আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করছে আওয়ামী লীগ

মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে আওয়ামী লীগ বিশ্বাসঘাতকতা করে চলছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) প্রেসিডিয়াম সদস্য হায়দার আকবর খান রনো। বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে হাত মিলিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে নিজেদের পরিচিত করেছে উল্লেখ করে রনো বলেন, রাজনৈতিকভাবে সংকটের উৎস দুই জায়গা থেকে। একটি হচ্ছে, যুদ্ধাপরাধ বিচার, আরেকটি নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার ইস্যুটি। গণতান্ত্রিক ধারা রক্ষার্থে প্রয়োজনে এ নির্বাচনকে বাতিল করে জামায়াত ব্যতীত সব দলের সঙ্গে সমঝোতার ভিত্তিতে নতুন নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হোক। দেশের ভয়াবহ রাজনৈতিক সংকটে শুধু গণতন্ত্রই ধ্বংস হবে না, অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিপর্যয়ও নেমে আসবে বলে মনে করেন প্রবীণ এই বামপন্থি নেতা।

গতকাল ধানমন্ডির বাসভবনে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে হায়দার আকবর খান রনো বলেন, বর্তমানে যে নির্বাচন হতে যাচ্ছে, তার অর্ধেক ইতোমধ্যে হয়ে গেছে। এ নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা জনগণের কাছে যেমন থাকছে না, তেমনি থাকছে না বিদেশিদের কাছেও। এ কথা অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত নিজেও স্বীকার করেছেন। কমিউনিস্ট পার্টির প্রভাবশালী এই নেতা মনে করেন, দেশে একটি সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক ধারা রক্ষার্থে প্রয়োজনে নির্বাচন বাতিল করে জামায়াত ব্যতীত সব দলের সঙ্গে সমঝোতার ভিত্তিতে নতুন নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। কমিউনিস্ট পার্টি বহু আগেই বলেছিল, এটি একটি পাতানো নির্বাচন হতে যাচ্ছে।

এ কারণে কমিউনিস্ট পার্টি পাতানো নির্বাচনে যায়নি। দৃশ্যমান এ নির্বাচন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে সে ধারণা সঠিক হয়েছে। প্রবীণ বাম রাজনীতিক হায়দার আকবর খান বলেন, দেশ আজ একটি ভয়াবহ রাজনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এর ফলে গণতন্ত্রই ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে, অর্থনীতি ও সামাজিক বিপর্যয় নেমে আসবে। ইতোমধ্যে অর্থনীতির কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, তা নতুন করে বলার প্রয়োজন নেই।

সামাজিক বিপর্যয়ও দেখা যাচ্ছে। দেশে সামাজিক মূল্যবোধগুলো একেবারে ধসে পড়েছে। মাদকাসক্ত একটি কিশোরী তার মা-বাবাকে নিজ হাতে খুন করেছে। একটি ছোট শিশু দুর্বৃত্তের হাতে অগি্নদগ্ধ হয়েছে। ষাটের দশকের তুখোড় এই ছাত্রনেতা বলেন, রাজনৈতিকভাবে সংকটের উৎস দুই জায়গা থেকে।

একটি হচ্ছে- যুদ্ধাপরাধ বিচার, আরেকটি নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা। তবে এটা অভিনন্দন যোগ্য, ৪২ বছর পর হলেও যুদ্ধাপরাধ বিচার শুরু হয়েছে এবং একজন যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে। এটা কেবল প্রতিশোধ গ্রহণের ব্যাপার নয়। পাকিস্তানি প্রেতাত্দাদের মতাদর্শগতভাবেও বিতাড়িত করার জন্য বিচার প্রক্রিয়াটি জরুরি ও অপরিহার্য ছিল। এ বিচার ভণ্ডুল করার জন্য জামায়াত মরিয়া হয়ে সহিংস তৎপরতা শুরু করেছে এবং মানুষ পোড়ানোসহ নানা ধরনের অন্তর্ঘাতমূলক কাজ করছে।

এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে হেফাজত নামের একটি মৌলবাদী সংগঠন, যারা দেশে একটি মধ্যযুগীয় বর্বরতা ফিরিয়ে আনতে চায়। এ অপশক্তির সঙ্গে জোট বেঁধেছে বিএনপি। বিএনপির সমালোচনা করে প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ হায়দার আকবর খান বলেন, পাকিস্তানের সংসদ ঔদ্ধত্যপূর্ণভাবে আমাদের দেশের আইনে দণ্ডপ্রাপ্ত কাদের মোল্লার ব্যাপারে প্রস্তাব গ্রহণ করলে সব দল ও শ্রেণীর মানুষ প্রতিবাদ জানালেও সরব হয়নি বিএনপি। যে দলের প্রতিষ্ঠাতা একজন মুক্তিযোদ্ধা এবং বিএনপি যাকে নিয়ে গর্ব করে, সেই দলটি এখন জামায়াতের সঙ্গে হাত মিলিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে নিজেদের পরিচিত করেছে। একই সঙ্গে আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী দল হিসেবে দাবি করলেও, তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে চলছে।

তার মতে, আওয়ামী লীগের ৫ বছরের অপকর্ম, সীমাহীন দুর্নীতি, মন্ত্রী-এমপিদের অনৈতিকভাবে সম্পদের পাহাড় তৈরি, গুম, খুন, টেন্ডারবাজি, গ্যাস-খনিজ সম্পদ বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়া ইত্যাদি কারণে তাদের জনপ্রিয়তা এখন শূন্যের কোঠায়। কমিউনিস্ট পার্টির এই প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, আওয়ামী লীগ সুষ্ঠু নির্বাচনের পথ পরিহার করে অগণতান্ত্রিক পথে ক্ষমতা অাঁকড়ে রাখার চেষ্টা করছে। তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে কিছু বামপন্থি দল। যারা বলছেন, দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে এবং জামায়াত-বিএনপিকে পরাজিত করতে গণতন্ত্রের পথ পরিহার করা নাকি প্রয়োজন। কমিউনিস্ট পার্টি তা মনে করে না।

কমিউনিস্ট পার্টি মনে করে, গণতন্ত্র মুক্তিযুদ্ধের চেতনার একটি স্তম্ভ। অগণতান্ত্রিক পথে শত্রুকে মোকাবিলা করতে গেলে, সেই শত্রু আরও শক্তি নিয়ে বেড়ে উঠবে। বিবেকানন্দের উক্তির উদ্ধৃতি দিয়ে বামপন্থি রাজনীতিক রনো বলেন, ফাঁকি দিয়ে কোনো মহৎ কাজ হয় না। সমাজতন্ত্র হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অবিচ্ছেদ্য অংশ। সমাজতন্ত্রের কথা বাদ দিয়ে পুঁজিবাদী পথে আর যাই হোক, মুক্তিযুদ্ধের অর্জন ধরে রাখা যাবে না।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনাও বাস্তবায়ন করা যাবে না। তাই প্রয়োজনে দুই বড় দলের বাইরে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী গণতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ দেশপ্রেমিক বিকল্প গড়ে তোলা।

 

 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.