আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পঞ্চম মাত্রা

*** *** *** *** *** *** *** *** *** *** ***
নতুন একটা সম্ভবনা মনে আসতেই ফুরফুরে অনুভূতি পেলেন তিনি।
সম্ভবনার বিভিন্ন দিক তলিয়ে দেখলেন এদিক সেদিক, যত বিশ্লেষণ করলেন ততই সফলতা উঁকি দিচ্ছিল মনে। হু এটা হওয়া খুবই সম্ভব।
জীবনটা কেমন একঘেয়ে হয়ে যাচ্ছে দিনদিন। তাদের কিছু ভাবতে হয়না, কিছু জানতে হয়না।

তারা কখনও কোন সমস্যায় পড়েননা, তাদের কিছু গ্রহন করতে হয়না, কিছু বর্জন করতে হয়না, নতুন কোন সৃষ্টি নাই, কোন ধ্বংস নাই - মূল সিস্টেমে সমস্ত কিছু রাখা আছে। ভি এন কার্ডে একবার চাপ দিলেই সমস্ত তথ্য সরাসরি মাথায় ভিতরে।
এটা কোন জীবন হল! তাদের মধ্যে অনেকে প্রতিদিন নতুন নতুন হাইপার ড্রাইভ দিয়ে ত্রিশ লক্ষ বা তার ও আলোকবর্ষ দূরে যেয়ে ফিরে আসেন। কেউবা সিস্টেমে নতুন নতুন অসুখ তৈরি করে কম উন্নত প্রানিদের গ্রহে পুশ করেন। কেউ বা মূল সিস্টেমের সাহায্য ছাড়াই রিয়েমান হাইপথিসিস সলভ করার মত জটিল সব সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করেন।

কিন্তু সেই সব ও ভীষণ একঘেয়ে আর ক্লান্তিকর।
কিন্তু তিনি যেটি ভাবছেন ...। ।
মাথার ভিতরে হঠাৎ তারই মতন অন্য কেউ কথা বলে উঠল।
-না তুমি এটা করতে পারনা।


-হ্যাঁ আমি পারি, তুমি সেটা যান। আমরা সবাই যা ইচ্ছে তাই করতে পারি। এই মহাবিশ্বের সব কিছুর নিয়ন্ত্রন আমাদের হাতে।
-মূল সিস্টেমের বাইরে গিয়ে তুমি কিছু করতে পারনা।
-তুমি জান চাইলে আমরা সেটাও পারি শুধু আমার ভি এন কোডের গোপন নাম্বার সেখানে প্রবেশ করাতে হবে।


-ভি এন কোডের গোপন নাম্বার একবার প্রবেশ করালে তুমি আর কখনও সেটা ফেরত পাবেনা।
-দরকার নাই আমার ভি এন কোডের।
-তুমি কি ভেবে বলছ?
-হ্যাঁ ভেবেই বলছি।
-ভি এন কোড ছাড়া তুমি আর কখনও অন্য কারো সাহায্য ছাড়া মূল সিস্টেমে ঢুকতে পারবেনা।
-হ্যাঁ আমি জানি, তবুও আমি চাই।


-এর ফলাফল খুব ভয়ঙ্কর হতে পারে তুমি জান।
- হ্যাঁ জানি।
- তুমি আরেকবার ভেবে দেখ ত্রিমাত্রার জগত কখনও পাঁচ মাত্রা ধারন করতে পারবেনা।
- সেটাই পরীক্ষা করে দেখতে চাই। সরাসরি ত্রিমাত্রিক জগতে প্রবেশ করতে পারব না জানি সেটা কিন্তু দেখতে চাই প্রান সৃষ্টির সূচনা লগ্নে যদি প্রবেশ করতে পারি।

মূল সিস্টেমে বারবার চেক করে দেখেছি ক্রমোসোম গত অল্প কিছু পরিবর্তন করে হ্যাপ্লয়েড সেলে অবস্থান নেওয়া অসম্ভব নয়।
- কিন্তু তুমি ত শুধু হ্যাপ্লয়েড সেলেই থাকতে চাওনা।
- না , আমি দেখতে চাই, ডিপ্লয়েডে এর কি অবস্থান হয়।
- তুমি গ্যামেট হতে চাও?
- হ্যাঁ চাই।
- কিন্তু এর ফলাফল ভয়ংকর হতে পারে।

সেই প্রানিটি ধ্বংস হতে পারে এমনকি সেই জগত ও ধ্বংস হতে পারে। ত্রি মাত্রা কিভাবে পাঁচ মাত্রা ধারন করতে পারে?
- আমি সেটাই দেখতে চাই। এমনও তো হতে পারে কিছুই হবেনা। নতুন কোন প্রজন্মের, নতুন কোন মাত্রার সৃষ্টি হবে।
- হ্যাঁ তাও সম্ভব।

তাহলে তোমার ডিসিসান ফাইনাল।
- হ্যাঁ ফাইনাল।
- কোন হ্যাপ্লয়েড সেলে ঢুকবে ঠিক করেছ?
- হম।
- তাহলে তুমি সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলেছ যে তুমি স্পারর্ম সেলে ঢুকবে?
- হ্যাঁ তাই। আমি লক্ষ লক্ষ স্পারর্ম এর দৌড়ে অংশগ্রহণ চাই।


- আবারও সাবধান করছি তোমাকে।
- ধন্যবাদ সাবধান করার জন্য। কিন্তু আমি যা ঠিক করেছি তাই করব।
এর পরেই হঠাৎ করেই তার মত অন্য কণ্ঠস্বরটি থেমে গেল। তিনি প্রস্তুতি গ্রহন শুরু করলেন।

অনেকদিন পরে তার মনে হল জীবনের কোন মানে খুঁজে পাচ্ছেন।
*** *** *** *** *** *** *** *** *** *** ***
আকাশে মস্ত বড় এক চাঁদ উঠেছে। চাঁদের আলোয় হাসান মুগ্ধ চোখে নিপার দিকে তাকায়, কি অদ্ভুত মিষ্টি তার বউটা। নিপা আজ সেজেছেও খুব সুন্দর করে। হাসান মনোযোগ দিয়ে তাকায় তেমন কিছু না, কলাপাতা রঙের শাড়ির সাথে ম্যাচ করে ছোট একটা দুল আর কাধ পর্যন্ত চুলগুলো ছেড়ে রেখেছে নিপা, তাতেই কেমন মোহময়ী লাগছে তাকে।


আজ তাদের দ্বিতীয় বিবাহ বার্ষিকী, সেই উপলক্ষে বাসায় সন্ধ্যা থেকে বড় এক পার্টি ছিল। ঘণ্টা খানেক হল সব মেহমান বিদায় নিয়েছে। তারপরে হাসান আর নিপা সব গোছগাছ করে নিজেদের মত করে কিছুটা সময় কাটানোর জন্য মাত্র ছাদে এসে বসেছে। ছাদের এক কোনে রাখা চেয়ার দুটিতে পাশাপাশি বসে হাসানের নিজেকে খুব সুখী মনে হতে থাকে। নিপা ছাদে এসে বসার পর থেকে কেমন চুপ হয়ে গেছে, কোন কথা বলছে না শুধু মাঝে মাঝে চোখ তুলে হাসান কে দেখছে।


হাসান চাঁদের দিকে একবার তাকায় তারপরে নিপার হাত হাতে তুলে নেয়।
-নিপা তুমি সুখী ত আমার সাথে?
- হম
-খুব সুখী?
-হম।
- কি তখন থেকে হম হম করছ, তোমার কি মন খারাপ?
- না হাসান। আমার আসলে ভাল লাগছে, অনেক বেশী ভাল লাগছে।
নিপা হঠাৎ চোখ তুলে হাসানের দিকে তাকায়, -
হাসান চলনা আমরা একটা বাবু নেই, ছোট্ট একটা বাবু, তোমার আমার ভালবাসার বাবু, খুব আদরের একটা বাবু, আমাদের সংসার জুড়ে থাকবে সেই বাবুটা, বাবুটার চুল হবে তোমার মত, ঠোঁট হবে তোমার মত, তোমার মত হাসি,তোমার মত দুষ্টু হবে, সব কিছু তোমার মত হবে, শুধু নাকটা হবে আমার মত, তোমার মত বোঁচা না- পরম আগ্রহে নিপা হাসানের দিকে তাকিয়ে থাকে, হাসানের দুই চোখে উত্তর খুঁজতে থাকে।


হাসান কোন উত্তর দেয়না শুধু গভীর ভালবাসায় নিপাকে বুকে টেনে নেয়।
আকাশের চাঁদটা তখন আরেকটু বেশী উজ্জ্বল হয়। অনেক অনেক দুরের কোন গ্রহে হঠাৎ একটি ছোট আলোর বিন্দু জ্বলে উঠে। হাসান আর নিপা টের পায়না।


সোর্স: http://www.sachalayatan.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।