আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হাসিনাকে মুন ও কেরির ফোন

গতকাল সকালে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি ও জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি-মুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন। জন কেরি সকালে এবং বান কি-মুন বিকালে প্রধানমন্ত্রীকে টেলিফোন করেন। উভয়ই বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন। দুজনই সরকারের সঙ্গে বিরোধী দলের সংলাপ শুরু হওয়াকে ইতিবাচক হিসেবে অভিহিত করে স্বাগত জানিয়েছেন এবং দ্রুত এর একটি সুফল বাংলাদেশের জনগণ পাবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, ঢাকার জাতিসংঘ কার্যালয় ও মার্কিন দূতাবাস থেকে দুই টেলিফোনালাপের কথা নিশ্চিত করা হয়েছে।

অপরদিকে এদিন ওয়াশিংটনে যুক্তরাষ্ট্র সফররত ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিংয়ের সঙ্গে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আলোচনায় বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে কথা হয়েছে। ঢাকার মার্কিন দূতাবাস 'বাংলাদেশের জনগণ'র কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য পদ্ধতি খুঁজে বের করতে প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিরোধী দলের সঙ্গে সরকারের সমাঝোতা প্রক্রিয়ায় কূটনীতিকরা যখন তৎপর সেই মুহূর্তে জাতিসংঘের মহাসচিব ও মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর টেলিফোনকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মনে করছে দেশের রাজনৈতিক মহল। জাতিসংঘ মহাসচিবের দূত অস্কার ফারনান্দেজ তারানকো বাংলাদেশে টানা পাঁচ দিন অবস্থান করে সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে সমঝোতা নিশ্চিত করার শেষ মুহূর্তে বান কি-মুন ও জন কেরির টেলিফোন কি চলমান সংকট নিরসনে কোনো নতুন বার্তা? টেলিফোনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কি আলোচনা করলেন বান কি-মুন ও জন কেরি, তা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে শুরু হয়েছে নানামুখী আলোচনা।

বান কি-মুনের ফোনালাপের কথা গণমাধ্যমকে জানান প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ।

তিনি বলেন, বিকাল পৌনে ৫টায় জাতিসংঘ মহাসচিব প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ফোন করে তার বিশেষ দূত জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব তারানকোর সফরে সহযোগিতার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। প্রেস সচিব বলেন, ফোনালাপে সংবিধান অনুসারে নির্বাচনের বিষয়ে কথা বলেছেন বান কি-মুন ও শেখ হাসিনা। হরতাল ও সহিংসতারও নিন্দা জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব। ঢাকার জাতিসংঘ মিশনের কূটনৈতিক সূত্র জানায়, প্রতিনিধি তারানকোর সফরের শেষ সময়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎসূচি না মেলায় বান কি-মুন সরাসরি এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন। কোনো ভুল বোঝাবুঝির সুযোগ না রাখতেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে নেলসন ম্যান্ডেলার শেষকৃত্যের একটি আনুষ্ঠানিকতার সাইডলাইন থেকে ফোন করেন তিনি।

জাতিসংঘ কর্মকর্তার দেওয়া তথ্যানুসারে, সংলাপের সফলতার জন্য সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার ভেতরে নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব কিনা তা নিয়ে একটি 'অভিমত' আদান-প্রদান করেছেন বান কি-মুন ও শেখ হাসিনা। এক্ষেত্রে শেখ হাসিনা নির্বাচন কমিশনের সম্পূর্ণ এখতিয়ারের কথা সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরেছেন। টেলিফোন আলাপে সংলাপের বিষয়ে শেখ হাসিনার সহযোগিতা বিশেষ প্রশংসার যোগ্য বলে মন্তব্য করেছেন বান কি-মুন। বলেছেন, অতীত অভিজ্ঞতা থেকে জাতিসংঘ দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে, রাজনৈতিক সমঝোতার সঙ্গে সঙ্গেই সংঘাত ও সংঘর্ষ বন্ধ হয়ে যাবে।

অপরদিকে ঢাকার মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র ক্যালি এস ম্যাকার্থি এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, সেক্রেটারি জন কেরি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সকালে টেলিফোনে আলোচনা করেছেন।

এটি দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়নে ধারাবাহিক প্রক্রিয়ার একটি অংশ। প্রাসঙ্গিকভাবেই এতে সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ স্থান পেয়েছে। তবে ভিন্ন একটি কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, জাতিসংঘ মহাসচিবের আমন্ত্রণে সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে চলমান সংলাপের প্রক্রিয়াকে স্বাগত জানিয়েছেন জন কেরি। বলেছেন, এ উদ্যোগের একটি কার্যকর ফলাফল যুক্তরাষ্ট্র প্রত্যাশা করে। পাশাপাশি বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক সংঘাতে যে যুক্তরাষ্ট্র গভীরভাগে উদ্বিগ্ন এটিও উল্লেখ করেছেন জন কেরি।

প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী শেখ হাসিনা-জন কেরি ফোনালাপের বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও যুদ্ধাপরাধীদের রায় কার্যকর করার প্রক্রিয়া নিয়ে সকাল ৯টায় জন কেরির সঙ্গে কথা হয়েছে। রাজনৈতিক সহিংসতা পরিহার করে সমঝোতার মাধ্যমে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব হবে বলে জন কেরি মন্তব্য করেছেন। ইকবাল সোবহান বলেন, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য এবং সবার কাছে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করে দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে যে অগ্রগতি হয়েছে তা ধরে রাখার জন্য বাংলাদেশের সহযোগী হিসেবে কাজ করারও অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন জন কেরি। আর চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে যে সহিংসতা নৈরাজ্য সৃষ্টি হয়েছে তা অচিরেই বন্ধ হওয়া উচিত বলে মনে করেন জন কেরি।

প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা বলেন, আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারের রায় কার্যকর সম্পর্কে জন কেরি জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ট্রাইব্যুনালের বিচার প্রক্রিয়া চলছে, তা বিচারিক প্রক্রিয়ায় বিচারকার্য সম্পন্ন হবে। আর সরকারের এ অবস্থাকে জন কেরি স্বাগত জানিয়েছেন বলে সাংবাদিকদের কাছে বলেন ইকবাল সোবহান চৌধুরী।

দুই দলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিবৃতি : বাংলাদেশের জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের পথ খুঁজে বের করতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রতি আহ্বান জানিয়ে গতকাল বিকালে একটি বিবৃতি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ঢাকার মার্কিন দূতাবাসের পাঠানো বিবৃতিতে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বাস করে, বাংলাদেশের জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে এমন শান্তিপূর্ণ, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের পথ খুঁজে বের করা প্রধান দুই দলের জন্য জরুরি হয়ে পড়েছে। এ বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্র আগেও জানিয়েছে।

এটা এখন আরও জরুরি হয়ে পড়েছে। এ কারণে আমরা (যুক্তরাষ্ট্র) বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের জনগণের চাহিদা অনুসারে একটি নির্বাচন অনুষ্ঠানের পথ খুঁজে পাওয়া সদিচ্ছার মাধ্যমে দুই দলের জন্য সম্ভব। বিবৃতিতে বলা হয়, মার্কিন সহকারী সচিব নিশা দেশাই বিসওয়াল বাংলাদেশে তার সাম্প্রতিক সফরে এটি স্পষ্ট করে বলেছিলেন, সহিংসতা কখনোই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অংশ হতে পারে না, এটা অগ্রহণযোগ্য এবং অবিলম্বে সহিংসতা বন্ধ করতে হবে। বিগত কয়েক দিনের অযৌক্তিক সহিংস ঘটনাবলি বিশেষভাবে নিন্দনীয় কারণ শিশু-কিশোরসহ নির্দোষ মানুষ এসব বোমা হামলা ও অগি্নসংযোগের ঘটনার শিকার হয়েছে। এসব ঘটনার জন্য দায়ীদের প্রতি আমরা আহ্বান জানাচ্ছি, সহিংসতা বন্ধ করে বাংলাদেশের জনগণকে আতঙ্ক ও নিরাপত্তাহীনতা ছাড়া দৈনন্দিন কার্যক্রমে ফিরে যাওয়ার সুযোগ দিন।

বিবৃতির শেষাংশে বলা হয়, আমরা বিশ্বাস করি, সব দলেরই অবাধে ও শান্তিপূর্ণভাবে নিজের মতামত প্রকাশের সুযোগ থাকতে হবে। এই সুযোগ প্রদান করা সরকারের দায়িত্ব এবং বিরোধী দলের দায়িত্ব হলো শান্তিপূর্ণভাবে এই সুযোগের ব্যবহার করা।

কেরি-সুজাতা বৈঠকে বাংলাদেশ নিয়ে আলোচনা : ওয়াশিংটন সফররত ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিংয়ের সঙ্গে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির বৈঠকে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এই আলোচনার বিস্তারিত প্রকাশ করা হয়নি। তবে বৈঠকের আলোচ্য বিষয় সম্পর্কে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের ওয়েবসাইট ও ভারতের গণমাধ্যম জানিয়েছে, আলোচনায় দ্বিপক্ষীয় সব বিষয়ের পাশাপাশি আফগানিস্তান, পাকিস্তান পরিস্থিতি এবং বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন প্রসঙ্গ এসেছে।

গত শনিবার ওয়াশিংটন সফর শুরু করা সুজাতা সিং ইতোমধ্যে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের ডেপুটি সেক্রেটারি উইলিয়াম বার্ন, আন্ডার সেক্রেটারি ওয়েন্ডি শ্যারমেন ও অ্যাসিস্টেন্ট সেক্রেটারি নিশা দেশাই বিসওয়ালের সঙ্গে সিরিজ বৈঠক করেছেন। গত সপ্তাহে সুজাতা ঢাকা সফর করে গেছেন। বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে কূটনৈতিকভাবে সবচেয়ে তৎপর যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত। দেশ দুটির মধ্যে এ বিষয়ে মতপার্থক্যের কথাও প্রকাশ্যে এসেছে। এ জন্য তারা নিজেদের মধ্যে আলোচনাও করেছেন।

কিন্তু নীতিগতভাবে এখনো একমত হতে পারেনি প্রভাবশালী এ দুই দেশ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.