আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অন্ত দৃষ্টি ও মানুষ চেনা



ছোট বেলা থেকেই নানান পেশার, বিবিধ চরিত্রের, বহু ধরনের মানুষের সাথে মেশার সৌভাগ্য হয়েছে, এটাকে একটা বিশাল সৌভাগ্যেই বলতে হয় কারন অনেকেই জীবনের একটা সময় আসে যখন এই মিশতে না পারার জন্য একধরনের অনুশোচনা বোধ করে। স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটি আর চাকুরী জীবনের কথা বাদ এই দিলাম কারন চাকুরীতে এসে কম বেশী সবাই অনেক অমিশুক মানুষও অনেক মানুষের সাথে মিশে সেটা পারিপার্শ্বিকতার কারনে হোক বা এক ধরনের মানুষিক পরিবর্তন যে ভাবেই দেখিনা কেন। এটার এক বিশেষ উপকার হচ্ছে খুব সহজে না হলেও মানুষ কে চিনতে কিছুটা হলেও সুবিধা হবে। আপনি যতক্ষণ পর্যন্ত চোখ দিয়ে মানুষকে পর্যবেক্ষণ ও যাচাই করবেন ততক্ষণ পর্যন্ত আপনি তার অন্ত দৃষ্টির বিন্দু বিসর্গও বুঝবেননা। আত্ম বৈশিষ্ট্য ভুলে গিয়ে যখন আপনি কেউকে অন্ত দৃষ্টি দিয়ে দেখবেন হৃদয় আর মস্তিস্ক দিয়ে বুঝার চেষ্টা করবেন তখনি তাকে অনুধাবন করতে পারবেন।

প্রসঙ্গত একটা ঘটনা বলছি ইউনিভার্সিটির সেকেন্ড ইয়ার ফাস্ট সেমিস্টারে ৩ ক্রেডিট এর একটা বিষয় ছিল আধুনিক পদার্থ বিঞ্জান ক্লাস নিতেন বাংলাদেশের অত্যন্ত সনামধন্য মেধাবী প্রফেসর ডঃ আলী আজগর স্যার যদিও অনেক নাম্বার দিতেন তথাপি অত্যন্ত জটিল হওয়ার কারনে স্যার এর চ্যাপ্টার থেকে আমরা প্রশ্নের উত্তর দেওয়া থেকে বেশীর ভাগই বিরত থাকতাম। যত জটিল বিষয়ই হোকনা কেন স্যার ক্লাস শুরুই করতেন খুবই সহজ ও সাবলীল ভাবে ঠিক এমন ভাবে স্যার ক্লাস শুরু করতেন যে আমরা কোয়ান্টাম ফিজিক্সের অমুক বিষয়টা তো বুঝি, খুবই সহজ, সবাই জানি কিন্তু তারপরও তোমাদের একটু বলি তারপর তার লেকচার শুরু করতেন। এখানে স্যারের অন্ত দৃষ্টি ছিল অনেক স্বাভাবিক ও সুদৃঢ়, স্যার সবাইকে নিজের মত মেধাবী ভাবতেন ও সমান গুরুত্ব দিতেন। এই ধরনের বিশাল মনের মানুষের সংখ্যা খুবই নগন্য। এই ধরনের মানুষেরা ঠিক যেভাবে চিন্তা করে ঠিক সেভাবেই অন্যকে দেখে।

কিন্তু তার প্রকৃত রুপ দেখতে গেলে তার অন্ত বৈশিষ্টের দিকে গভীর মননিবেশ করতে হবে। একটা মানুষের অন্ত দৃষ্টি তার অনেক গুলো বৈশিষ্টের মাধ্যমে বোঝা যায়। একজন প্রকৃত ধার্মিক মানুষ যেখানেই যাক সবার আগে তার ধর্মীয় উপাসনালয়ের খোজ করে সেখানে গেলে কোথায় সে বিধাতার প্রাথনা করতে পারবে। একজন সু পাঠক কোথাও গেলে সবার পূর্বে পাঠাগার, লাইব্রেরী, পত্রিকা বিক্রয় করার স্থান খুঁজে নেয়। একজন আলোকচিত্রশিল্পী কোথাও গেলে দর্শনীয় স্থান আগেই খুঁজে নেয়।

ভোজনবিলাসী যেখানেই যাক সে স্থানের প্রসিদ্ধ খাবারের আর রেস্টুরেন্টের নাম পূর্বেই জেনে নেয়। আবার এমন কিছু কিছু মানুষ পাবেন যারা স্থান কাল পাত্র ভেদে তাদের পছন্দ বা কার্যাবলী নির্ধারণ করে। প্রকৃতি গত ভাবে প্রতিটি মানুষেরই অন্ত দৃষ্টি সৎ, পরিবেশ ও পরিস্থিতির কারনে তা পরিবর্তন হয় মাত্র। এই পরিবর্তনের পরিমান সবার ক্ষেত্রে সমান নয়। যেমন পশুদের বুদ্ধিমত্তা আর অন্ত দৃষ্টি নিম্ন স্তরের বলে তাদের গায়ের জোর অনুমোদিত কিন্তু মানুষের বুদ্ধিমত্তা আর অন্ত দৃষ্টির স্তর অনেক উঁচুতে হওয়ার কারনে মানুষের বুদ্ধিমত্তার জোর অনুমোদিত নয়।

স্পষ্ট ও মৃদু ভাষী হন অন্ত দৃষ্টির গভীরতা বেড়ে যাবে বহু গুন। অন্ত দৃষ্টি সৎ রাখুন সবাই আপনাকে বিশ্বাস করবে। সততা আর মৃদু ভাষীতাই যথেষ্ট আপনার গ্রহন যোগ্যতা বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য। আপনার গ্রহন যোগ্যতা যতই বাড়বে আপনার বন্ধু ও পরিবার ব্যাপ্তিতে, আপনার অন্ত দৃষ্টির গভীরতাও ততটা বাড়বে। আপনার মা, বাবা, ভাই , বোন, স্ত্রী, সন্তান এরা আপনার সবচেয়ে কাছের মানুষ এদের দিয়ে সরবাগ্রে আপনি আপনার অন্ত দৃষ্টির গভীরতা যাচাই ও পরীক্ষা করুন।

তার পর ধীরে ধীরে তার ব্যেপ্তি আপনার আশে পাশে বাড়িয়ে তুলুন। কোণ বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিবেননা। যে কাজের জন্য যতটুকু সময় দরকার ঠিক ততটুকুই সময় নিন। আমরা যেমন পরাশুনার ক্ষেত্রে সাধারনত মিড টার্ম পরীক্ষায় যত টুকু সময় ব্যয় করি তার চেয়ে বেশী ব্যয় করি ফাইনাল পরীক্ষায় কিন্তু কেন এর মুল কারন আমাদের গুরুত্বতা বেশী দেই বড় অংশে যেকোন ছোট অংশে আমরা গুরুত্ব দেই কম। শিক্ষা জীবনে এমন অনেক বন্ধু পেয়েছি যারা মিড টার্ম এর মত ছোট পরিক্ষাকেও সমান গুরুত্ব দিত বিশাল একটা নাম্বার ফাইনালের পূর্বেই উঠিয়ে রাখত।

এক্ষেত্রে বলব এই সব বন্ধুরা তাদের নিজেদের পরাশুনার ব্যাপারে অন্ত দৃষ্টি অনেক গভীর তারা নিজেরা নিজেদের শক্তিশালী আর দুর্বল অংশ গুলো খুবই ভালো ভাবে চিহ্নিত করেছে। নিজেকে যখনই পরিপূর্ণ রুপে বুঝে যাবেন যে কোন কাজে আপনার উদ্দেশ্য, সফলতা, সফলতার পরিমান সঠিক ভাবে নিরুপন করতে পারবেন তখনই অন্যেকেও সহজেই বুঝতে পারবেন। নিজের ভুল গুলো নিয়ে বেশী ভাবুন সেগুলো সংশোধন করার আপ্রান চেষ্টা করুন প্রতিদিন অন্তত ৫ টি নিজের ভুল বের করুন ও তা সংশোধনের চেষ্টা করুন দেখবেন তা নিজের অজান্তেই অভ্যাসে পরিনত হয়েছে। সমাজসেবা মূলক কাজের সাথে সামর্থ্যানুযায়ী প্রচারবিহীন ভাবে যুক্ত থাকুন দেখবেন প্রতিনিয়ত নিজেকে ভিন্ন রুপে আবিষ্কার করছেন মানুষের প্রকৃত চেহারা পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছেন। মনে রাখবেন মানুষের প্রকৃত রুপ উন্মোচন করা ও প্রচার করা আপনার মুখ্য উদ্দেশ্য নয় মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে অভিঞ্জ্যতা থেকে ভবিষ্যতের জন্য সাবধানতা অবলম্বন করা বা আত্ব সতর্কতা অবলম্বন করা মাত্র।

চাকুরী জীবনে অনেক সহকর্মীকে দেখেছি দুই জনই আমার কাছে এসে একে অন্যের নামে বদনাম করে গেছে কিন্তু অফিস শেষে আবার দেখেছি একই সাথে মোটরবাইকে চড়ে আবার নিউমার্কেট গিয়েছে জিন্স প্যান্ট কিনতে এই রকমের ঘটনায় প্রথম দিকে খুব অবাক হলেও খুবই স্বাভাবিক বিষয় হয়ে দাড়িয়েছিল তা পরবর্তীতে। এটাও মানব চরিত্রের এক বিশাল দিক। কেউকেই খুবই দ্রুত বিশ্বাস করবেননা, অবিশ্বাসও করার দরকার নেই অন্ত দৃষ্টিকে কাজে লাগান, পর্যবেক্ষণ করুন তারপর তার সাথে চলুন। খুবই কাছের বন্ধুর অথবা মানুষের কাছে আমরা অনেক সময় আমাদের একান্ত ব্যক্তিগত ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য শেয়ার করি, মানুষ হিসেবে এটা অস্বাভাবিক কোন বিষয় নয় হয়ত এই শেয়ার এর মাধ্যমেই আপনি অনেক উপকার পেয়েছেন, বিপদ থেকে উৎরানোর সু পথও পেয়েছেন কিন্তু এই বন্ধু ও গুরুত্বপূর্ণ মানুষটি নির্বাচন করার ক্ষেত্রে অনেক সতর্ক হন। সবসময় ধার্মিক, সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের সহচর্েয থাকুন।

নিজেই করুন নিজের কাজ, পারতপক্ষে অন্যের সহায়তা ছাড়া কৃত কাজ আত্ম নির্ভরশীলতা ও আপনার আত্ব বিশ্বাসকে বাড়িয়ে দিবে বহু গুনে। আপনার পরিচিত প্রত্যেক সফল ও মেধাবীদেরকে দেখুন অন্ত দৃষ্টি দিয়ে, এদের প্রত্যেকের ভালো কাজের পদ্ধতি খুবই মনযোগের সাথে অনুসরন করুন, পর্যবেক্ষণ করুন। মনে রাখবেন কারো কর্ম পদ্ধতি নকল করবেননা, অনুসরন করুন, নিজের মত করে নিজের পদ্ধতি তৈরি করুন। আপনি যখন মনোযোগের সাথে ১০ জন মানুষের কর্ম পদ্ধতি নিয়ে পর্যালোচনা করবেন নিজেই একটি নতুন বা তার চেয়েও আরও ভালো পদ্ধতির উদ্ভাবন করতে পারবেন। জনপ্রিয়তা লাভঃ প্রতিটি কাজে আত্মবিশ্বাসী, সৎ ও সাহসী থাকুন, নীতি বজায় রাখুন, খুব ঘনিষ্ট বন্ধুর সাথে যেভাবে কথা বলুন ঠিক সেভাবেই অন্য বন্ধুদের সাথেও কথা বলুন, কখনই রেগে যাবেননা, কারো উপদেশ বা বুদ্ধি গ্রহন না করতেই পারেন কিন্তু মনোযোগের সাথে তা শ্রবণ করুন।

জন্মদিন, বিবাহ বার্ষিকী, বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসবে(ঈদ, পূজা, বড়দিন প্রভৃতি) সকল ধর্মের বন্ধুদের ও আত্মীয় স্বজনদের শুভেচ্ছা জানান। বিশেষ দিন গুলো মনে রাখুন। কখনই উপদেশ আকারে কেউকে কিছু বলবেননা এমনকি ছোটোদের উদ্দেশ্যেও না, মন্তব্যের আকারে আপনার মতামত প্রকাশ করুন। কেউকে ছোট করবেননা, মনে রাখবেন কারো ভুলত্রুটি ধরিয়ে দেওয়ার সর্বোৎকৃষ্ট উপায় হচ্ছে সরবাগ্রে তার ভালো কাজ গুলা তার সম্মুখে তুলে ধরা, তার পর তার ত্রুটি যুক্ত কাজ গুলার ভিন্ন পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করা, প্রশ্ন করে তাকেই উত্তর দেওয়ার সুযোগ দিন। আপনার জনপ্রিয়তার ধারে কাছেও কেউ ঘেষতে পারবে না।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।