আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অস্থির চালের বাজার

বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের টানা অবরোধে ভেঙে পড়েছে চালের পরিবহন ব্যবস্থা। ধারাবাহিক রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অস্থির রাজধানীর চালের বাজার। গত ১৫ দিনের ব্যবধানে মানভেদে চালের দাম ধীরে ধীরে বাড়তে শুরু করে। গতকাল পর্যন্ত পাইকারি বাজারে কেজিতে বেড়েছে দুই থেকে তিন টাকা। আর খুচরা বাজারে বেড়েছে চার থেকে ছয় টাকা।

এতদিন চাল ব্যবসায়ীদের গোডাউনে পর্যাপ্ত মজুদ থাকায় চালের দাম খুব একটা বাড়েনি। কয়েক দিন ধরে ব্যবসায়ীদের চালের মজুদ শেষ হয়। গত শনিবার পঞ্চম দফা অবরোধের সময় বাড়ানোয় শুক্রবার রাতেই সরবরাহ কমে যায়। সরবরাহ কমে যাওয়ায় রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে চালের সংকট সৃষ্টি হতে শুরু করেছে। পাশাপাশি চাল পরিবহন ভাড়া দ্বিগুণ বেড়ে যাওয়াকে প্রধান কারণ বলে অনেকে মনে করছেন।

গতকাল সরেজমিন বাজার ঘুরে জানা যায়, ১৫ দিন আগে খোলা বাজারে ৫০ কেজি ওজনের এক বস্তা মিনিকেট চাল বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ৩৫০ টাকায়। গতকাল সেই চাল বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৬০০ টাকায়। অর্থাৎ প্রতি বস্তায় বেড়েছে আড়াইশত টাকা। পাইকারি ও খুচরা বাজারের চাল ব্যবসায়ীরা বলছেন, নানা অজুহাতে চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে চালের দাম খুচরা বাজারে কেজিপ্রতি চার থেকে পাঁচ টাকা বেড়ে যায়। বর্তমানে খুচরা বাজারে মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৩৬ টাকায়।

পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা আরও বলছেন, চলতি আমন মৌসুমে ফলনও হয়েছে ভালো। তারপরও চালের দাম বাড়ছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, অন্য সময়ে হরতালে সড়ক পথ বন্ধ থাকলেও অনেকটাই সচল থাকে নৌ ও রেলপথে পণ্য পরিবহন। কিন্তু এখন সব পথ অবরোধের কারণে সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় চালের ঘাটতি বাড়ছে। আবার ঝুঁকি নিয়ে কিছু পরিবহনে চালের সরবরাহ হলেও দিতে হচ্ছে বাড়তি ভাড়া।

অন্য সময়ে দিনাজপুর থেকে ২০-২২ হাজার টাকায় চালভর্তি ট্রাক এলেও এখন ৪০ থেকে ৪২ হাজার টাকা দিতে হচ্ছে। একইভাবে শেরপুর জেলা থেকে ১৫ হাজার টাকা ভাড়া এখন গুনতে হচ্ছে ২২ থেকে ২৫ হাজার টাকা। চাল পরিবহনের সময় ভাঙচুর ও অগি্নসংযোগের কারণেও বড় অংকের ক্ষতির মুখে পড়ছেন অনেক ব্যবসায়ী। ফলে খোলাবাজারে দাম হু হু করে বাড়ছে। কারওয়ান বাজারের চাল ব্যবসায়ী খোরশেদ আলম বলেন, ঘন ঘন হরতাল ও পরিবহন ধর্মঘটের কারণে পণ্য পরিবহন খরচ বৃদ্ধি পাওয়াসহ বিভিন্ন অজুহাতে চালের বাজার অস্থির।

দাম স্থিতিশীল হবে কিনা কেউ বলতে পারছে না। প্রকৃতির নিয়মে এখন চালের দাম একটু সহনীয় থাকা দরকার। কিন্তু হয়েছে উল্টো। চালের দাম বাড়ছে। কিন্তু চাল ব্যবসায়ীরা বলছেন, যেসব জেলায় ধান বেশি উৎপাদন হয়, সেসব জেলায় চালের দাম বাড়েনি।

মিল মালিক ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, চালের দাম বৃদ্ধির পেছনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের টানা অবরোধ ও সহিংস রাজনৈতিক কর্মসূচি দায়ী। এ ছাড়া মিরপুর বাজারের চাল বিক্রেতা আবুল কাশেমের অভিযোগ, টানা অবরোধের কারণে কোনো কারণ ছাড়াই চালের দাম বাড়ছে। খুচরা চাল বিক্রেতারাও বলছেন, চালের বাজারের ওপর সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ বা মনিটরিংও নেই। তবে চালের দাম কমবে এমন তথ্য দিয়ে বাবু বাজারের পাইকারি চাল ব্যবসায়ী সমিতির সহসভাপতি আমান উল্লাহ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, চালের দাম বাড়ানোয় আমাদের কোনো কারসাজি নেই। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে বিভিন্ন জেলা থেকে চাল আসতে থাকলে দাম কিছুটা কমে যাবে।

খুচরা বাজারের পরিস্থিতি : গতকাল রাজধানীর কারওয়ান ও মিরপুর বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বর্তমানে প্রতি কেজি মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে ৪৮ টাকা থেকে ৫০ টাকা, মোটা চাল হিসেবে পরিচিত বিআর-২৮ কেজিতে চার থেকে পাঁচ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৩৬ থেকে ৪০ টাকায়। গুটি চাল বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৩৭ টাকা, বিআর-২৯ বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা কেজি দরে। আগে বিক্রি হয়েছিল ৩০ থেকে ৩২ টাকা কেজি দরে। পাইজাম বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৪২ টাকায় ও লতাশাইল ৪৫ থেকে ৪৮ টাকায়। জানতে চাইলে কারওয়ান বাজারের খালেদ রাইস সেন্টারের মালিক খালেদ হোসাইন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ১৫ দিন আগে থেকে খুচরা বাজারে চালের দাম বাড়তে শুরু করে।

অবরোধের মেয়াদ বাড়তে থাকায় চালের দামও বাড়ছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে দাম আরও কমে যাবে।

পাইকারি বাজারের চাল : কারওয়ান বাজারের মেসার্স নাহার চাল বিতানের মালিক এনামুল হক বলেন, অবরোধ ও পণ্য পরিবহন ভাড়া বেড়ে যাওয়ায় খুচরা বাজারের মতো পাইকারি বাজারেও চালের দাম বেড়েছে। গতকাল বাজার ঘুরে দেখা গেছে, নাজিরশাইল কেজিতে চার টাকা বেড়ে ৪৭ থেকে ৪৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একইভাবে বাঁশকুড়া ৫ টাকা বেড়ে ৫০ থেকে ৫২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

আবার অনেক পাইকারি ব্যবসায়ী নানা অজুহাতে তার মোকামে থাকা চাল বিক্রি কমিয়ে দিয়েছেন। এসব কারণে আগামী দিনগুলোতে পাইকারি বাজারে চালের কৃত্রিম সংকট শুরু হতে পারে।

 

 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।