আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এরশাদ আর জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান নন

জাতীয় পার্টি বিভক্ত হয়ে গেছে। আমি এখন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান। এরশাদ সাহেব আমাকে সংগঠনের ৩৯ ধারাবলে বহিষ্কার করেছেন। সেখানে পরিষ্কার লেখা আছে, 'চেয়ারম্যানের এই বিশেষ ক্ষমতা অবশ্যই প্রেসিডিয়ামে আলোচনা করে প্রয়োগ করবেন। ' তার ঘোষণার ২৮ মিনিটের মধ্যে আমি উল্টো তাকে বহিষ্কার করেছি।

সংগঠনের মর্যাদা, সম্মান ও মূলনীতিকে লঙ্ঘনের ওপর ভিত্তি করে তাকে নোটিস দিয়েছি। তিনি আর জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান নন। নোটিসের নিষ্পত্তি হওয়ার আগে তিনি চেয়ারম্যান হিসেবে কাজ করতে পারবেন না। আর এর চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হবে কাউন্সিলে। রবিবার এসএ টিভির টকশো 'লেট এডিশন'-এ সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও জাতীয় পার্টির (জাপা) একাংশের চেয়ারম্যান কাজী জাফর আহমদ এ কথা বলেন।

নঈম নিজামের উপস্থাপনায় তিনি বলেন, একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে ২৮ বছর বড় কষ্ট ও বেদনা নিয়ে এরশাদের সঙ্গে ছিলাম। সবসময় অপমানিত হওয়ার ভয়ে থাকতাম। তিনি সবসময় একজন চিফ মার্শাল অ্যাডমিনিস্ট্রেটর প্রেসিডেন্ট হিসেবে কথা বলতেন। যথেষ্ট প্রতিবাদ করেছি। কোনো লাভ হয়নি।

একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে এবারও তার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করা ছাড়া পথ ছিল না। কাউকে কিছু না জানিয়ে সরকারের পাতানো নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দেন তিনি। তাই প্রতিবাদ করলাম। বিবৃতি দিলাম। বিবৃতির পর তিনি বললেন, কাজী জাফর আমার পরিবারের সদস্য।

মনে হয় এই বিবৃতি অন্য কেউ দিয়েছে অথবা অভিমানে দিয়েছে। আমি এ ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নেব না। পরদিনই তিনি এক মতবিনিময় সভায় বললেন, এইমাত্র কাজী জাফরের বহিষ্কারপত্রে স্বাক্ষর দিয়ে এলাম। আমি বললাম, আরে সর্বনাশ! কে সে? কে এই হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ? এত বড় সাহস তার! আমি জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য। আমি জাতীয় পার্টির প্রবীণতম রাজনীতিবিদ।

আমাকে বহিষ্কার করছে অথচ কোনো শোকজ নোটিসও দিল না। তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, 'হু ইজ কাজী জাফর? হি ইজ নট এনি ম্যাটার অব জাতীয় পার্টি। আই অ্যাম দি অনলি ম্যাটার অ্যান্ড আই অ্যাম দি ফাদার অব জাতীয় পার্টি। ' আমি বললাম, 'হু ইজ হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ? ১৯৮৬ সালের ১ জানুয়ারি জাতীয় পার্টির জন্মের দিন তিনি তো প্রধান সেনাপতির চাকরি করছেন। তিনি কীভাবে জাতীয় পার্টির ফাদার হন? তিনি তো প্রাইমারি মেম্বারও ছিলেন না।

'

সঞ্চালকের অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শেখ হাসিনা তো আমাকে মন্ত্রিত্বের অফার করেছিলেন। আমি বলেছিলাম, 'আই ওয়াজ দ্য প্রাইম মিনিস্টার'। আমি এই সরকারের উপদেষ্টা হতে চেয়েছিলাম- এর চেয়ে বড় মিথ্যা আর কিছু হতে পারে না। এ কথা এরশাদ সাহেব বা যেই বলুক তাকে অবশ্যই কাঠগড়ায় দাঁড় করাব। এতবড় মিথ্যা হজম করা যায় না।

তিনি বলেন, এরশাদের অধীনে রাজনীতি করা যে কত কঠিন তা আগেও উপলব্ধি করেছি। তার নারীঘটিত ঘটনাকে কেন্দ্র করে একবার মিজানুর রহমান চৌধুরী, আমি এবং শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন একসঙ্গে বিদ্রোহ করেছিলাম। সেই সময় হঠাৎ শাহ মোয়াজ্জেম হোসেনকে জেলহত্যা মামলার আসামি করে গ্রেফতার করা হলো। তখন শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন আর এরশাদ সাহেবের বিশেষ অনুরোধে আবার একীভূত হই। এবার আমি রাজনীতিবিদদের সম্মান, আত্দমর্যাদা রক্ষার্থে তার ব্যাপারে দৃঢ়চিত্তে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি।

এর আগেও জাতীয় পার্টি ভেঙেছে।

তবে আগে যারা চলে গেছেন তাদের কোনো রাজনৈতিক ইস্যু ছিল না। আজকে বড় রাজনৈতিক ইস্যু। আমরা কোনো পাতানো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারি না। জাপা প্রেসিডিয়ামের যে ৩৫ জন সদস্য সব সময় উপস্থিত থাকেন তার মধ্যে ৩০ জন আমাদের পক্ষে আছেন।

সেটা আস্তে আস্তে প্রকাশ পাবে। সুনামগঞ্জ ইতোমধ্যে আমার প্রতি সমর্থন জানিয়েছে।

প্রবীণ এ রাজনীতিবিদ বলেন, গোটা জাতি জানে যে, জাতীয় পার্টির সাবেক চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ পরিষ্কার বলেছেন, তিনি যে কোনো মুহূর্তে মহাজোট ছেড়ে দেবেন। তিনি মহাজোট ছেড়েছেন তবে তা গৃহপালিত বিরোধীদলীয় নেতা হওয়ার জন্য। একতরফা পাতানো নির্বাচনে এককভাবে অংশগ্রহণের জন্য।

মহাজোট থেকে বের হয়ে তিনি বললেন, আমি নির্বাচনে না গেলে লোকে আমাকে থুথু দেবে। অথচ তিনিই বলেছিলেন, সব দলের অংশগ্রহণ ছাড়া নির্বাচনে যাবেন না। যদি যান জনগণ থুথু মারবে, বেইমান বলবে। কী জানি কী রহস্যময় কারণে দলের নীতি নির্ধারণী ফোরামে কোনো বৈঠক না করে নিজেই আবার সিদ্ধান্ত নিলেন নির্বাচনে যাওয়ার। টেলিভিশনের পর্দায় হঠাৎ দেখলাম আমাদের সাতজন মন্ত্রীর ছবি।

অথচ কয়েকদিন আগেই বলেছিলেন, এ সরকার সম্পূর্ণ অসাংবিধানিক। এখানে জাতীয় পার্টির যোগদানের প্রশ্নই ওঠে না। নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে তিন দিন বাদেই তিনি আবার ইউটার্ন দিলেন। বললেন, সব দলের অংশগ্রহণ ছাড়া নির্বাচনে যাব না। সবার প্রশ্ন- আপনি তাহলে কেন রাতারাতি আগের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করলেন।

বাংলাদেশের কোনো মানুষ তাকে আর বিশ্বাস করে না।

 

 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।