আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাইসাইকেল

নাকিব এতদিন ক্লাস টুয়ে পড়েছে। সারাদিন দুষ্টামি, দৌড়ঝাঁপে তার সময় কেটে যেত। বইয়ের পড়া শিখতে ওর বেশি সময় ব্যয় হতো না। সন্ধ্যায় বসে কিছুক্ষণ হোমওয়ার্ক করলেই হয়ে যায়। ওর হাতের লেখাও ভালো।

টিচার ওর হাতের লেখার খুব তারিফ করে। হোমওয়ার্কের খাতায় সে প্রায়ই ছবি এঁকে বসে। এই গ্রামের দৃশ্য। রাখাল ছেলে মাঠে গরু নিয়ে যাচ্ছে। কৃষক ফসল বুনছে মাঠে।

জেলে নদীতে মাছ ধরছে কিংবা মহল্লার ছেলে-মেয়েরা ডাংগুলি খেলছে।

নাকিব নিজেও ডাংগুলি খেলে। তবে ওর সবচেয়ে প্রিয় খেলা ক্রিকেট। ক্রিকেট খেলতে তার কোনো ক্লান্তি নেই। যেন সারাদিন খেলার মাঠে থাকতে পারলে ভালো।

আসলে ক্রিকেট খেলতে তো দিন পেরিয়ে যায়। ওর দুটি ব্যাট, তিনটি বল আছে। কখনো কখনো সে তার ভাইকে নিয়ে মাঠে যায়। সেখানে অনেকক্ষণ সে খেলা করে।

নাকিব নতুন বাইসাইকেল চালাতে শিখেছে।

বাইসাইকেলটি কিনে দিয়েছে তার নানু। সেটি তার নানুভাইয়ের বাড়িতেই থাকে। এ জন্য নাকিব স্কুল ছুটি পেলেই নানুবাড়ি চলে আসে। এখানে এসে সে মোটেও বসে থাকে না। সারাদিন তার ব্যস্ততা।

বাইসাইকেল চালিয়ে সে রাস্তার এমাথা ওমাথা করে বেড়ায়। এখনো অবশ্য সে সাইকেলে সিট হাতে পায় না। তাই দুই চাকার ভেতরে পা দিয়ে ওর ভাষায় 'খোল প্যাডেলে' চালায়। বেশ দ্রুত চালাতে পারে।

সেদিন ছিল সোমবার।

নাকিব বেড়াতে এলো নানুবাড়ি। খুব চুপিচুপি সে শার্ট খুলে সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়ল। তাকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এদিকে দুপুর গড়িয়ে যাচ্ছে। খাওয়ার সময় হয়েছে।

ওর আম্মু তাকে হন্যে হয়ে খুঁজছে, পাচ্ছে না। মহল্লার সব জায়গা খুঁজে যখন ক্লান্ত তথন খবর এলো গাজিরহাট ফুটবল মাঠে ও বাইসাইকেল চালাচ্ছে। ফটিক সেটা দেখে এসেছে। ফটিক খবর দিতেই ওর নানু ছুটে গেল ফুটবল মাঠে। দেখা গেল, নাকিব সাইকেলে সমস্ত মাঠে চক্কর দিচ্ছে।

ওর নানু সামনে যেতেই ও বলল, নানু আপনি আমার সাইকেলে ওঠেন। আমি আপনাকে নিয়ে বাসায় ফিরব। যে কথা সেই কাজ। সে তার নানুকে সাইকেলে তুলল। তারপর কোনো রকম একটু এগুতেই অমনি ধপাস করে পড়ে গেল।

বাপরে সে যে কি ব্যথা। আহারে সেই ব্যথা পেয়ে দুজনে যুক্তি করল, সাইকেল থেকে পড়ে যাওয়ার কথা কাউকে বলবে না।

টম অ্যান্ড জেরির ভীষণ ভক্ত নাকিব। সে যেখানেই থাকুক প্রতি রাতে তার টম অ্যান্ড জেরির কার্টুন দেখা চাই। আগে সে মীনা কার্টুন দেথত।

এখন টম অ্যান্ড জেরির বিভিন্ন টম অ্যান্ড জেরি দেখে সে নিজে নিজে হাসে। অনেক রাত পর্যন্ত সে এই কার্টুন দেখে। ওকে নিষেধ করে তবুও সে শোনে না। ওর জন্য বাসায় আর কেউ টেলিভিশন দেখতে পারে না। খবর শুনতে পারে না।

এ নিয়ে ওর ছোটবোন নওশিনের সঙ্গে প্রায়ই ঝগড়া হয়। নওশিন নাটক দেখতে চায়। নাকিব তাকে নাটক দেখতে দেয় না। এ নিয়ে নওশিন তার নানুকে বিচার দেয়। ওর নানু ওকে বুঝিয়ে শুনিয়ে রাখে।

সেদিন রাতেও নাকিব টম অ্যান্ড জেরি দেখছিল। বেশ মনোযোগ দিয়ে দেখছিল। এমন সময় নওশিন লক্ষ্য করল নাকিবের ডান পা বেশ ফুলে গেছে। নওশিন তাকে জিঞ্জেস করল কি হয়েছে? নাকিব বলল কিচ্ছু হয়নি। নওশিন এবার হাত দিয়ে চাপ দিল, অমনি নাকিব বাবারে বলে চিৎকার করে খাটের নিচে লাফিয়ে পড়ল।

টের পাওয়া গেল নাকিবের পায়ে ভীষণ ব্যথা। এরপর আসল রহস্য বের হয়ে গেল, সে সাইকেল চালাতে গিয়ে ব্যথা পেয়েছিল। এখন সে সাবধানে সাইকেল চালায়।

নাবিক ক্লাস টুয়ে থাকতে তিনটি দাঁত পড়ে গিয়েছিল। এ নিয়ে প্রায় হাসিঠাট্টা শুনতে হতো।

ওর যখন প্রথম দাঁত পড়ে, তখন সে দাঁতটি নিয়ে ইঁদুরের গর্তে দিয়েছিল। সে বিশ্বাস করত ইঁদুরের গর্তে দিলে চিকন দাঁত উঠবে। তাতে কোনো কাজ হয়নি। ওর যে দাঁত উঠেছে তা বেশ বড়। বড় বড় দাঁত দিয়ে তো কিছু হবে না, বুদ্ধি দরকার।

নাকিব এবার ক্লাস থ্রিতে উঠেছে। সব পরীক্ষায় সে 'এ' প্লাস পেয়েছে। এ জন্য শিক্ষকরা ওকে খুব আদর করে। নাকিব দুষ্টামি করে ঠিকই, কিন্তু সময় হলে পড়তে বসে। হোমওয়ার্ক শেষ করে খেলতে যায়।

অন্যের সঙ্গে অযথা সময় কাটায় না। সে এখন গোপাল ভাঁড়ের কৌতুক পড়ে। সুকুমার রায়ের ছড়া, দখিনারঞ্জন মিত্রসহ অনেক বড় বড় লেখকের বই সে পড়ে ফেলেছে। অনেক বিদেশি লেখকের মজার গল্প সে পড়ে ওর ছোটবোন নওশিনকে শোনায়। নওশিনকে সে পড়তে বলে।

লেখা শিখিয়ে দেয়। ওদের ইংরেজি টিচার বলেছে, যে বেশি বেশি বই পড়ে, ভ্রমণ করে তার অনেক জ্ঞান বাড়ে, বুদ্ধি বাড়ে। টিচারের কথা শুনে নাকিব পড়াশোনায় মন দিয়েছে আগের চেয়ে বেশি। সে প্রতিদিন নিয়ম করে পড়ে। নতুন কিছু শিখলে সবার আগে সে তার নানুকে জানায়।

তার নানু তাকে সব সময় প্রেরণা জোগায়। তাকে উৎসাহিত করে।

নাকিবের দেখাদেখি এখন পাড়ার ছেলেরা ওকে অনুসরণ করে। সবাই মিলে দেশটাকে সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে চায়।

 

 



অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।