আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অসমাপিকা , পঞ্চম পর্ব ।

সত্য সুন্দরকে ব্রত করি জীবনে

অসমাপিকা , শুরুর অধ্যায় Click This Link দ্বিতীয় পর্ব Click This Link তৃতীয় পর্ব Click This Link চতুর্থ পর্ব Click This Link দরজা দিয়ে বেরিয়ে যেতে যেতে চারিপাশের সব বড় অচেনা লাগে লীনার । করিডোর , দেয়াল কতদিনের পুরোন পরিচিত সিড়ি সবাই ফিসফিস করে কথা বলছে সে শুনতে পাচ্ছে না কেন ! ও কি ধরা পড়ে গেল ? দীপু নামে একজন মগ্ন চৈতন্যে ছিল এ কথা আর বুঝি লুকোন গেল না । ক্লাসে চলে যাওয়া শ্রেয় । হা করে তাকিয়ে থাকবে লেকচারের সময় , সময় কেটে যাবে । শেষ রক্ষা হল না ।

মিতা ক্লাসে তাকে পেয়ে সব শোনার জন্য অস্থির করে তুলল । টুকটাক জেনেছে ফোনে । মিতার কান ঝালাপালা করা প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে বার বার আনমনা হয়ে পড়ে লীনা । মিতা লক্ষ্য করে লীনার চোখে মুখে সলজ্জ্ব একটা কিছু লুকোবার বৃথা চেষ্টা । লীনা বলে ফেলে , ' কিরে তুই দেখি পুরোদস্তুর প্রেমে পড়ে গেছিস , এখন কি হবে রে ? ' ।

লীনা আর কোন কথা বলে না । আসলে পারে না । কি যে হয়েছে ওর ও তার কি বোঝে ? কে বা বোঝে ! ক্লাসে আর বেশী কথা হয় না । লেকচার শেষ হতেই মিতার পীড়াপীড়িতে দু'জন চলে আসে মিতাদের বাসায় । ভালই হল , নিভৃতে সময় কাটাতে পারবে লীনা ।

দাড়ি কমা কিছু বাদ দিতে দেয় না মিতা , সব শোনে আর বার বার আফসোস করে তখন দীপুর চেহারা কেমন হয়েছিল দেখা হল না বলে । সন্ধ্যায় মিতা পৌছে দেবে তাকে তাই অনেকটা সময় পেয়ে দু'জনে মন খুলে কথা বলে । বিকেলে দীপুর ফোন পেয়ে ধরতে গিয়েও ধরে না লীনা । কি বলবে , কি করে বলবে ! মিতা অবাক হয় । ও লীনার ফোন থেকে কলব্যাক করে জানায় লীনাকে সে ধরে এনেছে এখানে ।

তারপর তার বান্ধবীকে এভাবে বশ করার অভিযোগ করবার কথা বলতেই দীপু অপ্রস্তুত হয়ে যায় । দীপুর আশে পাশে হৈচৈ এর কারন জানতে চাইলে জানায় রবিরা তাকে সীল মারছে আজ , চায়নীজ খাওয়াচ্ছে বন্ধুদের সে । কারনটা জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করছিল , বুঝতে পেরেছে বলেই চেপে যায় সে । বলে , ' দীপু আমরাও চায়নীজ খেতে পছন্দ করি , তুমি মনে হয় জান না সে কথা । ' লীনা থামিয়ে দেয় তাকে ।

মিতা চিন্তিত হবার ভান করে । বলে , ' তুই যেমন , দীপুও তেমন । তোদের কি হবে ?' লীনাকে সত্যি চিন্তিত মনে হয় । বলে , ' মিতা আমি কি করে ভার্সিটিতে যাবো ; আমার আনইজি লাগছে । ওখানে দীপু আছে ।

কি করবো আমি ?' মিতা হেসে গড়িয়ে পড়ে । বলে , ' এত জুটিরা যেভাবে পড়া শোনা করে সেভাবে পড়বি বই দেখে , খাতায় লিখে । তোর প্রেম করা উপলক্ষে কি আরেকটা শাখা খুলবে নাকি ভার্সিটি । তোর অবস্থা দেখলে নিতেও পারে এমন উদ্যোগ । ' পরে বলে , ' তোদের দু'টিতে যা মানাবে না ।

কতদিন ধরে এটা ঘটবে ঘটবে করেও ঘটছিল না । দীপুর মত ছেলে আর কোথায় পাবি ? সেই ফার্স্ট ইয়ার থেকে দেখে আসছি ওকে । ভদ্র , বিনয়ী । আমার আগে থেকে অন্যত্র মন দেয়া না থাকলে ওর প্রেমে পড়ে যেতাম । ' সময় কেটে গেল দ্রুত ।

লীনাকে বাসায় প‌ৌছে দিল সে । লীনা লজ্জা আর খুশীতে মাখামাখি , সিড়ি বেয়ে উঠতে দোতলায় বড় চাচার কন্ঠস্বর শুনে কেমন সন্দেহ হোল । শুনল উনি বলছে , ' আনোয়ার তোদের মত বুদ্ধি নিয়ে চললে আজ এ পর্যায়ে আসতে পারতাম না । কি বুঝিস তোরা ? দেরী করা মানে লস । আমার বেশী সময় নষ্ট করবার ইচ্ছা নাই '।

সিড়ি বেয়ে তিনতলায় এসে পড়ল । পরের কথা ভাল শুনতে পেল না , ইচ্ছাও হল না । মনটা কেমন হয়ে গেল । তার নীতিবান ভাল মানুষ বাবাকে এক মাত্র বড় চাচা ছাড়া কেউ এমন করে কথা বলতে পারে না । উল্টো বড় চাচা সবার সাথে এ ভাষাতে কথা বলে ।

না, সে কি করে সম্ভব ? বড় চাচা মুখোসের ব্যবহারে পারদর্শী । প্রয়োজনে সব রূপ ধারন করতে পারে সে । এক আজব সৃষ্টি তার বড় চাচা অথবা সমসাময়িক কালের তথাকথিত সার্থক পুরুষ তার বড়চাচা । কথায় কথায় বড়াই । উনি লন্ডনে পড়েছেন , হেন করেছেন , তেন করেছেন ।

এদেশের মানুষ মানুষই না । থালা ভরা ভাতে অল্প একটু তরকারী মেখে কি করে যে গোগ্রাসে খায় এ দেশের মানুষ উনি ভাবতেই নাকি পারেন না । এ দেশের মানুষের গা দিয়ে নাকি ঘামের গন্ধ বের হয় । এসব কথার উত্তর ভাল দেয় রাকিব ভাইয়া , চাচার ছেলে । বলে সানোয়ার সাহেবকে উনার স্থায়ী ঠিকানাটা জিজ্ঞেস করা দরকার , পিতা-মাতার নাম ।

তারা কি দিয়ে কি মেখে খেতেন কতটা সেটা জানা দরকার । বাবা বলে সম্বোধন করে না , ' সানোয়ার সাহেব ' বলে বাবাকে। সামনা সামনি বলে না এসব কথা । । সামনা সামনি বলবে কি , কথাই তো বলে না বাবার সাথে ।

সেই যে লন্ডনে থাকতে এক বছর বাড়ীর বাইরে ছিল বাবার সাথে রাগ করে । সে রাগ নিয়ে আছে । আপোষ করেছে বাবা তার , দেশে আসতে বাধ্য হয়েছে ছেলের জন্য । রাকিবের দাদীর কঠোর নির্দেশে । যদিও লাবীবের মা অনেক চেষ্টা করেও দেশে আসতে পারেন নি পুরো পরিবার সহ সে ঘটনার আগে ।

রাকিবের মাকে প্রায়ই শুনতে হয় স্বামীর খোঁচা , ' তোমাদের জন্য আমার লন্ডনের এত ভাল ইনকাম বন্ধ করে এদেশে আসতে হল । ' ছেলে নাকি বাবার মত হয় নি , মায়ের মত হয়েছে । চাটার্ড একাউন্টেট পিতার পয়সা প্রীতি দেখে রাকিবের ঘৃনা ধরে গেছে অর্থের উপর। আত্মীয় স্বজন সবাই জানে রাকিব ওর মায়ের মত । পরোপকারী , উদার ।

বড় বোন রুমানাও ভাল । নিজের মত থাকে । ছোটটি রিমি বাবার নাম রাখতে পারবে । বাবা তাকে ভালবাসে বেশী , শুধু ছোট বলে নয় । তার মত স্বভাবের বলে ।

লীনাকে সবাই ভালবাসে সংসারে , দোতলায় তিনতলায় দুই ভাইয়ের পরিবারের , এমনকি নীচতলায় ভাড়াটিয়ারাও । ছোট দুই বোন দীনা আর টিনা লীনা আপুর ভক্ত । রুমানা মজা করে বলে শিষ্য নাকি ওরা লীনার । বড় চাচীর কাছে লীনা তুলনাহীন । লীনার আম্মা একবার বলেছিল , 'আপনি বুবু বেশী বেশী বলেন ওর কথা '।

জবাবে বড়চাচী বলেছিলেন , ' সালমা তুমি আমার ছোট দেবরের বউ , আমরা প্রায় সমবয়সী । সম্পর্কে ছোট না হলে আমি তোমার পা ছুঁয়ে সালাম করতাম । তোমার ধৈর্য্য , বিচারবুদ্ধি , সন্তুষ্টি এসব দেখে । সেই পেট থেকে ও বেরিয়েছে , মনে রেখ । ' আর কথা বাড়ায়নি মিসেস সালমা মানে লীনার মা ।

তার এই ভাসুর পত্নী বিদুষী শুধু নন , বিচক্ষন এবং সৌভাগ্যজনক ভাবে সত্যিটা হল এই যে সে বিচক্ষনতা সততার পক্ষে , মানবতার পক্ষে , সুন্দরের পক্ষে । অন্যায়ের বিরুদ্ধে । লীনার বাবার সাথে কদিন ধরে বড় চাচার আলোচনা চলছে তাদের এই বসত বাড়ী ভেঙ্গে এ্যাপার্টমেন্ট করা প্রসঙ্গে । চাচা অনেকটা লোভনীয় অফার পেয়ে আর দেরী করতে চাইছেনা । লীনা বুঝেছে সেই প্রসঙ্গে আজ আবার চাচার সাথে বাবার বোঝা পড়া ।

বাবা এই মূহুর্তে এ বাড়ী ভাঙ্গতে রাজী নন । লীনার দাদীর ইচ্ছে ছিল এ বাড়ীতে ধুমধামের সাথে তার নাতি রাকিবের বিয়ে হবে , বউ এ বাড়ীতে উঠবে । এ বাড়ী করবার জন্য বড় চাচা টাকা দিয়েছে সেটা যেমন সত্যি , লীনার বাবার প্রত্যক্ষ তত্তাবধানে এ বাড়ী তৈরী হয়েছে । এ বাড়ী নির্মানের দেখভাল করবার জন্য ঢাকার বাইরে বদলী না নিয়ে তাকে বঞ্চিত হতে হয়েছে চাকরীর প্রোমশন থেকে । এ একটা ইট কাঠ পাথরের বাড়ী নয় শুধু , আরো বেশী কিছু ।

স্মৃতিময় মমতাময় একটা যাদুঘর । টাকা পয়সা গুনে নেবার বেলায় লীনার চাচা বিলম্ব করা বুদ্ধিমানের কাজ মনে করেন না । মাঝে মাঝে আফসোস করেন দীর্ঘজীবন পেলে প্রচুর টাকা ইনকাম করতে পারতেন । লাবীব বলে ঠাট্টা করে , 'সানোয়ার সাহেব টাকা গুনতে গুনতে ঘুমায় ভেড়া গুনতে হয় না কখনো ঘুম না এলে । ' আজ তার এমন একটা বিশেষ দিনে বাসায় এসে এটা ফেস করতে হল ।

বিরক্ত হয় লীনা । বাবা ফিরে এলে ঘরে তিন বোন ঘিরে ধরে বাবাকে , খোস-গল্পে মেতে ওঠে সবাই । যেন কিছু জানে না তারা কি নিয়ে তার বাবা উদ্বিগ্ন । রাতের খাবার শেষে ঘুমিয়ে পড়ে সবাই । ঘুম আসে না লীনার , মনে হয় বড় চাচার মুখ যদি আর না দেখতে হত ।

বড় চাচীর কথা ভেবে সান্ত্বনা পায় সে । কি করে এমন একটা নীচু মানসিকতার মানুষের সাথে চাচী এতদিন সংসার করছে ভেবে পায় না লীনা । কেন এমন হয় ? বড় চাচীর কেন একজন ভাল মানুষের সাথে বিয়ে হল না ? কিছু ভাল লাগে না ওর । ব্যাগ খুলে , কলমটা বের করে আজ সকালে পাওয়া উপহার যার সাথে দীপুর হাতের স্পর্শ অন্তরের স্পর্শ একাকার হয়ে আছে। কলমটা চোখের সামনে উঁচু করে ধরে এক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে যেন এর ভেতরের প্রানের স্পন্দন অনুভব করতে চাইছে সে ।

তার দৃষ্টি চলে যায় কলম ভেদ করে দূরে একজনের কাছে পুরোন যে মানুষকে আজ পৃথিবীর সবচেয়ে নতুনতম আবিষ্কার মনে হয় তার কাছে । দীপু কি ঘুমিয়ে পড়েছে ? সে কি জেগে আছে ? সে এখন কি ভাবছে লীনার কথা ? সব দীপু কেন্দ্রিক ভাবনা মন তোলপাড় করে । বুকের কাছে কলমটাকে ধরে ঘুমিয়ে পড়ে লীনা নিশ্চিন্তে । চলবে...... পরের অধ্যায় Click This Link

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।