আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রক্তে কেনা বাংলাদেশ

আমাদের স্বাধীনতার জন্য যে যুদ্ধ, তার নাম মুক্তিযুদ্ধ। সেই মুক্তিযুদ্ধ কেন করতে হয়েছিল আমাদের?
ভারত ছিল অবিভক্ত। ১৯৪৭ সালে ভারতকে দুভাগ করে আলাদা দুটি দেশ সৃষ্টি করা হয়। একটার নাম ‘পাকিস্তান’ অন্যটা ‘ভারত’। পাকিস্তানের আবার দুটি অংশ।

একটা পূর্ব পাকিস্তান, অন্যটা পশ্চিম পাকিস্তান। আমাদের বাস ছিল পূর্ব পাকিস্তানে। দেশ এক হলেও পশ্চিম পাকিস্তান সবসময় পূর্ব পাকিস্তানকে দমিয়ে রাখার চেষ্টা করত। পশ্চিম পাকিস্তানিরা আমাদের পূর্ব পাকিস্তানের লোকজনকে নানাভাবে শোষণ করে গোলাম বানিয়ে রাখার চেষ্টায় থাকত। এর প্রথম প্রমাণ পাওয়া যায় আমাদের মাতৃভাষার উপর হস্তক্ষেপ ঘটনায়।


পূর্ব পাকিস্তানের লোকসংখ্যা বেশি থাকা সত্ত্বেও তাদের মাতৃভাষা ‘বাংলাকে’ স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। উর্দুকেই রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেওয়া হয়। সেই সময়ে রাষ্ট্রনায়ক মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর এই ঘোষণার প্রতিবাদ জানান আমাদের টগবগে ছাত্র সমাজ।
১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ পালন করা হয় প্রথম ভাষা দিবস। পরবর্তী সময়ে আন্দোলন আরও জোরদার হয়।

এরই ধারাবাহিকতায় ভাষা আন্দোলনে ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি ছাত্রদের বুকে গুলি চালানো হয়। এতে শহীদ হন রফিক, সালাম, বরকতসহ অনেকে। রক্ত দিয়েই আমাদের ছাত্র সমাজ রুখে দিল বাংলা ভাষার বিরুদ্ধে সমস্ত ষড়যন্ত্র। আমাদের বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি এভাবেই ধীরে ধীরে তৈরি হতে থাকে।


১৯৫২ সালের পর পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী আমাদের পূর্ব বাংলার মানুষকে নতুনভাবে শোষণের চেষ্টায় মেতে উঠল।

পূর্ব বাংলার তথা পূর্ব পাকিস্তানের চা, চামড়া, পাট ইত্যাদি দিয়ে অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রায় উন্নত করা হয় পশ্চিম পাকিস্তানকে। এ অন্যায়ের প্রতিবাদে মুখর হল পূর্ব বাংলার জনগণ। ধীরে ধীরে আন্দোলন তীব্রতর হতে লাগল। শুরু হল একটার পর একটা প্রতিরোধ।
১৯৬২ সালে সংঘঠিত হল শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬৬ সালে ঐতিহাসিক ছয় দফা আন্দোলন আর ১৯৬৯ সালে হল গণঅভ্যুত্থান।

সেই অভ্যুত্থানে ফিল্ড মার্শাল আইউব খানের বিদায় হলে ক্ষমতায় এলেন জেনারেল ইয়াহিয়া খান।
ইয়াহিয়ার আমলেই অনুষ্ঠিত হল সাধারণ নির্বাচন। ১৯৭০ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত সেই নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে আওয়ামী লীগ। নিয়ম অনুযায়ী পাকিস্তানের শাসনভারের অধিকারী হওয়ার কথা আওয়ামী লীগ প্রধান বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কিন্তু তাঁকে ক্ষমতা দেওয়া হল না।

পাকিস্তানি শাসকরা মেতে উঠল নতুন ষড়যন্ত্রে।


তাদের সেই ষড়যন্ত্রের কথা বুঝতে পেরে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঢাকা রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষণা দেন ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’।
বঙ্গবন্ধুর এই ঐতিহাসিক ভাষণের পর পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া তড়িঘড়ি করে ঢাকায় আসেন আলোচনার উদ্দেশে। আলোচনা তো লোক দেখানো। মূল উদ্দেশ্য ছিল সময়ক্ষেপণ করে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে সৈন্য আমদানি করা।

পূর্ব বাংলার মানুষ আলোচনা থেকে একটা শুভ সংবাদ প্রত্যাশা করেছিল; মনে করা হল এবার হয়তো আমাদের দাবি মেনে নেওয়া হচ্ছে।
কিন্তু কোথায় শুভ সংবাদ? তার বদলে ২৫ মার্চ মধ্যরাতে পাকিস্তানি সৈন্যরা ট্যাঙ্ক, কামান, রকেট ও নানা ভারী অস্ত্র নিয়ে হঠাৎ বাঙালির উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। তাদের আক্রমণে প্রথম রাতেই মারা যায় অসংখ্য নারী-পুরুষ। আক্রমণ হঠাৎ হওয়ায় প্রথমে কিছুই বুঝতে পারেনি পূর্ব বাংলার লোকজন। পরে বুঝতে পেরে বীরত্বের সঙ্গে তারা প্রতিরোধে নামে।




২৬ মার্চ কালুরঘাটে প্রতিষ্ঠিত স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্র থেকে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে প্রথমে আওয়ামী লীগ নেতা এম. এ হান্নান ও পরে ২৭ মার্চ মেজর জিয়া বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।
এই বেতার ঘোষণা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সংগঠনে তীব্র গতি সঞ্চার করে। মুক্তিযুদ্ধ সংগঠনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, ছাত্র সংগঠন, সেনাবাহিনী, পুলিশ ও সাধারণ জনতা একযোগে কাজ করেন।
১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল কুষ্টিয়ার মেহেরপুর মহকুমার ভবেরপাড়া গ্রামে (বর্তমান নাম মুজিবনগর) স্বাধীনতার সনদ ঘোষণার মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠনিকভাবে ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার’ গঠিত হয়। বঙ্গবন্ধুকে তাঁর অনুপস্থিতিতেই রাষ্ট্র প্রধান নির্বাচন করা হয়।


এরপর সশস্ত্র যুদ্ধ আরও সুদৃঢ় হয়। একটার পর একটা হামলা-আক্রমণ করে পাকিস্তানি বাহিনীকে নাস্তানাবুদ করে ছাড়ে এ দেশের দামাল ছেলেরা।


১৯৭১ সালে ৩ ডিসেম্বর ভারত সরাসরি আমাদের সহায়তায় নামে। মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় সেনাবাহিনীর যৌথ আক্রমণের সঙ্গে আপামর জনতার স্বতঃস্ফূর্ত সহযোগিতা যুক্ত হলে পাকিস্তানের পরাজয় অনিবার্য হয়ে ওঠে। পরপর হামলায় দুই চোখ যখন অন্ধ, তখন ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাঙালির হাজার প্রাণের অগ্নি তরুণদের কাছে আত্মসমর্পণ করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী।

তাদের পরাজয়ে উদিত হয় একটি নতুন দেশের সূর্য। সূচিত হয় নতুন ইতিহাস। আমরা পাই স্বতন্ত্র ভূখ-, সার্বভৌম জাতিসত্তা, নতুন দেশ। তার নাম বাংলাদেশ।


সোর্স: http://bangla.bdnews24.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।