আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কি অদ্ভুত মিল দুজনের কথায় ও কাজে!

লড়াই করে জিততে চাই

ফেরেস্তা নন! যদিও পূজা, নৈবেদ্য, সেজদা কোন অংশে কম পান না। কিন্তু মানুষ তো বটে! সেই কোন ১৯৯৬ সালে বলেছিলেন, আবার এখন ২০১৩ সালে এসে বলছেন। মুখের পরিবর্তন হলো শুধু। কথা রয়েগেলো একই!কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে ১৮ বছর পরেও ঠিক একই ভাষণ, একই রকম ভঙ্গিমায় অন্যজনের কন্ঠ দিয়ে বের হচ্ছে। দিনের পর দিন একই ধারাবাহিক নাটকের পর্ব বাই পর্ব পুনঃমঞ্চায়ন চলছে।

দু’একটি পর্বের এখানে সেখানে শুধুমাত্র একটু নতুন রং লাগিয়েই চালিয়ে দেয়া হচ্ছে। শুধু ৯৬-এ যারা অভিনেতা ছিলেন আজ তারা দর্শক আর সেদিনের দর্শকসারিতে থাকা অতিপরিচিতরা আজ অভিনয় মঞ্চে। সেদিনের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া সেদিনের বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন,“নির্বাচনে আসুন!বাসে আগুন দিয়ে,বোমা হামলা করে মানুষ হত্যা করবেন না। হত্যা,সহিংসতা বন্ধ করুন। ” একবার নয় বার বার বলেছিলেন।

আরো বলেছিলেন, তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা একটি উদ্ভট ব্যবস্থা, পাগল আর ফেরেস্তাই শুধু নিরপেক্ষ হতে পারে। নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়কের দাবী ছেড়ে নির্বাচনে আসুন। আমরা গ্রহণযোগ্য স্বচ্ছ নির্বাচন করতে প্রস্তুত,ব্লা ব্লা ব্লা....! খালেদা জিয়ার আহবানে সেদিন সাড়া দেন নি শেখ হাসিনা। হরতাল, অবরোধ, জ্বালাও-পোড়াও হয়েছে। জীবন গিয়েছে পাবলিকের,সম্পদের ক্ষতি হয়েছে জনগণের।

তারপর সন্ত্রাস দমনের নামে হয়েছে যৌথবাহিনীর অভিযান। অসংখ্য মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করা হয়েছে, গ্রেফতার করে জেলে পোরা হয়েছে। পাকলিককে তখনও দেখানো হয়েছে সংলাপ,আহবান, প্রত্যাখ্যান আরো কতো রকম খেলা! আজকের পরিস্থিতিরও মৌলিক কোন পরিবর্তন হয় নি। তবে পরিস্থিতি এবং পাবলিকের অবস্থানের পরিবর্তন না হলেও মৌলিক পরিবর্তন হয়েছে দুই নেত্রীর অবস্থানের। শেখ হাসিনা এখন প্রধানমন্ত্রী আর খালেদা জিয়া বিরোধীদলীয় নেতা।

ঠিক উল্টো অবস্থানে!এবারও শেখ হাসিনা বার বার খালেদা জিয়াকে আহবান করছেন নির্বাচনে আসার। খালেদা জিয়ার মতোই আঙুল উচিয়ে বলছেন, ‘মানুষ হত্যা করবেন না!গাড়িতে আগুন দিয়ে, ভাংচুর করে, সন্ত্রাসী কার্যকলাপ করে সরকারকে হঠানো যাবে না’! তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবী আর ভুলেও মুখে নিয়েন না। আলোচনায় বসে সমস্যার সমাধান করুন। হরতাল অবরোধ বন্ধ করুন, মানুষ খুন বন্ধ করুন। ৯৬ এর দ্বিতীয়ধাপ, সহিংসতা প্রতিরোধে যৌথবাহিনীর অভিযান, সেটাও ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে।

কৃষক-শ্রমিকের অবস্থা ৯৬-এর মতোই শোচনীয়। চরম নিরাপত্তাহীনতায় সাধারণ মানুষ। আগের মতোই ব্যবসা-বাণিজ্য চরম ক্ষতিগ্রস্ত। একই কায়দায় হামলা হচ্ছে সংখ্যালঘুদের উপর। ৯৬ সালের সেই সংকটময় পরিস্থিতি প্রতিদিনই পাবলিকের সামনে নতুন করে হাজির হচ্ছে।

১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারী একতরফা নির্বাচন করেছিলো খালেদা জিয়ার বিএনপি। যুদ্ধাপররাধী জামায়াতে ইসলামও তখন শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগের সাথে জোটবদ্ধ আন্দোলন চালিয়েছিলো বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে। শেখ হাসিনা তখন আজকের যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযম,নিজামী, মুজাহিদদের সাথে একই মঞ্চে বক্তৃতা করেছেন,কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়েছেন রাজপথে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগ,জাতীয় পার্টি ও জামায়াতে ইসলামীসহ বেশির ভাগ দলই ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচন বর্জন করেছিল। তৎকালীন ক্ষমতাসীন দল বিএনপি সেদিন ফ্রিডম পার্টিসহ কয়েকটি ছোট দল নিয়ে নির্বাচন করেছিল।

আগামী ৫ জানুয়ারী ২০১৪ নির্বাচনে সেদিক থেকে আওয়ামী লীগ বেশ সুবিধাজনক অবস্থানেই আছে। এখন আওয়ামী লীগের আছে মহাজোট। ডান-বাম মিলিয়ে সাথে আছে কয়েক হালি রাজনৈতিক দল। এরশাদের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে না থাকলেও থাকছেন সাবেক ফার্স্টলেডী রওশন এরশাদের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টির এক অংশও। তবে ৯৬’র সেই বিএনপি সরকার মাত্র দেড় মাস স্থায়ী হয়েছিল।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আইন পাস করে তার অধীনে আবার নতুন নির্বাচন দিতে আওয়ামী লীগ সেদিন বাধ্য করেছিলো বিএনপিকে। তখনকার বিরোধী দলের প্রতিরোধের মুখে সারা দেশের কয়েক হাজার কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ কর্মকর্তারা ঢুকতেই পারেননি। অনেক কেন্দ্র ভোটারবিহীন থাকলেও ভোট গ্রহণ হয়েছিল। নারায়ণগঞ্জের আদমজী নগরের ছয়টি এবং সিদ্ধিরগঞ্জ বিদ্যুৎকেন্দ্রের একটি কেন্দ্রে চেষ্টা করে সেনাবাহিনীও ঢুকতে পারেনি। গোপালগঞ্জেও একই পরিস্থিতি হয়েছিল।

সে বার ৩০০ আসনের মধ্যে ৪৮টি আসনের প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছিলেন। নির্বাচন হয়েছিল ২৫২টি আসনে। শেষ পর্যন্ত কমিশন ২৪২ আসনের নির্বাচনের ফল গেজেট আকারে প্রকাশ করেছিল। বাকি ১০টি আসনের নির্বাচনী ফল কমিশনেই পৌঁছেনি তখন। ৫ জানুয়ারী নির্বাচন এবং পরবর্তী সময়ে বিএনপি একই নাটকের পুনঃমঞ্চায়ন করতে পারবে বলে মনে হচ্ছে না।

রাজপথের আন্দোলনে বিএনপি যথেষ্ট দুর্বল সেটা বার বার প্রমাণিত। এখনও হরতাল-অবরোধে বিএনপি নয়, জামায়াতই মূখ্য ভূমিকা পালন করছে। যদিও যুদ্ধাপরাধের বিচার ইস্যূতে জামাত বিপর্যস্ত। এদিকে বিনা নির্বাচনে সরকার গঠনের মতো সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে গিয়েছে আওয়ামী লীগের মহাজোট। ৯৬ নাটকের শেষ পর্ব নিয়ে এখনও নিশ্চিত কিছু বলার সময় হয়নি।

তবে অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে মহাজোটের নতুন সরকার কয়েক বছর টিকে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে দীর্ঘস্থায়ী সহিংসতা আর অস্থিরতার দিকেই এগুচ্ছে বাংলাদেশ। যা কৃষক, শ্রমিক, মেহনতী মানুষ কেন লুটেরা শাসক শ্রেণীর বড় অংশের জন্যও অশুভ। পাঠক লাল গোলদার ২১ ডিসেম্বর ২০১৩

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.