল) সঙ্গে বিভিন্ন ব্যাংকের লেনদেন কমেছে ৮০ শতাংশ। এর মধ্যে বিভিন্ন ব্যাংকের জমার পরিমাণ কমেছে ৯০ শতাংশ এবং উত্তোলনের পরিমাণ কমেছে ৬১ শতাংশ। এ সময় বিভিন্ন ব্যাংক জমা করেছে মাত্র ৭৮ কোটি ৩২ লাখ টাকা। এর মধ্যে ব্যাংকে জমা পড়েছে ২৫ কোটি ২৬ লাখ টাকা এবং ব্যাংক থেকে উত্তোলন করেছে মাত্র ৫৩ কোটি ৬ লাখ টাকা।

অথচ অবরোধের আগের দু'দিন অর্থাৎ গত সপ্তাহের রবি এবং সোমবার এ লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৩৯৩ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা পড়েছে ২৫৭ কোটি ২১ লাখ টাকা এবং বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বিভিন্ন ব্যাংক উত্তোলন করেছে ১৩৬ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। বিভিন্ন কারণে দেশে বিনিয়োগের পরিমাণ গত এক বছর ধরেই ছিল নিম্নমুখী। গত দুই মাসে তা আরও কমেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ হিসাবমতে, চলতি বছরের আগস্টে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ছিল মাত্র ১১ দশমিক ৩৩ শতাংশ।

জুলাইয়ে এর হার ছিল ১১ দশমিক ৬১ শতাংশ। ২০১২-১৩ অর্থবছর শেষে জুন মাসে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল মাত্র ১১ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ, যা গত ১৩ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। অথচ ২০১১-১২ অর্থবছর শেষে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি ছিল প্রায় ২০ শতাংশের বেশি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা বিনিয়োগ বিভাগের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরের সেপ্টেম্বরে ৩১৪ কোটি ৭০ লাখ মার্কিন ডলার আমদানি ঋণপত্র (এলসি) খোলা হয়েছিল, যা অক্টোবর '১৩ দাঁড়িয়েছে ২৭৯ কোটি ৩৪ লাখ ডলার। সেই হিসাবে, অক্টোবরে আমদানিতে এলসি খোলার হার কমেছে ১১ দশমিক ২৩ শতাংশ।

একইভাবে অক্টোবরে আমদানি নিষ্পত্তি হয়েছে ২৮৪ কোটি ডলার। যা এর আগের মাসে হয়েছিল ৩০৯ কোটি ২৮ লাখ ডলার। এতে করে আমদানি নিষ্পত্তি কমেছে আট দশমিক ১৭ শতাংশ। এদিকে চলতি অর্থবছরের অক্টোবরে ১২৩ কোটি ৪৭ লাখ মার্কিন ডলার বা তার সমপরিমাণ রেমিট্যান্স দেশে এসেছে, যা ২০১২-১৩ অর্থবছরের একই মাসে ছিল ১৪৫ কোটি ৩৬ লাখ ডলার। সেই হিসাবে অক্টোবরে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমেছে ১৫ শতাংশ।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেন, অস্থিতিশীল রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বিধ্বংসী প্রবণতা আমাদের সব অর্জন ম্লান করে দেবে। আত্দঘাতী এই রাজনৈতিক পরিস্থিতি থেকে রেহাই পেতে নেতৃত্বের সদিচ্ছার দিকে দেশের মানুষ চেয়ে আছে। বৈশ্বিক আর্থিক মন্দা ও অভ্যন্তরীণ অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যেও গত পাঁচ বছর ধরে আমাদের জিডিপি-৬ শতাংশের বেশি হারে অর্জিত হয়েছে। মূল্যস্ফীতির হার ক্রমান্বয়ে কমছে। এমন সম্ভাবনাময় সময়ে দেশের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের নামে অস্থিরতার তৈরি করা হচ্ছে।

এনসিসি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও এবিবির চেয়ারম্যান মো. নুরুল আমিন বলেন, পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে যে পরিস্থিতি চলছে এতে এ খাতে লগি্নকৃত অর্থ আদায় করাই কষ্টসাধ্য। ইতোমধ্যে অনেক ব্যবসায়ীই ঋণখেলাপিতে পরিণত হয়েছেন। যা ব্যাংকিং খাতকে চরম সংকট ও ভয়াবহ ঝুঁকির দিকে নিয়ে যাচ্ছে।

 

 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.