আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কাদের মোল্লার ফাসিঁ এবং জাতির কাছে আমার কিছু কিছু প্রশ্ন।

ইশাতের দুনিয়ায় আপনাকে স্বাগতম

হিটলারের সময়কার খুব অসাধারন একটা ছবি আছে, অনেকেই দেখেছেন শিউর। হিটলার মঞ্চে দাঁড়ানো। নীচে বিশাল গেদারিং, সবাই হাত উঁচু করে Nazi salute দেয়ার ভংগিতে হাত উঁচু করে আছে। স্রেফ একজন মানুষ ভীড়ের মাঝখানে চুপ করে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে হাত নামিয়ে। --------------------------------------------------- আমি প্রায় সময়ই চিন্তা করি, ঐ লোকটা, যে হিটলারের সামনে শত শত মানুষের মধ্যে স্রেফ একলা একজনই হাত উঁচু না করে দাঁড়িয়ে ছিলেন, সেই মুহুর্তে উনার নিশ্চয়ই নিজেকে সুপার লোনলি মনে হচ্ছিলো।

--------------------------------------------------------------------------- ঐ লোকের সাহসের ধারেকাছেও আমার সাহস নাই, কিন্তু বাংলাদেশের জনস্রোতের, বিশেষ করে নেটিজেনদের মতিগতির দিকে তাকালে, তাদের সাথে কথাবার্তায় বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধ বিচার প্রশ্নে legitimate প্রশ্ন তুললে যে ধরনের ব্যবহারের মুখোমুখি হই, নিজেকে তখন বেশ লোনলি লাগে। মনে হয়, ভয়ে হোক, নিরাপত্তার খাতিরে হোক, peer pressure এর কারণে হোক, কনফিউশানের কারনে হোক, বুঝে বা না বুঝে হোক কেউই এই "যুদ্ধাপরাধী" নাটক নিয়ে কোনো কথা বলতে, উচ্চ্যবাচ্চ করতে রাজী না। কেউ যদি উচ্চ্যবাচ্চ করেও, সে 'কেউ' যদি বাংলাদেশী হয় তাইলে শিউর সে এইদার "পুরান রাজাকার" অথবা "নব্য রাজাকার" আর যদি বাংলাদেশী না হয়ে David Bergman এর মত কেউ হয় তাইলে 'পেইড বিদেশী রাজাকার'!! -------------------------------------------------- জামাত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় কার্যকর করার নির্দেশনামা সেন্ট্রাল জেলে পাঠানো হয়েছে গতকাল। আজ-কাল-পরশুর মধ্যে আব্দুল কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর হয়ে যাবে (খুব সম্ভব)। ------------------------------------ জামাতের প্রতি আমার কোনোধরনের রাজনৈতিক সাপোর্ট না থাকা সত্ত্বেও (ইনফ্যাক্ট, বাংলাদেশের কোনো বর্তমান রাজনৈতিক দলের প্রতিই আমার বিন্দুমাত্র সমর্থন সহানুভূতি নেই), শুধুমাত্র স্রোতের বিপরীতে গিয়ে পুরো বিষয়টা নিরপেক্ষভাবে দেখার চেষ্টা করার কারণে আমাকেও "নব্য রাজাকার" লিষ্টে টাংগিয়ে দেয়ার সমস্ত সম্ভাবনা মাথায় নিয়েই কিছু প্রশ্ন না করলেই নয়।

ডিটেইল পলিটিক্স বাদ দিলাম। বাদ দিলাম কেনো সরকারের জন্য এই মুহুর্তে এই ফাঁসি দেয়াটা রাজনৈতিকভাবে চরম দরকার। বাদ দিলাম কেনো যুদ্ধাপরাধী ট্রাইবুনাল ন্যাশনালি এবং ইন্টারন্যাশনালি চরম বিতর্কিত। সবই বাদ দিলাম। স্রেফ এই আব্দুল কাদের মোল্লা-ফাঁসি সংক্রান্ত কিছু প্রশ্ন, সিরিয়াসলি, কোনো উত্তর খুঁজে পাচ্ছিনা।

---------------------------------------- *- সুপ্রীম কোর্টের যে পাঁচজন জাজ নিয়ে এই মামলার বেঞ্চ গঠন করা হয়েছে, তার একজন "সুরেন্দ্র কুমার সিনহা"র ব্যপারে Skype scandal-এ জড়িত বিচারপতি নাজমুল সরাসরি "সিনহা সাহেব বলেছেন তিনটা ফাঁসির রায় দাও তাহলে তোমাকে আমরা সুপ্রীম কোর্টে নিয়ে আসতেছি" বলার পরও কী করে এই সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে এই মামলার জাজ হিসেবে রাখা হয়?? ------------------------------------------------------------------------- *- যে "শামসুদ্দিন মানিক"র বিতর্কিত বিচারকার্যের বিরুদ্ধে সাংবাদিকরা ৫০০ পৃষ্ঠার প্রমানসহ অভিযোগনামা দাখিল করেছে, সেই শামসুদ্দিন মানককে স্বয়ং শেখ হাসিনা খোদ নিজে তদারকী করে হাইকোর্ট থেকে সুপ্রীম কোর্টে নিয়ে এসে এই আব্দুল কাদের মোল্লা মামলার এপিল ডিভিশানে বসিয়ে দিয়েছেন, এটা কি আসলে আদালতের কোনো বিচার নাকি খোদ আওয়ামীলীগের দলীয় কার্যালয়কে সুপ্রীম কোর্টে বসিয়ে দেয়া?? -------------------------------------------------- *- কেনো 'International Commission of Jurists' মন্তব্য করতে বাধ্য হয়, "Abdul Quader Mollah death sentence violates international law"। কেনো খোদ Amnesty International আব্দুল কাদের মোল্লা মামলার ব্যপারে বলে, “This is the first known case of a prisoner sentenced to death directly by the highest court in Bangladesh. It is also the first known death sentence in Bangladesh with no right of appeal..Death sentence without right of judicial appeal defies human rights law.” --------------------------------------------------------------- *- যে সাক্ষীর কথায় এই ফাঁসির রায় হয়েছে, হযরত আলী লষ্কর পরিবারের সেই সদস্যা মোমেনা বেগম মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর, মিরপুর জল্লাদখানা, আর আদালত এই তিনজায়গায় তিন রকম কথা কেনো বললেন? কেনো আদালতে আসার আগে এতগুলো সাক্ষাতকার এতগুলো পাবলিক কথাবার্তায় একবারের জন্যও তিনি আব্দুল কাদের মোল্লার নাম নেননি? বার বার খালি পাকিস্তানি আর্মিদের কথাই বলেছেন? ২০০৭ সালে মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর কর্তৃপক্ষের কাছে দেয়া জবানবন্দীতে (যা কিনা এখনো সংরক্ষিত আছে, অবশ্য যদি এই ফাঁসির আদেশ কার্যকর করার প্রেক্ষিতে ইতিমধ্যেই তা সরিয়ে ফেলা না হয়) এই মামলার প্রধান সাক্ষী মোমেনা বেগম নিজের মুখে বলেন হযরত আলী লষ্কর পরিবারের হত্যাকান্ডের দুইদিন আগে তিনি শ্বশুড়বাড়ি চলে যাওয়ায় প্রানে বেঁচে যান! অথচ ২০১২ তে কোর্টে এসে তিনি বলেন তিনি ঘটনার সময় উপস্থিত ছিলেন!!! কোর্টে আসার আগে কী ব্ল্যাক মেইল করা হয়েছিলোও তাকে যে তিনি এতবছর ধরে বলে আসা এক কথাকে পুরা উলটে বললেন? --------------------------------------- *- আব্দুল কাদের মোল্লা যুদ্ধকালীন পুরো সময়ে যে বাড়িতে লজিং থাকার ডিটেইলস দিয়েছেন আদালতকে এবং যে দুই মেয়েকে তিনি সেইসময় ঐ লজিং বাড়ীতে পড়াতেন, সেই দুই মেয়ের এক জামাই সরকারেরই উপর স্থানীয় কর্মকর্তা, কেনো ঐ পরিবারের কাউকেই (বিশেষ করে ঐ মেয়েদু'টোকে) আদালতে সাক্ষী দিতে আনতে রাজী হয়নি ট্রাইবুনাল? ঐ পরিবারের প্রধান (মেয়েদু'টোর বাবা) নিজে মুক্তিযুদ্ধের ট্রেইনিং অর্গানাইজ করতেন, তাহলে ঐ পরিবারকে ট্রাইবুনালের কেনো এত ভয়? ------------------------------------------------ *- এই আব্দুল কাদের মোল্লাই যদি "কসাই কাদের" হয়ে থাকে যে "তিনহাজার মানুষকে হত্যা করেছে" বলে ট্রাইবুনাল বিশ্বাস করে, কীভাবে সম্ভব এই কসাই কাদেরই ঠিক যুদ্ধের পরপরই ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে খোদ "শহীদুল্লাহ হল"এ ফেরত এসে থেকে ফার্ষ্ট ক্লাস ফার্ষ্ট হয়ে বের হয়?? যে যুদ্ধপরবর্তী সময়ে কিনা মুক্তিযোদ্ধারা একজন একজন করে খুঁজে খুঁজে দেশের প্রতিটা এলাকা থেকে রাজাকার এমনকি রাজাকার না এমনও মানুষকেও পাবলিকলি এক্সিকিউট করেছে, সেখানে কী করে "কসাই কাদের" খোদ ঢাকা ইউনিভার্সিটির শহীদুল্লাহ হলে থেকে পড়ালেখা করে?! কী করে সম্ভব সে সময় মুক্তিযুদ্ধের বলতে গেলে জন্মস্থান ঢাকা ইউনিভার্সিটির কেউই কসাই কাদেরকে চিহ্নিত করতে পারলোনা??? তাকে ধরে পাবলিকলি এক্সিকিউট করাতো দূরের কথা!! ------------------------------------------------ *- কী করে এই "কসাই কাদের"-ই পড়ালেখা শেষ করে উদয়ন স্কুলে টীচিং এ যোগ দেন, যে সময় কিনা ঐ স্কুলের প্রিন্সিপাল ছিলেন মিসেস শারমীন, যিনি নিজে একজন শহীদ বুদ্ধিজীবির স্ত্রী!! কী করে সম্ভব এই "কসাই কাদের"-ই পরবর্তীতে বাংলাদেশ রাইফেলস স্কুল এন্ড কলেজে টিচিং করেন? এই দুই স্কুলের হাজার হাজার সুডেন্টদের পরিবার-অভিভাবক কেউই চিনলোনা এই কসাই কাদেরকে??? স্কুলের কথা বাদ, কোনো সাংবাদিকই বা চিনলোনা কেনো যখন এই "কসাই কাদের"-ই দুইবার Dhaka Journalists Union এর ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন?!?! ----------------------------------------- *- আব্দুল কাদের মোল্লা মামলায় তার পক্ষ থেকে যতগুলো প্রমান পেশ করা হয়েছে, কেনো ট্রাইবুনাল একটা প্রমানকেও nullify করতে পারেনি? এমনকি করার দরকারও মনে করেনি! এমনকি রায়ে তার কিছুইই উল্লেখই করেনি!! এটা কী ধরনের বিচারের স্ট্যান্ডার্ড?! ----------------------------------------- *- কেনো David Bergman এর মত ইন্টারন্যাশনাল বিদেশী সাংবাদিক তার ব্লগে বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধী ট্রাইবুনালের legitimacy নিয়ে এত এত প্রশ্ন তুলেন? ----------------------------------------------------- বংগবীর কাদের সিদ্দীকি বীরউত্তমের মত লোক, যে কিনা জীবনের কোনোরকম তোয়াক্কা না করে শেখ মুজিবের এক ডাকে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো, সেই তিনি পর্যন্ত কেনো শাহবাগ আন্দোলনের প্রেক্ষিতে ২০১৩ সালের ১১ ফেব্রুয়ারী তার কলামে স্যাটায়ার করে লিখেন- পিতা, কাদের মোল্লাকে নিয়ে দেশ এখন উত্তাল, পুরা দেশে এক নাম- কাদের মোল্লা! তার ফাঁসির দাবী চলছে। কিন্তু পিতা তুমি হয়তো এই কাদের মোল্লাকে চিনোনা, কারন আমাদের সময়ে যাদের যাদের বিচারের লিষ্ট আমরা বানিয়েছিলাম তাতে এই কাদের মোল্লা ছিলোনা। তুমি কীভাবে চিনবে, আমরাই তো কেউ চিনতাম না!! ---------------------------------------------------------------------------- আমি যদি প্রশ্নগুলো করা কন্টিনিউ করি, আজকে মনে হয়না এই স্ট্যাটাস লিখে শেষ করতে পারবো! ---------------------------------- জামাত দলগতভাবে ১৯৭১ এ তাদের অবস্থান নিয়ে জাতিকে সরাসরি যতদিন সবকিছু খুলে বলে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইবেনা, এবং সেই ক্ষমা চাওয়ার প্রেক্ষিতে জাতি তাদেরকে দলগতভাবে যে শাস্তি দিবে তা মাথা পেতে নিবেনা ততদিন তারা একাত্তুর পরবর্তী প্রজন্মের আমার মত অনেকের কাছেই গ্রহনযোগ্যতা পাবেনা। কিন্তু এই একাত্তুর পরবর্তী প্রজন্মের অনেকের মধ্যের অনেকের সাথে আমার একমাত্র পার্থক্য হলো- আমি এভরি সিংগল যুদ্ধাপরাধীর, "সত্যিকার যুদ্ধাপরাধীর" বিচার চাই, সে জামাতের হোক বা অন্য কোনো দলের; কিন্তু "সলিড" প্রমাণ ছাড়া, international observers দের বিভিন্ন লজিক্যাল প্রশ্নকে বৃদ্ধাংগুলি দেখিয়ে, দলীয় চামচাদেরকে জাজ বানিয়ে তাদেরকে দিয়ে মামলা চালিয়ে কোনো নির্দ্দিষ্ট দলের নির্দিষ্ট নেতাদেরকে যখন নির্দিষ্ট সময়ে ফাঁসি দেয়া হয়, তখন আমি সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করি- এইখানে পলিটিক্সটা আসলে কোথায়? ---------------------------------------------------- কেউ যদি ভেবে থাকেন আমি এই প্রশ্ন করছি স্রেফ আওয়ামী লীগ বলে, ভুল।

বিএনপি, জামাত, এমনকি এরশাদও (!) যদি ক্ষমতায় এসে যুদ্ধাপরাধী বিচার করে আর এমন সাজানো নাটক মঞ্চস্থ করে, সেদিনও আমাকে একইরকমভাবে লজিক্যাল প্রশ্ন করতে দেখবেন। কারন আমি বিশ্বাস করি, যতদিন পর্যন্ত ৭১ এর "সত্যিকার" যুদ্ধাপরাধীদের "সত্যিকার" বিচার হবেনা, ততদিন পর্যন্ত যে একাত্তুর আমাদের গর্ব, যে একাত্তুর আমাদের দেশের আইডেন্টিটির অংশ, যে একাত্তুরের কারণে আমরা বলতে পারি 'আমরা স্বাধীন', সেই একাত্তুর আমাদের রাজনীতিতে 'ইউজড' এবং 'মিসইউজড' হতেই থাকবে আর সাফারার হতে থাকবে দেশের সাধারণ জনগন। -------------------------------------- একাত্তুরকে কোনো নির্দিষ্ট দলের রাজনৈতিক পাপোষ হতে দেখতে, যে পাপোষে পা ঘষে ঘষে তারা ক্ষমতার চেয়ারে গিয়ে বসে, এমনটা দেখতে বিশ্বাস করুন, আর ভালো লাগেনা। উৎস: ফারজানা মাহবুব

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.