আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

তত্ত্বাবধায়ক বাতিলের উদ্দেশ্য গণতন্ত্র প্রবাহমান রাখা: খায়রুল হক

বুধবার এক সেমিনারে বর্তমানে আইন কমিশনের চেয়ারম্যান বিচারপতি খায়রুল হক বলেন, “আমরা ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করতে বাধ্য হয়েছি। কারণ আমাদের সংবিধান ও আইন তিন মাসের জন্য জনগণের শাসন থাকবে না, এটা সমর্থন করে না।

“গণতন্ত্রকে বাধাগ্রস্ত করা তো নয়ই, প্রবাহমান রাখাই ছিল এই রায়ের একমাত্র উদ্দেশ্য। রায়টি পড়লেই এটা বুঝতে পারবেন। ”

সংবিধানে বলা হয়েছে, জনগণই দেশের একমাত্র মালিক।

জনগণের ইচ্ছা অনুসারে এই দেশ পরিচালিত হবে।

তিনি বলেন, “জনগণের সার্বভৌমত্ব চিরবহমান। এটা একদিনের জন্যও স্থগিত রাখা যায় না। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জনএফ কেনেডিকে যখন হত্যা করা হয়, তখন ভাইস প্রেসিডেন্ট জনসন একটা প্লেনে ছিলেন। তাকে ওয়ারলেসে শপথ পড়ানো হয়।

তাকে আধাঘণ্টাও সময় দেয়া হয় নাই। ”

আইন কমিশনের একটি সেমিনারে প্রশ্নোত্তর পর্বে খায়রুল হক এ সব কথা বলেন।

খায়রুল হক বলেন, “সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর যারা হামলা করছে, তারা দুষ্কৃতিকারী। তাদের কোন রাজনৈতিক পরিচয় আছে আমি স্বীকার করি না। তাদেরকে আইনের আওতায় আনা উচিত।

“সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও হামলার ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক। এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। দেশের জ্যেষ্ঠ নাগরিক হিসাবে, মুসলমান হিসাবে আমি লজ্জিত। ”

তিনি বলেন, “নির্বাচনের আগে এবং পরে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় যেভাবে নিগৃহীত ও নির‌্যাতিত হচ্ছে, তা খুবই দুঃখজনক। আমরা এমন একটি দেশে বাস করি, যেখানে আমার প্রতিবেশীর কোনো সুরক্ষা নেই।

দেশের জ্যেষ্ঠ নাগরিক হিসাবে আমি লজ্জিত। ”

ফাইল ছবি

সেমিনারে ‘বৈষম্য বিলোপ আইন-২০১৪’ নামে একটি খসড়া আইন উপস্থাপন করেন প্রধান গবেষণা কর্মকর্তা ফওজুল আজিম। ওই সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন বিচারপতি খায়রুল হক। মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমানও এতে বক্তব্য রাখেন।

দেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতির সাংবিধানিক স্বীকৃতি ১৯৯৬ সালে এলেও ১৯৯০ সালে গণঅভ্যুত্থানে এরশাদ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন একটি সরকারের অধীনে হয় সাধারণ নির্বাচন।

 

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বিরোধী দলগুলোর আন্দোলনের চাপে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান এনে সংবিধান সংশোধন করে বিএনপি।

২০০৬ সালে রাজনৈতিক সঙ্কটের প্রেক্ষাপটে জরুরি অবস্থা জারির পর গঠিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দুই বছর ক্ষমতায় থাকার পর এ পদ্ধতির দুর্বলতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।

ত্রয়োদশ সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে অ্যাডভোকেট এম সলিম উল্লাহসহ কয়েকজনের রিট আবেদনে ২০০৪ সালে হাই কোর্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে বৈধ বলে ঘোষণা করে। ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে যায় রিট আবেদনকারী পক্ষ।

সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারকের মতামতের ভিত্তিতে ২০১১ সালের ১০ মে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করে আপিল বিভাগ।

তবে এর আওতায় আগামী দুটি সংসদ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হতে পারে বলে মত দেয়া হয়।

আপিল বিভাগের সাত বিচারপতির ওই রায়কে ভিত্তি ধরেই সংবিধান সংশোধন করে মহাজোট সরকার, যাতে বিলুপ্ত হয় নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা।

ওই সময় সংক্ষিপ্ত রায়ে সর্বোচ্চ আদালত বলে, বিদায়ী প্রধান বিচারপতি এবং আপিল বিভাগের বিচারপতিদের বাদ রেখে সংসদ এ সরকার পদ্ধতি সংস্কার করতে পারে।

বাতিলের পর এই ব্যবস্থা পুনর্বহালের দাবিতে আন্দোলনে নামে বিএনপি নেত্বাধানী ১৮ দলীয় জোট। পরে তারা দশম সংসদ নির্বাচন বয়কটও করে।

২০১২ সালে ওই রায়ের পূর্ণ অনুলিপিতে স্বাক্ষরের দিনে আলোচিত এই রায় সম্পর্কে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন বিচারপতি খায়রুল হককে। ওই দিন সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বললেও রায় বিষয়ে মুখ খোলেননি অবসরে যাওয়া এই বিচারপতি।


সোর্স: http://bangla.bdnews24.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।