আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নিষ্প্রাণ নির্বাচনে ভোটার টানার চেষ্টা

নিষ্প্রাণ সংসদ নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা শেষ হচ্ছে আজ। ভোটকেন্দ্রে ভোটার টানতে সব ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। সরকারও এ নির্বাচনকে নিরপেক্ষ দেখতে চায়। ইতোমধ্যে অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে কর্মকর্তাদের। আর নির্বাচন নিরপেক্ষ না হলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়েছে।

দায়িত্বশীল মহল মনে করে- বর্তমান সরকারের আমলে অনুষ্ঠিত পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ ও সর্বশেষ পাঁচ সিটি নির্বাচন যেভাবে অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে, তেমনি দশম সংসদ নির্বাচনও সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। এদিকে কমিশনও নির্বাচনে কোনো ধরনের পক্ষপাতিত্ব না করতে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়েছে। কোনো কর্মকর্তা অতি-উৎসাহী হয়ে পক্ষপাতমূলক কিছু করতে চাইলে সরকার ও নির্বাচন কমিশন তার দায়িত্ব নেবে না। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক আইনানুগ ব্যবস্থাও নেওয়া হবে। এদিকে গতকাল দশম সংসদ নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুতি রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদকে অবহিত করেছে নির্বাচন কমিশন।

অন্যদিকে সংসদ নির্বাচনের বাকি আর একদিন। আজই সকাল ৮টায় শেষ হচ্ছে সব ধরনের নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা। বিরোধী দলবিহীন দশম সংসদ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে নির্বাচন কমিশন ও রাজনৈতিক দলগুলো। আলোচিত একতরফা ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে মাত্র ২৬ শতাংশ ভোট পড়ায় এবারের নির্বাচনেও ভোটার উপস্থিতি নিয়ে চিন্তায় পড়েছে ইসিসহ নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলগুলো। ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত হওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীও আহ্বান জানিয়েছেন।

নবম সংসদে আওয়ামী লীগ ৪৭ শতাংশ ও জাতীয় পার্টি ৭ দশমিক ৫ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। এদিকে ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে সব ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে নির্বাচন কমিশন ও রাজনৈতিক দলগুলো। নির্বাচন পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, প্রতিদ্বন্দ্বিতা না থাকায় ভোটে থাকতে পারে উপ-নির্বাচনের আমেজ। বিরোধী দলবিহীন এ নির্বাচনে ভোটের হার নিয়ে শঙ্কা থেকে ভোটারদের উদ্বুদ্ধ করতে তথ্য মন্ত্রণালয় কর্মসূচি নিয়েছে। অংশগ্রহণকারী দলগুলোও কেন্দ্রে যেতে আহ্বান জানাচ্ছে।

তবে ভোটের দুই দিন আগেও প্রার্থীদের পক্ষ থেকে বাড়ি বাড়ি পেঁৗছেনি ভোটার স্লিপ। এ নিয়ে নির্বাচন কর্মকর্তারাও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। ইসি সচিবালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব বলেন, ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দিতে গিয়ে অভিযোগ শুনেছি-প্রচারণাও কম। সেই সঙ্গে নির্বাচনী এলাকায় প্রার্থীরা এখনো ভোটার স্লিপ দেননি ভোটারদের। এতে ভোটকেন্দ্রে চাপ বাড়বে, লাগবে বেশি সময়।

মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা জানান, প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনে ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রার্থীরাই কেন্দ্র, ভোট নম্বর_ এ জাতীয় তথ্য আগেই দিয়ে থাকেন। এবার সব থেকে কম প্রার্থী থাকায় ভোটার স্লিপ নিয়ে আগ্রহ নেই কারও। কেন্দ্রে ভোটারের নাম, নম্বর খুঁজে ভোট দিতে আগে যেখানে ১ মিনিট লাগত, এবার ৫ মিনিট লাগতে পারে। তবে কেন্দ্রের বাইরে প্রার্থীর পক্ষ থেকে ভোটার স্লিপ দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু কম প্রার্থী থাকায় এ নিয়েও আমেজ নেই মাঠে।

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বুধবারও ভোটকেন্দ্রে যেতে ভোটারদের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ভোটের আগে জয় হয়ে গেছে এমন ভাববেন না। ৫ জানুয়ারি ভোটকেন্দ্রে আসুন।

এবার মাত্র ১২টি দলের ২৮৫ জন ও ১০৩ স্বতন্ত্র প্রার্থী অংশ নিচ্ছে ১৪৭ আসনে। বাকি ১৫৩ আসনে প্রার্থীরা নির্বাচিত হয়ে গেছেন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়।

নির্বাচন পর্যবেক্ষণ সংস্থা জানিপপ চেয়ারম্যান ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ মনে করেন, বিরোধী দলবিহীন ও ১৫৩ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার পর দশম সংসদ নির্বাচন অনেকটা হবে উপনির্বাচনের আমেজে। উপনির্বাচনে যেমন ভোটার উপস্থিতি কম থাকে, এখানেও তাই হবে। মানুষের আগ্রহ কম থাকবে। তবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নতির দিকে থাকায় ভোটার উপস্থিতি দেখতে ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত অপেক্ষার কথা জানান তিনি। ইসি কর্মকর্তারা জানান, তথ্য মন্ত্রণালয় সব মোবাইলফোন অপারেটরের গ্রাহকদের কাছে ভোটে অংশ নিতে এসএমএস দেওয়া হয়েছে।

বার্তাগুলো হচ্ছে, 'ভোট গণতান্ত্রিক অধিকার, নির্বাচনে ভোট দিয়ে আপনার অধিকার প্রতিষ্ঠা করুন। , 'শান্তিপূর্ণ নির্বাচনী পরিবেশ বজায় রাখুন। , 'নির্বাচনে সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হচ্ছে, নির্ভয়ে, নির্বিঘ্নে ভোট দিতে কেন্দ্রে যাবেন'। বরাবরের মতো এবারও ভোটের আগে দিন বিশেষ নম্বরে এসএমএস করে কেন্দ্র ও ভোটার নম্বর জানানোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়া ভোটকেন্দ্রের বাইরে প্রার্থীর পক্ষ থেকে স্লিপ বিতরণ করা হয়।

নির্বাচন কর্মকর্তাদের তাগিদ : সহিংস রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ভোটকেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন নির্বাচন কর্মকর্তারা। গত ২০ ডিসেম্বর আইনশৃঙ্খলা বৈঠকেই ভোটারদের ব্যাপক সচেতনতা বাড়াতে 'ভোটার এডুকেশন' ক্যাম্পেইনের প্রস্তাব দেন তারা। ভোটার উপস্থিতির বিষয়ে ৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদও সাংবাদিকদের বলেছেন, 'আগে তো বলা যাচ্ছে না। দেখি কী হয়!' আইনশৃঙ্খলা বৈঠকে সিইসি বলেছিলেন, ভোটারদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে ভোটগ্রহণে উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। ভোটারদের নিরাপত্তা বিষয়ে নজর দিতে হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশন সচিব মোহাম্মদ সাদিক বলেন, আমরা সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করব। নির্বাচনে ভালো ভোট পড়ার হার থাকবে বলে আশা করেন তিনি। অতিরিক্ত সচিব সিরাজুল ইসলাম বলেন, ভোটে অংশ নেওয়া ও ভোট পড়ার বিষয়টি রাজনৈতিক দলের ওপর নির্ভর করবে। তাদের প্রার্থীদের পক্ষে ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্রতিযোগিতা হলে ভোট পড়ার হার বাড়তে পারে। দশম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ-জাতীয় পার্টি নিয়ে ১২টি দলের অংশগ্রহণে দেশের ১৪৭টি আসনে ভোট হচ্ছে।

এতে ৪ কোটি ৩৯ লাখের বেশি ভোটার রয়েছেন। বাকি ১৫৩ আসনের ৪ কোটি ৮০ লাখের বেশি ভোটার অংশ নেবে না। এর আগে ১৯৯৬ সালের বহুল আলোচিত ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে বিএনপিসহ ৪১টি রাজনৈতিক দল অংশ নেয়। ভোট পড়ে মাত্র ২৬ শতাংশ। এর মধ্যে বিএনপি পেয়েছিল ৭৭ শতাংশ।

 

 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।