আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রবীন্দ্রনাথ, হুমায়ুন আহমেদ এবং আরো বিভিন্ন বিষয়ে আহমদ শরীফের মন্তব্য

যে মুখ নিয়ত পালায়......। । ডক্টর আহমদ শরীফের(১৯২১-১৯৯৯) স্বাক্ষাতকার মূলক বই আলাপচারী আহমদ শরীফ। লিখেছেন আবুল আহসান চৌধুরী। অসাধারন।

পড়তে পড়তে অনেক জায়গায় পেলাম আহমদ শরীফ বিভিন্ন ব্যাক্তি, সাহিত্যিক সম্পর্কে মন্তব্য করেছেন। এই মন্তব্য গুলোর মধ্যে কিছু এখানে সংযুক্ত করার চেষ্টা করলাম। আহমদ শরীফ উচ্চকন্ঠে সত্য কথা বলার মত সাহস রাখতেন। যে যাই বলুক না কেন সত্য কথা আসলে কেউ পছন্দ করে না। আপনি যখন সত্য বলতে যাবেন আওয়ামীলীগ, বিএনপি, মৌলবাদি , আস্তিক,নাস্তিক সবাই এড়িয়ে চলবে।

যেকোন একটা গ্রুপে না যাওয়া পর্যন্ত। এখন গ্রুপিং বুদ্ধিজীবিতার যুগ। রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে আহমদ শরীফঃ আস্তিক বলেই রবীন্দ্রনাথ মুসলমানকে সহ্য করতে পারে নাই। রবীন্দ্রনাথের মত আস্তিক মানুষ বলেছে যে, মধ্যরাত্রির দুঃস্বপ্নের মতো কারা এলো- পিতাপুত্রে কাটাকাটি মারামারি করল সেটা ভারতবর্ষের ইতিহাস নয়। পিতাপুত্রে মারামারি- এই যে কথাটা বলেছে – অশোক তো চন্ডাশোক,ধর্মশোক হয়েছিল-সেও তো তার ভাই-জ্ঞাতি সবগুলোকে হত্যা করেছিল।

সেটা কি করে হয়েছিল-?শিবাজীর ছেলে তো বসতে পারলো না। পাচঁটা সপ্তাহ মারামারি হলো, হত্যাকান্ড হলো, তারপরে পাঁচ ভাগই হয়ে গেল। এইগুলো তার চোখে পড়ে নাই। কী রকম করে তুর্কি-মুঘলের ছয়শ বছরের ইতিহাসকে অস্বীকার করেছে। মুসলমানদের জন্য লিখে নাই।

“অপমানিত” কবিতাও সে বর্ণহিন্দুর জন্য লিখেছে- যে, বাপু , দিনকাল পরিবর্তন হয়ে গেছে। সেই একই রকমে “কালান্তরে” ও বলেছে যে মুসলমানদের শেয়ার দাও , তোমরা এখন কিছু দিনের জন্য চাকরি বাকরি দাও, না হলে ওরা মেজরিটি- ঘাড় মটকাবে। আর মুসলমান তো গুন্ডার জাত। এই যে তুমি দেখবে আনসারুজ্জামানের বইয়ে রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে সেখানে একটা চিঠি আছে। বোঝ! রবীন্দ্রনাথের জমিদারির অনেক জায়গায় আজান দেয়া যেত না।

তারপর তো ঐ যে সমাধান দিচ্ছে কোরবানি। তিনি চরম উদারতা দেখালেন যে , হিন্দু প্রজারা এসেছিল অভিযোগ নিয়ে। পরে এদের বিদায় দিয়ে মুসলমান প্রজাদের ডেকে বললেন যে, “একটু ভিতর বাড়িতে রেখে ঢেকে এই গরু জবাই করো”। কেন রেখে ঢেকে করবে? হয়ার দ্য মুসলিমস আর মেজরিটি ইন দ্য ভিলেজস? জাত-বেজাতের টলারেশনটা রবীন্দ্রনাথ ও স্বীকার করতে চায় নি,কথার কথা বলছি। কাজেই আস্তিক মানুষের একটা সীমাবদ্ধতা থাকে।

তার প্রমাণ নজরুল ইসলাম। তুমি লক্ষ করে দেখো নজরুল ইসলামের ইসলাম বিষয়ে রচনা বেশী। মুসলমানের ছেলে, জাত ভুলে নাই। যতোদিন পাকিস্তান ছিল ততোদিন আমি ই একমাত্র মানুষ যে বঙ্কিমচন্দ্র আর রবীন্দ্রনাথকে বাংলাদেশে প্রতিষ্টা করার জন্য লিখিতভাবে বলে এসেছি- প্রবন্ধ লিখেছি একাধিক। কিন্তু মুজিব বলতেছে, রবীন্দ্রনাথ আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামে প্রেরণা যুগিয়েছে।

আমি বলছি যে রবীন্দ্রনাথ নিজে কখনো স্বাধীনতা চান নি। স্বশাসন চান নি। সুশাসন চেয়েছেন। কাজেই রবিন্দ্রনাথ আমাদের প্রেরণার উৎস হতে পারেন না। এই যে রবীন্দ্রনাথ রাজত্ব করেছেন শিলাইদহতে এবং সাজাদপুরে তিনি থেকেছেন।

বোটে বাস করেছেন- দুনিয়ার সমস্ত রকম কথা বলেছেন, কিন্তু পদ্মাপারের লোক যে এক মুহুর্তে বাড়িঘর হারিয়েছে –জমিজমা হারিয়ে পথে বসেছে- তার কোনো গল্পে সেইটার প্রমাণ নেই। ক্রোক করে সে পথে বসিয়েছে, প্রজার সেই চিত্র কোনটায় নেই। তবুও বলে পদ্মাপাড়ের কতো প্রভাব তার উপরে! তা আমি বলেছি যে, রবীন্দ্রনাথ যখন কলকাতাতে-১৯৩০ এর পর কম্যুনিজম যখন প্রবল হচ্ছিল- রবীন্দ্রনাথ বুদ্ধিমান ছিলেন- তাল রাখার জন্য কবিতা লেখা শুরু করে দেন। এমন কী রবীন্দ্রনাথের “এবার ফিরাও মোরে” কবিতাটা এই বিবেকানন্দের শিকাগো বক্তৃতার পরে লেখা এবং সেটা দেবতার কাছে, মানুষের সেবা করেছে সে দেবতাকে খুশি করবার জন্য- ইউ নো ইট। তারপরে যেগুলো লিখেছে এই যে –“যে আছে মাটির কাছাকাছি।

তার বাণী লাগি কান পেতে আছি” – এগুলো শয়তান রবীন্দ্রনাথের রচনা। আপটুডেট থাকার জন্য। খারাপ কী বলেছি! সারাজীবনের মধ্যে রবীন্দ্রনাথের গণসম্পৃক্ততা কিছু নেই। এবং শিলাইদহ-সাজাদপুরে সে তো প্রজা পিটানোর জন্য গেছিল। সে কবিতা লিখতে গেছিল সেখানে? সেখানে তার উৎসব করো তুমি, যার বাড়ির ভিতরে পুকুর দিয়েছে, ঘুঘু চরিয়েছে, সেখানে গিয়ে উৎসব করার মানে কী হলো- সে সমস্ত প্রজাকে – মনুষত্ব্যকে আবমাননা করা।

শেখ মুজিবুর রহমান এবং মুক্তিযুদ্ধ নিয়েঃ এই সংগ্রামে সবচেয়ে বড়ো আবেগ যাদের - অল্প বয়সের ছেলেরা যোদ্ধা হলো- মফস্বলের স্কুল কলেজে যেসব পড়তো- এমনকী লেখাপড়া জানে না এদের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে তারা সত্যাসত্যি প্রাণ দেওয়ার জন্য নেমেছিল। শহরের বুদ্ধিমান ঘরের ছেলে খুব কম ই গেছে। ঢাকা ইউনিভার্সিটি দেখে বুঝতে পারি। এই যে জিনিসটা মুজিবের দান। কাজেই পুরো মুক্তিযুদ্ধটা মুজিবের নামের মহিমায়-প্রেরণায় বাঙালী সংহতি এমনভাবে হয়েছিল এই পৃথিবীর আর কোথাও এরকম হয় নি।

একুশে ফেব্রুয়ারী নিয়েঃ কথাটা হচ্ছে হান্ড্রেড ফোরটি ফোর -১৪৪ ধারা ভঙ্গ করলো কারা! ছাত্ররা। গুলি কেন অন্য লোকের গায়ে লাগে ,তারা কোথায় গেছিল! একটা ছাত্রের গায়েও লাগলো না! বরকত তো ঘরের ভিতরে ছিল। আর এই সালাম জব্বার শফিক রফিক এরা কেউ ছাত্র ছিল না। ছাত্ররা কোথায় গেল? '' হুমায়ুন আহমেদ নিয়েঃ হুমায়ুন আহমেদের লেখার গুণ হচ্ছে আড্ডা প্রধানের গুণ। আড্ডার যে মধ্যমণি - যার কথা শুনবার জন্যে- যে প্রাধান্য বিস্তার করে, উত্তেজিত করতে পারে, সুখ দেয়- সেই মানুষের গুণ তার আছে।

সে বড়ো সাহিত্যিক নয়। সে কখনো উঁচু মানের সাহিত্য সৃষ্টি করবে না বোঝা যাচ্ছে। কিন্তু সে পপুলার থাকবে। এখন সাধারণ পাঠকের কাছে সে পপুলার। সে কারণে যে লোক বই পড়ত না সে পড়ছে।

সে পাঠক সৃষ্টি করছে। হি উইল নট বি এ গ্রেট রাইটার, বাট হি উইল বি, হি ইজ এন্ড হ্যাজ বিন রিমেইন্ড এ পপুলার রাইটার থ্রু আউট হিজ হোল লাইফ। শরৎচন্দ্রের যেমন এখন আমরা হাজারো ত্রুটি পাই। সিমিলার কেস উইথ মিলন। স্ট্যান্ডার্ড ঔপন্যাসিকের যোগ্যতা তার ও নেই।

কিন্তু জীবন চিত্র দেওয়ার একটা শক্তি আছে। এগুলোকে বলে মাঝারি রিডেবল ঔপন্যাসিক। উল্লেখ্য, হুমায়ুন আহমেদের প্রথম বইয়ের ভুমিকা লিখেছিলেন আহমদ শরীফ। সংযুক্তিঃ উইকিপিডিয়ায় আহমদ শরীফ শ্রদ্ধেয় ‘মুরতাদ’ আহমদ শরীফ -জুলফিকার কবিরাজ-সচলায়তন আহমদ শরীফ: এক দুর্বিনীত সক্রেটিসের প্রতিকৃতি-ইরতিশাদ-মুক্তমনা মানবতা উদারতা যুক্তিবাদিতা; ড. আহমদ শরীফ সুত্রঃ আবুল আহসান চৌধুরীর আলাপচারী আহমদ শরীফ। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.