আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মেলায় এখন বই বসন্ত

'বই কিনে কেউ কখনো দেউলিয়া হয় না' সৈয়দ মুজতবা আলীর এই অমোঘ বাণীটির প্রমাণ মিলেছে গতকাল মেলার ১৮ দিনে বইপ্রেমীদের বই কেনার দৃশ্য দেখে। বসন্তের দখিনা হাওয়ায় ভেসে মেলায় এসে প্রিয় লেখকের পছন্দের বইটি কিনে যেন ধন্য হয়েছেন বইপ্রেমী দর্শনার্থীরা। গতকাল মেলার ১৮তম দিনে প্রায় সব দর্শনার্থীদের হাতে হাতেই বই ছিল। মেলায় আগতরা যেন পণ করে এসেছে বই না কিনে তারা বাড়ি ফিরে যাবে না। একুশের চেতনাকে হৃদয়ের গভীর থেকে লালন করে একুশের প্রতি, ভাষার প্রতি, সম্মান প্রদর্শনে সর্বোপরি গোটা বাংলা সংস্কৃতি ও সাহিত্যের প্রতি একাত্দতা প্রকাশ করার তাগিদেই যেন মেলা প্রাঙ্গণে ভিড় জমিয়েছেন দর্শনার্থী ও বইপ্রেমীরা।

দর্শনার্থীদের হাতে হাতে বই দেখে প্রকাশকরাও যেন এবারের মেলা নিয়ে নতুন স্বপ্নের বীজ বপন করা শুরু করে দিয়েছেন হৃদয়ের অন্তপুরে। শিকড়ের টানেই বইপ্রেমীরা মেলায় ছুটে আসছেন এবং পছন্দের বইটি কিনছেন বলে দিনে দিনে আশাবাদী হয়ে উঠেছেন প্রকাশকরা। ভিন্ন পরিবেশে ভিন্ন জায়গায় মেলা হচ্ছে বলে এবারের মেলা নিয়ে প্রকাশকরা ছিলেন আশা-নিরাশার দোলাচলে। তবে প্রত্যাশার চেয়ে এবারের মেলায় তাদের প্রাপ্তিটা বেশি ঘটছে বলেও জানান বেশ কয়েকজন প্রকাশক। একাধিক প্রকাশকের ভাষ্য হচ্ছে, গতবারের তুলনায় এবারের মেলায় বেচাবিক্রি বেশি হচ্ছে।

গতকাল মেলায় সব ধরনের বই-বিক্রি হয়েছে। তবে বিক্রির শীর্ষে ছিল উপন্যাস। এর পর দ্বিতীয় অবস্থানে সায়েন্সফিকশন। তৃতীয় অবস্থানে শিশ্যুসাহিত্য। গতবারের মতো এবারের মেলায়ও কবিতার বইয়ের বিক্রি একেবারেই কম।

নীরব বাণিজ্যের কারণে নষ্ট হচ্ছে গ্রন্থমেলার সৌন্দর্য : নীরবে নিভৃতে চলতে থাকা বারোয়ারি বাণিজ্য গ্রন্থমেলার সৌন্দর্যকে নষ্ট করে দিচ্ছে। ঠাণ্ডা মাথায় দর্শনার্থীদের ফাঁকি দিলেও অনুসন্ধিৎসু সংবাদকর্মীরা প্রথম দিন থেকেই মেলায় চলমান অসঙ্গতিগুলো তুলে ধরে। বিষয়গুলো পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হলেও তাদের এ অপতৎপরতা থেকে এক চুলও নড়েনি মেলা পরিচালনা কমিটি। প্রতিশ্রুতি মোতাবেক প্রথম দিন থেকেই গণমাধ্যম কর্মীদের কাজের সুবিধার্থে ওয়াইফাই ব্যবস্থা করার কথা ছিল তা বাস্তবায়িত হতে সময় লাগে ১৭ দিন। এদিকে কোনো রকম স্পন্সরশিপ ছাড়া মেলা পরিচালিত হবে বলা হলেও মেলার দুই প্রাঙ্গণেই চলছে বেসরকারি মোবাইল কোম্পানি রবি-এর একক প্রচারণা।

এক যুগ ধরে প্রকাশকরা মেলার অদূরে পাইরেটেড বই বিক্রি নিষিদ্ধের দাবি জানিয়ে এলেও কোনোরকম কর্ণপাত করেনি কর্তৃপক্ষ। বাঙালির জাতিসত্তার মননের প্রতীক বাংলা একাডেমি দ্বারা পরিচালিত এ মেলায় বিরাজমান এতসব অসঙ্গতি দেশের সংস্কৃতি শুভানুধ্যায়ীদের মনে অনেকগুলো প্রশ্নের উদয় হয়েছে। তাদের আশঙ্কা এর নেপথ্যে একটা বড় ধরনের অর্থবাণিজ্যের সম্পৃক্ততা রয়েছে। এ ব্যাপারে মেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব শাহিদা খাতুনের কথা হলে তিনি জানান, 'রবিকে আমরা শুধু ওয়াইফাই ব্যবস্থা করার সুযোগ দিয়েছি কিন্তু কোনো ধরনের প্রচারণার কাজ চালালে তা বন্ধ করে দেওয়ার ব্যবস্থা করব। '

নতুন বই : গতকাল মেলার ১৮তম দিনে নতুন বই এসেছে ১০৯টি।

প্রকাশিত বিষয়ভিত্তিক বইগুলোর মধ্যে রয়েছে গল্পের বই ১৪টি, উপন্যাস ১৬টি, প্রবন্ধ ৫টি, কবিতা ১টি, গবেষণা ৩টি, ছড়া ৪টি, শিশুতোষ ৭টি, জীবনী ২টি, মুক্তিযুদ্ধ ১টি, নাটক ১টি, ভ্রমণ ২টি, ইতিহাস ১টি, রাজনীতি ১টি, রম্য/ধাঁধা ৩টি, অনুবাদ ৪টি, সায়েন্সফিকশন ৪টি এবং অন্যান্য ১০টি।

মেলার মূল মঞ্চ : গতকাল বিকালে গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় 'কবি মোহাম্মদ মাহফুজউল্লাহ্, কবি দিলওয়ার এবং কবি খোন্দকার আশরাফ হোসেন' শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে তিনটি পৃথক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন যথাক্রমে হাসান হাফিজ, মোস্তাক আহমদ দীন এবং অনু হোসেন। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন অধ্যাপক কাজল বন্দ্যোপাধ্যায়, সৌমিত্র শেখর এবং তারেক রেজা। সভাপতিত্ব করেন ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী।

সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে আবৃত্তি পরিবেশন করেন ড. মো. শাহাদাৎ হোসেন, মো. রফিকুল ইসলাম এবং মিজানুর রহমান সজল। সংগীত পরিবেশন করেন স্বপন দত্ত, সাজেদ আকবর, নাশিদ কামাল, মো. হারুন অর রশিদ, শারমিন সাথী ইসলাম, মাহ্যাবিন রহমান শাওলী, শুভ্রা দেবনাথ এবং মীর ইউসুফ।

 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।