আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

স্যাটানিক থট

প্রেম মহৎ যদি তা বিশুদ্ধ থাকে

আজ ঘুম ভেঙেছে দেরীতে। অফিসে নিশ্চিৎ লেট হবে। সকালেই তাই মেজাজটা বিগড়ে গেছে। খুব রাগ লাগছে। এত বেলা হয়েছে।

ঘুম ভাঙেনি। শ্মশানের নিরবতা এসেছে। একেবারে মৃত্যু পুরীর মতন। যতই ভাবছে আর রাগ লাগছে। ম্যান ক্যান নট লিভ ইন এ ডেড ল্যান্ড।

সকালে ককটেল বিষ্ফোরণের শব্দে ঘুম ভাঙাটা রুটিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। আগে আজানের শব্দে ঘুম ভাঙতো। এর মধ্যে একট মনস্তাত্তিক ব্যাপার আছে। ককটেল কালচার শুরু হওয়ার পর আজানের শব্দকে আর হেয়ারিং র্নাভাস সিস্টেম পাত্তা দিচ্ছে না। এখন ককটেলের শব্দ না হলে ঘুম ভাঙে না।

ব্যাপারটা এই কদিন আগে অবিশ্বাস্য মনে হতো। আর এখন মানুষজন মারা যাওয়াটা খুব স্বাভাবিক একটা ঘটনা মনে হয়। সকালে খবরের কাগজ পড়ে কয়জন মানুষ মারা গেল, কয়টা পুলিশ,কয়টা ছাগু ,কয়টা হাম্বা এসব কাউন্ট করতে আলাদা একটা মজার অনূভুতি কাজ করে। তৃণলতা জন্মালেই তৃণলতা পশু পাখিও তাই;তবে মানুষ কর্মগুণে তারপর মানুষ। সেটারই ব্যবহারিক ক্লাস চলছে সারাদেশে।

সবাই বেশ দক্ষ হয়ে উঠেছে। তাছাড়া মনের দুঃখ প্রশমনের জন্য ব্যাপারটা টনিক হিসেবে কাজ করছে। যেমন যদি কেউ ভাবে আজকে ২০জন মানুষ মারা গেছে কথাটা শুনে আপনার মানুষ হিসেবে অবশ্যই কষ্ট লাগবে। কিন্তু যদি শুনেন পাঁচটা ছাগু মারা গেছে!কিংবা দশটা হাম্বা মারা গেছে। তাহলে ভিতর থেকে কষ্ট আসার পরিবর্তে কিছুটা তৃপ্তি লাভ হওয়ার চান্স থেকে যায়।

তাছাড়া জ্ঞানের পরিধি রাড়ার বিরাট একট সুযোগ থাকছে। নতুন নামের একটা প্রাণী মারা গেল যেমন হাম্বা/ছাগু তাহলে সেই প্রাণী সম্পর্কে সম্যক একটা ধারণা লাভের ব্যাপক সম্ভাবনার সৃষ্টি হয়। জ্ঞান বাড়ে। পন্ডিত হওয়ার ,নিজেকে শ্রেয়তর প্রাণী ভাবার একটা ব্যাপারতো আছে। হাউ টু হান্ট এ হাম্বা অর ছাগু ব্যাপারে জ্ঞান অর্জনের আগ্রহ সৃষ্টি হতে পারে।

নিজেই ছাগু হান্টার হাম্বা হান্টার হয়ে ইতিহাসে চিরস্মরনীয় হয়ে থাকার একটা সুযোগ হতে পারে। কেউ কেউ ছাগু হাম্বা উভয়টি হান্ট করে সব্যসাচী হান্টারের বিরল গৌরব অর্জন করতে পারে। বিবর্তণবাদীরা হয়তো লিখবে , হাম্বা আর ছাগু হয়তো কোন এককালের সহোদর। এরকম বিবর্তন সম্পর্কে চার্লস ডারউইন ভদ্রলোক কী বলেছেন জানা নেই। তবে এমনটা হলে অবাক হওয়ার কী আছে।

সবকিছুরইতো চক্র দেখা যায়। এখন যদি মানুষ পশুতে রুপান্তরের কোন পর্যায় চলতে থাকে। অর্ক নাশতা করে দ্রুত অফিস অভিমুখে রওনা দেয়। রাস্তায় পুলিশের টহল চলছে। অনেক জায়গায় বেরিকেড দেয়া হয়েছে ।

এমন সময় সরকারী গাড়ী গুলোর ব্যাপক দাপট। সেগুলোতে যাত্রী থাকেনা । ভোর ছয়টায় গাড়ীগুলো দপ্তর অভিমুখে রওয়ানা দেয়। বাসে ড্রাইভার আর একজন গেঁটম্যান থাকে। দায়িত্ব পালন আর কী।

চাকুরীজীবী যারা তারা নিজ উদ্যোগে অফিসে যাবে। তারই ধারাবাহিকতায় সম্পূর্ন মুভিবিনোদন সহকারে যাত্রা। নিজেকে নায়ক ভাবাটা অস্বাভাবিক নয়। আপনি রাস্তা দিয়ে যাচ্ছেন দুইপাশ দিয়ে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ককটেল বিস্ফোরণ পুলিশের টিয়ারশেল নিক্ষেপ চলছে। কিন্তু কিছুই আপনাকে থামাতে পারছে না ।

দমাতে পারছে না। অফিস আমি করবোই এমন ডিটারমিনেশন। অফিসে যাতায়াত করা এখন নায়োকচিত কাজ। মহীলা যাত্রীরা অবশ্য ট্রাজিক দৃশ্যের অবতারণা করে ফেলে । দেখা গেলো কোন বাসে আগুণ ধরিয়ে দেয়া হয়েছে ।

সেই দৃশ্য দেখে কোন মহীলা হাউমাউ করে কেঁদে ফেলছে। তার অবয়বে মৃত্যুর আশংকা ফুটে ওঠে। মোদ্দা কথা পরিপূর্ণ বিনোদন। ব্যাপারটা আরো নিশ্চিত হয় কোন টিভি অনুষ্ঠানে সরকারের লোকজনের ব্যাখ্যা বিবৃতি আর তাদের হাসিখুশি অবয়ব দেখলে। কখনো তৃপ্তির হাসি কখনো মেকি কান্না সব মিলিয়ে সবাই কেমন জাত অভিনেতার মত অভিনয় করে যাচ্ছে।

ছোট ছোট অভিনেতারা বড় বড় অভিনেতার অভিনয় দেখে তাদের চরিত্র দ্রত বুঝে অভিনয়ে নেমে যাচ্ছে। বলা যায় আমরা সবাই অভিনেতা আমাদের এই অভিনয় রাজত্বে। অনেকে বামন হয়ে চাঁদের দিকে হাত বাড়াচ্ছে। কেউবা আবার গাঁয়ে মানে না আপনি মোড়ল চরিত্রে অভিনয়ের চেষ্টা। অনেক সময় কোনটা চাঁদ কোনটা বামন গুলিয়ে যাচ্ছে।

যাই হোক রাস্তায় কোন ট্রাফিক জ্যাম নেই। গ্যানজাম আছে। সেই গ্যানজামে ছাগু আর হাম্বারা মানুষ বেশে ঘুরে বেড়াচ্ছে। মারা গেলে নিশ্চিৎ হওয়া যায় কোনটা হাম্বা আর কোনটা ছাগু। এত গ্যানজামের মধ্যে অর্ক ছুটছে ছাগুর ভয় হাম্বার ভয় বামন হওয়ার ভয় চাঁদহারার ভয় তারচেও ভয় কখন বস কল করে।

মোবাইল একটা ভয়ানক দরকারী জিনিস। ভয়ানক দরকারী এই জন্য যে ভয়ানক ব্যাপার গুলো এই মোবাইল দিয়েই আসে। অফিস থেকে কিলোমিটার খানেক দূরে নামতে হয়। রাস্তায় বেরিকেড দেয়া। সেখানে পুলিশটহল।

ঘটনাক্রমে এক বন্ধুর সঙ্গে দেখা হয় অর্ক সাহেবের। পুলিশের জীপে বসা। দেখে হাসছে। তাকে আন্তরিকতার সঙ্গে নামতে বললো অর্ক। তার বডিগর্ড কটমট করে তাকাচ্ছে।

বিপু কেমন আছিস বন্ধু? ভাল নাইরে অর্ক। চার দিকে বড় বড় ইটের টুকরা। (আকাশ থেকে পরে অর্ক। ইটের টুকরো! ভয়!) অর্ক আশংকায় থাকি কখন যে ইটের টুকরো দিয়ে মাথা ফটিয়েদেয়! কথাশুনে বিনোদনের খোরাক পাওয়া যায়। ওরাও ভয় পায়।

তবু নিছক ইটের টুকরোর ভয়! আবার মায়া হয়। বন্ধু মানুষ আতঙ্কে থাকে সারাদিন। কথাবার্তা বেশিদূর এগোয় না। তারপর যথারীতি অফিসে। এর মধ্যে বাসা থেকে একাধিকবার ফোন আসে।

ঠিক মতো অফিসে পৌঁছানো হল কিনা। যেহেতু রিস্ক ফ্যাক্টর শতভাগ। নিরাপত্তা ফ্যাক্টর শতকরা শূণ্যভাগ। আর এখন যাত্রীরা তাদের থ্রেট গুলোতে পরিবর্তন এনেছে। কিছু হলেই গাড়ী ভাঙা পেট্রাল দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়া ধরণের থ্রেট।

এভাবেই হয়তো মানুষ ছাগু কিংবা হাম্বা হান্টার হয়ে যায়। ছাগু রাজ্যে হাম্বা রাজ্যে মানুষরা বিরল প্রজাতি হয়ে যাওয়াটাই তো স্বাভাবিক। অফিস টাইম শেষ হলে বাসা ফেরার পালা। রাতের আঁধারে নিত্যনতুন থ্রিল আর ঝুকি নিয়ে অর্করা বাসায় ফিরতে উদ্ধত হয়। তখন চাল ডাল পেঁয়াজ ইত্যাদী চিন্তা মাথায় নিয়ে নিজের পকেটের স্বাস্থ্য নিয়ে অংক কষতে কষতে পথচলা।

রাজনীতির জটিল সমীকরণ মাথায় ভর করে। কে আসবে ক্ষমতায়,কোনদল জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে,রাজনীতির রঙ্গমঞ্চে কে জিরো থেকে হিরো হচ্ছে,কে নায়ক থেকে ভিলেন হচ্ছে,একদলীয় নির্বাচন হলে দেশটা কতবড় বিপর্যয়ে পড়তে পারে। সব দলের অংশগ্রহণে সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু। দেশে বানর চলে এসেছে। ইদুরের রুটি ভাগ হবে।

ইদুরে ইদুরে ব্যাপক অনৈক্য। ইদুর রাজ্যে বানরকে সুস্বাগতম জানাচ্ছে অনেক ইদুর ছানা আবার ঠকে যাওয়ার ভয়ে কোন ইদুর বানরকে রুটি ভাগের দায়িত্ব দিতে নারাজ। বানর কি করবে? রুটি ভাগ নাকি নিজেইখেয়েফেলবে পুরো রুটি। সব চিন্তা ছাপিয়ে ডাল,তেল, নুন আর বাসায় গিয়ে নির্বিঘ্নে ক্লান্তির ঘুম আবার শশ্মাণের নিরবতা চিন্তা মুখ্য হয়ে ওঠে। রাজায় রাজায় যুদ্ধ করে উলুখাগাড়ার প্রাণ যায় ।

সেই চিন্তা বাদ দিয়ে বাসায় বসে একটা মুভি দেখা কিংবা শান্তির ঘুমটাই কি বেশি গুরুত্বপূর্ণ নয়? (ফিলিং সেলফিস)

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।