আমি বিশ্ব ছাড়ায়ে উঠিয়াছি একা... চির উন্নত মম শীর
ঘটনা একঃ
আজকে টেক্সটাইল ট্যালেন্ট হান্টের পরীক্ষা দিলাম (ফিলিং প্রাউড )। আমাদের ইয়ারের যারা অংশ নিলো তাদের মধ্যে সম্ভবত আমিই সবচেয়ে কম সিজিপিএ প্রাপ্ত ছিলাম; তাতে কি !!! পরীক্ষা দিতে তো সিজিপিএ লাগে নাই লাগসে পয়সা আর পয়সা দিসে বাপে। এছাড়া আরও একটি মহৎ উদ্দেশ্যও অবশ্য ছিলো, সেটা না বলি...
তো সকাল সকাল উঠে রওনা দিলাম তেজগাঁও কলেজে; পরীক্ষার স্থান। নাস্তার টেবিলে আমার পিতাকে এই পরীক্ষার গুরুত্ব কতটা অপরিসীম এবং কিভাবে ক্যাম্পাস থেকে বিভিন্ন পরীক্ষা নিরিক্ষা করে আমাকে এখানে পাঠানো হচ্ছে (এক্কারে ভুয়া কথা; যে ফর্ম কিনসে সেই পরীক্ষা দিতে পারসে) সেটার বয়ান দিচ্ছিলাম। এবং সাথে সাথে এটাও বললাম এই পরীক্ষায় খুব ভালো ফলাফল করা আমাদের একজন শিক্ষক এখন জার্মানিতে পিএইচডি করছেন।
আমার বাবার মাথায় খুব ভালো করে ঢুকলো জার্মানির পিএইচডি।
সাথে সাথে আমার দাদিকে ডাক দিয়ে খবর দিলেন
"আপনার নাতি তো পিএইচডি করতে জার্মানি চলে যাচ্ছে..."
এবং সারাদিনে আমাদের বাসায় যত মানুষজন আসলো... এবং যারা আসলো না তাদের কে ফোন করে জানানো হলো আমি জার্মানিতে পিএইচডি করতে চলে যাচ্ছি। শুধু এই পরীক্ষায় পাশ করলেই হইল।
এইটা আমার পিতার পুরনো অভ্যাস... আমি অবাক হই না। এইসব ব্যাপারে অবাক হওয়ার ক্ষমতাও হারিয়ে ফেলেছি
ঘটনা দুইঃ
পরীক্ষা সাড়ে দশটায় আর আমি ভাবটাব নিয়া সাড়ে আটটায়ই চলে আসলাম।
তেজগাঁও কলেজকে এখন তেজগাঁও কলেজ না বলে তেজগাঁও পরীক্ষা কেন্দ্র বলা উচিত। আমার চোখের সামনে দুই ঘণ্টায় তিন তিনটা পরীক্ষা হইয়া গেলো। শেরে বাংলা কৃষি, ইউনিলিভার আরেকটা যেন কি এখন মনে নাই। তো অবশেষে দুই ঘণ্টা ফুরলো আর আমাদের পরীক্ষার সময় উপস্থিত হইল। প্রশ্ন হাতে পাইয়া খুব কনফিডেন্টলি ''পারি, না পারি জায়গা ভরি...'' নীতিতে সব অবজেক্টিভ দাগাইলাম।
ছোট প্রশ্নের উত্তর না পারলেই রবিন্দ্রনাথের জীবনী... (জীবনী আর কি লিখব প্রশ্নের নিচে মোটে দুই লাইন কইরা জায়গা উত্তর লেখার জন্য)
লাস্টে দেখি একটা প্রশ্ন
"শ্রমিকদের বেতন কাঠামো নিয়ে চলমান সঙ্কটের ব্যাপারে আপনার মন্তব্য কি ?" (টাইপের কিছু... আংরেজি বালা বুঝি না)
আমিও পেলাম মোক্ষম হাতিয়ার, ভাঙা ভাঙা ইংরেজিতে লিখলাম
"এই প্রশ্নের উত্তর সল্প জায়গায় দেয়া সম্ভব না, তাই উত্তরটা শেষের দুইটা ফাঁকা পেইজে দিয়া দিলাম"
তারপর হাতটাত গুটাইয়া শ্রমিক বেতন কাঠামো নিয়ে 'আনু মোহাম্মদ স্যার', 'কল্লোল মোস্তফা' আর 'পিনাকি'দা' পড়ে এতদিনে যা শিখেছি ইংরেজিতে তরজমা করে জ্বালাময়ী এক রচনা লিখে দিয়ে আসলাম।
সেই শান্তি...
ঘটনা তিনঃ
কাল আমার বোনের স্কুলে ''যেমন খুশী তেমন সাজো প্রতিযোগিতা''। আম্মা বলল সাংবাদিক সাজাবেন।
আমার মাথায় খেললো অন্য আইডিয়া...
"শাহাবাগী বানইয়া দেই..."
যেই ভাবা সেই কাজ। প্রথমেই দরকার দুইটা জাতীয় পতাকা জোগাড় হয়ে গেলো মুহূর্তে।
একটা থাকবে মাথায় একটা পিঠে।
এরপর আমার "ফাঁসি চাই... গ্যাঞ্জি'টা..." দরকার। ওটার খোঁজ পড়তেই থলের বিড়াল বের হয়ে গেলো... এই গ্যাঞ্জি বিপদজনক বিধায় আমার পিতার নির্দেশে মাতা গ্যাঞ্জিটি সরিয়ে ফেলেছেন; এমন ভাবে যেন আমি খুঁজে না পাই। এমন স্থানেই লুকিয়েছেন যে দীর্ঘ তিন ঘণ্টা খোঁজাখুজি করে তিনি নিজেও খুঁজে পেলেন না... অবশেষে আমার আরেক বিপ্লবী বন্ধু তার XL গ্যাঞ্জিটা দিয়ে আমাকে উদ্ধার করলেন (আমি ছোট খাটো মানুষ; গ্যাঞ্জিটা আমারই বড় হয় আর আমার থেকে ১২ বছরের ছোট আমার বোনকে তো খুজেই পাওয়া যাচ্ছে না। তবে কাজ চালানো যাচ্ছে... )
তারপর এখন দরকার একটা ফেস্টুন।
হাজার হাজার পোস্টার ঘরে পড়ে থাকে আর এখন দরকারের সময় ঠনঠন। ঝুল পরিস্কার করার ঝাড়ু খুলে পাওয়া গেলো বাঁশ, সেটা করাত দিয়ে কেটে মিনি সাইজ করা হল। বোর্ড কেটে ফেস্টুনের সাইজ। দুই পাশে লিখে দিলাম,
"পাকি পণ্য বর্জন করুন..." আর "ফাঁসি চাই..."
এরপর লাস্ট জিনিস "শ্লোগান..."
ঘরে এন্টি শাহাবাগী পরিবেশে থাকলেও আমার বোন ''জয় বাংলা'' শ্লোগান ভালোই দিতে পারে। বাসার সবাই তাকে শেখানোর জন্য একটু পর পর শ্লোগান দিয়ে উঠছে "জয় বাংলা"।
ব্যাপারটার মধ্যে কি যেন একটা আছে;
মাঝে মাঝে মনে হয়, জীবনটা তো খারাপ না...
ফেবু দিনলিপি
২৪ জানুয়ারি ২০১৪
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।