আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইজতেমার প্রথম দিনে লাখো মুসল্লির সমাবেশ

শুক্রবার দুপুরে জুমার নামাজ উপলক্ষে তুরাগ তীরে মুসল্লিদের ঢল নামে। সকাল থেকেই রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকা ও টঙ্গীর আশপাশের এলাকা থেকে হাজার হাজার মুসল্লি ইজতেমা ময়দানে আসতে থাকেন।

ঢাকার কাকরাইল মসজিদের ইমাম হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ জুবায়েরের ইমামতিতে এদিন তুরাগ তীরে ১৫ লাখের বেশি মানুষ জুমার নামাজ আদায় করেন বলে ধারণা করছেন ইজতেমার আয়োজকরা।

এ সময় ইজতেমা ময়দান ছাড়িয়ে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ও খোলা জায়গায় অনেক মুসল্লিকে খবরের কাগজ, জায়নামাজ, পলিথিন ও হোগলা বিছিয়ে নামাজ পড়তে দেখা যায়।

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, সাবেক প্রধান বিচারপতি তোফাজ্জল হোসেন, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এমএ মান্নান,  সাংসদ জাহিদ আহসান রাসেল, জেলা প্রশাসক মো. নূরুল ইসলাম ইজতেমা ময়দানে উপস্থিত হয়ে জুমার নামাজে অংশ নেন।

এর আগে ভোরে ফজরের নামাজের পর আ’মবয়ানের মধ্য দিয়ে ইজতেমার  আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়। পাকিস্তানের মাওলানা ইসমাইল হোসেন উর্দুতে এই বয়ান দিলে বাংলাদেশের মাওলানা মাহমুদ হোসাইন সঙ্গে সঙ্গে  তা বাংলায় ভাষান্তর করেন।

এরপর একে একে ভারতের মাওলানা মো. ইসমাইল হোসেন, বাংলাদেশি মাওলানা মো. ওমর আলী,  ভারতের  মাওলানা মো. জোবায়রুল হাসান ও  মাওলানা সা’দ বয়ান করেন বলে বিশ্ব ইজতেমার আয়োজক কমিটির মুরুব্বি  মো. গিয়াস উদ্দিন জানান।

তাবলীগ জামাতের উদ্যোগে প্রতি বছর টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরের ১৬০ একর এলাকা জুড়ে বিশাল চটের ছাউনির নিচে এ ইজতেমা  হয়। এবার ইজতেমার প্রথম পর্বে পুরো ময়দানকে ৪০টি খিত্তায় ভাগ করা হয়েছে।

দেশের ৩২টি জেলার মুসল্লিরা এ পর্বে অংশ নিচ্ছেন।  ভারত, পাকিস্তান, আমেরিকা, সৌদি আরব,  ইংল্যান্ডসহ  বিশ্বের ১৩৩টি  দেশের  প্রায় ৩০ হাজার মুসল্লি ইজতেমায় অংশ নিয়েছেন।

ইজতেমা উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ মঙ্গল কামনা করে শুভেচ্ছা বাণী দিয়েছেন।

এদিকে এই সম্মিলনকে কেন্দ্র করে টঙ্গী এখন উৎসবের নগরীতে পরিণত হয়েছে। তুরাগ মাঠের আশে-পাশে চলছে মুসল্লিদের অজু, গোসল আর রান্নার আয়োজন।

বিশ্বইজতেমার আয়োজক কমিটির মুরুব্বি মো. গিয়াস উদ্দিন জানান, ১৬০ একরের সুবিশাল ময়দানের পুরোটাই চটের সামিয়ানা টানিয়ে প্রস্তুত করা হয়েছে। সাধারণ মুসল্লীদের রান্না-বান্নার স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ সম্ভব না হলেও মাঠের পশ্চিম-উত্তর কোণায় টিন শেডের উন্নত আবাসনে বিদেশি মুসল্লিদের রান্নার জন্য গ্যাসসহ বিদ্যুৎ ও টেলিফোন সংযোগ এবং আধুনিক সুবিধা রয়েছে।

মুসল্লিদের চিকিৎসা সহায়তা দিতে টঙ্গী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে। এছাড়া প্রায় ৪৫টি স্বেচ্ছাসেবী, সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা বৃহস্পতিবার থেকে মুসল্লিদের স্বাস্থ্য সেবা দিতে কাজ করছে।

এদিকে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে ইজতেমা ময়দানে অসুস্থ হয়ে আব্দুল মজিদ প্রামাণিক (৬৫) ও ওমর আলী (৪৮) নামে দুই মুসল্লির মৃত্যু হয়েছে।

মজিদ সিরাজগঞ্জের বেলকুচি থানার মধ্যমিটু  এলাকার এবং ওমর ঢাকার কেরানীগঞ্জের রুহিতপুর গ্রামের বাসিন্দা।

ইজতেমাস্থলে বিদেশি ও সাধারণ মুসল্লিদের নিরাপত্তা দিতে পাঁচস্তর বিশ্বিষ্ট নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। পুলিশ, আনসার ও র‌্যাব সদস্যসহ বিভিন্ন গোয়েন্দাসংস্থার সদস্যরা নিরাপত্তা ও শান্তি শৃঙ্খলার কাজে নিয়োজিত রয়েছেন।

র‌্যাব-১ এর মহাপরিচালক মো. মোখলেছুর রহমান জানান, এবার র‌্যাব সদস্যের সংখ্যা গতবারের চেয়েও বেশি থাকছে। কয়েকটি সেক্টরে ভাগ করে তারা পুরো ইজতেমা এলাকা ও আশে-পাশে নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্ব পালন করছেন।

দু’পর্বের ইজতেমার মূল ছয়দিন র‌্যাবের হেলিকপ্টার টহল দিবে। খিত্তায় খিত্তায় সাদা পোশাকে র‌্যাব সদস্যরা থাকবেন।

র‌্যাবের বোমা নিষ্ক্রিয় দলও মাঠে রয়েছে বলে জানান তিনি।

গাজীপুরের পুলিশ সুপার আব্দুল বাতেন জানান, ইজতেমা মাঠের সার্বিক নিরাপত্তার জন্য র‌্যাব পুলিশসহ  ১১ হাজার নিরাপত্তাকর্মী মোতায়েন রয়েছে। পুলিশ ও র‌্যাবের বেশ কিছু সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে সার্বিক নিরাপত্তা তদারক করা হচ্ছে।

এছাড়া বাইনোকুলার, মেটাল ডিটেক্টর এবং নিয়ন্ত্রণ কক্ষ স্থাপন করা হয়েছে।  

ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের অর্থ হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টায় জড়িত সন্দেহে ইজতেমা ময়দান ও এর আশপাশের এলাকা থেকে অর্ধশতাধিক মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

টঙ্গী থানার ওসি ইসমাইল হোসেন জানান, বৃহস্পতিবার থেকে শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত ইজতেমাস্থল ও আশপাশের এলাকা থেকে পকেটমার সন্দেহে অর্ধশতাধিক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এদের মধ্যে তিনজনকে ১০ দিনের কারাদণ্ড দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।

এদিকে জুমার নামাজকে ঘিরে ইজতেমা ময়দান ও এর আশপাশে লাখো মুসল্লির উপস্থিতিতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ছাড়াও কালিগঞ্জ সড়ক ও আশুলিয়া-সাভার সড়কে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়।

এ সময় সড়কে বাস, মিনিবাস, ট্রাক, অটোরিকশাসহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহন ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।

শনিবার বাদ আসর  ইজতেমা ময়দানে ইসলামিক শরীয়া অনুযায়ী যৌতুকবিহীন বিয়ের আয়োজন করা হয়েছে। শতাধিক নর-নারী এদিন বিয়ে করবেন বলে আশা করছেন ইজতেমার আয়োজকরা।

ইজতেমার  প্রথম আয়োজন শুরু হয় ১৯৪৬ সালে কাকরাইল মসজিদে। তারপর ১৯৪৮সালে চট্টগ্রামের হাজি ক্যাম্পে ও ১৯৫৮ সালে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়।

এরপর লোকসংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় ১৯৬৬ সালে গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে বর্তমানস্থলে স্থানান্তর করা হয়েছে। পরে সরকারিভাবে তুরাগ তীরের ১৬০ একর জমি স্থায়ীভাবে ইজতেমার জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়।

মুসল্লিদের স্থান সঙ্কুলান না হওয়ায় ২০১১ সাল থেকে দু’দফায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে বিশ্ব ইজতেমা। আগামী রোববার দুপুরে আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এবারের বিশ্ব ইজতেমার প্রথম দফা। চারদিন বিরতি দিয়ে আবারো ৩১ জানুয়ারি শুরু হবে ইজতেমার দ্বিতীয় দফা।

২ ফেব্রুয়ারি দুপুরে আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হবে এবারের বিশ্বইজতেমার তাবলীগ সম্মেলন।


সোর্স: http://bangla.bdnews24.com

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.