আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাঙ্গালী জীবনে 'গু'জবের প্রভাব



বাঙ্গালী জীবনে 'গু'জবের প্রভাব

আমাদের বাঙ্গালী জীবন নিঃস্তরঙ্গ। কৃষিকাজ করো, মাটি উর্বর, বীজ বপন করলেই ফসল। হাড়ভাঙ্গা খাটুনি আছে কৃষিকাজে; তবে অবসরও আছে। সেই অবসরে নদীর ঘাটে বসে খোশ গল্প, হুক্কা টানা আর ফাঁকে ফাঁকে 'গু'জব উতপাদন।

বাঙ্গালীদের প্রতি দশজনে অন্ততঃ দু'জন এক একজন চলমান ট্যাবলয়েড পত্রিকা।

গল্পবানিয়ে মুখে মুখে ছড়িয়ে দেবার এক ভয়ংকর ক্ষমতা ঐ দুজনের। এরা 'মতি'-মাহমুদুরের পূর্বসূরী। এরাই রাণীর বাচ্চার গায়ের রঙ কালো গল্পটিকে রাণীর পেটে কাক জন্মেছে গল্পে রুপান্তরের 'গুজব'দাদু।

বেশ কিছু 'গু'জব ধর্মী অনলাইন পোর্টালে লিখেছে, সাতক্ষীরায় জামাতের জঙ্গীবাদ বিরোধী অভিযানে ভারতীয় সেনারা অংশ নিয়েছে। 'ভারত-জুজু' বাংলাদেশে সবচেয়ে জনপ্রিয়।

ফলে ভারত-বিরোধী 'গুজবে'র খদ্দের অনেক বেশী। এই ভিত্তিহীন কুতথ্য সেই দশজনে দু'জন দক্ষতার সঙ্গে লোকসমাজে পৌঁছে দেয়। তখন অন্ততঃ দু'জন পিএইচডি করা বড়ে মিয়া এসে এই 'গুজবে'র সত্যতা সার্টিফিকেট দিয়ে বলে; আমরা কী এই বাংলাদেশ চেয়েছিলাম! অন্যরা সরল মনে 'গু'জবে আস্থা এনে বলে, তাইতো, তাইতো, কামডা ভালো হয় নাই।

গুজব বিলাস

বাঙ্গালীর জীবনে আসলে কোন সমস্যা নাই। সেইটাই বড় সমস্যা।

বাংলাদেশের গ্রামগুলো প্রতিদিন জীবনের উদ্ভাসে উষ্ণ, দুটো ভাত-মোটা কাপড় জুটে যায়। তারপর কাঁথা সেলাই আর পরচর্চা। দুজন নারী একসঙ্গে হলে আর কথা নেই; তৃতীয় অনুপস্থিত নারীকে নিয়ে জটিল টকশো। সেইটা কালিয়াকৈরের বিজন গ্রামেই হোক বা সুজন শহরের কফি ওয়ার্ল্ডেই হোক। আমার আম্মার কাছ থেকে শোনা একটা গল্প বললে ব্যাপারটা আরো স্পষ্ট হবে।



১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় আমার আব্বা-আম্মা শরনার্থী হয়ে ভারতে যান। আমার দাদা 'সাহেব-নগর' নামে এক গ্রামে থাকতেন। তো আম্মা বাংলাদেশের মেয়ে যাচ্ছেন ভারতীয় ফাদার ইন ল'র বাড়ীতে শরণ নিতে। বাংলাদেশের বউ দেখার আতিশয্যে আমার আব্বার কাজিনরা গঙ্গার ধারে এসেছেন। আম্মা তাদের সঙ্গে যাচ্ছেন।

হঠাত ক্ষেতে মহিষ দিয়ে হালচাষ হতে দেখে অবাক হোন। বাংলাদেশে গোরু দিয়েই হালচাষ হয়। অমনি ফিমেল কাজিন-ইন-লরা খিলখিলিয়ে হেসে ওঠেন। ব্যাস বিকেল নাগাদ সাহেব-নগরে রটে যায় আহসান এমন এক বাংলাদেশী মেয়ে বিয়ে করেছে যে গরু-মোষ চেনেনা। কী সব্বনাশ করেচে গো।

ভাগ্যিস সেযুগে শাজাহান খান প্রবাসী সরকারের মন্ত্রী ছিলেন না। নইলেতো আম্মা বাংলাদেশে ফেরার লাইসেন্সই পেতেন না।

গুজব রচনাকারীদের আন্তঃব্যক্তিক পর্যায়ে যে দক্ষতা; তা যে কোন গণমাধ্যমের বাপ। দেখুন সাঈদীকে চাঁদে দেখা গেছে; এই গুজবটি সিএনএন-এর চাইতে দ্রুততার সঙ্গে দাবানল ছড়িয়েছে গ্রামে।

এখন এই গুজব কেন ছড়াই আমরা? কারণ আমাদের অফুরন্ত অবসর।

পৃথিবীর অন্য যে কোন দেশের চেয়ে জীবন সহজ এখানে। 'ছাগু' আর 'বাঁদর'-এর উতপাত ছাড়া তেমন কোন ঝুট ঝামেলা নাই।

নদীর ধারে খেয়া ঘাটে বসে আনোয়ার হোসেন অপার আনন্দে গেয়ে ওঠেন, আছেন আমার মুকতার আছেন আমার ব্যারিস্টার। অনেক লোক জমে যায় সেখানে। ঘটক সাদেক খানের এতে হিংসা হয়।

সে রটিয়ে দেয় আনোয়ার পাগল হয়ে গেছে। ও দুধ ভাত। তোমরা আমার গল্প শোন।

এরপর সাদেক খান বোঝায় 'ছাগু' আমাদের গ্রামের জাতীয় প্রাণী। তাকে আদর করো।

ছাগু হও। সাদেক খানের পটপটানি দেখে হাছান মাহমুদ এসে বলে সাদেক ছাগু পন্থী। ও বাতিল। আমি কই তোমরা শোনো , বান্দর আমাদের গ্রামের জাতীয় গর্ব। তাকে আদর করো।

ব্যাস গ্রামবাসী বিভাজিত হয়ে ছাগু বনাম বান্দর কুতর্কে লাঠালাঠি শুরু করে। সাদেক-হাছান দুলা-শালা সম্পর্ক। বাড়ী ফিরে লেবু চিপে কদবেল ভর্তা আর রুইমাছের পেডি দিয়ে ভাত খায়। সাদেকের ঘটকালীর কাজ, হাছানের মতস্য চাষের; দুটোই রমরমা।

খেয়াঘাটের গুজব বিশারদ মতি-মাহমুদ গ্রামের ছাগুনাশের বান্দর ষড়যন্ত্রের ট্রমা ঢুকিয়ে দেয় এরি মাঝে 'ছাগু'র পক্ষে যাওয়া গ্রামবাসীর মনে।

এরমধ্যে ছাগুপন্থী গ্রামবাসীরা হিন্দুদের বাড়ীতে হামলা করে। কারণ হিন্দুদের বাটিতে বানর গেলে; তারা ভগবানের আশীর্বাদ পেতে একটা কলা ছূঁড়ে দেয়। কিন্তু ছাগু গেলে কাঁঠাল-পাতা দেয়না।

ফ্যাসাদউল্লাহ গ্রামবাসীকে এবার স্পষ্ট করে মুসলমান-হিন্দু বিভাজন করে দেয়; ছাগু না থাকলে বকরি ঈদে কী খাবি? বানর কী খাওয়া যায়? আরো নানারকম ফোরটোয়েন্টি গল্প বলে ফ্যাসাদ। ফলে শান্তির গ্রামটিতে চরম অশান্তি নেমে আসে।

কারো মনে শান্তি নেই। শুধু আনন্দে আছে দুলা আর শালা কতিপয়। সেই আনোয়ার একা একা মনের কষ্টে গান গায়; সেই খেয়াঘাটে বসে; সত্য কাজে কেউ নয় রাজী; শুধুই দেখি তা না না না না। মনের দুঃখ হালকা করতে ধীরে ধীরে খেয়া ঘাটের দিকে গ্রামবাসী আসে। ঘন হয়ে আসে।



গুজবের বুলেটে আনোয়ারের মৃত্যু

খেয়া ঘাটের অলৌকিক নৌকার মাঝি আনোয়ারকে গ্রামের মানুষ পিতার মত শ্রদ্ধা করে। সাদেক খানের খুব কষ্ট হয়। সে হাছান শালাকে ঢেকে বলে এই গ্রামবন্ধু আনোয়ারের গান বন্ধ করা দরকার। নাইলে পোলা-পান নিজের পছন্দে বিয়ে করবে। আমার ঘটকালী ব্যবসা ফিনিস হইয়া যাইবোরে হাছান।

শালাও ক্ষিপ্ত, দুলা, গ্রাম বন্ধু আমারে ডাইকা বলে কীনা, গরীবগুণারে মাছ খাইতে দিস না কা! সাদেক হাছানকে নিয়ে গ্রামের চৌকিদার দয়া মিয়ার কাছে যায়। চৌকিদারের ডিমোশন হয়ে তখন সে হাফ চৌকিদার। অপেক্ষাকৃত ভদ্র রফিকে গ্রামবন্ধু চৌকিদার বানিয়েছে। দয়া বলে, আমি নিজে কিছু করবো না; আপনারা করতে চাইলে করেন।

সাদেক উপায়ান্তর না দেখে আবার গুজব তৈরী করে গ্রামবন্ধুর বাসায় হীরা পাওয়া গেছে।

সে গায়ক থেকে রাজা হয়ে গেল। ফ্যাসাদ বলে, গ্রামবন্ধুর ছেলেরা সুদের দোকান লুট করেছে। গ্রামের মানুষ হায় হায় করে ওঠে। এতোদিনের এতো ভালবাসা, এতো গান, এতো উষ্ণতা পরাজিত হলো দুটো গুজবে। কেউ একবার গ্রামবন্ধুর বাসায় গিয়ে দেখলো না কত টানাপোড়েনে চলে সেই সংসার।



ফ্যাসাদ সাদেককে ইনফর্ম করে গ্রামের মানুষ দুইটা গল্পই খাইছে। সাদেক আর সময় নষ্ট না করে গ্রামবন্ধুকে হত্যার পরিকল্পনা চূড়ান্ত করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী গ্রামবন্ধু পিতাকে হারায় শান্তি-গ্রামের মানুষ।

হাছান খেয়া ঘাটে এসে ঘোষণা দেয়, সেই এখন থেকে এগ্রামের মাতবর। টুপি পরে সে খেয়া ঘাটে ছাগুদের মারফতী শোনায়।

এতো বেসুরো গলা যে ছাগুরাও বিরক্ত হয়। বানরেরাতো বিরক্তই। বানর-ছাগুর অভ্যুত্থানে হাছানের পতন ঘটে। দয়া মিয়া খেয়া ঘাটে এসে রণসঙ্গীত গেয়ে শোনায়। ছাগুরা তখন হেলে দুলে কাঁঠাল পাতা খেয়ে বেড়ায়।

হিন্দুদের দেখলে শিং বাগিয়ে তেড়ে যায়। কঠিন সময় নেমে আসে শান্তি গ্রামে। দয়া নিজেই পাশের গ্রাম সম্পর্কে নতুন গুজব ছড়িয়ে দেয় সাদেক খানের মাধ্যমে।

পাশের গ্রাম শংখ নদীর পানি বাঁধ দিয়ে আটকিয়ে রাখে। দয়া ক্ষেতে সেচের পানি সঞ্চয়ের জন্য গ্রামবাসীকে নিয়ে খাল-খনন শুরু করে।

এরপর সেখানে কুমীর ছেড়ে দেয়। কুমীর রপ্তানী করে গ্রামের উন্নয়ন করা যাবে এই অজুহাতে। কুমিরেরা বানর পানি খেতে এলেই কামড় দিয়ে পাকস্থলীতে নিতে শুরু করে। ওদিকে গ্রামের মানুষেরও কষ্ট; নদীতে কুমীর, ডাঙ্গায় সাদেক খান।

এরপর দয়া মিয়া হত্যাকান্ডতে গ্রামবাসী হাঁফ ছেড়ে বাঁচে।

গ্রামে গান গাইবার মতো আর একজনই ছিল। মধুমিয়া। নকল পল্লীবন্ধু নাম ধারণ করে সে খেয়া ঘাটে গানের পাশাপাশি ছাইয়া নৃত্য শুরু করে। ছাগু-বানর সবাই সে নাচে মুগ্ধ। মধু মিয়ার একটাই সমস্যা ১৬ থেকে ৯৬ যে কোন বয়সের নারী দেখলেই শিস দেয়।

মিষ্টি কদমা দিয়ে ফুসলায়। কেউ মাতব্বরীকে ল্যাং মারতে চাইলে মধু দু'একটাকে ঝেড়ে দেয়। মধু এমন এক 'আলু' যেটা ছাগু ও বানর উভয়েই পছন্দ করে। তবু মধুর ফষ্টি-নষ্টির সত্য-মিথ্যা গুজবে ছেয়ে গেল গ্রাম। গ্রামে ছ্যা ছ্যা পড়ে গেল।



অফুরন্ত মধু গুজব

মধুমিয়ার নাচ-গানে গ্রামের মানুষ অতিষ্ট। তবে ছাগু ও বানরেরা খুশী। গ্রামের মৌমাছিরা আরো খুশী। মধু মিয়া খেয়া ঘাটে খেয়া নৌকার ভাড়ায় শুভংকরের ২ শতাংশ ফাঁকি প্রচলন করে। পুরা গ্রামে ২ শতাংশের সংস্কৃতি চালু হয়।

বানরেরা কাটা রাইফেল আর ছাগুরা চাপাতি হাতে চাঁদাবাজিতে বেরিয়ে পড়ে।

এর আগে অন্য গ্রাম থেকে বাবা আনোয়ারের মৃত্যুর পর শান্তির গ্রাম-এ ফেরেন উনার মেয়ে হাসি। সাদেক খানদের ভ্রু কুঁচকায়। আবার গান গাইয়া না ওঠে। হাসি গান গায়না।

সারাক্ষণ কাঁদে। আনোয়ারের মত মানুষকে এগ্রামের লোক মারতে পারলো এই বিস্ময়ে হাসি হতবাক। ফ্যাসাদ সাদেককে বললো, হাসি যেহেতু হাসেনা; তাকে হাসেনা বলে ডাকাই ভাল।

এদিকে হাসেনা গ্রামবাসীর মাঝে জনপ্রিয় হতে থাকে। হাছান গিয়ে কয়েকটি বানর নিয়ে
হাজির হয় তার বাসায়।

হাছান বোঝায়, এইডা আর সেই আনোয়ারের শান্তির গ্রাম নাই। মধু মিয়া এইটাকে ২ শতাংশ চাঁদা আর মৌমাছি পরিচর্যার রঙ্গিন দোজখ বানাইছে।

হাসেনার কাছে হাছানকে জুটতে দেখে তার দুলা সাদেক একদিন কিছু ছাগু নিয়ে দয়া মিয়ার বাসায় পুতুল ভাবীর সঙ্গে দেখা করে। ফ্যাসাদ ভাবীকে বোঝায় দয়া ভাই যেহেতু খাল কেটেছেন গ্রামে, এখানে ভাবীর একটা হক আছে। মধু মিয়া একাই শুধু দুই শতাংশ আর মৌচাক ভাঙ্গা মধু খাবে কেন।

ফ্যাসাদ বলে, ভাবী পুতুল নামটা বাচ্চাদের হয়ে যায়। দয়া ভাইয়ের খাল কাটার উদ্যোগকে সম্মান জানাতে, আমরা আপনাকে খেলনা বলে ডাকতে চাই। পুতুল নামটার অর্থটাও রইলো।

গ্রামে হাসেনা ও খেলনা দু'জন মহিলাকে সামনে রেখে হাছান-সাদেক-ফ্যাসাদ এরা এক বুলবুলি আখড়াই চালু করে। খেয়া ঘাটে নাচার সময় মধু মিয়ার গালে ঠাস করে একটা চড় দিয়ে দেয় একটা বানর।

এরপর একটা ছাগু এসে ঢুশ দেয় মধুকে। নাচ-গান বন্ধ হয়ে যায়। গ্রামের মানুষ মধুর রং-ঢং থেকে মুক্তি চায়।

গ্রামের ইমাম সাহেব শাবু হুজুর বলেন, এখন থেকে এই গ্রামে যা হবে তা ভোটের মাধ্যমে হবে। পাশের অশান্তি গ্রামেও তাই হচ্ছে।

খেয়াঘাটে ভোট হয়। কিছু শিং-অলা ছাগু ভোট দিতে আসার পথে ঢুঁশ দেয় হিন্দুদের। বানরেরাও কয়েকজন মুরুব্বীদের গলায় গামছা দিয়ে ভোট দিতে নিয়ে আসে। ভোটে জিতে যায় খেলনা।
গ্রামের নতুন মাতবরী খেলনা মধুমিয়াকে শাস্তি দেয়।

কৌটার মধ্যে ভরে ফেলে এই ভ্রমরটিকে।

হাসেনা তখন আরো হাসেনা। বানর গুলোর মুখ শুকিয়ে চুন। ছাগুরা চাপাতি নিয়ে ঘুরে। খেলনা বেগম আলতা, লিপস্টিক পরে গ্রামে মাতবরী করে বেলায়।

সাদেক খান তার যাদুকরী ঘটকালী করে বানর-ছাগুর বিয়ে দিয়ে গ্রামে কিছু বাগু তৈরী করে। বাগুরা হাসেনা বেগমকে খালা ডাকে। খেলনা বেগমকে চাচী ডাকে। নদী-খালে কুমীর থৈ থৈ করছে। ফ্যাসাদ খুব খুশী।

দয়া মিয়া সত্যিই ভিলেজ পলিটিকসটাকে জটিল করে রেখে গেছেন।

হাসেনাকে নিয়ে খেলনার গুজব

খেলনা বেগম আজীবন শান্তিগ্রামের মাতবর থাকতে চায়। গ্রামবন্ধু আনোয়ারের মৃত্যুর পর উনার মেয়ে হাসেনাকে শান্তি গ্রামে ঢুকতে দেয়ায় সে পাশের অশান্তি গ্রামে আশ্রয় নিয়েছিল। খেলনা বেগম তাই রটিয়ে দেয় হাসেনা অশান্তির গ্রামের প্রতি নতজানু। ফ্যাসাদ আরো উস্কে দেয়, হিন্দুদের অশান্তি গ্রামের সঙ্গে হাসেনার এতো দহরম মহরম কেন?

ছাগুরা পেয়ে যায় গু'জবের উপকরণ।

গ্রামের মানুষ বিভ্রান্ত হয়। ওদিকে দয়া মিয়ার দূরবর্তী মারখুট গ্রামের সঙ্গে অতীতে ঢলাঢলি থাকায় ও তার চৌকিদারির প্রশিক্ষণ মারখুটস্তানে হওয়ায়; খেলনা ওই গ্রামের সঙ্গে প্রশমন ও অশান্তি-গ্রামের দাদাগিরি বন্ধের জন্য গাঁটছড়া বাঁধে।

গ্রামের মানুষেরা লক্ষ্য করে ছাগুরা হাটের বিভিন্ন জায়গায় নোংরা ওয়াজ করে বেড়াচ্ছে। গ্রামের মেয়েদের তেঁতুল বলছে। ছাগুদের বিরুদ্ধে মানুষের আন্দোলনে হাসেনা বেগম সমর্থন দেয়।

ঘাতক ছাগু-মারখুট ও কুমীরের বিরুদ্ধে গ্রামবাসী এক জোট হয়।

খেলনা বেগম কয়েকজন মানুষকে গ্রেফতার করে। গ্রামবাসী বুঝতে পারে এগ্রামে ছাগলের দাম মানুষের চেয়ে বেশী। খেলনা বেগম কিছুতেই মাতবরী ছাড়তে চায়না। পরে রফা হয়, একজন সৎ হুজুর বা পুরোহিতের অধীনে ভোট হবে কিছুকাল।

গ্রামের গণ্যমান্য শেলী হুজুরের অধীনে ভোট হলো। হাসেনা ভোটে জিতে মাতবরী হন। আবার অনেকদিন পর খেয়াঘাটে সেই অলৌকিক নৌকার মাঝি আনোয়ারের গান শোনা গেল। হাছানের রমরমা মতস্য ব্যবসা। সাদেক খানের ছাগু-বানর বিয়ে দেবার ঘটকালী রমরমা।

গ্রামের মানুষ স্তম্ভিত। চারপাশে বানর আর ছাগু, নদীতে কুমীর। মানুষ যাবে কোথায়!

ফ্যাসাদ পাশের হিন্দু গ্রাম এই মুসলমানঘন গ্রাম দখল করে এখানে উলু বাজাবে এমন গুজব চালু করে দেয় মতি-মাহমুদুরদের গুজববৃত্তে। রাতারাতি গ্রামে একটা শক্ত মুসলমান হওয়ার প্রতিযোগিতা বাড়ে। পাছে পাশের গ্রাম এই গ্রাম দখল করে মসজিদে ঘন্টা বাজায়।

ওদিকে হাজারী নামে একটি বানর হাসেনা বেগমের নাম ভাঙ্গিয়ে যাতা শুরু করে। মতিবৃত্ত হাজারীর কুকর্মের কথা গোটা গ্রামকে জানিয়ে দেয়। সুতরাং গ্রামের মানুষ সিদ্ধান্ত নেয়; আর হাসেনা নয়; এবার খেলনা।

হাওয়া গু'জব

খেলনা বেগম আরেকবার মাতবর হল গ্রামে। এর মধ্যে তার ছেলে দুটি বড় হয়েছে।

ছারেক ও ছোকো। এরা আলাদা হাওয়া-খানা খুলে আসল মাতবরী শুরু করে। ছারেক তার বন্ধু ছাগুমকে দিয়ে গ্রামের হাটে ঢোল পিটিয়ে দেয় মধুমিয়ার দুই শতাংশ কম হয়ে যায়। শান্তিগ্রামে শুরু হলো ছারেকের দশ শতাংশ চাঁদাবাজি। কুমীরেরা নদী থেকে উঠে খেয়া ঘাটের দখল নিয়েছে।



ছারেক মারখুটাস্তান থেকে পটকা এনে হাসেনা বেগমের সভায় ছুঁড়ে মারে। অল্পের জন্য প্রাণে বাঁচে হাসেনা বেগম। মারা যায় অনেক মানুষ। বানরেরা জনসভায় বোর ফিল করে বলে আসে না। তাই ছারেকের পটকায় বানররা অক্ষত থাকে।



ছারেক একটি মিশ্র শ্যামছাগুকে 'বাংলা ভাই' নাম দিয়ে গ্রামে ছেড়ে দেয়। এরা গোটা গ্রামে একের পর এক পটকা মারতে থাকে। ছারেক হাওয়া-খানার সামনের মাঠে ছোকোকে নিয়ে ডাংগুলি খেলে। কুমীরেরা দেখে। ছাগুরা গ্রামের মেয়েদের টিয়া পাখি, ময়না পাখি, কলিজু ইত্যাদি নাম ধরে ডাকে।

সাদেক খান ঘটক হিসেবে অসন্তুষ্ট নয়। বানর-ছাগু বিয়ে হয়েছে অনেক; এখন ছাগুকে যদি টিয়া পাখির সঙ্গে বিয়ে দেয়া যায় ক্ষতি কী?

মতিবৃত্তটি খেলনা বেগমের ছারেকের হাতের খেলনা হবার খবর গ্রামের মানুষকে পৌঁছে দেয়। গ্রামের চৌকিদার মইনের ঘোড়াগুলিকে গ্রামের মাতবর বানিয়ে দেয়। বানর-ছাগু ধরে খোয়াড়ে দেয়া হয়। হাসেনা বেগম ও খেলনা বেগমকে দুটো বাড়ীতে আটকে রাখা হয়।

ছারেককে বাড়াবাড়ির জন্য মেরুদন্ড খোয়াতে হয়। মইনের ঘোড়াগুলি তাকে লাল ছাগু ও বাঁদরদের গ্রামে পাঠিয়ে দেয়।

মতিবৃত্ত চেষ্টা করে দুই মহিলাকে মাইনাস করে পুরুষ কাউকে খেয়া ঘাটে বেঁধে দিতে। কিন্তু তেমন পুরুষ ততদিনে আর এগ্রামে নেই। এরমধ্যে মধু মিয়াই আবার একমাত্র পুরুষ।

আসল পুরুষ। মইন তার ঘোড়া গুলো নিয়ে ঘোড়াদের গ্রামে চলে গেল।

গ্রামের মানুষ ছারেকের কুকীর্তির কারণে খেলনা বেগমের মুখদর্শন ছেড়ে দিলো। এবার পাকাপাকিভাবে গ্রামের মাতবরী হয়ে উঠলো হাসেনা বেগম। বানরগুলো রাস্তায় নেমে এলো; ছাগুগুলোকে কাভার করে করে কলা খেয়ে ফিরতে লাগলো; মসজিদে মন্দিরে; ছারেকের দশ শতাংশ বহাল থাকলো।

ছারেক শান্তিগ্রামের চাঁদাবাজির ভার্ণিয়ার ধ্রুবক হয়ে গেলো।
ত্রিভুজ গু'জব

হাসেনা বেগম মোটামুটি ১১ বছর শান্তিগ্রামের মাতবরী করবেন বলে নেমে পড়ল অতীন্দ্রিয় পিংপং খেলায়। গ্রামের মানুষের ঘাড় ব্যথা হয়ে যায়। তবে ছারেক-ছোকোর ডাংগুলির চেয়ে এ খেলা নিরাপদ। মইনের ঘোড়াগুলির ধরা এক দস্যু দরবেশ হয়ে উদয় হয় গ্রামে।

তার সঙ্গে গ্রামের গোরখাদকের ছেলে ফালু। দুজন মিলে গ্রামের ব্যবসা বানিজ্য নিয়ন্ত্রণ করে। দরবেশের চুরির দশ শতাংশ চাঁদা যায় কান্নাকাটি গ্রুপে। আর ফালুর চুরির দশ শতাংশ কাটাকাটি গ্রুপে।

মতিবৃত্ত হাসেনার কান্নাকাটির বিনিময়ে ভোট চাওয়া না দিলে কেঁদে কেঁদে ওয়াক-ওভার নেয়ার কারণে তার দলটিকে কান্নাকাটি গ্রুপ বলে।

অন্যদিকে ঘাতক মারখুট-ছাগু-কুমীর নির্মুল বৃত্ত; খেলনা বেগমের ছেলের চাপাতি দিয়ে কাটাকাটির বিনিময়ে ভোট চাওয়া; নইলে জোর করে হিন্দু ভোটারদের কেটে ফেলার দলটিকে কাটাকাটি গ্রুপ বলে। সর্বসম্মত ভাবে গ্রামের মানুষ মধু-মিয়ার দলটিকে মধু পার্টি বলে ডাকে।

হাসেনা বেগম ঘোড়াদের গ্রামের কাউকে ধরতে না পেরে যে মিশ্রছাগুরা উনার আব্বাকে হত্যা করেছিল তাদের খোয়াড়ের পাশে জবাই করে ফেলে। অনেক দিন পর গ্রামের মানুষ একটু ছাগুর গোস্ত দিয়ে ভাত খায়। তবে এই গ্রামকে মারখুটদের হাত থেকে মুক্ত করার যুদ্ধে অনেক গ্রামবাসী মারা গেলেও অপরাধী গ্রামীণ মারখুট গুলোকে জবাই করতে দেরী হয় ক্রমশঃ।



হাছান হাসেনা বেগমকে বোঝায়, মারখুটগুলি বুড়া হয়ে গেছে। এগুলি জবাই করলে সেদ্ধ হবে না। গ্রামের তরুণেরা নির্মুল বৃত্তের লোক নিয়ে গ্রামের স্কুলের সামনে বসে পড়ে। আর কত ধানাই-পানাই; জবাই করে দে প্যাকেট করে; গোস্ত নাহয় মারখুটস্থানে পাঠানো যাবে। কোন মতে একটা মারখুট জবাই হয়।



মনের দুঃখে গ্রামের একদল মানুষ উস্তাভাজা খেতে শুরু করে। চাঁদের মধ্যে টিয়া প্রেমিক ছাগুর চেহারা ফুটে ওঠে। ছাগুরা গ্রামের শাপলা পুকুরে এসে আর সেখান থেকে যেতে চায়না। তাদের দাবী মারখুটদের জবাই করা যাবে না।

এর মধ্যে খেলনা বেগম পাগল মতন হয়ে যায়।

হাসেনা বেগম কিছুক্ষণ পর পর খেলনা বেগমকে ঝাড়ু দেখায়। খেলনা বেগম চিৎকার করে, বেয়াদ্দপ; গোপালী নাকি?

হাসেনা বেগম ১৩২ জনের ব্যান্ড পার্টি নিয়ে ঘোড়ার দেশ, লাল ছাগু-বাঁদরের দেশ ঘুরতে যায়। আর খেলনা বেগম বসে বসে কাঁদে। মধু মিয়া আসল পুরুষ হিসেবে আবির্ভুত হয়।

গ্রামের নানা অনাচার-চাঁদাবাজি-ছাগবাজি-বান্দরবাজি এই এক বৈজু মধু ঢেকে দেয় তার রুপালী ছাইয়া নৃত্য দিয়ে।

হাসেনা বেগম কাঁদাকাটি ছেড়ে হাসাহাসি শুরু করে। তার গ্রুপের নামও হাসাহাসি গ্রুপ হয়ে যাওয়ার পথে।

এক মুরুব্বী জিজ্ঞেস করে, মা হাসু তুমি খেলনাকে ছাগু ছাড়তে বলো, তুমি মধুবান্দর নিয়ে বসে থাকো কেন?

হাসেনা বেগম কেঁদে ফেলে, চাচা আপনি আমার আব্বার বন্ধু হয়ে একথা বলতে পারলেন!

মুরুব্বি ভয় পেয়ে যায়; না মা থাক। আমাদের যা হয় হবে তুই তোর টয়-বার্বি নিয়ে খুশী থাক।

হিন্দুগ্রাম লন্ড-ভন্ড করে ছাগু-মারখুট-কুমীর; পরে শোনা যায় বাগু ও বানরেরাও গ্রামের হিন্দুদের খেদিয়ে অশান্তির গ্রামে পাঠানোর চেষ্টা করেছে।



হাসেনা বেগম অতীন্দ্রিয় পিং পং খেলে টয়-বার্বিদের সঙ্গে।
গ্রামের মানুষ আটকে যায় হাসাহাসি গ্রুপ, কাটাকাটি গ্রুপ আর মধু-পার্টির সোনালী ত্রিভুজে!

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.