আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কানাইঘাটের বাম জঙ্ঘা কালী মন্দির

চোখে যা দেখি, কানে যা শুনি, তা নিয়ে কথা বলবোই ! দক্ষ রাজ কর্র্তৃক যজ্ঞানুষ্টানে মাতা পার্বতি দেহত্যাগ করিলে মহাদেব স্কন্ধে উন্মাদ হইয়া বিশ্ব পরিক্রমা করিতে থাকেন। এমতাবস্তায় বিষ্ণু ধ্বংসের হাত থেকে সৃষ্টিকে রক্ষা হেতু উনার সুদর্শন চক্র দ্বারা সতীর দেহকে খন্ডিত করিতে থাকেন। এভাবে সতীর দেহ ৫২ (বায়ান্ন) খন্ডে বিভক্ত হয়। এই খন্ড গুলির মধ্যে ৫১ (একান্ন) খন্ড পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে পতিত হয় এবং এক খন্ড প্রসান্ত মহাসাগরে। সতীর দেহের একান্ন খন্ডের মধ্যে ১টি খন্ড কানাইঘাট উপজেলার ২নং লক্ষীপ্রসাদ পশ্চিম ইউ/পির বাউরভাগ ২য় খন্ড গ্রামে পতিত হয়।

খন্ডটি সতীর বাম উরুর ভাগ। সতীর দেহের খন্ড বিশেষ পৃথিবীর যে সমস্ত স্থানে পতিত হয় স্থান গুলি মাতৃতীর্থ নামে পরিচিত। বাম উরুর ভাগ পতিত হওয়ার কারণে এই মন্দিরটি বাম জঙ্ঘা মহাপীঠ কালী মন্দির নামে আখ্যায়িত। পৃথিবীতে ৫১ পীঠের পরিচিতি ঃ ১. হিঙ্গুলোয় (বেলুচিস্তান) সতীর ব্রহ্মরন্ধ্র ২. কবির পুরে (ভারত) সতীর তিন চক্ষু ৩. সুগন্ধাঘ (বাংলাদেশ) সতীর নাসিকা ৪. অমরনাথ (কাশ্মীর) সতীর কণ্ঠ ৫. জ্বালামুখী (পাঞ্জাব) সতীর জিহ্বা ৬. জলন্ধারে (ত্রিপুরা) সতীর বাম স্তন ৭. বৈদ্যনাথ (বিহার) সতীর হৃদয় ৮. নেপালে, সতীর জানুদ্বয় ৯. মানস সরোবরে সতীর দক্ষিন হস্ত ১০. উৎকলে (পূরিতে) সতীর নাভি ১১. গন্ডকি নদীতে সতীর সতীর দক্ষিন গন্ডি ১২. বহুলায় (ভারত) বাম বাহু ১৩. উজানিতে (ভোরু) সতীর দক্ষিন কনুই ১৪. চট্টগ্রাম (বাংলাদেশ) দক্ষিন হস্তার্ধ ১৫. ত্রিপুরায় সতীর দক্ষিন চরণ ১৬. ত্রিগ্রোতায় (ভারত) সতীর বাম পদ ১৭. কামরুপ বা কামাখ্যায় ঘোণীপীঠ মহামুদ্রা ১৮. প্রয়াগে (ভারত) দুই হস্তের আঙ্গুলী ১৯. জয়ন্তীতে (কানাইঘাট) সতীর বাম জঙ্ঘা ২০. কালিঘাট (কলিকাতা) দক্ষিন চরণের আঙ্গুলী ২১. কিরিটে, সতীর কিরিট ২২. বারানসী কাশীতে সতীর কুন্তল ২৩.কন্যাশ্রমে সতীর পৃষ্ট দেশ ২৪. কুরক্ষেত্র দক্ষিন পায়ের গুলফ ২৫. মনিবন্ধে (মনিবেদে) সতীর সনিবন্ধ কর গ্রন্থি ২৬. শ্রী হট্টে, সতীর গ্রীবা ২৭. কাঞ্চিদেশে, সতীর কঙ্খাল ২৮. কাল মাধবে, সতীর বাম নিতম্ব ২৯. শোন নদে, দক্ষিন নিতস্ব ৩০.রাম গিরি, দকিাষন স্তন ৩১. বৃন্দাবনে, সতীর কেশ জাল ৩২. গুচি দেশে, সতীর উর্দ্ধদন্ত ৩৩. করতোয়া তটে, সতীর তল্প ৩৪. শ্রী পর্বতে, দক্ষিন গুলফ ৩৫. বিভাসকে, বাম গুলফ ৩৬. প্রভাসে, সতীর উদর ৩৭. ভৈরব পর্বতে, সতীর উদ্ধ ওষ্ট ৩৮. মগধে, দক্ষিন জঙ্ঘা ৩৯. জন্ম স্থানে, সতীর চিবুক ৪০. গোদাবরি তীরে, দক্ষিন গন্ড ৪১. রতœবলি, সতীর দক্ষিন স্কন্ধ ৪২. ক্ষীর গ্রাম, (বর্দ্ধমানে) সতীর দক্ষিন চরনাঙ্গুষ্ট ৪৩. মিথিলায়, সতীর বাম স্কন্ধ ৪৪. নল হাটিতে, সতীর নলাপতে ৪৫. বর্ধমানে, সতীর মুন্ড ৪৬. বক্রেশ্বরে, সতীর মন ৪৭. যশোরে, সতীর কর কোমল ৪৮. অট্রহাসে, সতীর নিম অষ্ট ৪৯. নন্দীপুরে, সতীর হার ৫০. লঙ্কায়, সতীর নুপুর ৫১. বিরাটে, সতীর বাম পদাঙ্গুলী সমূহ। জয়ন্তীতে (কানাইঘাট) বাম জঙ্ঘা মহাপীঠ কালি মন্দিরের বর্ণনা ঃ কানাইঘাট উপজেলার ২নং লক্ষীপ্রসাদ পশ্চিম ইউ.পি পাহাড়ের পাদদেশে বাউর ভাগ ২য় খন্ড গ্রামে মন্দিরটির অবস্থান।

মন্দিরটি হিন্দু ধর্মের পীঠস্থান ও প্রাচীন ঐতিহ্যের এক নিদর্শন। মন্দিরটির প্রতিষ্টাসন নির্দিষ্টভাবে নিরুপন সম্ভব নয়। মুঘল আমলে তৎকালীন জৈন্তিয়া রাজা কর্তৃক মন্দিরটি প্রতিষ্টিত হয়। কথিত আছে জৈন্তিয়ার রাজা স্বপ্নে দৃষ্ট হইয়া মন্দিরটি প্রতিষ্ট করেন। প্রবাদ আছে যে, জৈন্তিয়ার রাজা শীলা মূর্তিটি জৈন্তিয়াতে নিয়ে প্রতিষ্টা করতে চেয়েছিলেন কিন্তু রাজা যখন উনার সৈন্য সামন্ত হাতি, ঘোড়া দ্বারা মূর্তিটি তুলতে ব্যর্থ হন তখন তিনি উক্ত জায়গাতেই মন্দির প্রতিষ্টা করেন।

এই মন্দিরের নাম অনুসারেই বাউরভাগ ৪টি গ্রামের নাম করণ করা হয়। মন্দিরের তিনি ভূমি, মন্দিরের সামনে পুকুর, ও অমৃত কুন্ড নির্মাণ করেন। নিত্য নৈমিত্তিক পূজা অর্চনার জন্য তিনি পূরহিত নিয়োগ দেন। মন্দিরের সামনে পুকুরটি কালী গঙ্ঘা নামে আখ্যায়িত। মন্দিরের সুরক্ষার জন্য তিনি ইট সুরকির প্রাচীর তৈরী করেন।

যাহা প্রাচীন ঐতিহ্যের নিদর্শন সরূপ দর্শনার্থীদের দৃষ্টি কেড়ে নেয়। মন্দিরের পাশে বহু গভীর একটি কুয়া তৈরী করেন যাহা কূয়ার তলদেশ থেকে উপরি ভাগ পর্যন্ত পাথর কেটে টুকরো টুকরো করে বসানো। কূয়াটি অমৃত কুন্ড নামে পরিচিত। মন্দিরের মাহাতœ্য ঃ বৃটিশ শাসন আমলে একদিন পূরোহিত মন্দিরে পাঠা বলি দিয়ে পূজা করছিলেন। এমন সময় একজন ইংরেজ লাট সাহেব উপস্থিত হন এবং পূরোহিত ব্রাহ্মণকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আমি যদি লোহার পাঠা এনে দেই তাহলে কি তোমার এই খড়গ দ্বারা বলি দিতে পারবে? পূরোহিত কিছুক্ষণ ভেবে বলেন, হ্যাঁ মায়ের আর্শিবাদ হলে লোহার পাঠা ও বলি দেওয়া সম্ভব হবে।

কয়েক দিন পর লাট সাহেব একটি লোহার পাঠা নিয়ে মন্দিরে উপস্থিত হন। পূরোহিত মায়ের নাম স্মরণ করে পাঠাটিকে ফুল ও বেল পাতা গলায় পরিয়ে তুলসি জল ছিটানো মাত্র পাঠাটি বাস্তব পাঠায় রূপান্তরিত হয় এবং পূরোহিত পাঠাটি বলি দিতে সম্ভব হন। এভাবে মন্দিরের অনেক মাহাতœ্য রয়েছে। মন্দিরের যোগাযোগ ব্যবস্থা ঃ কানাইঘাট থেকে সুরাইঘাট সিএনজি যোগে (৭ কি.মি.) এরপর সুরাইঘাট থেকে রিক্সা যোগে বাউরভাগ কালী মন্দিরে ২কি.মি.। মন্দিরে ভক্ত সমাগম ও পূজা অর্চ্চনাঃ মন্দিরে নিত্য পূজা হয়।

প্রতি অমাবস্যাতে পূজা হয় এবং বাৎসরিক কীর্ত্তন হয়। প্রতি বছর দেশের বিভিন্ন স্থান হইতে এবং বিভিন্ন দেশ হইতে শত শত ভক্ত মন্ডলী পূজা দিতে আসেন। কিছু দিন পূর্বে ভারতের হাই কমিশনার পূজা দিতে এসেছিলেন। মন্দিরের সংস্কার ও যোগাযোগের সুবিধার্থে করণীয় ঃ সংস্কারের অভাবে মন্দিরটি ধ্বংস হতে চলেছে। এই প্রাচীন ঐতিহ্য ও ধর্মীয় প্রতিষ্টানটি রক্ষাহেতু মন্দিরের সংস্কার ও সুরাইঘাট হইতে কালী মন্দির পর্যন্ত রাস্তা পাকা করণ এবং মন্দিরে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া একান্ত আবশ্যক।

তাই উক্ত ঐতিহাসিক নিদর্শনটি রক্ষাকল্পে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষ এবং শুভাকাঙ্খী ব্যক্তি বৃন্দের নিকট আবেদন করেছেন বাম জঙ্ঘা কালি মন্দিরের সভাপতি দিলীপ কৈরি।  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।