আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হতাশাই সঙ্গী হলো আবার

তখন ম্যাচের গতি প্রকৃতি দুলছে পেণ্ডুলামের মতো। পিনপতন নীরবতা স্টেডিয়ামে। মাঠে উপস্থিত দর্শকেরা ইতি উতি তাকাচ্ছেন। দেখছেন ইলেকট্রনিক স্কোরবোর্ডের দিকে। এমন সমীকরণ যখন ম্যাচে, তখনই মাইক্রোফোনে বেঁজে উঠলো 'আমরা করবো জয়, আমরা করবো জয়...' গানটি।

ক্রিজে থাকা মুশফিকরা যেন উজ্জীবিত হন, উদ্দীপ্ত হন। ভাষার মাসে, জয়ের গানে কিন্তু উজ্জীবিত হতে পারেননি টাইগাররা। হতাশার চাদরে নিজেদের ঢেকে হেরেছেন ১৩ রানে। কাছে এসে হেরে আবারও আফসোসের বোতলে বন্দী করেছেন ক্রিকেটপ্রেমী বাঙালির স্বপ্নকে। গত বছর যেখানে জয়ে শেষ করেছিল 'টিম বাংলাদেশ'।

এবার বছর শুরু করলো হারে। আগামী বৃহস্পতিবার সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডে।

টার্গেট মাত্র ১৮১ রান। ওভার প্রতি রান রেট ৪.২০। সাদা চোখে ওয়ানডে ক্রিকেটে মামুলি।

কিন্তু সেই মামুলিটাই কঠিন হয়ে উঠে তখন, যখন ইনিংসের দ্বিতীয় বলে খোঁচা দিয়ে তৃতীয় স্লিপে দুর্দান্ত ক্যাচে পরিণত হন এনামুল হক বিজয়। শূন্য রানে উইকেট হারানোর ধাক্কা অবশ্য সামলে দুই তরুণ শামসুর রহমান শুভ ও মুমিনুল হক ১৪.২ ওভারে ৭৯ রান যোগ করে। তখন আনন্দ-উৎসবে মাতোয়ারা পুরো স্টেডিয়াম। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আরও একটি জয়ের স্বপ্ন! কিন্তু হঠাৎই আলতো শট খেলতে যেয়ে গালিতে ক্যাচ দেন মুমিনুল। তার বিদায়ের পর দলের ভার কাঁধে তুলে নেন শামসুর।

গত অক্টোবরে ফতুল্লায় নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে অবিশ্বাস্য জয়ের ম্যাচে খেলেছিলেন ৯৬ রানের ইনিংস। কালও খেললেন ৬২ রানের ইনিংস। দলীয় ১৯.৪ ওভারে শামসুর আউট হওয়ার পরই ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়ে টাইগাররা। যদিও চেষ্টা করছিলেন অধিনায়ক মুশফিক। জয়ের দ্বারপ্রান্তে টেনেও নিয়ে গিয়েছিলেন দলকে।

দলীয় ৩৮ ওভারের প্রথম বলে ম্যাথুসের সুইং ঠিকমতো বুঝতে না পেরে উইকেটরক্ষক সাঙ্গাকারার গ্লাভসবন্দী হন। টাইগার অধিনায়ককে সাজঘরে পাঠিয়ে বাংলাদেশের কফিনে শেষ পেরেকটি ঠুঁকে দেয় শ্রীলঙ্কা। এরপর শুধু আনুষ্ঠানিকতা বাকি রাখে সফরকারীরা। ৩৯.২ ওভারে নিজেদের ভুল বুঝাবুঝিতে রান আউট হয়ে ব্যবধানটাই কমিয়েছেন রুবেল। আর ফিরেছেন মাথা নিচু করে।

এক-দুটি নয়। চার-চারটি ক্যাচ মিস। এমন জমানায় ভাবা যায়! কল্পনাতীত। তারপরও কাল মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে এমন কাজই করেন সাকিব আল হাসান, নাসির হোসেন, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, সোহাগ গাজীরা। বলগুলো তালুবন্দী না হওয়ায় কার্টেল ওভারের ম্যাচটিকে ব্যক্তিগতভাবে নিজের করে নেন থিসারা পেরেরা।

৭, ৩০ ও ৭৬ রানে পাওয়াটাকে কাজে লাগিয়ে খেলেন ৫৭ বলে ৬ ছক্কা ও ৪ চারে ৮০ রানের সাহসী ইনিংস। যে ইনিংসে ভর করে ৬৭ রানে ৭ উইকেট হারানোর ধাক্কা সামলে ৪০ ওভারে ১৮০ রান করে শ্রীলঙ্কা।

পৌনে দুই ঘণ্টা পর শুরু হওয়ায় ৫০ ওভারের ম্যাচ পরিণত ৪৩ ওভারে। কান্না ভেজা আকাশ, আদর্্র আবহাওয়া-কন্ডিশনের এসব সুযোগকে কাজে লাগিয়ে রুবেল, আল-আমিন, সাকিব, আরাফাত সানিরা দম বের করে ছাড়েন সাঙ্গাকারাদের। তুলে নেন ২১.৩ ওভারে ৬৭ রানে ৮ উইকেট।

তখন মনে হচ্ছিল এই মাঠে নিজেদের সর্বনিম্ন (১৪৭) রান টপকাতে পারবে না দ্বীপরাষ্ট্র। কিন্তু ক্যাচ মিসের সুযোগগুলোকে কাজে লাগিয়ে পেরেরা ও সচিত্র সেনানায়েকে নবম উইকেট জুটিতে ১৪ ওভারে ৮২ রান যোগ করেন। যা টাইগারদের বিপক্ষে নবম উইকেট জুটিতে রেকর্ড। এই জুটিই শ্রীলঙ্কাকে টেনে নিয়ে যায় ১৮০ রানে। পেরেরার মতো সেনানায়েকেও অবশ্য একবার জীবন পান।

ব্যক্তিগত ৫ রানে স্লিপে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের বদান্যতায় জীবন পাওয়া সেনানায়েক শেষ পর্যন্ত থামেন ৩০ রানে।

আর্দ্র আবহাওয়ায় বাড়তি সুবিধা পেয়ে থাকেন পেসাররা। সেখানে দেশ সেরা পেসার মাশরাফি বিন মর্তুজার জায়গা হয়নি একাদশে। অবাক করা সিদ্ধান্ত। কেন তাকে নেওয়া হয়নি, এর কোনো ব্যাখ্যাও ছিল না টিম ম্যানেজমেন্টের।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, টানা খেলা থেকে বিশ্রাম দিতেই তাকে নেওয়া হয়নি একাদশে। অন্যদিকে টি-২০ সিরিজ থেকেই বিতর্কের জন্ম দেওয়া তামিমও ছিলেন না একাদশে। আগের দিন ঘাড়ের পুরনো ব্যথা বেড়ে যাওয়ায় তাকে রাখা হয়নি একাদশে। অথচ এই ব্যথা নিয়েই কিন্তু টি-২০ সিরিজ খেলেছিলেন তিনি। তাই একটু রহস্যময়ই থেকে গেছে তামিমের বিষয়টি।

তামিম-মাশরাফি না খেলায় হঠাৎই সুযোগ হয় বাঁ হাতি স্পিনার আরাফাত সানির। টি-২০ সিরিজে চমৎকার বোলিং করে ৩ উইকেট নেন ৫ ওভারে ২৫ রানের খরচে। অথচ টি-২০ বিশ্বকাপ স্কোয়াডে জায়গা হয়নি এই বাঁ হাতি স্পিনারের। তাকে না নেওয়াটা যে ভুল, সেটা কাল ৬ ওভারের স্পেলে ৩১ রানে দুই উইকেট নিয়ে প্রমাণ করেছেন আরাফাত। প্রথম পাঁচ ওভারে রান দেন মাত্র ৭।

ষষ্ঠ ওভারে তার বলে ক্যাচ মিস করেন সোহাগ গাজী। এরপর তার উপর চড়াও হয়ে তিন তিনটি ছক্কা হাঁকান পেরেরা।

 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.