আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সুন্নাতে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) নিয়ে আলোচনা (৫ম পর্ব) A_Z

الحمد لله رب العالمين، والصلاة والسلام على خاتم الأنبياء والمرسلين، وعلى آله وصحبه أجمعين، وعلى من تبعهم بإحسان إلى يوم الدين

বিবাহের সুন্নাতসমূহঃ-

১. মাসনূন বিবাহ সাদাসিধে ও অনাড়ম্বর হবে, যা অপচয়, অপব্যয়, বেপর্দা ও বিজাতীয় সংস্কৃতি, গান-বাদ্য, ভিডিও-অডিও মুক্ত হবে এবং তাতে যৌতুকের শর্ত বা সামর্থের অধিক মহরানার শর্ত থাকবে না। (তাবরানী আউসাত, হাঃ নং ৩৬১২)

২. সত ও খোদাভীরু পাত্র-পাত্রীর সন্ধান করে বিবাহের পয়গাম পাঠানো। কোন বাহানা বা সুযোগে পাত্রী দেখা সম্ভব হলে, দেখে নেয়া মুস্তাহাব। কিন্তু আনুষ্ঠানিকভাবে ঘটা করে পাত্রী দেখানোর যে প্রথা আমাদের সমাজে প্রচলিত, তা সুন্নাতের পরিপন্থী ও পরিত্যাজ্য। (ইমদাদুল ফাতাওয়া, ৪ : ২০০/ বুখারী হাঃ নং ৫০৯০)

৩. শাওয়াল মাসে এবং জুমু‘আর দিনে মসজিদে বিবাহ সম্পাদন করা।

উল্লেখ্য, সকল মাসের যে কোন দিন বিবাহ করা জায়েয আছে। (মুসলিম, হাঃ নং ১৪২৩/ বাইহাকী, হাঃ নং ১৪৬৯৯)

৪. বিবাহের খবর ব্যাপকভাবে প্রচার করে বিবাহ করা এবং বিবাহের পরে আকদ অনুষ্ঠানে উপস্থিত লোকদের মাঝে খেজুর বণ্টন করা। (বুখারী শরীফ, হাঃ নং ৫১৪৭)

৬. বাসর রাতে স্ত্রীর কপালের উপরের চুল হাতে নিয়ে এই দু‘আ পড়া :

اللهم انى اسئلك خيرما وخير جبلتها عليه واعوذبك من شرها ومن شرما جبلتها عليه-

(আবু দাউদ, হাঃ নং ২১৬০)

৭. স্ত্রীর সঙ্গে প্রথমে অন্তরঙ্গতা সৃষ্টি করবে, তারপর যখনই সহবাস-এর ইচ্ছা হয়, তখন প্রথমে নিম্নোক্ত দু‘আ পড়ে নেবে :

بسم الله اللهم جنبنا الشيطان وجنب الشيطان ما رزقتنا-

(মুসলিম, হাঃ নং ১৪৩৪)

বি.দ্র. উপরোক্ত দু‘আ না পড়লে শয়তানের তাছীরে বাচ্চার উপর কু-প্রভাব পড়ে। অতঃপর সন্তান বড় হলে, তার মধ্যে ধীরে ধীরে তা প্রকাশ পেতে থাকে এবং বাচ্চা নাফরমান ও অবাধ্য হয়। সুতরাং পিতা-মাতাকে খুবই সতর্ক থাকা জরুরী।

৮. বাসর রাতের পর দু’হাতে আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, শুভাকাঙ্ক্ষী এবং গরীব-মিসকীনদের তাওফীক অনুযায়ী ওলীমা খাওয়ানোর আয়োজন করা। (মুসলিম, হাঃ নং ১৪২৭)

বি.দ্র. (ক) কোন পক্ষ যেওরের শর্ত করা নিষেধ এবং ছেলের পক্ষ থেকে যৌতুক চাওয়া হারাম। (আহসানুর ফাতাওয়া, ৫ : ১৩)

(খ) কনের ইযন-এর জন্য সাক্ষীর কোন প্রয়োজন নাই। সুতরাং ছেলের পক্ষের লোক ইযন শুনতে যাওয়া অনর্থক এবং বেপর্দা। সুতরাং তা নিষেধ।

মেয়ের কোন মাহরাম বিবাহের ওকীল হওয়ার অনুমতি নিবে। (মুসলিম, হাঃ নং ১৪২১)

(গ) শর্ত আরোপ করে বরযাত্রীর নামে বরের সাথে অধিক সংখ্যক লোকজন নিয়ে যাওয়া এবং কনের বাড়ীতে মেহমান হয়ে কনের পিতার উপর বোঝা সৃষ্টি করা আজকের সমাজের একটি জঘন্য কু-প্রথা, যা সম্পূর্ণরূপে পরিত্যাগ করা আবশ্যক। (মুসনাদে আহমদ, হাঃ নং ২০৭২২/ বুখারী হাঃ নং ২৬৯৭)

(ঘ) ওলীমায় অতিরিক্ত ব্যয় করা কিংবা খুব উঁচু মানের খানার ব্যবস্থা করা জরুরী নয়। বরং সামর্থানুযায়ী খরচ করাই সুন্নাত আদায়ের জন্য যথেষ্ট। যে ওলীমায় শুধু ধনী ও দুনিয়াদার লোকদের দাওয়াত করা হয়, দীনদার ও গরীব-মিসকীনদের দাওয়াত করা হয় না, সে ওলীমাকে হাদীসে নিকৃষ্টতম ওলীমা বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।

সুতরাং এ ধরনের নিকৃষ্ট ওলীমার আয়োজন থেকে বিরত থাকা উচিত। (আবু দাউদ, হাঃ নং ৩৭৫৪)

(ঙ) ওলীমার মজলিসে হাদিয়া লেন-দেন ঠিক নয়। কেউ হাদিয়া দিতে চাইলে নিজের সুযোগ মত পাঠিয়ে দিবে, প্রচার করবে না। গোপনে দিবে, এটাই হাদিয়ার সুন্নাত।

সফরের সুন্নাতসমূহঃ-

১. কমপক্ষে দুই ব্যক্তি এক সাথে সফরে যাওয়া, পারতপক্ষে একা সফর না করা।

(তিরমিযী, হাঃ নং ২১৬৫)

২. বাড়ী থেকে بسم الله توكلت على الله পড়ে বের হওয়া। (আবু দাউদ, হাঃ নং ৫০৯৫)

৩. যানবাহনের দরজায় ‘বিসমিল্লাহ’ বলতে বলতে পা রাখা। (আবু দাউদ, হাঃ নং ২৬০২)

৪. যানবাহনে ভাল ভাবে আসন গ্রহণের পর তিনবার আল্লাহু আকবার বলে এই দু‘আ পড়া :

سبحان الذى سخر لنا هذا وما كنا له مقرنين وانا الى ربنا لمنقلون- اللهم انى اسئلك فى سفرنا هذا البر والتقوى ومن العمل ما ترضى اللهم هون علينا سفرنا هذا اللهم اطولنا البعد-اللهم انت الصاحب فى السفر والخليفة فى الاهل والمال اللهم انى اعوذبك من وعثاء السفر وكأبة المنظر وسوء المنقلب فى المال والاهل-(আবু দাউদ, হাদীস নং ২৫৯৮, ২৫৯৯)

৫. সফরে কোথাও অবস্থানের প্রয়োজন হলে, কোন জায়গায় এমনভাবে অবস্থান করা, যাতে মানুষের চলাফেরা ইতাদির ব্যাঘাত না ঘটে। (বুখারী, হাঃ নং ৬২২৯)

৬. নিজে বা যানবাহন উপরের দিকে উঠতে লাগলে আল্লাহু আকবার বলা।
মুসলিম, হাঃ নং ১৩৪৪)

৭. নিজে বা যানবাহন নীচের দিকে নামতে বা অবতরণ করতে লাগলে সুবহানাল্লাহ বলা।

(বুখারী শরীফ, হাঃ নং ২৯৯৩)

৮. দূর হতে গন্তব্যস্থান দৃষ্টিগোচর হতেই এই দু‘আ তিন বারপাঠ করা : اللهم بارك لنا فيها (তাবারানী আউসাত, হাঃ নং ৪৭৫৫)

৯. গন্তব্যবস্থানে প্রবেশ কালে এই দু‘আ পড়া :

اللهم ارزقنا جناها وحببنا الى اهلها وحبب صالحى اهلها الينا (তাবরানী আউসাত, হাঃ নং ৪৭৫৫)

১০. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন : সফরের কার্য শেষ হলেই তাড়াতাড়ি বাড়ী ফিরে আসবে। অযথা সফরকে দীর্ঘ করা ভাল নয় (বুখারী শরীফ, হাঃ নং ১৮০৪)

১১. দীর্ঘ দিনের সফর শেষে বাড়ী প্রত্যাবর্তনকালে হঠাত করেই ঘরে প্রবেশ না করা। বরং প্রথমে নিজ গ্রাম বা মহল্লার মসজিদে এসে অবস্থান করা ও দু‘রাক‘আত নামায পড়া। অতঃপর বাড়ীতে আসার সংবাদ পৌঁছিয়ে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে লোকজনের সাথে সাক্ষাত করে নিজ বাড়ীতে প্রবেশ করা। তেমনিভাবে দীর্ঘদিন সফর হতে পিরে এসে গভীর রাতে বাড়ীতে প্রবেশ না করা।

(মুসলিম, হাঃ নং ২৭৬৯/ বুখারী শরীফ, হাঃ নং ১৮০০)

বি.দ্র. সফরের প্রোগ্রামই এরূপ বানাবে যাতে সকাল হলে বাড়ী পৌঁছা যায়। তবে ঘরের লোকদের যদি তার গভীর রাতে পৌঁছার সংবাদ জানা থাকে এবং তারা তার জন্য অপেক্ষায় থাকে, তবে রাতে এসে সরাসরি ঘরে প্রবেশ করায় কোন দোষ নেই। (বুখারী শরীফ, হাঃ নং ৫২৪৭)

১২. সফরে কুকুর, ঘুংড়ু ও গলঘন্টী সঙ্গে না রাখা। কেননা, শয়তান এগুলোর পিছু নেয়, তাতে সফরের বরকত চলে যায়। উল্লেখ্য, সখ করে বাড়ীতে কুকুর পালা শরীয়তে নিষেধ।

(মুসলিম, হাঃ নং ১৫৭৪/ মুসলিম শরীফ, হাঃ নং ২১১৩)

১৩. সফর হতে প্রত্যাবর্তন করে এই দু‘আ পড়া : ائبون تائبون عابدون لربنا حامدون (তিরমিযী, হাঃ নং ৩৪৪০)

নখ কাটার সুন্নাতসমূহঃ-

১. সপ্তাহে একবার নখ কাটা। (শরহুস্ সুন্নাহ, হাঃ নং ৩০৯০)

২. শুক্রবার জুমু‘আর নামাযে যাওয়ার পূর্বে নখ কাটা। (শরহুস্ সুন্নাহ, হাঃ নং ৩০৯১)

৩. উভয় হাত (মুনাজাতের আকৃতিতে ধরে) ডান হাতের শাহাদাত আঙ্গুল থেকে আরম্ভ করে ধারাবাহিকভাবে বাম হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলির নখ কেটে শেষ করা। অতঃপর সর্বশেষে ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গলীর নখ কাটা। (ফাতাওয়ায়ে শামী- ৬ : ৪০৬/ ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী, ৫ : ৩৫৮)

৪. ডান পায়ের কনিষ্ঠাঙ্গুলি থেকে শুরু করে ধারাবাহিকভাবে বাম পায়ের কনিষ্ঠাঙ্গুলির নখ কেটে শেষ করা।

(শামী, ৬ : ৪০৬)

বিবিধ সুন্নাতঃ-

১. নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পথ চলার সময় রাস্তা হতে লোকদের ধাক্কানো বা সরানো হত না। (মুসনাদে আহমাদ, হাঃ নং ১৪২৩৬)

২. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট কেউ কিছু চাইলে তিনি কখনও না বলতেন না। (অর্থাত প্রার্থীত জিনিস থাকলে তা দিয়ে দিতেন, আর না থাকলে অপরাগতা প্রকাশ করতেন। ) (মুসনাদে আহমাদ, হাঃ নং ১৪২৯৪)

৩. প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কারো মুখ হতে স্বীয় চেহারা মুবারক ফিরিয়ে নিতেন না যতক্ষণ না সে তার চেহারা ফিরিয়ে নিত। কোন ব্যক্তি নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কানে কানে কোন কথা বলতে চাইলে তিনি তার দিকে স্বীয় কান মুবারক বাড়িয়ে দিতেন এবং যতক্ষণ তার কথা শেষ না হতো, ততক্ষণ স্বীয় কর্ণ মুবারক সরিয়ে নিতেন না।

(ইবনে মাজাহ, হাঃ নং ৩৭১৬/ আবু দাউদ, হাঃ নং ৪৭৯৪)

৪. নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাক্ষাতকালে নিজেই আগে সালাম করতেন, তারপর দু’হাতে মুসাফাহা করতেন। অনেক দিন পর কারো সাথে সাক্ষাত হলে তার সাথে মু‘আনাকাও করতেন। (আবু দাউদ, হাঃ নং ৫২১৪/ বুখারী শরীফ হাঃ নং ৬২৬৫-৬২৬৬)

বি.দ্র. সালাম দেয়ার সময় হাত তোলা বিধর্মীদের নীতি। সুতরাং হাত তুলবে না। তবে আওয়াজ না পৌঁছার আশংকা থাকলে হাত তুলতে পারে।

কিন্তু স্যালুটের মত করে হাত তুলবে না। আর মুসাফাহার সময় প্রত্যেকের এক হাত অপর ব্যক্তির দু‘হাতের মাঝখানে থাকবে। (বুখারী শরীফ, হাঃ নং-৬২৬৫)

অমুসলিমদের হ্যান্ডসেকের মত করে হাত ধরবে না। মু‘আনাকার সময় উভয় ব্যক্তি নিজের ডান গর্দান একবার মিলাবে। সাধারণত লোকেরা উভয় দিকে তিনবার সিনা মিলিয়ে থাকে এবং ঈদের দিন মুআনাকার ধুম পড়ে যায়।

এর কোন ভিত্তি নেই। ৫. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাউকে বিদায় দেয়ার সময় মুসাফাহা করতেন এবং এই দু‘আ পড়তেন :

استودع الله دينكم واما نتكم وخواتيم اعمالكم (আবু দাউদ, হাঃ নং ২৬০১)

এবং যাকে বিদায় দিতেন তিনি এ দু‘আটি পড়তেন- استو دعك الله الذى لا تضيع ودائعه- (ইবনে মাজাহ হাঃ নং ২৮২৫)

৬. রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন পছন্দনীয় জিনিস হাসিল করলে এই দু‘আ পড়তেন : الحمد لله الذى بنعمته تتم الصالحات-
(ইবনে মাজাহ, হাঃ নঙ ৩৮০৩)

৭. পক্ষান্তরে মনের ইচ্ছার ব্যতিক্রম কোন পরিস্থিতির সম্মুখীন হলে এই দু‘আ পড়তেন : الحمد لله على كل حال- (ইবনে মাজাহ, হাঃ নং ৩৮০৩)

৮. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন সমস্যার সম্মুখীন হলে এই দু‘আ পড়তেন : يا حى يا قيوم برحمتك استغيث (তিরমিযী, হাঃ নং ৩৫২৪)

৯. হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কারো দিকে তাকাতেন, তখন সম্পূর্ণ চেহারা ঘুরিয়ে তাকাতেন। অহংকারীদের ন্যায় আড় চোখে তাকাতেন না। (শামায়িলে তিরমিযী, পৃ. ১)

১০. হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বদা সৃষ্টি নীচু করে থাকতেন। অধিক লাজুক হওয়ার কারণে তিনি কারো প্রতি দৃষ্টি ভরে তাকাতে পারতেন না।

(শামায়িলে তিরমিযী, পৃ. ২)

১১. হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পথ চলার সময় কিছুটা সম্মুখ পানে ঝুঁকে চলতেন। দেখলে মনে হতো যেন তিনি উপর হতে নীচের দিকে অবতরণ করছেন। (শামায়িলে তিরমিযী, পৃ. ১)

১২. প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সবার সাথে মিলেমিশে থাকতেন, স্বাতন্ত্র্য মর্যাদা বজায় রেখে চলতেন না। মাঝে মাঝে তিনি হাসি-কৌতুকও করতেন। তবে সে কৌতুকও হতো বাস্তবসম্মত।

কাউকে কটাক্ষ করে বা অবাস্তব কথা বলে তিনি কোন কৌতুক করতেন না। (শামায়িলে তিরমিযী, পৃ. ১৫)

বি.দ্র. হাসি কৌতুক-এর অনেক হিকমতের মধ্যে একটা হিকমত ছিল যে, এর কারণে লোকেরা নির্ভয়ে তাঁর নিকট যে কোন দীনী প্রশ্ন করার সুযোগ পেত। ১৩. কোন দুঃস্থ বা বৃদ্ধা মহিলা হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে কথা বলতে চাইলে, রাস্তার একপার্শ্বে গিয়ে তিনি তাদের কথা শুনতেন। (শামায়িলে তিরমিযী, পৃ. ২২)

১৪. রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বীয় পরিবারের লোকদের ব্যাপারেও খুব লক্ষ্য রাখতেন। যাতে তাঁর দ্বারা তাদের কোনরূপ কষ্ট না হয়।

এজন্য রাতে ঘর হতে বের হওয়ার প্রয়োজন হলে অত্যন্ত ধীরস্থিরভাবে উঠে জুতা পরিধান করতেন এবং নিঃশব্দে দরজা খুলে বের হতেন। অনুরূপভাবে ঘরে প্রবেশ করার সময়ও নিঃশব্দে প্রবেশ করতেন, যাতে ঘুমন্ত ব্যক্তিদের ঘুমের কোন প্রকার ব্যাঘাত না ঘটে। (মুসলিম, হাঃ নং ১০৩)

১৫. কোন সন্তানের বয়স সাত বছর হলে তাকে নামায এবং শরীয়তের অন্যান্য বিধি-বিধান পালনে অভ্যস্ত করানোর নির্দেশ দিতেন। (তিরমিযী, হাঃ নং ৪০৭)

১৬. সন্তানের বয়স দশ বছর হলে প্রয়োজনে তাকে নামাযের জন্য হাত দ্বারা (বেত বা লাঠি দ্বারা নয়) প্রহার করার তাকীদ করতেন। (তিরমিযী, হাঃ নং ৪০৭)

১৭. সকল গোত্রের সম্মানিত ও নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করতেন।

(শামায়িলে তিরমিযী, পৃ. ২৩)

১৮. দিনের সময়কে তিন ভাগ করে এক ভাগ আল্লাহর ইবাদত এবং দীনের ফিকিরের জন্য, এক ভাগ পরিবার-পরিজনের খোঁজ-খবর নেয়ার জন্য এবং আরেক ভাগ ব্যক্তিগত কাজ ও নিজের শরীরিক সুস্থতা বজায় রাখার জন্য নির্দিষ্ট করে নেয়ার তা‘লীম দিতেন। (শামায়িলে তিরমিযী, পৃ. ২২)

১৯. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি অধিক পরিমাণ দরূদ পড়তে থাকা, প্রতিবেশীদের সাথে ভাল ব্যবহার করা, বড়দের সম্মান এবং ছোটদের স্নেহ করা নবীজীর গুরুত্বপূর্ণ তালীম। (মুসলিম হাঃ নং ৪০৮/ শামায়িলে তিরমিযী, পৃ. ২৩)

২০. কোন আত্মীয়ের পক্ষ থেকে দুর্ব্যবহার পেলে তাকে মাফ করে দিয়ে তার সাথে ভাল সম্পর্ক বজায় রাখা নবীজীর তরীকা। (বুখারী শরীফ, হাঃ নং ৫৯৯১)

২১. সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর চাই সে ছেলে হোক বা মেয়ে হোক হালকা শব্দ করে তার ডান কানে আযান এবং বাম কানে ইকামত বলা, কোন বুযুর্গের মুখে চিবিয়ে খেজুর, মিষ্টিদ্রব্য বাচ্চার মুখের তালুতে লাগিয়ে দেয়া, সপ্তম দিনে তার সুন্দর নাম রাখা এবং আক্বীকা করা। (তিরমিযী, হাঃ নং ১৫১৪, ১৫২২, ১৫১৫/ মুসলিম, হাঃ নং ৫৬১৭)

২২.আত্নীয়-স্বজনদের সাথে ঘনিষ্ঠ ও আন্তরিক সম্পর্ক রাখা এবং সর্বদা সাধ্যমত তাদের খোঁজ-খবর নেয়া।

(বুখারী শরীফ, হাঃ নং ৫৯৮৭)

২৩. বোগল, নাভীর নীচের অংশ নিয়মিত পরিস্কার করে রাখা, এগুলো পরিস্কার না করা অবস্থায় চল্লিশ দিন অতিবাহিত হয়ে গেলে গুনাহগার হবে। (বুখারী শরীফ, হাঃ নং ৬২৯৭/ তিরমিযী, হাঃ নং ২৭৫৮)

২৪. যাদের দাড়ি লম্বা হয়, তাদের দাড়ি তিন দিকে এক মুষ্টির কিছু বেশি বা কমপক্ষে এক মুষ্টি পরিমাণ রাখা ওয়াজিব। এক মুষ্টি থেকে ছোট করে রাখা বা একেবারে মুণ্ডিয়ে ফেলা হারাম। মোচ (গোঁফ) কাচি দ্বারা ছোট ছোট করে রাখা, যাতে উপরের ঠোঁটের কিনারা স্পষ্ট দেখা যায়। ব্লেড বা ক্ষুর দ্বারা মোচ একদম মুণ্ডিয়ে ফেলা অনুচিত।

(বুখারী শরীফ, হাঃ নং ৫৮৯২, ৫৮৯৩)

২৫. দুর্বলদের প্রতি সুনজর রাখা। তাদের প্রতি যুলুম হতে দেখলে সাধ্যানুযায়ী তা প্রতিহত করা। (বুখারী শরীফ, হাঃ নং ২৪৪৫)

২৬. নিজ স্ত্রীকে আনন্দ দানের জন্য তার সাথে কখনো কখনো হাসি-কৌতুক এবং খোশ গল্প করা। (শামায়িলে তিরমিযী, পৃ. ১৭)

২৭. মুসলমান ভাইয়ের সাক্ষাতে হাসিমুখে মিলিত হওয়া। সাক্ষাতের জন্য আগন্তুক ভাইয়ের উদ্দেশ্যে নিজস্থান থেকে সামান্য সরে গিয়ে বা অগ্রসর হয়ে তার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা।

(তিরমিযী, হাঃ নং ১৮৩৩/ তাকমিলাতু ফাত্‌হুল্ মুলহিম, ৩ : ১২৭)

২৮. হাঁচি বা হাই আসলে হাত বা কাপড় দ্বারা মুখ ঢেকে নেয়া এবং যথাসাধ্য শব্দ কম করা। (আবু দাউদ, হাঃ নং ৫০২৯)

২৯. বিধর্মীদের মত দেখা যায় বা সতর-এর আকৃতি প্রকাশ পায় বা পুরুষদের জন্য টাখনুর নীচে কাপড় পরা হারাম। (বুখারী শরীফ, হাঃ নং ৫৭৮৭/ মুসনাদে আহমাদ, হাঃ নং ৮৬৬৫)

৩০. নীচের কয়েকটি বিষয়ের প্রতি খুব বেশি খেয়াল রাখা অপরিহার্য। কেননা, উক্ত কাজগুলোই দীনের সারমর্ম। এবং উক্ত বিষয়গুলোর ইলম অর্জন করা প্রত্যেক মুসলমানের উপর ফরযে আইন।



ক. নিজের ঈমান আক্বীদা সহীহ ও মজবুত করা।

খ. ইবাদত-বন্দেগীসমূহ আমলী মশকের মাধ্যমে পরিপূর্ণ সুন্নাত অনুযায়ী শিখে নেয়া।

গ. রিযিককে হালাল রাখার পিকির করা।

ঘ. পিতা-মাতা, স্ত্রী সন্তান থেকে নিয়ে সকল আত্নীয়-স্বজন ও মুসলমানদের হক আদায়ে সচেষ্ট থাকা। মোটকথা, বান্দার হক্বের ব্যাপারে খুব বেশি ফিকির রাখা নতুবা সমস্ত ইবাদত-এর সওয়াব শেষ হয়ে যাবে।



ঙ. নিজের আত্মার রোগের চিকিতসার জন্য কোন হক্কানী বুযুর্গের সাথে সম্পর্ক রাখা।

চ. গুনাহে কবীরা, হারাম, মাকরূহে তাহরীমী ও মুশতাবিহ মনে হয় এমন জিনিস থেকে কঠোরভাবে পরহেয করা।

ছ. নিজের পরিবারের লোকজন,আত্মীয়-স্বজন,বন্ধু-বান্ধব ও মহল্লাবাসী লোকদেরকে সর্বদা দীনের দাওয়াত দিতে থাকা এবং তাদের দীনের তা‘লীম দিতে থাকা। সারকথা, আল্লাহর দীনের জন্য প্রতিদিন কিছু সময় বের করা।

(সূরা বাক্বারা, আয়াত, ১৭৭/ তিরমিযী, হাঃ ২২৬৭)


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।