আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দুষ্টু সানি লিওন, মিষ্টি গণতন্ত্র!

আমার ভিতরে আমি স্বতন্ত্র জীবন যাপন করি।

সানি লিওন যেদিন বলিউডের ছবিতে প্রথম সাইন করেছেন, সেদিনই বলেছিলেন “চরিত্রের প্রয়োজনে কাপড় পরতে আমার আপত্তি নাই”। সেদিন আমি আরেকবার সানি লিওনের প্রতি মুগ্ধ হয়েছিলাম। এক খবর দেখলাম গুগল সার্চে এ বছরে শীর্ষস্থানে সানি লিওন। এতে প্রমাণ হয় কেবল পুরুষদেরই নয়, গুগলেরও যৌবন আছে।

তবে যৌবণ ঢেলে দেবার পথ খুঁজে পেলাম না বলে হতাশ হলাম।

খবর পেলাম সানি নাকি ভারতে অবস্থান করছে। অতএব বহু কাঠখড় পুড়িয়ে গেলাম তার কাছে। কাঠখড় তেল পুড়িয়ে দেখা করবার সুযোগও পেলাম। কী ভাগ্য আমার, বিশ্বাস করুণ আমরা সামনে সানি লিওনই দাঁড়িয়ে আছেন।

সেই প্রিয় নগ্ন মেয়েটি। কিন্তু কী যেন একটা নেই! কিছুক্ষন চিন্তা করলাম। দেখা দিয়ে উঠে চলে গেলেন উপরে। আমি এক সাংবাদিকের সাথে ড্রয়িং রুমের সোফায় বসে আছি। কিন্তু ভাবতে পারছি না সানির কী নেই, কী নেই।

এসি চলছে, ছোট্ট টেবিলে প্লেবয় ম্যাগাজিন। হুট করে পেয়ে গেলাম, বুঝলাম কেন সানিকে অন্যরকম লাগছে। কী নেই এমন, যে সানিকে অচেনা লাগছে? আসলে সানীর গায়ে বস্ত্র আছে !

দশ মিনিট পরে ইয়া বড় জামা পরে সানি নিচে নেমে আসলেন। হাঁটু উন্মুক্ত। আমাকে অবাক করে দিয়ে বললেন “আপনাকে আমি চিনি, আপনি বাংলাদেশ থেকে এসেছেন” একেতো বাংলায় বলছে, তার উপর আমাকে চিনে।

এখন আমার কী হওয়া উচিত? অন্য কেউ হলে যা হওয়া উচিত, সানির ক্ষেত্রে তা নিশ্চই না। থাক সেদিকে আর গেলামই না।
-আপনাকাতো কাপড়ে ভালোই লাগে, মাঝে মাঝে কাপড় পরলেও পারেন।
এমন কথা বলে নিজেই কনফিউজড। এই না পুলিশ ডেকে হাতে হারিকেন ধরিয়ে দেয়।

তবে সানি ম্যাডাম বেশ ভদ্র, কাপড় খুললেই যে অভদ্র হবেন এমনটি না। তিনি বললেন “"গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য কাপড় পরছি না, কারণ সানি লিওন, ইজ দ্যা পিপল, বাই দ্যা পিপল, ফর দ্যা পিপল"

খাইছেরে, সানি আপু দেখে রাজনীতি সচেতন। কথাটা কোথায় মিল পাচ্ছি বুঝতে পারছি না। তবে মিল পাচ্ছি। আবার প্রশ্ন করলাম “বাংলাদেশী এক পরিচালক বলেছে নগ্নতাই অশ্লীলতা নয়, আপনি তা মনে করেন?
-বাংলাদেশী হয়ে এই প্রশ্ন করতাছেন ক্যান?
খাঁটি ঢাকাইয়া শুনে এবার আমি বোধহয় নিজেই নগ্ন হয়ে যাবো।

মেয়েটার ভিতরে আর কী কী আছে। যাকগে সে নিজেই আবার শুরু করলেন।
-এসেছেন বাংলাদেশ থেকে, যদি নগ্নতাই অশ্লীলতা হতো তবে অশ্লীলতার দায়ে বাংলাদেশ ব্যান খেতো।
-কেন কেন কেন?
-হালায় কয় কী! দুই দল ন্যাংটা হইয়া রাজনীতি করতেছে তাও কয় কেন কেন কেন?
-ও আচ্ছা সরি, আপনি দেখি আমাদের রাজনীতির খবরও রাখেন। বেশ ভাল্লাগলো।


-না রেখে উপায় আছে, তোমাদের ছেলেরা আমাকে খুজে, রাতে স্বপ্ন দেখে, স্ট্যাটাস দেয়, তাই আমিও একটু খুজি।
-দলগুলো নিয়ে কিছু বলুন।
-ধইরা নিয়া রিমান্ডে ডিম দিবো, আমি ডিমে অভ্যস্থ না।
-জ্বী, আমি কোন ভিডিওতে ডিম দেখিনি।
-অবরোধ সম্পর্কে কিছু বলুন
-অবরোধ ভালো, পোলাপাইন ঘরে থাকে, নেটে থাকে, গুগলে সার্চ দেয়, আমাকে দেখে।

অবরোধ বেশ ভালো।

সানির সত্যবাদীতায় আমি আবার মুগ্ধ। লাষ্ট দুই অবরোধও সানি ছিলেন সাথে। তবে প্রিন্ট ভালো ছিল না। ব্যাপারটা সানিকে বললাম।

তিনি বললেন “প্রিন্টট দিয়া কী করবা? মারামারির খবর যে দেখো, সেইটার প্রিন্ট নিয়া মাথা ঘামাও?
-দুইটাতো আলাদা বিষয়!
-হ একটাতে সানি, আরেকটাতে চুতমারানি।
-নাউজুবিল্লাহ

সানি ব্রেক নিয়ে আবার উপরে গেলেন। আমি কথা বলা শুরু করার পর সাংবাদিক ভদ্রলোক কোথায় গেছেন টের পাওয়া যায় না। অনেকদিন পর সানির শব্দ শুনতে আমার অস্বস্তি লাগছিল। কেন জানি বারবার পকেটে হাত দিয়ে হেডফোন খুজছিলাম।

আসলেই সবকিছুই অভ্যাস। মানুষ অভ্যাসের দাস। সানিকে আমার পছন্দ আরও একটা বিশেষ কারণ রয়েছে। বেশীরভাগ মানুষই তার জন্মের ইতিহাস ভুলে যায়, সানি ভুলেনি। ভুলেনি কীভাবে সে এসেছিল পৃথিবীতে।

এখনো সে প্রায় সময় তাই সেভাবেই থাকে। স্যালুট সানি লিওন। বলতে বলতে ম্যাডাম আবার হাজির। এবার ড্রেসটা সামান্য ছোট। কতটুকু ছোট লিখে বুঝাতে পারবো না।

তবে উনি কাপড় পাল্টালেন কেন বুঝে উঠতে পারলাম না। কৌতুহল দমিয়ে না রেখে জিজ্ঞেসই করে ফেললাম “ম্যাডাম কোন কারন ছাড়া কাপড় পাল্টালেন কেন?
-তোমরা ৫ বছর পর পর সরকার পাল্টাও, আমি তাই কাপড় পাল্টাই। যে কাপড় পরি মনে হয় দেখতে খারাপ লাগতেছে। পরে পাল্টে ফেলি। আসলে নগ্নতার উপরে পোশাক নেই!
মেধাবী, সানি লিওন।

তার রাজনৈতিক শরীর দেখে আমি আবার মুগ্ধ। টুকটাক আলোচনা চলছে। চা বিস্কুট খেলাম। খেয়াল করে দেখলাম সানির বাসার সবকিছুর কেমন যেন টেষ্ট। সোফা কিংবা টেবিলেও যেন যৌবন আছে।

ভাবতে ভাবতে চা ভিজে যাওয়া বিস্কুট অর্ধেক ভেঙ্গে টুপ করে কাপে পড়ে গেল। দেখতে দেখতে পড়ে গেলে ভাল্লাগেনা! বাল।
-সানি আপনার ভবিষত পরিকল্পনা কী? সারাজীবন অভিনয়ই করবেন?
-না অভিনয় করবো না, আমি ক্রিকেটারদের মত। আমার অভিনয়ে শাররীরক কসরত বেশী। যৌবন গেলে কিচ্ছু নাই।

তবে নগ্ন হবার আদর্শিকতা থেকে একটুও বিচ্যূত থাকবো না!
-কী করবেন?
-আপনার দেশে রাজনীতি করবো, কি সুন্দর একটি দেশ।
-আমার দেশে রাজনীতি করবেন মানে কী?
-টাকার জন্য, খ্যাতির জন্য নগ্ন হবার অভ্যাস করেছি, ক্ষমতার জন্য সে অভ্যাস কন্টিনিউ করতে পারবো না?
উত্তর দিলাম না। ইচ্ছা করছে টিপে দিই, গলা। বেশী কথা বলছে। আগে শুধু সাউন্ড করতো এখন কথা বলা শুরু করেছে।

জায়গামত পেলে একদম পুলিশকে বলে ঢুকিয়ে দিবো, জেলে। তখন বুঝবে। চিনেনাতো।
-আপনার প্রিয় নায়ক কে?
-হুমু এরশাদ
-উনিতো নায়ক না।
-তুই সানি লিওন না আমি সানি লিওন?
-আপনি?
-তাইলে এরশাদের মূল্য তুই কীভাবে বুঝবি?

তুই তোকারী মোটেও ভালো ঠেকছে না।

আমার মুগ্ধ হওয়া কমে যাচ্ছে। চুপ মেরে থাকলাম কোন কথা বলবো না। কথা বললেই সমস্যা। তবুও পারলাম না। জিজ্ঞেস করলাম “যদি রাজনীতি করেন, নিজে কোন দল খুলবেন নাকি কোথাও যোগ দিবেন?
সানির জিহব্বা লকলক করে উঠলো।

ভয় পাচ্ছি না খুশী হচ্ছি বুঝতে পারছি না। কিন্তু আমাকে হতাশ করে তিনি শুরু করলেন “আমার একমাত্র চয়েজ জামাতে ইসলাম বাংলাদেশ”
-কেন?
-আমাদের মধ্যে মিল আছে! তাদের কাজকর্মও লুকিয়ে লুকিয়ে করতে হয়, আমারো কাজকর্ম লুকিয়ে করতে হয়। তাদের কর্ম ধরা পড়লে যেমন পোলাপাইন মাইর খায়, আমার কর্ম দেখতে গিয়েও ধরা খেরে মাইর দেয়। আমরা দুজন ভালো বন্ধু হতে পারবো, আমরা আসলে দুজন দুজনার।
আপাতত উঠা দরকার।

কান গরম হয়ে আছে। আমি দিব্য চোখে দেখতে পাচ্ছি বস্ত্রহীনা সানি লিওন স্লোগান দিচ্ছে “নারায়ে তাকদবীর...............” নাআআআ। উঠে যাবো। ভদ্রতা বশত শেষ কথটা বলেই ফেললাম। “কী করছেন ইদানীং?

সানি বেশ খুশী খুশী ভাব নিয়ে বলল “পুরো বিশ্ব্যাপী একটি অবাধ, সুষ্ঠ এবং নিরপেক্ষ জরিপ করতে যাচ্ছি।

জরিপের প্রশ্ন হল “এই মুহুর্তে পৃথিবীতে সবচে সেক্সি কে? জরিপে ভোট দিবে পুরো বিশ্ববাসী। আপতত প্রতিদ্বন্ধিদের ছোট্ট তালিকায় চারজনের নাম আছে ১. সানি লিওন ২. কাপড় পরা সানি লিওন ৩. নগ্ন সানি লিওন ৪. অর্ধনগ্ন সানি লিওন। জরিপ চলবে ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত। আগামিকাল শুক্রবার এর মধ্যে প্রচারনা বন্ধ করে দিবো। সানির প্রচারনা লাগে না, একটা পোজ দিলেই হয়”
সত্য কথা শুনে পা বাড়ালাম, ওয়াশ রুমে যাওয়া জরুরী!



অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।