আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমি ভারতের ভোট ব্যাঙ্ক রাজনীতির শিকার: তসলিমা

ভারতের 'ভোট ব্যঙ্ক রাজনীতি'র শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করলেন বাংলাদেশি লেখিকা তসলিমা নাসরিন। আজ সোমবার সংবাদ মাধ্যমকে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে তসলিমা অভিযোগ করে বলেন মৌলবাদীরা আমার বিরুদ্ধাচরণ করছেন অথচ পশ্চিমবঙ্গ সরকার আমার সমর্থনে এগিয়ে আসেনি। মুসলিম ভোটারদের মন জোগাতেই রাজ্য সরকার এই কাজ করেছে। এই ধরনের ভোট ব্যাঙ্ক পলিসি কোনও সমাজ কিংবা দেশের পক্ষে শুভ নয় বলেও তার অভিযোগ। তসলিমার মতে, সর্বত্র সুস্থ গণতান্ত্রিক পরিবেশ বজায় রাখা উচিত।

১৯৯৪ সালে বাংলাদেশ থেকে নির্বাসিত হওয়ার পর দীর্ঘদিন ইউরোপে কাটিয়ে ২০০৪ সালে পশ্চিমবঙ্গে আশ্রয় নিয়েছিলেন তসলিমা নাসরিন। কিন্তু ২০০৭ সালের নভেম্বর মাসে মৌলবাদীদের রোষানলে পড়ে পশ্চিমবঙ্গের মাটি ছাড়তে হয় তাকে। সেসময় তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকার একরকম জোর করে রাজ্য ছাড়তে বাধ্য করে বলে তসলিমার অভিযোগ। তারপর থেকেই দীর্ঘ ছয় বছর দিল্লিতে পুলিশি ঘেরাটোপে বসবাস করছেন তসলিমা।

তসলিমা বলেন, পশ্চিমবঙ্গ ছাড়ার পর থেকে কোন রাজনৈতিক দল কিংবা সমাজসেবী সংস্থা আমার পাশে দাঁড়ায়নি, আমাকে বিব্রত অবস্থায় পড়তে দেখতেও তাদের পক্ষ থেকে কোনও উদ্যোগ দেখা যায়নি।

যদিও ভারতে থাকার অনুমতি দেওয়ায় এই দেশের সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তসলিমা।

নিজেকে ইউরোপের একজন নাগরিক বলে দাবি করে তিনি বলেন, ভারতের ভাষা, সংস্কৃতি আমার মাতৃভূমির মতো এক হওয়ায় আমি ভারতে থাকতেই বেশি স্বাচ্ছন্দবোধ করি। তসলিমার ক্ষোভের কারণ একজন নারী লেখক হয়েও তার প্রতি নারীরা সদয় হননি। তিনি বলেন, গত তিন দশক ধরেই আমি নারীদের নিয়ে লেখালেখি করে আসছি কিন্তু বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক বিরোধী দলনেত্রী খালেদা জিয়া কিংবা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় এই তিন নারী আমার জীবন দুর্বিসহ করে তুলেছে। বাংলাদেশে ফিরে যাওয়ার কোন আশা নেই, আর পশ্চিমবঙ্গকেও আমি খুব মিস করি।

কারণ এই শহরের সঙ্গে আমার সংস্কৃতি-ভাষা জড়িয়ে আছে। কিন্তু এখানে ফিরে আসার সব বাসনাও আমাকে ত্যাগ করতে হয়েছে।

সম্প্রতি তার লেখা গল্পের ওপর ভিত্তি করে 'দুঃসহবাস' নামের একটি টেলিভিশন সিরিয়ালের প্রচার বন্ধ করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পশ্চিমবঙ্গের অবস্থাও অনেকটা বাংলাদেশের মতো। এই রাজ্য সরকারও আমাকে এ রাজ্যে প্রবেশ করতে দিতে চায় না, আমার বইকে নিষিদ্ধ করে, আমার লেখা গল্পের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা নাটককে নিষিদ্ধ করে। এরা আমাকে কলকাতা বইমেলায় প্রবেশ করতে দিতে চায় না।

গত বাম সরকারের আমলে এই ধারা শুরু হয়েছিল, আমি ভেবেছিলাম মমতা বন্দোপাধ্যায় সরকার এলে এই অবস্থার পরিবর্তন হবে কিন্তু দুঃখের বিষয় তা হয়নি।

নারী সম্পর্কিত বিষয়গুলি নিয়ে লড়াই করার জন্য 'আম আউরত পার্টি' নামে একটি সংগঠন অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করেন তসলিমা। তিনি বলেন, 'আম আউরত পার্টি' যদি পরিবর্তন আনতে পারে তাহলে সেটা খুবই ভাল ব্যাপার হবে।

তসলিমার আশঙ্কা, তার লেখা 'নিষিদ্ধ' বইটি এবারের কলকাতা বইমেলায় প্রকাশের অনুমতি দেওয়া হবে না। এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, এই ধরনের নিষেধাজ্ঞা একজন লেখকের জন্য 'প্রকৃত মৃত্যু'।

এর আগে ২০১২ সালেও তার লেখা 'নির্বাসন' বইটিকে কলকাতা বইমেলায় প্রকাশের অনুমতি দেওয়া হয়নি।

মৃত্যুর পর কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে দেহ দান করার ইচ্ছাও ত্যাগ করেছেন তিনি। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ নয়, তার মরদেহ অল ইন্ডিয়া মেডিক্যাল সায়েন্সেস (এইমস)-এ তুলে দিতে চান বলে জানিয়েছেন তসলিমা নাসরিন।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.