আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ধ্বংসস্তুপ

আমি এমন এক সাধারন মানুষ হতে চাই যে অসাধারন হবার পেছনে দৌঁড়ায়না এবং বিনা প্রশ্নে কিছু গ্রহন করেনা ।

চিনির কৌটার উপর অজস্র পিঁপড়া নিজেদের মনের খুশীতে বিচরণ করছে । দুধ যতোটুকু তাও আছে চা পাতা শেষ হয়ে গেছে । কিছু টি – ব্যাগ কিনে এনে রেখেছিলো বলে মনে করতে পারে । সেগুলো সেভাবেই পড়ে থাকবে কিনা বলতে পারেনা ।

নতুন দুই সেট থালাবাটি সপ্তাহ দুয়েক আগে কিনে রান্নাঘরের তাকের পেছনে মাত্র বসিয়েছিলো । ব্যবহার করা হয়েছে মাত্র তিনদিন হলো । মার্কেটে গিয়ে বেশ দেখেশুনে শখ করে কিনেছিলো ।

আধোয়া কাপড়চোপড়গুলো ধুয়ে ছাদে শুকাতে দিয়েছিলো । সব বাসায় এনেছে ।

গুছিয়ে ভাঁজ করে সব পরিপাটি করে রাখতে পারেনি । সব গেস্টরুমের কোনায় এক জায়গায় স্তুপের মতো পড়ে রয়েছে । ভাবতে ভাবতে মনে পড়লো ছুটা বুয়াকে মাসের বেতন দেওয়া হয়নি । পার্স থেকে কিছু টাকা বের করে নিলো । এদিকে মনে হলো চুলাটা এখনো জ্বালিয়ে রেখেছে ।

প্রায়ই এমন হয় । প্রবল অস্থির মন ভাবতে থাকে হয় চুলাটা জ্বালিয়ে রাখা হয়েছে নয়তো মোবাইলটা সাথে নেওয়া হয়নি নয়তো এমন অনেক কিছু যা না হওয়া সত্ত্বেও হয়েছে বলে ভ্রম হতে থাকে । অস্থিরচিত্তের ভ্রম আত্মবিশ্বাস বিনাশী এক ভয়ংকর মারণাস্ত্র । ব্যক্তির পারিপার্শ্বিকতা এই মারণাস্ত্রের ট্রিগার একবার চাপিয়ে দিলেই হলো । স্লো পয়জনের মতো ধীরে ধীরে মানুষকে আত্মিক ক্ষয়িষ্ণুতার পথে নিয়ে যেতে থাকে ।



একটু এগোতেই দৈনিক খবরের কাগজের সাথে পা জোড়ার স্পর্শ লাগলো । হাতে নিতেই সেই পুরনো একঘেঁয়ে সব খবর দেখেই প্রথমে মনে করলো ছুঁড়ে ফেলে দেয় । পরের মুহূর্তেই মনে হলো নিজেকে এসবের সাথে প্রস্তুত না করে করেই আসলে অনুভূতিতে ভোঁতা হয়ে গেছে । আয়নার পেছনের দিকে বড় দৃশ্যমান বস্তুগুলো না দেখলে নিজেকে কি আয়নায় চেনা যায় ? এসবকে এড়িয়ে গিয়ে প্রাত্যহিক জীবনে মধ্যবিত্ত যেভাবে বাঁচতে চায় , বাঁচবার আকাঙ্খা পোষণ করে তাতে কি যায় আসে ? আগুনের আঁচ শেষ পর্যন্ত তো ঠিকই গায়ে এসে লাগে । পত্রিকা খুললেই ছেলের হাতে বাবা খুন , টিভির চ্যানেল উল্টালেই নৃশংসভাবে অমুক জায়গায় পরিবারের সকলকে জবাই , রাস্তায় বেরুলেই প্রায় প্রতিদিনই কোন না কোন স্থানে গণপিটুনী এসব বাস্তবতাকে চোখে ঠুলি পরিয়ে যাপিত জীবনের সাথে কীটপতঙ্গের জীবনের পার্থক্য কোথায় ?

অনেকদিন পর খোলা মনে এভাবে ভাবতে ভাবতে নিজের উপর কিঞ্চিত সন্তুষ্ট হতে পারলো ।

মনে হতে লাগলো এখনো মগজ এখনো সম্পূর্ণ বিক্রিত হয়ে যায়নি । আবার গিয়ে সকল বাথরুমের বেসিনের নল চেক করে আসলো । প্রতিটাই বন্ধ আছে । ঘরগুলোকে পুনরায় একটু দেখে নিয়ে এবারে নিজেকে শক্ত করে নেওয়ার পালা এসেছে বুঝে নিলো । নীরার মনে হতে লাগলো আমাদের অপর মানুষের প্রতি সংবেদনশীলতা , আত্মীয়তা , বাৎসল্যসুলভ সামাজিকতা , জাতপাতের বিভাজন না করা দৃষ্টিভঙ্গী ইত্যাদির কাঠামো গরীবের জোড়াতালি দিয়ে বানানো ঘরের মতো ।

ঝড়ের রাত , দুর্যোগের রাতে তাসের ঘরের মতো সবকিছু ভেঙ্গে পড়ে আসল চিত্রটা ন্যাংটা হয়ে বেরিয়ে এসে নিজেদের দিকে আঙ্গুল তুলে যেই প্রতিষ্ঠানটির ভঙ্গুরতা দেখিয়ে দেয় তাকে আমরা সমাজ বলে জানি ।

এতোক্ষণ ঘরের সবকিছুই অখন্ড মনোযোগ দিয়ে দেখে বুঝেছে সবকিছুই টিপটপ রেখে যাচ্ছে । কেবল যেই মানুষটির সাথে ৫ বছরের যৌথবদ্ধতার জীবনে সবকিছুকে টিপটপ রাখতে ভালোবাসতে শিখছিলো সেই বদলাতে বদলাতে মাথার চুল থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত আপাদমস্তক অচেনা হয়ে ঘরে ঘুরে বেড়িয়ে সকল মাধুর্যকে অনাহূত করে তার নির্মিত নীড়কেই ঝলমলে তবু নিষ্প্রাণ এক কারাগারে পরিণত করে ফেলেছে । স্যুটকেসটা নিয়ে সামনের দিকে যেতে যেতে মনে করছিলো এই বুঝি কেঁদে ফেলবে । তেমনটা হলোনা , ঘাড় ঘুরিয়ে পিছনে ফিরে শেষবারের মতো তাকিয়ে দেখবার মনোবৃত্তিও হলোনা ।

সমাজের খেরোখাতায় অনুল্লেখিত অজস্র মানুষের মতো সেও নীরবে তারই গড়া এক পরিবেশের ধ্বংস্তুপের উপর দিয়ে নিজেকে খুঁজ়ে নিতে বেরিয়ে পড়লো ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.