আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ডেস্টিনেশন সুইডেন...



২০১১ এর পূর্বে সুইডেনের ইউনিভার্সিটিগুলোতে গেলেই বাংলাদেশি নতুন ছাত্র-ছাত্রীদের সাড়া পাওয়া যেত। টিউশন ফি দেওয়ার পর আর তেমন সাড়া নেই। নন-ইউরোপিয়ান ছাত্র ভর্তি ড্রপ করেছে ৮০%, যা ওরা নিজেরাও কল্পনা করেনি। কারন বর্তমানে সুইডেনের শিক্ষা খুবই ব্যয়বহুল, প্রায় ১০-১২ হাজার ইউরো (১০-১২ লক্ষ টাকা) প্রতি বছর। আর সপ্তাহে মাত্র ২০ ঘন্টা কাজ করে হয়ত লিভিং কস্ট ম্যানেজ করা সম্ভব, কিন্তু টিউশন ফি না।

তাই অনেকেই প্রতিবেশি দেশে আবেদন করাকেই গ্রহনযোগ্য মনে করছে যারা এখনো টিউশন ফি ইম্পোজ করে নাই। যেমন, নরওয়ে, ফিনল্যান্ড, জার্মানী। এরপরেও যে আবেদন একবারে যে হচ্ছে না তা নয়। যাদের টিউশন ফি দিয়ে পড়ালেখার সামর্থ্য বা ইচ্ছা আছে, কিংবা যারা স্কলারশীপ পেতে চায় তারা আবেদন করছে। তবে মজার ব্যাপার হলো, অনেকের স্কলারশীপ পাওয়ার মত যোগ্যতা থাকা সত্বেও আবেদন করছেন না; কারন এখন আবেদন করতেও টাকা লাগে; প্রায় ১১০০০ টাকা।

তাই ব্যাপারটা একটু জটিল। কারন এত টাকা দিয়ে আবেদন করে হবে কি হবে না, এমন চিন্তা কাজ করে। বরঞ্চ অন্যদেশগুলোতে ফ্রি আবেদন করাকেই অনেকে গ্রহনযোগ্য মনে করেন। তাই এই জটিলতা এড়াতে কিছু বিষয় জানা থাকলে ডিসিশন নিতে সুবিধা হবে। সেই আশাতেই এই লেখা।



টিউশন ফিঃ বিষয়টা প্রথমেই ক্লিয়ার করা দরকার। বড়শিতে মাছ গাথার জন্য আপনাকে প্রথমেই আবেদন করতে ৯০০ ক্রোনা (প্রায় ১১০০০ টাকা) ফি দিতে হবে যেটা অফেরতযোগ্য। আপনি স্কলারশীপ আবেদন করলেও এটা দিতে হবে। পরবর্তীতে ভর্তি হলে, যদি স্কলারশীপ পান তো টিউশন ফি দেওয়া লাগবে না, নয়তো প্রথম সেমিস্টারের টিউশন ফি দিয়ে ভিসা এপ্লিকেশন করতে হবে। সুইডেনের ইউনিভার্সিগুলোর এক বছরে টিউশন ফি মোটামোটি ৮০,০০০-১,০০,০০০ সুইডিস ক্রোনা; বাংলাদেশি টাকায় যা প্রায় ১০-১২ লক্ষ টাকা।

সূতরাং, আপনাকে প্রথমেই প্রায় ৫ লক্ষ টাকা টিউশন ফি দিয়ে দিতে হবে। তাই ৯০০ ক্রোনা বড়শিতে গাঁথার আগে ডিসিশন নিতে হবে।

স্কলারশীপঃ এটা সোনার হরিণ নয়, ডায়মন্ডের। সুইডিস স্কলারশীপ পেলে আপনাকে টিউশন ফি মওকুপ করার পাশাপাশি মাসে ৯০০০ ক্রোনা (প্রায় ১ লক্ষ টাকা) উপহার দেয়া হবে থাকা খাওয়ার জন্য। আপনি থাকা খাওয়ার পরেও বৌ পোলার (বা গার্লফ্রেন্ড) জন্য মাসে ৭০-৮০ হাজার টাকা পাঠাতে পারবেন।

এখন প্রশ্ন হলো কিভাবে পাওয়া যাবে এই ডায়মন্ডের হরিন? প্রতি বছর বাংলাদেশসহ ১২ টি দেশের শতাধিক ছাত্র-ছাত্রীকে সু্ইডিস স্কলারশীপ দেয়া হয়। আপনি বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির আবেদন করার সাথে সাথে এই আবেদন করতে পারেন। এতে কোন ফি লাগে না। তাই সবারই করা উচিত। আবেদন করার জন্য আপনাকে সিভি, মোটিভেশন লেটার এটাচ করতে হবে।

আপনার ভর্তি সফল হলে, আপনার বৃত্তি আবেদন বিবেচনাযোগ্য হবে। তাই ভর্তি না হলে বৃত্তি আবেদনও গ্রহনযোগ্য হবে না। আবার আপনার যদি এমন বিষয়ে ভর্তি হয়, যার জন্য আপনি স্কলারশীপ আবেদন করেননি, তাহলেও হবে না। বিষয়টা খোলাসা করি; ধরুন আপনি ৪ টা প্রোগামে আবেদন করলেন, ১ নাম্বার পছন্দ দিলেন "ক", ২ নাম্বার "খ".....এভাবে। স্কলারশীপের আবেদন করলেন "খ" এর জন্য।

যদি আপনার "ক" তে এডমিশন হয়, তবে আপনি স্কলারশীপ পাবেন না। সো, সাপের মাথায় লাঠির বাড়ি লাগতে হবে, লেজে লাগলে শুধু লাঠিটাই ভাঙবে। এই স্কলারশীপ ছাড়াও ইউনিভার্সিটিগুলোর নিজস্ব বৃত্তি আছে মেধাবী ছাত্রদের জন্য। আপনি ভর্তির পরে এসব বৃত্তিগুলোতে সরাসরি আবেদন করতে পারবেন।

পার্ট-টাইম জবঃ সবচেয়ে বেশি আকর্ষনীয় প্যারা অব দিস লেখা।

যারা কামলা খাটার জন্য মুখিয়ে আছেন, তারা খুব বেশি সুবিধা করতে পারবেন না। কারন পূর্বে বিষয়টা ভিন্ন ছিল। লিভিং কস্ট মেটাতে সামান্য কিছু আয়ের প্রয়োজন, যা মোটামোটি কিছু কাজ করলেই পারা যেত। কিন্তু টিউশন ফি দেয়া সম্ভব না। আপনি হয়তো অতিরিক্ত কাজ করতে পারবেন কিন্তু ছাত্রত্ব হারাবেন, ভিসা এক্সটেনশন হবে না।

আইন অনুযায়ী মিনিমাম ৩০ ক্রেডিট লাগে ভিসা বাড়াতে। (একবছরে ৬০ ক্রেডিট) এখন জোক্‌স হলো, টিউশন ফি দিয়ে ছাত্রত্ব টিকিয়ে রাখতে অতিরিক্ত কাজ করলেন, আর অতিরিক্ত কাজের কারনে ক্রেডিট মিস করে ছাত্রত্ব হারালেন--ব্যাপারটা বেশ মজার! তাই মিনিমাম ফ্যামিলি সাপোর্ট দরকার প্রথম সারভাইভেলের জন্য। এবার কাজের কথায় আসি। বড় শহরগুলোতে কাজ পাওয়া যায়। স্টকহোম, গোতনবার্গ, মালমো ইত্যাদি।

ছোট শহরগুলোতেও আছে, তবে সময় লাগবে। আর ইউরোপের বিদেশি ছাত্রদের দুঃখ হলো ভাষা (ইউকে বাদে)! তাই এটাও মাথায় রাখা দরকার। তবে আপনি যে কাজ করবেন তাতে ভাষার খুব প্রয়োজন নেই (পাতিলা মাজতে কি ভাষা লাগে নাকি !!!)! সাধারনত প্রতি ঘন্টায় ১০০-১৩০ ক্রোনা (বহুত টাকা ইন বিডি) পাওয়া যায়। এইটা সাদা কাজের হিসাব। তাই সপ্তাহে ২০ ঘন্টা কাজ করে আপনি মাসে ৮০০০-১০০০০ ক্রোনা কামাতে পারবেন।

আর খরচ হবে আপনার মাসে ৩০০০-৫০০০ ক্রোনার মত। বাকিটা ক্লাসে বসে চুইংগাম চিবানোর জন্য যথেষ্ট।

পিআর এন্ড সো অনঃ অনেকে পি-আর পি-আর করেন; আরে ভাই আগে তো আসেন; আসলেই দেখবেন সব ফকফকা-পরিষ্কার। খুব কম লোকই আমি জানি যারা ইউরোপে এসে কিছু না করে, ফিরে গেছেন। তাই বিসমিল্লাহ বলে আইসা পড়েন।

অনেকেই একদেশে আসছেন কিন্তু সহজেই পেপার বানানোর উদ্দেশ্যে পর্তুগাল, স্পেন বা ইতালি চলে গেছেন। তবুও যারা একান্ত নাছোড়বান্দা তাদের জন্য বলছি, উপায় ১:-সুইডেনসহ ইউরোপে পিআর বা নাগরিকত্ব পাবার সবচেয়ে সহজ এবং দ্রুততম উপায় বিয়ে করা। ঝামেলাবিহীন কম সময়ে পাসপোর্ট পেতে হলে কাউকে পটিয়ে বিয়ে করা ছাড়া কোন উপায় নেই। সাধারনত ২ বছরেই নাগরিকত্ব পাওয়া যায়। উপায় ২:- সাধারনত ৫ বছর বৈধ বসবাসের পর পিআর আবেদন করা যায়।

এক্ষেত্রে আপনাকে ডিগ্রী কমপ্লিট করে কাজের ব্যবস্তা করতে হবে। কাজ পেলে আপনি ছাত্র ভিসা থেকে ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় আসতে পারবেন। এর জন্য আপনাকে ফুল টাইম জব কনট্রাক্ট দেখাতে হবে। এবং এই কন্ট্রাক্ট সুইডিস লেবেল অনুযায়ী হতে হবে; যেমন, বেতনসহ অন্যান্য সুবিধা। নাগরিকত্বঃ আপনি পিআর পাওয়ার ৫ বছর পর নাগরিকত্তের জন্য আবেদন করতে পারবেন।

আইন অনুযায়ী আপনার ছাত্রাবস্থার সময়টা কাউন্ট করা হবে না। কারন যেই সময় থেকে আপনার অবস্থান সেটেলমেন্টকে লক্ষ্য করে শুরু হবে, সেই সময়টা কাউন্ট হবে। তাই দ্রুত ছাত্র থেকে কামলা হওয়া ছাড়া গতি নাইরে মফিজ।

মনে রাখবেন, ইউরোপের যেকোন দেশেই আসেন না কেন, আপনার পথ খোলা। পর্তুগাল, ইটালি, স্পেন যখন যেদিকে তবারক বিতরন হবে সেদিকে চলে যাবেন।

প্রকৃত ছাত্র হলে আপনি ভালোভাবে ডিগ্রি কমপ্লিট করে থাকতে পারবেন। আর যদি কনফিডেন্স হোন তবে স্কলারশীপের সুবিধা তো আছেই।

বাই দ্য ওয়ে, এই লেখাটা বাস্তব ঘটনার আলোকে লিখিত। কোন ট্যাকনিক্যাল প্রশ্ন থাকলে করতে পারেন। তবে "কখন এপ্লাই করবো?" "কিভাবে স্কলারশীপ আবেদন করবো?" এই ধরনের প্রশ্ন করবেন না।

এসব প্রশ্নের উত্তর গ্রুপে অন্য পোস্টে করেন প্লিজ (আমার আগের পোষ্ট ফাইল সেকশনে পাবেন) ওখানে স্টেপ বাই স্টেপ আছে। আবার আমার কথায় অতি উৎসাহী হয়ে "কাকে বিয়ে করবো?" "কেমনে বিয়ে করবো?" "পরিচিত কেউ আছে নাকি?" এমন প্রশ্নও করবেন না প্লিজ। আপনি আসার পরে এসব উত্তর নিজেই পাবেন। (আমি দরিদ্র মেধাবী ছাত্র, কানেকশন কম)এই দুই ধরনের প্রশ্ন বাদে যেকোন প্রশ্ন করেন, সকলের তরে সকলে আমরা, প্রত্যেকে মোরা পরের তরে।
(লেখাটি একটা ফেসবুক গ্রুপের জন্য তৈরী করা)


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।