আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জর্জ বার্নার্ড শ



জর্জ বার্নার্ড শ' একজন আইরিশ নাটক লেখক ছিলেন। তিনি ১৯২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পান। সাহিত্যে অবদানের জন্য তিনিই একমাত্র ব্যক্তিত্ব যিনি নোবেল পুরস্কারের পাশাপাশি অস্কারও লাভ করেছিলেন। শ নোবেল পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। তবে স্ত্রীর পীড়াপীড়িতে শেষ পর্যন্ত সেটি গ্রহণ করেছিলেন।

তবে তিনি আর্থিক পুরস্কার নেননি। উইলিয়াম শেক্সপিয়ারের পর জর্জ বার্নার্ড শ’ই হলেন সেরা ব্রিটিশ নাট্যকার। কেউ বলেন, তার মতো সাহিত্য সমালোচক বিশ্বে দুর্লভ। যে কোনো সাহিত্য সৃষ্টিকে তিনি সম্পূর্ণ নির্মোহ দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে সমালোচনা করতে পারেন। স্বচ্ছ পরিষ্কার মননের অধিকারী।

কেউ বলেন, তিনি একজন মহান সামাজিক চিন্তক। তার চিন্তার মধ্যে ভবিষ্যৎ জীবনের বীজ অঙ্কুরিত হয়।

এক শিক্ষিত মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান ছিলেন জর্জ বার্নার্ড শ’ যিনি সমকালীন সমাজকে প্রচন্ডভাবে প্রভাবিত করেছিলেন। তাকে তুলনা করা হয় মহান-চিন্তানায়ক ভলতেয়ারের সঙ্গে। ছোটবেলার দিনগুলো তার কেটেছিল কঠিন কঠোর নিয়মানুবর্তিতার মধ্যে।

সময়মত পড়াশোনা করতে হত তাকে। চার্চে যেতে হয় সবসময়। খেলাধুলার সময়টার ওপরেও টেনে দেয়া হয়েছিল লক্ষণ রেখা। এভাবে ছোট থেকেই শ’ কে বলা হয়েছিল ভবিষ্যতে তোমাকে একজন কেউকেটা হতে হবে। তুমি জন্মালে, আর কিছুদিন কাটিয়ে গেলে এই জগতের বুকে তা হবে না।

এভাবেই বোধ হয় শ’-এর মন ইস্পাত কঠিন হয়ে উঠে।

জর্জ বার্নার্ড শ’র বাড়িতে বেড়াতে এসে এক মহিলা অবাক হয়েবললেন, ‘মিস্টার শ, আপনার ঘরে দেখছি একটাও ফুলদানি নেই। আমি ভেবেছিলাম, আপনি এত বড় একজন লেখক; আপনি নিশ্চয়ই ফুল ভালোবাসেন। তাই আপনার বাসার ফুলদানিতে বাগানের তাজা, সুন্দর ফুল শোভা পাবে। ’ প্রত্যুত্তরে শ সঙ্গে সঙ্গেই বললেন, ‘ম্যাডাম, আমি বাচ্চা ছেলেমেয়েদেরকেও ভালোবাসি।

তার অর্থ এই নয় যে, আমি তাদের মাথা কেটে নিয়ে এসে ঘরে সাজিয়ে রাখব।

লন্ডন স্কুল অব ইকনোমিকসের প্রতিষ্ঠাতা জর্জ বার্নার্ড শ ১৮৫৬ সালের ২৬ জুলাই আয়ারল্যান্ডের ডাবলিনে জন্মগ্রহণ করেন। সঙ্গীত এবং সাহিত্য সমালোচনা বিষয়ক লেখালেখি তাকে আর্থিক সচ্ছলতা দিলেও তার মেধা আসলে লুকিয়ে ছিল নাটকেই। ৬০টিরও বেশি নাটক লিখেছেন তিনি। ১৯৫০ সালের ২ নভেম্বর ইংল্যান্ডের হার্টফোর্ডশায়ারে পরলোকগমন করেন তিনি।



নবীজী সম্পর্কে জর্জ বার্নার্ড শ বলেছেন- মুহাম্মদের ধর্মের প্রতি আমি সব সময় সুউচ্চ ধারণা পোষণ করি কারণ এর চমৎকার প্রাণবন্ততা। আমার কাছে মনে হয় এটাই একমাত্র ধর্ম যেটা সদা পরিবর্তনশীল জীবনযাত্রার সঙ্গে অঙ্গীভূত হওয়ার ক্ষমতা রাখে, যা প্রত্যেক যুগেই মানুষের হৃদয়ে আবেদন রাখতে সক্ষম। আমি তাঁর (মুহাম্মদ) সম্বন্ধে পড়াশোনা করেছি- চমৎকার একজন মানুষ এবং আমার মতে খৃষ্টবিরোধী হওয়া সত্ত্বেও তাঁকে অবশ্যই মানবতার ত্রাণকর্তা বলতে হবে। ’

খ্যাতনামা আইরিশ সাহিত্যিক, সমালোচক ও নাট্যকার জর্জ বার্নার্ড শর মুখের লক্ষণীয় বৈশিষ্ট্য ছিল তাঁর দাড়ি। একবার একটি ইলেকট্রিক রেজর নির্মাতা কোম্পানির কর্তারা বাজারে আসা তাঁদের নতুন রেজরের প্রচারণায় শর এই দাড়িকে নিশানা করল।

শকে তারা এই নতুন রেজর দিয়ে দাড়ি কামানোর অনুরোধ করল। বিনিময়ে দেওয়া হবে লোভনীয় অঙ্কের টাকা। শ তাদের হতাশ করে বললেন, তাঁর বাবা যে কারণে দাড়ি কামানো বাদ দিয়েছিলেন, তিনিও ঠিক একই কারণে এ জঞ্জাল ধরে রেখেছেন। কোম্পানির কর্তারা কারণটি জানতে আগ্রহী হলে বার্নার্ড শ বললেন, “আমার বয়স তখন পাঁচ বছর। একদিন বাবা দাড়ি কামাচ্ছেন, আমি তাঁকে বললাম, ‘বাবা, তুমি দাড়ি কামাচ্ছ কেন!’ তিনি এক মিনিট আমার দিকে নীরবে তাকিয়ে থেকে বললেন, ‘আরে তাই তো, আমি এ ফালতু কাজ করছি কেন?’ এই বলে তিনি সেই যে জানালা দিয়ে রেজর ছুড়ে ফেললেন, জীবনে আর কখনো তা ধরেননি।



জর্জ বার্নার্ড শ ২০ বছর বয়সে কেরানির চাকরি ছেড়ে দিয়ে সাহিত্যচর্চায় মনোনিবেশ করেন। জর্জ বার্নার্ড শ কাউকে অটোগ্রাফ দিতেন না। নিজের লেখা বইও কাউকে কখনো উপহার দেননি। বিশ্বখ্যাত বাঙালি জগদীশচন্দ্র বসু ১৯২৮ সালে রয়েল সোসাইটির সভায় একটি ভাষণ দেন। সেই ভাষণ শুনে শ মুগ্ধ।

পরদিনই কয়েকটি বই নিয়ে তিনি জগদীশচন্দ্রের বাসায় গিয়ে হাজির। জগদীশচন্দ্র বাসায় ছিলেন না। উপহারের বইগুলোতে শ লেখেন_জীববিজ্ঞানে পণ্ডিত এক ব্যক্তিকে জীববিজ্ঞান সম্পর্কে অজ্ঞ এক ব্যক্তি উপহার দিলেন।

তিনি সামাজিক বিভিন্ন ধরনের সমস্যাগুলো হাস্যরসের ছদ্মাবরণে তিনি অত্যন্ত দক্ষ শিল্পীর হাতে ফুটিয়ে তুলতে পারতেন। শিক্ষা, বিয়ে, ধর্ম, সরকার, স্বাস্থ্যসেবা এবং শ্রেণী-সুবিধাই ছিল জর্জ বার্নার্ড শ’র লেখার বিষয়বস্তু।

অধিকাংশ লেখাতেই শ্রমজীবী মানুষের শোষণের বিপক্ষে তার অবস্থান ছিল সুস্পষ্ট। একজন কট্টর সমাজতান্ত্রিক হিসেবে ফ্যাবিয়ান সোসাইটির পক্ষে জর্জ বার্নার্ড শ’ অনেক বক্তৃতা দেন ও পুস্তিকা রচনা করেন।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.