আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অবরুদ্ধ ভালোবাসা।



এই একটা কথা বলি
হু
শোন
হু
কী শুনছো না তো?
হ্যাঁ শুনছি বলো,
আমি কিন্তু তিন বার বলেছি তোমাকে কথাটা। বলোতো কি বলেছি।
হুম কী বলেছো আবার বলো?
এবার মনিকা উঠে আসে তিতাসের কাছে। গভীর নিষ্ঠায় কম্পিউটারের আটকে থাকা চোখসহ মুখ টাকে দু হাতে টেনে নেয় নিজের দিকে।
আহ্ কি করছো মনি লাগছে, বিরক্তি ঝরে তিতাসের কণ্ঠে
অনেক হয়েছে সেই সন্ধ্যায় এসে এখানে বসেছো, চোখ আটকে আছে কম্পিউটারের স্ক্রিনে।

ভাতের প্লেটের দিকেও দেখলেনা কি খাচ্ছো। খাবার নিয়ে এখানে এসে বসলে। সারাদিন এই কম্পিউটারেই কাজ করো। বাসায় আবার এই কম্পিউটারের সাথে লেগে আছো এভাবে। তুমি কি দেখেছো আজ আমি কি পরে আছি?
কী আবার সেলোয়ার কামিজ
উঠো এখান থেকে উঠো, তাকাও ভালো করে দেখো আমাকে কি পরেছি সেলোয়ার কামিজ?
ওমা তুমি শাড়ি পরেছো আজ?
শাড়িকে তোমার সেলোয়ার কামিজ মনে হয়েছিল?
অনেক সময় ওড়নাটা বড় হয় শাড়ির মতন মনে হয়
হয়েছে আর দোষ ঢাকার চেষ্টা করো না।

বোঝ কতটা খেয়াল তোমার আমার দিকে। যদি জানতে চাই কি দিয়ে ভাত খেলে তাও বলতে পারবে না। খেয়েছো শুধু ক্ষুদা নিবৃত্তির জন্য। আমার এতো আগ্রহ ভালোবাসার মিশেল তোমার সব প্রিয় রান্না কিছুই তোমাকে আকৃষ্ট করল না।
এভাবে বলো না গো আমি তো তোমারই আছি

এবার একটু সরাসরি হও বোঝার চেষ্টা করো।

আমি একটা মানুষ যন্ত্র নই। যন্ত্র নিয়ে এতো ব্যাস্ত থাকো মানুষের জন্য একটু ব্যস্ত হও।
তিতাস মনিকার কোমর জড়িয়ে ওকে কাছে টানে। ওর মশৃণ পেটে মুখ রেখে বলে। তুমি কি পরে আছো সে তো বড় নয়।

তুমি মনের মধ্যে আছো একদম তোমার নিজস্ব আদলে।
হুম মন ভুলানো কথা খুব ভালো পারো। কিন্তু তুমি কি জানো এই কথা আমি কতটা মিস করি।
অবাক চোখ বড় করে চেয়ে তিতাস জানতে চায় কেমন করে।
এক ঘরে এক বিছানায় শুয়ে আমরা দিনের পর দিন কেমন একলা কথা না বলে কাটিয়ে দিচ্ছি।

শুধু ব্যস্ততা, শুধু প্রয়োজনের জন্য ছুটছি। কাজ আর কাজ। আমাদের কি আর কোন অনুভব নেই? আবেশে, মুগ্ধতায় মগ্ন হওয়ার। অকারণ কথার ফুলঝুড়িতে মালা গাঁথার।
অকারণ কথা!! আহ কি বলছো তুমি?
কেন বিয়ের আগের সময়গুলো আমরা কি বিরতিহীন কথা বলে যেতাম না।

তোমার কথা ফুরাতো না কখনও। ক্লাস শেষে সন্ধ্যা গড়িয়ে যেত। আমি বাড়ি যাওয়ার জন্য উঠে পরতাম। তুমি বায়না করতে আর দশটি মিনিট বেশী বসে থাকার জন্য। দশ মিনিট পেরিয়ে কত ঘন্টা কত মাস কথার প্লাবনে আমরা ভেসে যেতাম।

কত বাধা অতিক্রম করে আমরা কথার পাহাড় ডিঙ্গাতাম। রাতে মুঠো ফোনে জেগে থাকতাম পাশাপাশি। কথার সমুদ্রে কখন ভোর হয়ে যেতো। অপেক্ষায় অস্থির ছিলাম ক্লাস শেষে কখন আবার কথা হবে আমাদের।
তুমি কি ভুলে গেছো সে সব দিন তিতাস?
কি নিরালায় নিঃশব্দ দিন আমার।

মাঝে মাঝে এই নৈঃশব্দ আমাকে ভ্যানগগ অনুভূতিতে জ্বলিয়ে মারে তিতাস।
মনিকা কি বলছ এসব তুমি? পুরানো দিন পুরানো সময় ভেবে কেন কষ্ট পাচ্ছো। আমি তোমার কাছে আছি। আমি তো তোমারই।
না তিতাস, যখন তুমি কাছে ছিলে না তখন যেন তুমি আমার অনেক হৃদয়ের পাশে ছিলে।

এখন তুমি পাশে থেকেও অনেক দূরের মানুষ। আমি তোমার অতল খুঁজে পাইনা।
তিতাস চেয়ার ছেড়ে উঠে এবার জড়িয়ে নেয় মনিকাকে বুকের মাঝে, ওর ঘাড়ে চুমু খেয়ে ওর চুল এলোমেলো করতে করতে বলে , কেন ভাবছো এমন কথা মনিকা। এই তো আমরা এ তো কাছে একে অপরের উত্তাপে। চলো আজ সারারাত তোমাকে কথার বেলুনে উড়িয়ে দিবো।

কথার খই ফুটতে থাকবে রাতের তারার মতন অজস্র আজ এই ঘরে।
মনিকার দেহ বুকে জড়িয়ে চোখের পাতায় চোখ রেখে তিতাসের মন কম্পিউটারের খোলা আর্টিকেলের শেষ অংশ জানার জন্য উন্মুখ হয়ে থাকে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।