আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একটি রুপকথা লেখার আশায়- অকারণ গল্প

সত্যবাদী

করিম সাহেব আজ হটাত করেই গৃহ ত্যাগ করলেন। সব কিছু চলছিল ঠিকই; তবু কোথায় যেন তাল কেটে গেল। কি যেন এক চাঁপা অভিমান বুকে অফিস থেকে বাড়ি ফেরার বদলে তিনি হারিয়ে গেলেন। নির্বিরোধ করিম সাহেবের এমন ক্ষ্যাপা কর্মকাণ্ডের কোন পুর্ভাবাস পায়নি কেও। সকালে ২০ বছরের সহধর্মিণী বাজারের ফর্দ ধরিয়ে দিয়েছিলেন; রোজগারের হিসেবে সেটা একটু ব্যায়বহুল ছিল বৈকি।

তবে এতো আর নতুন কিছু নয়। এমন তো আগেও হয়েছে। একবার পুরো মাসের বেতন মোড়ের মস্তানের হাতে তুলে দিয়ে বাড়ি ফিরেছিলেন। মাসটা কেটেছে বাকির উপরে, উপরি ছিল নানা রকমের কটুবাক্যের বর্ষণ। -"এতো হাবাগোবা হলে চলবে বল? আর কারোটা নিলনা কেন?" তা মোড়ের সেই মস্তানটাকে একবার জিজ্ঞেস করতে চেয়েছিলেন করিম সাহেব, সাহসে কুলায় নি।

এমন নিরীহ করিম সাহেব আজ বাড়ি ফেরেননি। সহধর্মিণী অনেকক্ষণ অপেক্ষায় রইলেন জানালা ধরে। তারপর ছেলে রাহাতকে একটু সামনে এগিয়ে দেখতে বললেন; হয়ত রাস্তার মোড়ের সেই চায়ের দোকানটায় আড্ডা জমিয়েছে। যেখানে করিম সাহেবের একটি ভিন্ন পরিচয় রয়েছে। চায়ের কাপে তুমুল ঝড় তোলেন তিনি; সরকারের উত্থান, পতন, যুবসমাজের অধঃপতন,ইন্ডিয়া, পাকিস্তান, আমেরিকা, ইত্যাদি ইত্যাদি।

সাত্তারের লাল চা গলায় ঢেলে তিনি হয়ে ওঠেন একজন সাচ্চা বাগ্মি, কিছুক্ষনের জন্যে। সেখানেও আজ নেই তিনি। রাহাত আরেকটু এগিয়ে যায়, যদি দেখা মেলে তার বাবার। বাবার সাথে রাহাতের বেশ একটা সমঝোতার সম্পর্ক আছে। বয়ঃসন্ধিতে থাকা রাহাতের মনের অস্থিরতা করিম সাহেব অনুভব করেন; অনেকটা সময় তিনি ব্যয় করেন রাহাতের পেছনে।

রাহাত আজ তার সদ্য ভালো লাগার কথা জানাতে চেয়েছিল বাবাকে। কোথায় গেলেন করিম সাহেব? রাহাত গলিটা পেরিয়ে মূল রাস্তা পর্যন্ত ঘুরে আসে। আরও একটু যদি সামনে এগুতো, তাহলে হয়ত দেখা হয়েই যেত করিম সাহেবের টিফিন বাটিটার সঙ্গে। করিম সাহেব বাসার খাবার ছাড়া খেতে পারেন না। আসিয়া বেগমকে যখন বিয়ে করে আনলেন সেদিন থেকে তিনি তার রান্নার প্রেমে পড়ে আছেন।

আসিয়া বেগম করিম সাহেবের বিভিন্ন বিষয়ে বিরক্ত হলেও এই একটি বিষয় এখনও তাকে যৌবনের সেই দিন গুলিতে ফিরিয়ে নিয়ে যায়। প্রতিদিন অনেক যত্নে তিনি ভড়ে দেন টিফিন বাটির প্রতিটি ইঞ্চি। আজকের মেনু ছিল মুরগি আর আলুর ঝোল। রাস্তার নেড়ি কুকুরটা বেশ আগ্রহ নিয়েই চেটে খাচ্ছিল পড়ে থাকা বাটিটা থেকে। ঠিক তার পাশেই পড়ে আছে অফিসের ব্যাগটা! করিম সাহেব আজ গৃহ ত্যাগ করেছেন।

ফেলে গিয়েছেন তার নিত্য সঙ্গী অফিস ব্যাগ আর টিফিন বাটি। গৃহ ত্যাগের কোন কারণ ছিল না। অবশ্য কারণ কি লাগে? হটাত মনে হলেই তো বাধন ছিড়ে যায় অনেকের। হটাত মনে হলেই ছিড়ে খুঁড়ে ফেলা যায় তিলে তিলে জমে ওঠা স্বপ্ন গুলোকে। রহিম সাহেবের গল্পটা অনেকটা সেরকমই।

উহু কলমের ভুলে নয়, সত্যি রহিম সাহেবের গল্পটা আমি এই ফাঁকে বলে যেতে চাচ্ছি। একদেশে ছিলেন একজন রহিম সাহেব। তার অনেক দিনের স্বপ্ন ছিল দেশে আলুর চাষ করে রফতানি করবেন। দেশের মানুষ বলল আমরা আলু রফতানি করতে চাইনা, আমরা চাল রফতানি করতে চাই। রহিম সাহেব দেশের সব মানুষ মেরে তাদের চামড়া রফতানি করা শুরু করলেন।

রহিম সাহেবের গল্পটা এই খানেই শেষ। করিম সাহেব অবশ্য বাংলাদেশেই বাস করেন। বাংলাদেশের ঢাকা শহরের মিরপুর এলাকার মনিপুরে দু'রুমের একটি বাসা নিয়ে তিনি থাকেন। তার গৃহ ত্যাগ নিয়ে আমি আজকের এই গল্পটা লিখতে বসেছিলাম। শুরুতে মাথার ভেতরে একটা অস্থিরতা কাজ করছিল।

কিভাবে করিম সাহেবের গৃহত্যাগটাকে বাস্তব সম্মত রূপ দেব। ভাবছিলাম কি করে পাঠক কুলের মাথায় এই ধারণা গেঁথে দেব, করিম সাহেব আসলেই গৃহত্যাগী হতে চেয়েছিলেন। আসলে আমার এত কষ্ট করার দরকার ছিলনা। বাংলাদেশে কোন কারণ ছাড়াই ২০ দিনে ১০০ এর বেশি মানুষকে হত্যা করা যায়। তাই করিম সাহেবের গৃহত্যাগের আসলে কোন কারণ ছিল না।

তার পড়ে থাকা অফিস ব্যাগ আর টিফিন বাটির পাশেই তার পোড়া শার্ট এর টুকরো ছিল। করিম সাহেব গৃহ ত্যাগ করেননি, তার তেমন ইচ্ছেও ছিল না। কোন কারণ ছাড়াই পুড়ে কয়লা হয়ে তিনি ঢাকা মেডিক্যালের বার্ন ইউনিটে শুয়ে ছিলেন। অপেক্ষায় আছেন তার ২০ বছরের সহধর্মিণী, অপেক্ষায় আছে রাহাত, অপেক্ষায় আছে এই লেখক; একটি রুপকথা লেখার আশায়!

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.