ইদানীং প্রায়ই রোগীদের চিকিৎসা ও মৃত্যুর ক্ষেত্রে অবহেলার অভিযোগে হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ল্যাবরেটরি ভাঙচুরের ঘটনাসহ ডাক্তার, নার্স এবং কর্মচারীদের ওপর আক্রমণ করা হচ্ছে, মামলা দায়ের করে হয়রানি করার মতো ঘটনাও ঘটছে। বর্তমানে এ অবস্থা ভয়াবহ ও উদ্বেগজনক, সুষ্ঠু চিকিৎসার পরিবেশের অন্তরায়। সামান্য ঘটনার জের ধরে রোগীর আত্দীয়স্বজনরা অযথাই ক্ষিপ্ত হয়ে চিকিৎসকদের গায়ে হাত তুলছেন। ফলে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে জটিল এবং মুমূর্ষু রোগীদের জরুরি চিকিৎসাসেবা প্রদান করতে গিয়ে চিকিৎসকরা ভয়ভীতির মধ্যে কাজ করছেন। একটু সমস্যা মনে হলেই অনেক চিকিৎসক রোগীকে অন্য হাসপাতালে পাঠিয়ে দিয়ে নিজেরা রোগীর চিকিৎসাসেবা এড়িয়ে যেতে চাচ্ছেন।
ফলে জরুরি চিকিৎসাসেবাও অনেকাংশে হুমকির সম্মুখীন, এমনকি অনেক ক্ষেত্রে বন্ধ হওয়ার উপক্রম। একদিকে অন্য রোগীরা আতঙ্কিত হয়ে যাচ্ছেন, অন্যদিকে হাসপাতালের কার্যক্রমও ব্যাহত হচ্ছে। এমনও শোনা যায়, কিছু দুষ্কৃতকারী অর্থ আদায়ের লোভে অথবা ক্লিনিকের বিল পরিশোধ না করার দূরভিসন্ধি নিয়ে এসব ঘটনা ঘটিয়ে থাকে।
শুধু আমাদের দেশেই নয়, অন্যান্য অনেক দেশেই, বিশেষ করে তৃতীয় বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলোতে এমনটা প্রায়ই দেখা যায়। পাশর্্ববর্তী দেশ ভারতেও এ ধরনের ঘটনা অহরহ ঘটছে।
চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগে চিকিৎসকদের মারধর, মামলা, হয়রানি, হাসপাতাল ভাঙচুর ইত্যাদি সম্পর্কে ভারতের সুপ্রিমকোর্ট ২০০৯ সালে এক যুগান্তকারী রায় দেন। সেই রায় অনুযায়ী কোনো চিকিৎসকের বিরুদ্ধে চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ তোলা হলে, তার প্রাথমিক সত্যতা ছাড়া ওই চিকিৎসককে গ্রেফতার করা যাবে না। এ ক্ষেত্রে প্রথমে কোনো যোগ্য বিশেষজ্ঞ বা বিশেষজ্ঞ প্যানেলের মতামত নিতে হবে। এরপরই শুধু সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের বিরুদ্ধে নোটিস জারি করা যাবে। আদালত মনে করেন, চিকিৎসা পেশাকে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনের আওতায় অন্তর্ভুক্ত করায় অত্যন্ত তুচ্ছ ঘটনায়ও চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
তাই তদন্ত প্রক্রিয়ায় যারা শেষ পর্যন্ত দোষী সাব্যস্ত হবেন না, তারা যেন অযথা হয়রানির শিকার না হন, তা নিশ্চিত করা দরকার বলে আদালত মত প্রকাশ করেন। এ ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সতর্ক করে বলা হয়, আনীত অভিযোগ সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত চিকিৎসকদের যেন গ্রেফতার বা হয়রানি না করা হয়, অন্যথায় তাদেরও আইনগত ব্যবস্থা মোকাবিলা করতে হবে। ভারতের সর্বোচ্চ আদালতের ওই রায়ে আরও উল্লেখ করা হয়, প্রকৃত অর্থে যেসব চিকিৎসক চিকিৎসায় অবহেলার সঙ্গে জড়িত, তাদের প্রতি আদালতের কোনো সহানুভূতি নেই। ২০১০ সালে ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্য সরকার চিকিৎসকদের ওপর হামলা বন্ধে একটি আইন পাস করে। এ আইনে কেউ চিকিৎসকের ওপর হামলা করলে তাকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা এবং তিন বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড দেওয়ার বিধান করা হয়।
মহারাষ্ট্র মেডিকেল সার্ভিস পার্সন্স অ্যান্ড মেডিকেয়ার সার্ভিস ইনস্টিটিউশন্স (প্রিভেনশন অব ভায়োলেন্স অ্যান্ড ড্যামেজ প্রপার্টি) অ্যাক্ট ২০১০ নামে এই আইন পাস হওয়ার পর চিকিৎসকরা স্বস্তি বোধ করছেন।
সত্যিকার অর্থে পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ আকার ধারণ করলে আইন প্রণয়ন করতে হয়, তা সহজেই প্রণিধানযোগ্য। ইন্ডিয়ান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের দাবি ছিল যাতে অভিযোগ প্রমাণের আগে চিকিৎসকদের গ্রেফতার ও হয়রানি না করা হয় এবং চিকিৎসকদের ওপর হামলায় দায়ী ব্যক্তিদের যেন আইনের আওতায় আনা হয়। যেহেতু এ ধরনের ঘটনা আমাদের দেশেও ঘটছে, তাই এরকম আইন করা যায় কি-না, তা সংশ্লিষ্ট সবার ভেবে দেখা উচিত। অনেক জটিল রোগী যেমন স্ট্রোক, হৃদরোগী, কিডনি বা লিভার নষ্ট হয়ে গেলে, ব্লাড ক্যান্সার বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই নিরাময় যোগ্য নয়।
মুমূর্ষু রোগীদের আইসিইউ'তে ভর্তি করা হয়, সেখানেও মৃত্যুর হার বেশি। শতভাগ নিশ্চয়তা দিয়ে চিকিৎসা কখনই সম্ভব নয়। মৃত্যু অমোঘ, চিরন্তন। মৃত্যুর হাত থেকে চিকিৎসক কেন, কেউই বাঁচাতে পারবেন না। চিকিৎসক শুধু রোগ নিরাময় আর রোগীকে রোগের উপশম দেওয়ার চেষ্টা করতে পারেন।
কোনো অবহেলা বা অপচিকিৎসা বা ভুল চিকিৎসা যেন না হয়, সে দিকেই ডাক্তারকে বেশি যত্নবান হতে হবে। দু-একটি ক্ষেত্রে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা অস্বাভাবিক নয়। রোগীর মৃত্যু বা বড় কিছু হলেই আত্দীয়স্বজন উত্তেজিত হয়ে ওঠেন, তারা সেবাদানকারী ডাক্তার-নার্সদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ, এমন কি শারীরিক নির্যাতন বা হাসপাতাল-ক্লিনিকে হামলা চালিয়ে প্রচুর ক্ষতি সাধন করেন। বলা বাহুল্য, অভিযোগ প্রমাণ হওয়ার আগেই যুক্তিহীন এসব কর্মকাণ্ড কোনোভাবেই প্রত্যাশিত নয়। ফলে যে কোনো ঝুঁকিপূর্ণ রোগীর চিকিৎসার ক্ষেত্রে ডাক্তাররা চিকিৎসা দেওয়ার উৎসাহ হারিয়ে ফেলেন।
আসলে দেশে চিকিৎসা ক্ষেত্রে চরম বিশৃঙ্খলা বিরাজমান। এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই, চিকিৎসা আজ অনেক ক্ষেত্রে বাণিজ্যে পরিণত হয়েছে। ফলে সাধারণ মানুষ যথাযথ সেবা পাচ্ছে না। সরকারি হাসপাতালের কাজকর্মে অবহেলা আর অনীহা, ঠিকভাবে রোগীর সেবায় আত্দনিয়োগ না করা, রোগী এবং তার লোকের সঙ্গে সহযোগিতা না করা, রোগ সম্পর্কে তাদের অবহিত না করা, এ ধরনের অভিযোগ তো অহরহ আছেই। আবার দেখা যায়, একই চিকিৎসক বেসরকারি হাসপাতালে রোগীদের চিকিৎসায় অতি তৎপর থাকেন।
কিন্তু বেসরকারি হাসপাতালে টাকা-পয়সা খরচের পরও অনেক ক্ষেত্রে উপযুক্ত সেবা না পাওয়ার অভিযোগও কম নয়। কিছু কিছু নামিদামি হাসপাতালে চিকিৎসা খরচ এতই আকাশচুম্বী, যা গরিব, নিম্নবিত্ত এমনকি অনেক মধ্যবিত্তের পক্ষে সেখানে সেবা নেওয়া নাগালের বাইরে। দেখা যায় অনেকেই না জেনে নামিদামি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যান, কিন্তু চিকিৎসা শেষে যখন বিশাল অঙ্কের বিল ধরিয়ে দেওয়া হয়, তখন শুরু হয় অসন্তোষ আর ভাঙচুর।
সেবার চেয়ে অর্থ প্রাপ্তি যখন মূল প্রেরণা হয়ে যায়, তখন চিকিৎসায় যথাযথ প্রাপ্তি মেলার সম্ভাবনা কমই থেকে যায়। আসলে এসবের জন্য ডাক্তার-নার্সদেরই ঝক্কিটা পোহাতে হচ্ছে বেশি, যদিও তারা এককভাবে দায়ী নয়।
মেডিকেল কলেজগুলোতেও শুরু হয়েছে উচ্ছৃঙ্খলতা। সুষ্ঠুভাবে পড়াশোনার পরিবেশের যেমন অভাব, তেমনি শিক্ষক সংকট, যোগ্য শিক্ষকের অভাব, দলীয় অথবা রাজনৈতিক প্রভাব বলয় সব কিছুই যোগ্য ডাক্তার তৈরির অন্তরায়। যত্রতত্র প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ গড়ে ওঠায়, চিকিৎসা শিক্ষার মান আরও নিম্নমুখী। সেখানে মেধা বিকাশের চেয়ে টাকা উপার্জনটাই মুখ্য। ভালো ডাক্তার তৈরির ব্যবস্থা না করে ভালো সেবা পাওয়া কি সম্ভব? ডাক্তারদেরও ভেবে দেখা উচিত, এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা কেন হচ্ছে? কেনই বা জনসাধারণ অপ্রাপ্তি বা অসন্তোষের কারণে এতটা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠছেন? যারা চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন তাদের প্রতি জনগণের শ্রদ্ধা আর সম্মান থাকাটাই স্বাভাবিক ছিল, তার বদলে এই অশ্রদ্ধাবোধ কেন? চিকিৎসকদের উপলব্ধি করা দরকার, মানুষ অত্যন্ত দায়ে পড়ে তাদের শরণাপন্ন হন।
একজন রোগী যখন চিকিৎসকের কাছে যান, তখন মানসিকভাবে উদ্বিগ্ন থাকেন। এ সময় তার প্রতি একটু সদয় আচরণ অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে পারে। বিশেষ করে চিকিৎসার শুরুতেই রোগী ও তার আত্দীয়স্বজনের সঙ্গে যথাযথ তথ্য আদান-প্রদানের মাধ্যমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। অনিরাময় যোগ্য রোগ সম্পর্কে রোগী বা তার আত্দীয়স্বজনকে ভালোভাবে ধারণা দিয়ে রাখা উচিত। প্রায়ই শোনা যায়, ডাক্তাররা রোগীর সঙ্গে ভালোভাবে কথা বলেন না, রোগীর কথা মন দিয়ে শোনেন না, ভালোভাবে পরীক্ষা করেন না।
এসব অভিযোগ একেবারেই অমূলক নয়, এদিকে সব চিকিৎসকের দৃষ্টি দেওয়া উচিত। সব রোগ চিকিৎসা করে নিরাময় করা যাবে না, পৃথিবীর অনেক উন্নত দেশেও না, এ কথাটুকুই রোগীর আত্দীয়স্বজনকে বুঝিয়ে দিতে হবে। এতে কথায় কথায় রোগীদের অভিযোগ, যেমন ভুল চিকিৎসা হলো, রোগ ধরতে পারল না ইত্যাদি কমে যাবে। ডাক্তারকে মনে রাখতে হবে, কোনো রোগীর প্রতি যেন অবহেলা বা দুর্ব্যবহার করা না হয়। একটা ছোট বাচ্চা অসুস্থ হলে স্বভাবতই তার বাবা-মা, দাদা-দাদিসহ নিকটাত্দীয়রা উদ্বিগ্ন হন, এটাই স্বাভাবিক।
এ ক্ষেত্রে ডাক্তারদের আরও নমনীয় ও সহনশীলতার সঙ্গে বাচ্চার চিকিৎসাসহ তার আত্দীয়স্বজনের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করতে হবে।
ডাক্তারদের অবশ্যই উপলব্ধি করতে হবে, কথায় কথায় তুচ্ছ ঘটনার জের ধরে কোনো অবস্থাতেই ধর্মঘট করা একেবারেই অনুচিত। এমনকি অনেক সময় ধর্মঘটের নামে জরুরি চিকিৎসা সেবাও বন্ধ করে দেওয়া হয়, যা নিতান্তই অমানবিক। এ অবস্থার সৃষ্টি হলে ডাক্তারদের মানুষ কেন শ্রদ্ধা করবে?
মানব সেবার আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে মেধাবী ছেলেরাই ডাক্তারি পেশায় আসার পর অনেকাংশেই বদলে যান। পেশাটা হয় অর্থ উপার্জনের নেশা।
ফলে নৈতিকভাবে ডাক্তারি পেশার মান-মর্যাদা ভূলুণ্ঠিত হয়। একজন ডাক্তার অবশ্যই তার মেধা ও দক্ষতা আর মমত্ববোধ দিয়ে রোগীর সেবা করবেন। এটাই রোগীরা চান। চিকিৎসা দিতে গিয়ে রোগীর আর্থিক বিষয়টা বিবেচনায় নেওয়া উচিত। অযথা অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরামর্শ দেওয়া উচিত হবে না, যা একজন নিম্নবিত্তের পক্ষে অসম্ভব।
এ সংশয় দূর করার জন্য ডাক্তারদেরই এগিয়ে আসতে হবে। মনে রাখতে হবে, তাদের যেমন ভালো ডাক্তার হতে হবে, তেমন ভালো মানুষও হতে হবে। নিজের ভালো না লাগলেও রোগীর যে কোনো কথা মনোযোগ দিয়ে শুনতে হবে। রোগীকে ভালোভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে।
রোগী ও আত্দীয়স্বজনের বোঝা উচিত, যেহেতু ডাক্তারের কাছে কোনো না কোনো সময়ে চিকিৎসার জন্য যেতেই হবে, তাই তাদের সঙ্গেও ভদ্র, মার্জিত, সহনশীল আচরণ করা উচিত।
একতরফা শুধু ডাক্তারকে দোষ দেওয়াটাও অন্যায়। অনেক সময় দেখা যায়, হাসপাতালের নির্ধারিত ভিজিটিং সময় ছাড়াও রোগীর আত্দীয়স্বজন জোর করে ঢুকে পড়েন, চিকিৎসায় বাধার সৃষ্টি করেন। ফলে হাসপাতালে কাজের সুষ্ঠু পরিবেশ ও নিরাপত্তা বিঘি্নত হয়। বিশ্বের কোনো দেশেই নির্দিষ্ট সময়ের পর রোগীর স্বজনদের বিশেষ অনুমতি ছাড়া ভেতরে থাকতে দেওয়া হয় না। হাসপাতালে কেউ গোলযোগ করতে পারে না।
শুধু তাই নয়, হাসপাতালের বাইরের রাস্তার মোড়ে মোড়ে লেখা থাকে, গাড়ির ভেঁপু বাজানো নিষেধ, সামনে হাসপাতাল। আমাদের দেশেও কাগজে-কলমে একই নিয়ম, বাস্তবে পদে পদে এসব নিয়ম লঙ্ঘিত হয়। আমাদের দেশে রোগীর সংখ্যা বেশি, চিকিৎসার সরঞ্জামাদি ও ওষুধপত্র সীমিত, ডাক্তারসহ অন্যান্য লোকবলও সীমিত। ফলে সত্যিকারের সেবাদান আসলেই সম্ভব হচ্ছে না। অনেকের মানসিকতা এমন যে উন্নত ভালো সেবা চাই, কিন্তু টাকা খরচ করতে চাই না।
অথচ অন্য অনেক খাতে আমরা ঠিকই টাকা খরচ করি। এসবের কারণে ডাক্তার ও রোগীর মাঝে ভুল বোঝাবুঝি এবং দূরত্ব থেকেই যাচ্ছে।
দেশে ভালো মানসম্মত ডাক্তার তৈরির যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। তার জন্য ভালো শিক্ষক ও শিক্ষার উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। ডাক্তারদের শুধু মেডিকেল শিক্ষার বাইরেও রোগী এবং আত্দীয়স্বজনের সঙ্গে আচার-আচরণ কিভাবে করতে হয়, তারও শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে।
ব্যাঙের ছাতার মতো যত্রতত্র মেডিকেল কলেজ খোলার ব্যাপারে আরও সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। ডাক্তারের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকলে, তা অবশ্যই যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে করা উচিত। শুধু আবেগের বসে ভাঙচুর বা উচ্ছৃঙ্খল আচরণ যেন না হয়। পৃথিবীর সবচেয়ে উন্নত দেশের চিকিৎসকদেরও ভুল হয়। এ ধরনের ভুলের ক্ষেত্রে মামলা অবশ্যই হতে পারে।
কিন্তু দোষী প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত কোনোভাবেই চিকিৎসকদের গ্রেফতার করা উচিত নয়। ডাক্তারদের সঙ্গে খুনের মামলার আসামির মতো আচরণ কোনো ক্রমেই কাম্য হতে পারে না। চিকিৎসকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা না গেলে স্বাভাবিক চিকিৎসা কার্যক্রম ব্যাহত হতে পারে। বিষয়টি রোগী ও তার স্বজনদের উপলব্ধি করতে হবে।
সরকার ও কর্তৃপক্ষের একটি নৈতিক অবস্থান নেওয়া উচিত।
কোনো হাসপাতালে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করা বা এর পরিণামে এক মুহূর্তও ধর্মঘট চলতে দেওয়া হবে না, এ রকম একটি জাতীয় সমঝোতা স্মারকপত্র গৃহীত হওয়া দরকার, যেখানে স্বাক্ষর করবেন চিকিৎসক, কর্তৃপক্ষ এবং সমাজের প্রতিনিধিরা। রোগীদের প্রতি সরকারসহ সমাজের সর্বস্তরের মানুষ ও চিকিৎসকদের একটি অঙ্গীকার থাকা উচিত। কোনো চিকিৎসকের বিরুদ্ধে চিকিৎসা সংক্রান্ত মামলা হলে গ্রেফতারের আগে বিএমডিসির অনুমতি নেওয়া উচিত।
সবশেষে মনে রাখতে হবে, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের মাধ্যমে পরিস্থিতির উন্নতির যথাযথ ব্যবস্থা না নিলে, ভারতীয় কোর্টের রায়ের মতো আমাদের এখানে রায় হলেও তা বাস্তবায়িত হবে কি-না এ নিয়েও সন্দেহ থেকেই যাবে।
লেখক : ডিন, মেডিসিন অনুষদ, অধ্যাপক, মেডিসিন বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।