আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মুরগির ছ্যাও এর নাম টুনটুনি

আমার একটা ভাল নাম ছিল - "আকাশ" যতদিন তুমি ছিলে

মুরগির ছ্যাও এর নাম টুনটুনি রহিম দিনের শেষে পানের শেষ টুকরোটা ছাড়িয়ে নিচ্ছিলো তখন । আকাশে মেঘ জমেছে বেশ , থেমে থেমে গুড়গুড় শব্দ করে যাচ্ছিলো । একটা মধ্যবয়সী লোক এসে রহিমকে বেশ নরম করেই বলল – ভাইজান যাবেন ? রহিম চোখ খুলে তাকিয়ে দেখলো বেশ গোফওয়ালা রোগা পাতলা একটা লোক বাক্স হাতে দাঁড়িয়ে আছে । সুদর্শন না হলে ও আগের দিনের ইলিয়াস কাঞ্চন এর লাহান হুবুহু । রহিম থুহ করে পানের টুকরোটা ফেলে বেশ নবাবী আয়েশে গলার গামছাটা কোমরে বেঁধে বলল – উঠেন মামা ।

ভদ্রলোক বেশ অবাক হয়েই জিজ্ঞেস করলেন – আরে আমি ত কোথা যাব সেটা জানতে চাইবা না ? রহিম তাকিয়ে বললো – স্যার আপনের চেহারায় হিরো হিরো ভাব আছে , চেহারায় জিজ্ঞেস করার কোন কিছু নাই । আপনে জিয়ানে যাইতে চান উইঠা বলেন আমি নিয়া যাইবো আর ভাড়া ইনসাফ কইরা দিলেই চলবো । ভদ্রলোক বেশ অবাক হয়েই হেসে উঠে বললেন বেশ মজার লোক ত আপনি । নাম কি ভাইজান ? - রহিম নাম আমার ভাইজান - বাহ সাথে বাদশাহ নাই হে হে হে - না স্যার গরীব মানুষদের নামের মধ্যেই শাহী ভাব থাহে কিন্তু আসলে তাঁরা গরীব । বড়োলোক দের নাম থাকে গরীবদের মতন আসলে তাঁরা বড়লোক ভদ্রলোক বেশ গম্ভীর হয়ে ভেবে দেখলেন আসলেই ত লোকটার মাথায় বেশ বুদ্ধি আছে দেখছি ।

তখন ই গুরিগুরি বৃষ্টি আরম্ভ হলো । রহিম রিস্কা থামিয়ে সিটের নিচ থেকে পলিথিন বের করে ভদ্রলোকটিকে দিলো নিজে ও মাথায় একটা প্লাস্টিক জড়িয়ে নিলো । হটাত করেই একটা ঝাঁকুনি লেগে পেছন থেকে মুরগীর বাচ্চার আওয়াজ শুনতে পেলো রহিম । রহিম জিজ্ঞেস করলো – স্যার মুরগীর বাচ্চা নাকি ? - জী রহিম ভাই মুরগীর বাচ্চাই - বাচ্চা দিয়া কি করবেন স্যার ? - আর বোলনা আমার মেয়ে টুসি , স্কুলে কোথায় যেনো দেখেছে মুরগীর বাচ্চা । সেদিন থেকে বায়না ধরেছে মুরগীর বাচ্চার জন্য , আজ পেয়েছি ।

- মুরগীর বাচ্চা ত রাস্তায় অভাব নাই এগুলো খোজার কি আছে স্যার - আরে এইটা যেনতেন বাচ্চা না এগুলো দেখতে অতীব সুন্দর - স্যার এগুলো কি বেশি দামি ? - আরে না অল্প দাম , ক্যানো তোমার লাগবে নাকি ? - স্যার আমার মেয়ে টুনটুনিরে দিতাম , পাইলে সে খুশি হইতো - আচ্ছা ঠিক আছে আমার কাছে ৬ টা আছে একটা তোমায় দিয়ে দিবো কেমন । রহিম মনে মনে বলল শুধু কালে কালে আর কত কি দেখবো । রহিম ভাবতে লাগলো আগের দিনে মানুষ বাঘ ভাল্লুক , কুমির এর দিকে নজর দিত । যে যত হিংস্র জানোয়ার পালত সেই বড়। যেমন রাজা বাদশারা বাঘ , হাতি , ঘোড়া পালতো তাই তাঁরা রাজা ।

গরীব যারা তাঁরা পালত পাখি , বিলাই আর মুরগীর বাচ্চা , গরু ইত্যাদি কিন্তু এখন কুত্তা বিলাই পালে বড়োলোক মানুষরা আর রাজারা পালে জানোয়ার হিংস্র কিছু মানুষগুলোকে । যারা রাজার হুকুমে খুন , রাহাজানি করে বেড়ায় । ভাবতে ভাবতে একটা গলির মোড়েই কিছু ছেলে এসে রিস্কার সামনে পথ রোধ করলো । ছিনতাইকারী । অস্ফুট স্বরে রহিম শুধু এতটুকুই দেখলো ।

শালার জানোয়ারের নাম নিতে দেরী সামনে আইতে দেরী হয় না । রহিমের মাথায় একটা থাপ্পর দিয়ে রিক্সা থেকে নামিয়ে দিলো এক জানোয়ার । রহিম মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ল । সে দেখলো ছিনতাইকারীর একজন তার আরোহীকে বাক্সটা দেবার জন্য ধস্তাধস্তি করছে । লোকটা করুন সুরে শুধু বলছে – ভাই এইটা আমার বাচ্চার জন্য কেনা মুরগীর বাচ্চা , আর কিছুই নাই ভাই সত্যি বলছি ।

ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে বাক্সটি পড়ে গেলো । রহিম দেখলো সুন্দর কয়েকটা বাচ্চা মুরগী পড়ে গেলো । এমন সময় পেছন থেকে গাড়ির শব্দ শুনে ছিনতাইকারী দ্রুত স্থান ত্যাগ করলো , রহিম দৌড়ে এসে বাচ্চাগুলোকে ধরতে এলো । বৃষ্টিতে ভিজে বাচ্চাগুলো চুপচুপা হয়ে গেলো । গুনে গুনে দেখলো বাচ্চা ৫টা আরেকটা টিউ টিউ করে সামনে চলে গেছে ।

রহিম বলল – ভাইজান আপনি রিস্কায় উঠে বহেন আমি লইয়া আইতাছি । এই বলে রহিম সামনে বড় রাস্তায় চলে গেলো তার সামনে সোনালি রঙ্গের একটা ফুটফুটে মুরগীর ছ্যাও । হাত বাড়িয়ে ধরতে গিয়ে ও ধরা হলো না রহিমের । ওপাশ থেকে একটা ট্রাক এসে উড়িয়ে নিয়ে গেলো রহিমকে । রিক্সায় বসা ভদ্রলোক তখন স্তব্ধ হয়ে রইলেন কিছুক্ষন ।

দৌড়ে সামনে গিয়ে দেখলেন ততক্ষনে রহিম ইহলোক ত্যাগ করেছে , ঝুম বৃষ্টিতে লাল রঙ এর পানি চারদিকে । এরই মাঝে টুই টুই করে একটা আওয়াজ শুনে পেছনে তাকিয়ে দেখলেন সেই মুরগীর বাচ্চাটা । টুনটুনির জন্য নেয়ার বায়না করা সেই বাচ্চাটার জন্য একটা বাবা আজ জীবন দিয়ে দিলো । এই মুরগীর বাচ্চাটার দাম কত হতে পারে ? চোখ দিয়ে পানি বেড়িয়ে এলো তখন। বাচ্চাটিকে উঠিয়ে ততক্ষনে চলে এলেন ভদ্রলোক , রহিম এর পাশে বিরাট ঝটলা বেঁধে গিয়েছে তখন ।

ঝামেলায় জড়াতে চাননি উনি । বাসায় ফিরে উৎফুল্ল বাচ্চার হাতে ৫টি মুরগীর বাচ্চা উঠিয়ে দিলেন । মেয়ে তখন খুশীতে পাগল । ৬ নাম্বারটা বুক পকেট থেকে বের করে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকলেন । মেয়ে তখন বাবাকে বলল – বাবা এইটা ও আমার জন্য ? ভদ্রলোক মেয়ের দিকে তাকিয়ে বলল হ্যা বাবা এটা ও তোমার , এই নাও টুনটুনিকে ।

বাবা এর নাম কি তুমি রেখেছো ? মেয়ের দিকে তাকিয়ে চোখ ছলছল করে উঠল । কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারলেন না গলায় আটকিয়ে যাচ্ছিলো । মেয়ে তখন বাচ্চার সাথে কথা বলতে শুরু করে দিয়েছে । এই মুরগীর ছ্যাও তোমার নাম কি টুনটুনি ? টুনটুনি টিউটিউ করে উঠলো । যার মানে হ্যা আমার নাম টুনটুনি ।



এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।