আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সুন্দরবন উন্নয়ন প্রকল্প ফাইলবন্দী

বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনকে আরও আকর্ষণীয় করে উপস্থাপনে সরকারি প্রকল্পগুলো মন্ত্রণালয়ে ফাইলবন্দি হয়ে রয়েছে। ফলে দীর্ঘ দিনেও পর্যটকবান্ধব সুন্দরবন গড়ে ওঠেনি। জানা যায়, প্রায় ৬ হাজার ১৭ বর্গকিলোমিটার আয়তনের বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট এই সুন্দরবন ২৪ ঘণ্টায় কমপক্ষে ছয়বার রূপ বদলায়। খুব ভোরে এক রূপ, দুপুরে অন্যরকম, পড়ন্ত বিকালে আরেক রূপ, সন্ধ্যায় সাজ নেয় ভিন্ন রূপে। মধ্য ও গভীর রাতে সৌন্দর্য আরেক রকম।

আর চাঁদনী রাতে রূপের বর্ণনা দেওয়া কঠিন। সুন্দরবনের মোহনীয় রূপের সাজ পর্যটকদের মোহিত করে তোলে। এ ছাড়া কচিখালী সমুদ্র সৈকত থেকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখার সুযোগ তো রয়েছেই। এ কারণেই দেশি-বিদেশি হাজারও পর্যটক সৌন্দর্যের ক্ষুধা মেটাতে এখানে ছুটে আসেন। কিন্তু ভ্রমণ আরও চিত্তাকর্ষ করতে অবকাঠামোসহ অন্যান্য সুবিধা আজও গড়ে ওঠেনি।

সুন্দরবন কেন আকর্ষণীয় : সুন্দরবনের মোট আয়তনের মধ্যে বনভাগের পরিমাণ ৪ হাজার ১৪৩ ও জলভাগ ১ হাজার ৮৭৪ বর্গকিলোমিটার। রয়েছে প্রায় সাড়ে চারশ নদ-নদী ও খাল। সুন্দরী, গেওয়া, পশুর, গরান, গোলপাতাসহ ৩৩৪ প্রজাতির গাছপালা, ১৬৫ প্রজাতির শৈবাল ও ১৩ প্রজাতির অর্কিট রয়েছে। বন্যপ্রাণীর বৃহত্তম আবাসস্থল সুন্দরবনে বিশ্বখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগার, চিত্রল-মায়া হরিণ, লোনা পানির কুমির, অজগর, কচ্ছপ, বিশ্বের বিলুপ্ত প্রায় ইরাবতী ডলফিনসহ ৩৭৫ প্রজাতির বন্যপ্রাণীর বিচরণ চোখে পড়ে। এর মধ্যে ৩২ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৩৫ প্রজাতির সরীসৃপ, ৮ প্রজাতির উভচর ও ৩০০ প্রজাতির পাখি রয়েছে।

২০০৪ সালের জরিপ অনুযায়ী সুন্দরবনে ৪৪০টি রয়েল বেঙ্গল টাইগার, দেড় লাখ হরিণ, ৫০ হাজার বানর, ২৫ হাজার বন্য শূকর, ২০০ কুমির, ২৫ হাজার উট বিড়াল। ২১০ প্রজাতির সাদা মাছ, ২৬ জাতের চিংড়ি, ১৩ প্রজাতির কাঁকড়া, ১ প্রজাতির লবস্টার ও ৪২ প্রজাতির মালাস্কা রয়েছে। অফুরন্ত প্রাকৃতিক সম্পদের লীলাভূমি এই সুন্দরবনের গুরুত্ব অনুধাবন করে ১৯৯৭ সালের ৬ ডিসেম্বর জাতিসংঘের ইউনেস্কো কমিশন সুন্দরবনের কটকা-কচিখালী, নীলকমল, দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপ-মান্দারবাড়ীয়া সমুদ্র সৈকতের ১ লাখ ৩৯ হাজার ৭০০ হেক্টর এলাকাকে পৃথিবীর ৫৫২তম বিশ্ব ঐতিহ্য (ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ) হিসেবে ঘোষণা করে। এই সুন্দরবনে প্রতি বছর মধু আহরণ মৌসুমে অন্তত এক হাজার মৌয়াল বনে ঢোকে। তাদের পাশাপাশি জেলে ও বাওয়ালি মিলে প্রায় ৩০ লাখ মানুষ এই বনের ওপর নির্ভরশীল।

পর্যটকদের জন্য সুন্দরবন : সুন্দরবনের করমজল বন্য ও কুমির প্রজনন কেন্দ্র, হারবাড়িয়া ইকো সেন্টার, কটকা, কচিখালী ও নীলকমল অভয়ারণ্য, শেখেরহাট টেম্বপল, কলাগাছিয়া ইকোট্যুরিজম সেন্টার, মান্দারবাড়িয়া অভয়ারণ্য স্পটগুলো পর্যটকদের জন্য নির্ধারিত। এসব স্পটে কুমির প্রজনন, অসুস্থ হরিণের পরিচর্যা, হাজার বছরের পুরনো স্থাপনার ধ্বংসাবশেষসহ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যর্ উপভোগ করা যাবে। পর্যটক ইচ্ছা করলে হেঁটে বনের ভেতরের পরিবেশের সঙ্গে মিশে যেতে পারবেন। ভাগ্য সহায় হলে বানর, হরিণ, গুইসাপ, কাঁকড়া অথবা কুমিরের ঘুরে বেড়ানোর দৃশ্য দেখতে পারেন।

সুন্দরবন যেন দুর্গের দেয়াল : বিগত সিডর ও আইলার মতো ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে বুক পেতে দিয়ে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষকে রক্ষায় সহায়তা করেছে সুন্দরবন।

যে কারণে দক্ষিণাঞ্চলের একটি বড় অংশই ক্ষয়ক্ষতি ও জীবনহানি থেকে রক্ষা পান। এতে বনের একটি বড় অংশ লণ্ডভণ্ড হলেও সরকার ও বন বিভাগের কার্যকর ব্যবস্থাপনায় মাত্র কয়েক বছরের মধ্যেই সুন্দরবন তার স্বাভাবিক সৌন্দর্য ফিরে পেয়েছে।

পর্যটক বাড়লেও সুবিধা বাড়েনি : সুন্দরবনের মনোমুঙ্কর দৃশ্য উপভোগ করতে দিন দিন দেশি-বিদেশি পর্যটকদের সংখ্যা বাড়ছে। পর্যটকবান্ধব প্রয়োজনীয় আধুনিক নৌযান রয়েছে মাত্র দুটি। নেই সুপেয় পানির কোনো ব্যবস্থা।

ইংরেজি জানা ও বন সম্পর্কে অভিজ্ঞ গাইডদেরও অভাব প্রকট। দর্শনীয় স্পটের সংখ্যা ও সেখানকার সুযোগ-সুবিধাগুলো বাড়েনি। এ প্রেক্ষাপটে ২০১০ সালে ১৩ কোটি ৬১ লাখ ৭৭৮ টাকা ব্যয়ে পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের করমজল, হাড়বাড়িয়া, চাঁদপাই ও শরণখোলা পর্যটন কেন্দ্র স্থাপন ও রক্ষণাবেক্ষণ নামে একটি প্রকল্প বন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। কিন্তু তা আজও আলোর মুখ দেখেনি। একইভাবে পশ্চিম বিভাগেও দুটি প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে ফাইলবন্দি অবস্থায় পড়ে আছে।

সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগের ডিএফও জহির উদ্দিন আহমেদ বলেন, সিডর ও আইলায় সুন্দরবনের যে ক্ষতি হয়েছিল তা কাটিয়ে উঠে নতুন রূপ নিয়েছে সুন্দরবন। তিনি বলেন, এখানে ব্যাপক ট্যুরিজম করলে বনের সৌন্দর্য নষ্ট হবে। অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়বে। এ কারণে পর্যটকদের জন্য বনের নির্দিষ্ট কিছু স্পট নির্ধারিত করা হয়েছে। সিডর ও আইলার পরে দেশি-বিদেশি অর্থ সহায়তায় সুন্দরবনে আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে।

সেই সঙ্গে বনের সংরক্ষণ ব্যবস্থা আরও গোছালোভাবে করা হচ্ছে। এ বিষয়ে চারটি প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে।

 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.