আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আওয়ামী লীগ মাঠে নেই

মাঠে নেই আওয়ামী লীগ। বিজয়ের মাসে নানা কর্মসূচি নিয়ে আওয়ামী লীগ সব সময় মাঠে থাকলেও এবার তার ব্যতিক্রম। কোথাও চোখে পড়ছে না দাপুটে নেতাদের অবস্থান। পরিস্থিতি পর্যালোচনায় মনে হচ্ছে নেতারা এখন ঘুমিয়ে আছেন। বিএনপি-জামায়াত অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে আওয়ামী লীগ অনেকটা নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছে। সংসদ নির্বাচনে নিজেদের প্রার্থিতা নিশ্চিত করতে ব্যাপক শোডাউন করলেও বিএনপি-জামায়াতের নৈরাজ্যের জবাবে যেন তার উল্টো। আওয়ামী লীগ নেতাদের এমন দুর্বল মানসিকতায় দলের সাধারণ কর্মী-সমর্থকরাও হতাশ।

দশম সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে বিরোধী দলের হরতাল-অবরোধে সাতক্ষীরাতে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী এবং সংখ্যালঘুদের বাড়িতে জামায়াত-শিবির তাণ্ডব চালালেও প্রশাসন কিংবা আওয়ামী লীগ কেউই পরিস্থিতি মোকাবিলায় সাহসী ভূমিকায় নেই। বর্তমান সরকারের পুরো পাঁচ বছরে মন্ত্রিসভায় বহাল থাকা সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. আ ফ ম রুহুল হকের নিজ এলাকা সাতক্ষীরায় জামায়াত কীভাবে নৈরাজ্য চালাচ্ছে এ প্রশ্ন এখন আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি দলকে সংগঠিত করার বদলে সাতক্ষীরায় নিজের সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন। সাতক্ষীরার মতোই লক্ষ্মীপুর, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড, সাতকানিয়া, ফেনী, উত্তরাঞ্চলের রাজশাহী, লালমনিরহাট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, গাইবান্ধা, সিরাজগঞ্জে জামায়াত ধারাবাহিক নৈরাজ্য চালাচ্ছে। এমনকি স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকুর নিজ নির্বাচনী এলাকা সাঁথিয়ায় সংখ্যালঘুদের বাড়িতে আগুন জ্বালিয়ে দিচ্ছে জামায়াত-শিবির। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর পাবনার বাড়িতে পেট্রলবোমা হামলার পরেও পাবনায় গর্জে ওঠেনি আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা ও বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আসাদুজ্জামান নূরের গাড়িবহরে হামলার প্রতিবাদেও নীলফামারীতে আওয়ামী লীগ যেন নীরব দর্শক! রাজধানীর মতিঝিল, মালিবাগ, বাড্ডায় প্রায় প্রতিদিনই বিএনপি-জামায়াতের ক্যাডাররা হরতাল-অবরোধের নামে গাড়ি পোড়াচ্ছে। জবাবে আওয়ামী লীগ এখানেও নিষ্ক্রিয়। পরিস্থিতি এতটাই নাজুক যে, জেলায় জেলায় ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ এখন সরকারি সংস্থার ওপর নির্ভরশীল। সাংগঠনিক কর্মসূচি নেই বললেই চলে। বিজয় উৎসব উপলক্ষে দেশব্যাপী আনন্দ উৎসব, আলোচনাসভা এমনকি নির্বাচনী সভাও মাঠপর্যায়ে গতবারের তুলনায় অনেকটা কম। স্বাধীনতার পক্ষের শক্তির সমর্থক ও আওয়ামী লীগের মাঠপর্যায়ের নেতা-কর্মীদের মতে, যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় কার্যকর হওয়ার পর যে চাঙ্গা অবস্থান আওয়ামী লীগে দরকার ছিল তা এখন নেই। এমনকি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আওয়ামী লীগ থেকে যারা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন তাদের অধিকাংশই এখন এলাকা ছেড়ে ঢাকায়। আওয়ামী লীগের গত পাঁচ বছরের দাপুটে নেতা ও সাবেক মন্ত্রী-এমপিদের উদাসীনতার কারণেই বিএনপি-জামায়াত বিভিন্ন এলাকায় নৈরাজ্য চালানোর সাহস দেখাচ্ছে বলে সচেতন মহলের ধারণা। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী অনেক আগে থেকে দলীয় প্রার্থী ও দলের নেতাদের নিজ এলাকায় গণসংযোগ বাড়ানোর নির্দেশ দিলেও তার প্রতিফলন ঘটেনি মন্ত্রী, এমপি ও দলীয় নেতাদের কর্মকাণ্ডে।

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী গতকাল সন্ধ্যায় বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, কিছু কিছু এলাকায় জামায়াত-শিবির সহিংসতা করছে। তারা দানবীয় রূপে শিশু, বৃদ্ধাসহ মানুষকে পুড়িয়ে মারছে। নারকীয় তাণ্ডব চালাচ্ছে। এই দানবদের দমন করতে যা যা ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন তা-ই করা হবে। কয়েকটি জেলায় কেন আওয়ামী লীগ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারছে না জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। আমরা ভেবেছিলাম, বিএনপি-জামায়াতের কর্মসূচি রাজনৈতিকভাবেই মোকাবিলা করব। কিন্তু তারা যে এমন সহিংস হয়ে উঠবে তা আমাদের নেতা-কর্মীরা বুঝে উঠতে পারেনি। এখন এসব তাণ্ডব শুধু প্রতিরোধই নয়, প্রতিহত করা হবে। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিজয় দিবসের পরই আওয়ামী লীগ দলগতভাবে নির্বাচনী প্রচারণা এবং বিএনপি-জামায়াতের নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে মাঠে থাকবে। যেখানেই নাশকতা-অবরোধ সেখানেই প্রতিরোধ। আজ ১৬ ডিসেম্বর থেকে আওয়ামী লীগ কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে নামবে। যে কোনো মূল্যে নাশকতা প্রতিরোধ করা হবে জানিয়ে সাবেক এ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দেশের দক্ষিণাঞ্চলে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে যেভাবে চিরুনি অভিযান চালিয়ে সন্ত্রাস দমন করা হয়েছিল এবারও সে রকম অভিযানসহ যে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, বিএনপি-জামায়াতের অব্যাহত নাশকতার বিরুদ্ধে এবার চূড়ান্ত প্রতিরোধ করা হবে। আমাদের কর্মীরা আর ধৈর্যের পরিচয় দিতে চায় না। আমরা পরিষ্কারভাবেই জানিয়ে দিতে চাই, বিজয় দিবস থেকেই নাশকতা প্রতিরোধে আমাদের শপথ নিতে হবে। এর পর যদি আর কেউ একটি আঘাত হানে, কোথাও যদি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে, যদি আমার দলীয় নেতা-কর্মীদের ওপর আঘাত করা হয়, সঙ্গে সঙ্গে তার পাল্টা জবাব দেওয়ার জন্য নেতা-কর্মীদের নির্দেশ দেওয়া হলো।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.