আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমার নতুন পরিচিত একজন সালমান শাহ্‌

স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসি । তবে স্বপ্ন দেখা নিয়ে কিছুদিন যাবত একটা সমস্যা হয়ে গেছে । নতুন দেখা স্বপ্নগুলো কেন যেন পূরণ হচ্ছে না খুব শীঘ্রই এই সমস্যা কেটে যাবে এই আশাতেই আছি ।

বন্ধুর বাড়ির গেটের সামনের ছোট্র পিড়াটায় বসে ছিলাম । যা কোন কারনেই হোক, মন বিষন্ন।

বিবিএ ফাইনাল দিয়ে ফেলা কোন ছেলে চাইলেই আশেপাশের মানুষদের বলে ফেলতে পারে না, " আমার আজ খুব বেশী মন খারাপ । আমার মনটা কি ভালো করে দেয়া যায়? ", কাজেই নিজের বিষন্নতাকে সহনীয় করতে একমাত্র আশ্রয় গান, যা কানের হেডফোনে বহুক্ষণ যাবত অবিরাম বেজে চলেছে । কিন্তু তেমন লাভ হচ্ছে না, আমার এই মন খারাপের ব্যাপারটা একবার ঘটলে তা শক্ত শেকঁড় গেড়ে বসে থাকে বহুদিন ।

বন্ধুর আসতে বিরক্তিকর রকমের দেরী হচ্ছে । বিরক্তি ছাপিয়ে আস্তে আস্তে যখন রাগ বাড়ছে, তখন সামনে নতুন একজনের আগমন ঘটলো ।



নতুন এই অতিথির বয়স এখনো দেহের নিম্নাঙ্গে কোন পোশাক পড়াটাকে বাহুল্য মনে করে অবলীলায় এড়িয়ে চলার পর্যায়ের । তবে তিনি গায়ে একটা ঝুল - কালি, মাটি লাগানো স্যান্ডো গেঞ্জি পড়ে আছেন যার রঙ কোন এককালে সাদা ছিল । পোশাক-আষাক এবং অল্প বয়সেই পেয়ে যাওয়া স্বাধীনতা থেকে অনুমান করা যায়, খুব একটা অবস্থাপন্ন পরিবারে আল্লাহ্ তাকে পাঠান নি । এখনো খুব ভালো মতো হাঁটতে না পারলেও, আচার আচরনে দেখা গেলো খুবই সাবলীল । তিনি একটু হামা দিয়ে সিড়ির দুই ধাপ উপরের যে ধাপে আমি বসেছি সেখানে এসে আমার পাশে গা ঘেষে একেবারে গ্যাঁট হয়ে বসলেন এবং অতঃপর আমার দিকে পূর্ণ দৃষ্টিতে চোখ বড়বড় করে তাকালেন।

স্বচ্ছ চাউনি, নির্ভাবনাময় চোখ । জবাবে আমি তার দিকে তাকিয়ে একটু হাসি দিয়ে গানে মন দেই । কিছুক্ষণ পর দেখলাম আমার কানে লাগানো হেডফোনটার প্রতি তার বেশ আগ্রহ প্রকাশ পাচ্ছে । সাউন্ড কমিয়ে এক কানের থেকে একটা স্পিকার খুলে তার ছোট্র কানে বসিয়ে দিলাম। তখন নচিকেতা গাইছেন,

" চল যাবো তোকে নিয়ে
এই নরকের অনেক দূরে
এই মিথ্যা কথার মেকি শহরের সীমানা ছাড়িয়ে........"

এমন শহুরে বিষন্নতার সাথে পরিচিত থাকার বয়স এখনও আমার পাশের অপরিচিত আগন্তুকের হয় নি।

তবুও তিনি অত্যন্ত মনোযোগের সাথে গান শুনতে লাগলেন। শুনতে বোধহয় ভালোই লাগছিলো তার, কারন গানের তালেতালে দেখলাম মাথাও নাড়াচ্ছেন । তার দিকে তাকিয়ে হঠাৎ কেন যেন মনে ভালো লাগা জাগলো একটু। জগতের জটিলতা এড়িয়ে চলতে পারার বয়সটাতে আমিও নিশ্চয়ই এমন খুব অল্পতেই সুখী হতে পারতাম; যদিও বয়স বাড়ার সাথে সাথে ক্ষমতাটা নষ্ট হয়ে গেছে ।

গান পুরোপুরি শেষ হওয়ার আগেই আগন্তুকের খোঁজে তার এগার - বার বছরের বোন চলে আসলো ।

বোনের কাছে জিজ্ঞেস করে জানা গেলো তার নাম একেবারে সালমান শাহ্! বাবা - মা নিঃসন্দেহে বাংলা সিনেমা এবং প্রয়াত এই নায়কের খুবই ভক্ত ......... বোনের তাড়ায় সালমান সাহেব নিতান্ত অনিচ্ছার সাথে উঠে দাড়ালেন, হামা দিয়ে সিঁড়ি বেয়ে নেমে গেলেন । বোনের হাত ধরে ফেলার পর আমি তার দিকে সুন্দর করে হাত নেড়ে বিদায় জানাই । তিনি কিন্তু আমাকে বিদায়টা হাত নেড়ে জানালেন না । আবার কষ্ট করে দুই ধাপ সিঁড়ি বেয়ে উঠে আমার কাছে আসলেন । তারপর তার তুলতুলে ছোট্র হাত দিয়ে আমার পেটে ঢিশুম ( মুখ দিয়ে শব্দ করে ) করে একটা সুরসুরি লাগার মতো ঘুষি মারলেন এবং মনে মনে ঐ ঘুষিতে আমাকে কুপোকাত করা শেষে তার সর্ব সাকূল্যে ওঠা সাত - আটটা দাঁত দিয়েই বিরাট এক হাসি দিয়ে বিদায় নিলেন ।

আমার ধারনা ইখতিয়ার উদ্দীন মুহাম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজি মাত্র ১৭ জন সৈন্য নিয়ে লক্ষণ সেনকে পরাজিত করে বাংলা জয় করার পর সম্ভবত এমন কোন হাসিই দিয়েছিলেন !

এর পরও কি আর মন খারাপ করে রাখা যায়?

...... সালমান সাহেবের সাথে আর কখনো দেখা হবে কিনা জানি না । কিন্তু তার কথা আমার মনে থাকবে বহুদিন । কারন তিনি তার এক হাসি আর ঘুঁষিতে ভুলে যাওয়া একটা কথা আমাকে আবারও মনে করিয়ে দিয়ে গেছেন, - " জীবনকে কেঁদে ভাসিয়ে দেওয়ার চেয়ে, হেসে উড়িয়ে দেওয়াই ভালো । "

সালমান সাহেবের মতো সুন্দর করে হাসতে যদিও পারি না, তবু আমি জীবনকে হেসে উড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টাতেই আছি ।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.