আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জীবনের খোঁজে জীবনঢুলী

বুকের ভেতর বহু দূরের পথ...

তানভীর মোকাম্মেল ২০০১ সালের দিকে যুক্তরাজ্যের একটি গ্রন্থাগারে বিশ্বের আলোচিত ১০০ গণহত্যা শীর্ষক একটি বই খুঁজে পান। আগ্রহ নিয়ে বইটি পড়তে বসলেও একরাশ হতাশা নিয়ে বইটি শেষ করতে হয় তাঁকে। কারন ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত চুকনগর গণহত্যা সম্পর্কে সেই বইয়ের কোথাও কোন উল্লেখ ছিলনা। অথচ চুকনগরে যত মানুষকে এক সঙ্গে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে তারচেয়ে অনেক কম মানুষ নিহত হয়েছে এমন গণহত্যার ইতিহাস স্থান পেয়েছে বইটিতে। তানভীর মোকাম্মেল সেখানেই বসে সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি এই গণহত্যার উপর একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করবেন।

দেশে ফিরে তিনি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক তথ্যচিত্র ‘১৯৭১’ নির্মাণের কাজ শুরু করেন। সেই উদ্দেশ্যে দেশের এ মাথা থেকে ও মাথা ঘুরে ঘুরে তিনি তথ্য সংগ্রহ করতে শুরু করেন। তথ্যচিত্রটি বানানোর পাশাপাশি তাঁর মাথায় ঘুরছিল চুকনগর গণহত্যা নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণের পরিকল্পনা। ২৫০ ঘণ্টার ডিজিটাল ফুটেজ ধারন করার মধ্য দিয়ে শেষ হয় তথ্যচিত্রটি। এরই মাঝে তিনি দেখা পান জীবনকৃষ্ণ দাসের।

খোঁজ মেলে অদেখা অজানা এক জীবন গল্পের। তানভীর মোকাম্মেল বুঝে ফেলেন তিনি তাঁর চলচ্চিত্রের গল্প পেয়ে গেছেন। বানিয়ে ফেলেন চিত্রনাট্য। ২০০৯ সালে হুবার্ট বালস ফান্ডে সেরা চিত্রনাট্যের পুরষ্কার পেয়ে যান। এরপর ২০১০-১১ অর্থ বছরের আওতায় পান সরকারি অনুদান।

২০১২ সালের ২ অক্টোবর মহরত হয়ে ১০ অক্টোবর থেকেই শুটিং শুরু হয় চুকনগর হত্যার প্রেক্ষাপটে নির্মিত ‘জীবনঢুলী’। চলচ্চিত্রটির শুটিং হয়েছে পূবাইল, সাভারের নয়ারহাট, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর, খুলনা জেলার বৈঠাঘাটা, ডুমুরিয়ার চুকনগর, বাগেরহাটের চিতলমারি অঞ্চল সহ দেশের বিভিন্ন জায়গায়।

চলচ্চিত্রটি নিয়ে আলোচনার আগে চুকনগর গণহত্যা বিষয়ে একটু আলোকপাত করা দরকার। পৃথিবীর ইতিহাসে জঘন্যতম যেসব গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে, এর মধ্যে একটি নি:সন্দেহে চুকনগর গণহত্যা। ১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসে পাকিস্তানি হানাদাররা বাগেরহাট দখল করে নেওয়ার পর থেকে গ্রামে গ্রামে চলে তাদের দোসর রাজাকার আর আলবদর বাহিনীর অসহনীয় অত্যাচার।

নির্বিচারে মানুষ হত্যার পাশাপাশি তারা নারী নির্যাতন ও লুটপাট চালাতে তাকে। গ্রামের মানুষ প্রাণ ভয়ে নিজের ভিটেমাটি ছেড়ে অনিশ্চয়তার পথে পা বাড়ায়। খুলনার ডুমুরিয়ার ছোট্ট শহর চুকনগর ভারতীয় সীমান্তের কাছে অবস্থিত হওয়ায় যুদ্ধ শুরু হলে খুলনা ও বাগেরহাট থেকে প্রচুর মানুষ ভদ্রা নদী পার হয়ে চুকনগরে পালিয়ে যান। ২০ মে সকাল দশটার দিকে তিনটি ট্রাকে করে পাকিস্তানি সেনারা চুকনগর বাজারের ঝাউতলায় (তৎকালীন পাতখোলা) এসে থামে। তাদের সঙ্গে ছিল হালকা মেশিন গান ও সেমি-অটোমেটিক রাইফেল।

দুপুর তিনটা পর্যন্ত তারা নির্বিচারে মানুষ হত্যা করতে থাকে। হত্যাযজ্ঞ থেকে বাঁচার আশায় অনেকে নদীতে লাফিয়ে পড়লে বহু মানুষের সলিল সমাধি ঘটে। লাশের গন্ধে ভারী হয়ে যায় চুকনগর ও এর আশপাশের বাতাস। মাঠে, ক্ষেতে, খালে-বিলে পড়ে থাকে লাশ আর লাশ। এসব স্থান থেকে লাশ নিয়ে নদীতে ফেলার কাজ শুরু করেন স্থানীয়রা।

ঐদিন ঠিক কতজন লোককে পাকিস্তানি বর্বররা হত্যা করে এ সম্পর্কে সঠিক তথ্য পাওয়া না গেলেও যাঁরা বেঁচে গেছেন তাঁদের হিসেবে এ সংখ্যা আট হাজারের বেশি। এ দিন যাঁদের হত্যা করা হয়েছে, তাঁদের বেশির ভাগ পুরুষ হলেও বহু নারী ও শিশুকেও হত্যা করে পাকিস্তানি হানাদাররা। চুকনগরের ফসলি জমিগুলোয় আজও পাওয়া যায় সেদিনের নিহতদের হাড়গোড়। ধারণা করা হয় ঐ অঞ্চলের বেশিরভাগ মানুষ হিন্দু সম্প্রদায়ের হওয়ায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী পরিকল্পিতভাবে এই হত্যাকান্ড চালায়। মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি সেনারা যে নির্মম অত্যাচার, নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে তার এক নিশ্চুপ সাক্ষী হয়ে বেঁচে আছে চুকনগর।





বাগেরহাট জেলার ফকিরহাট থানার অন্তর্গত পরাণপুর গ্রামের দরিদ্র ঢাকি জীবনকৃষ্ণ দাসের চোখে দেখা চুকনগর গণহত্যাই তানভীর মোকাম্মেলের ‘জীবনঢুলী’। পাকিস্তান সেনাবাহিনী পরাণপুর গ্রাম আক্রমণ করলে শরণার্থী হিসেবে ভারতে পালিয়ে যাবার সময় জীবনের কাকা, স্ত্রী ও দুই শিশু সন্তান নিহত হয়। প্রিয় মানুষগুলোর মৃত্যুতে শোকে স্তব্ধ হয়ে যাওয়া জীবন সীমান্ত পার না হয়ে গ্রামে ফিরে আসে। ততদিনে মালেক শিকদারের নেতৃত্বে গ্রামে গড়ে উঠেছে রাজাকার বাহিনী। তারা জীবনকে বাঁচিয়ে রাখে এই শর্তে যে রাজাকার বাহিনীর সদস্য হিসেবে তাকে বাদ্য বাজনা করতে হবে।

কিন্তু ঢোলের পরিবর্তে তাকে বাজাতে হবে ড্রামস। প্রাণের ভয়ে শত অপমান ও লাঞ্চনা সহ্য করে নিজের একমাত্র সম্বল প্রিয় ঢোলটাকে ফেলে দিয়ে রাজাকারদের আধুনিক ড্রামসবাদক হয়ে উঠার চেষ্টা করে জীবন। প্রকৃতপক্ষে প্রিয় ঢোলটাকে নিয়ে সুর সৃষ্টির উল্লাসে মেতে উঠতে না পেরে এক রকম জীবম্মৃত হয়ে কাটতে থাকে জীবনঢুলীর দিন। রাতের বেলায় ঢোলের উপর জমে থাকা ধূলো পরিষ্কার করে নস্টালজিক হয় সে। জীবনের ঘরের ছাদের ফুটো দিয়ে ঢোলের উপর বৃষ্টির ফোটা পড়ে সৃষ্টি হয় সুরের ব্যঞ্জনা।

আর জীবনঢুলীর বুকটা ব্যথায় হু হু করে উঠে।

জীবনঢুলী চলচ্চিত্রে পরিচালক একবারও চুকনগর নামটি ব্যবহার না করেও গণহত্যার একাংশ তুলে ধরেছেন যা আমরা দেখি জীবনঢুলীর চোখ দিয়ে। চলচ্চিত্রটিতে পাকিস্তানি হানাদারদের চেয়ে রাজাকার ও আলবদর বাহিনীর লুটপাট ও নির্যাতন তুলে ধরায় পরিচালক বেশি সচেষ্ট ছিলেন। নারী নির্যাতনের একটি দৃশ্যের সংলাপে স্তব্ধ হয়ে যেতে হয়। নির্যাতিত মেয়েটির মা অশ্রুসিক্ত কন্ঠে জানোয়ারগুলোর কাছে হাত জোড় করে অনুরোধ করছে, ‘বাবারা তোমরা একে একে আগমন করো, আমার মেয়েটা ছোট’।

ঠিক চল্লিশ বছর পর বাংলাদেশ ঠিক একই চিত্রের মুখোমুখি হয়। সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া হিন্দু অধ্যুসিত এলাকায় অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী পুর্ণিমা রাণী শীল তার পরিাবেরর সামনেই নির্যাতনের শিকার হয়। তার মায়ের আকুতিভরা কান্না আকাশে বাতাসে প্রতিধ্বনিত হয়েও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের কর্ণকুহরে প্রবেশ করতে পারেনি। নির্মাতার ইঙ্গিতটা খুব স্পষ্ট। পুরনো শকুনরা এখনও বিচরণ করছে বাংলার মাটিতে।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিপক্ষ এই শক্তি আজও ক্রমাগত সুযোগ খুঁজে বেড়ায় তাদের হিংস্র আচড়ে বাংলা মায়ের বুক ক্ষত-বিক্ষত করতে।



ছবির কিছু কিছু অংশে চমৎকার কিছু প্রতীকি দৃশ্য নজর কেড়েছে। দত্ত বাড়ির বৌকে রাজাকার বাহিনী তুলে এনে নির্যাতনের জন্য একটি ঘরে আটকে রাখে। সেই ঘরের জানালা দিয়ে মেয়েটি মুক্তির আশায় কাতর চোখে বাইরের দিকে চেয়ে থাকে। জীবন বাইরে থেকে হতভাগা মেয়েটিকে দেখে।

জানালার এপার আর ওপারে কী অদ্ভূত জীবন! তার ভেতরটা দুমড়ে মুচড়ে যায়। নিজের অসহায়ত্বে মরমে মরে যায় জীবন কিন্তু কিছুই করতে পারেনা। জানালার শিকের ওপারে নিষ্পাপ বন্দী এই মেয়েটিই যেন তৎকালীন সময়ে পুরো দেশের প্রতিচ্ছবি হয়ে ধরা দেয়। মেয়েটির মতই বাংলা মায়ের নিষ্পাপতা ও সম্মান ভূলন্ঠিত হচ্ছিল শত্রু ও তার দোসর এদেশের কিছু বেঈমানের কাছে।

মুক্তিযোদ্ধারা যখন গেরিলা আক্রমণে রাজাকার বাহিনীর ক্যাম্পটিকে দখল মুক্ত করে জীবন যেন স্বাধীনতা খুঁজে পায়।

ওরা চইলা আসছে বলে সে ছুট লাগায় তার প্রিয় ঢোলটি নিয়ে আসার জন্য। ড্রামটিকে লাথি মেরে সে তার প্রিয় ঢোলটি তুলে নেয়। শেষ দৃশ্যে জ্বলন্ত ঘরকে পেছনে রেখে সে উন্মাদের মত ঢোল বাজাতে থাকে। জীবনের ঢোলের বাদ্য যেন অসুড়ের বিনাশে দেবতার আগমনী বার্তা জানান দিচ্ছে।

চলচ্চিত্রটিতে গ্রুপ থিয়েটারের বিভিন্ন কর্মীসহ অনেক পেশাদার অভিনেতারা অভিনয় করেছেন।

তাই চলচ্চিত্রটির সার্বিক অভিনয় সুন্দর ও সাবলীল ছিল। একমাত্র ব্যতিক্রম কেন্দ্রীয় চরিত্রে শতাব্দী ওয়াদুদ। শতাব্দী এ প্রজন্মের একজন শক্তিশালী অভিনেতা। কিন্তু জীবনঢুলী ছবিতে তাকে তার নামের প্রতি সুবিচার করতে দেখা যায়নি। জীবনের চরিত্রটি নি:সন্দেহে একটি চ্যালেঞ্জিং চরিত্র।

পুরো ছবিতে তাকে কাঁদতে দেখা যায়না। কান্না ছাড়াই কষ্টের অভিব্যক্তিগুলো তুলে ধরা কঠিন কাজ ছিল। শতাব্দী এখানে শুধুই পাস মার্ক পাবেন। কিন্তু যে ফীল আর এক্সপ্রেশন্স দরকার ছিল এই চরিত্রটির জন্য তা শতাব্দীর মধ্য দিয়ে খুব বেশি প্রস্ফুটিত হয়নি। ছবিটিতে পার্শ্বচরিত্রে সবচেয়ে ভালো অভিনয় করেছেন দেশের মঞ্চ, টেলিভিশন ও চলচ্চিত্রের গুণী শিল্পী ওয়াহীদা মল্লিক জলি।





তানভীর মোকাম্মেলের পরিচালনা নিয়ে আসলে কিছু বলার প্রয়োজন নেই। চলচ্চিত্রের ব্যাকরণ মেনে তিনি সব সময়ই নিখুঁত কাজ উপহার দেয়ার চেষ্টা করেন। লালসালু, চিত্রা নদীর পাড়ে, নদীর নাম মধুমতি’র মত ছবি যিনি উপহার দিয়েছেন তাঁর কাছ থেকে প্রত্যাশা আরেকটু বেশি ছিল।

জীবনঢুলী ছবির গল্প, চিত্রনাট্য, ক্যামেরাওয়ার্ক, শিল্পসজ্জা, মিউজিক, সাউন্ড সব কিছুই ছিল মোটামুটি ঠিকঠাক। কিন্তু কোন চমক ছিলনা।

পুরো ছবি জুড়েই মনে হয়েছে কী যেন নেই! মুক্তিযুদ্ধের ছবির যে আবেগ সেটা প্রবলভাবে ধরা দেয়নি। সিনেমার সিচুয়েশন বেসিস যে টেনশন সেটা দর্শককে খুব একটা স্পর্শ করেনা। তার কারন সম্ভবত মুক্তিযুদ্ধের ছবিতে সেই একই ধারার গতানুগতিক কাহিনী। নির্মাতারা যেন সেই একই কানাগলিতে ঘুরপাক খাচ্ছেন। গল্প এবং গল্প বলার কৌশলে কোন অভিনবত্ব নেই।

নেই খোলা চোখে যুদ্ধের ভেতর ও বাইরের দিকটাকে দেখার চেষ্টা। নয় মাসের রাজনৈতিক, আর্থসামাজিক এবং প্রাত্যহিক ঘটনাগুলো বিশ্লেষণের ও অনুধাবনেরও চেষ্টাও খুব একটা পরিলক্ষিত হয়না সেলুলয়েড বা ডিজিটাল মাধ্যমে। ঘুরে ফিরে হত্যা আর নির্যাতন এবং ছবির শেষে মুক্তিযোদ্ধাদের গেরিলা আক্রমণের মধ্য দিয়ে বিজয় ছিনিয়ে আনা। জীবনঢুলী তাই টেকনিক্যালি ভালো ছবি হলেও এই গতানুগতিকতার গন্ডিকে অতিক্রম করতে পারেনি।



জীবনঢুলী
কাহিনী, চিত্রনাট্য ও পরিচালনা: তানভীর মোকাম্মেল
নিবেদক: সাইফুর রহমান
প্রযোজনা: বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক অনুদানপ্রাপ্ত
সহ-প্রযোজক: কারুকাজ
চিত্রগ্রহণ: মাহফুজুর রহমান খান
সম্পাদনা: মহাদেব শী
শিল্প নিদের্শনা ও প্রধান সহকারী পরিচালক: উত্তম গুহ
সহকারী পরিচালক: সগীর মোস্তফা, রানা মাসুদ ও সাঈদ সুমন
সঙ্গীত পরিচালনা: সৈয়দ সাবাব আলী আরজু
পোষাক পরিকল্পনা: চিত্রলেখা গুহ
অভিনয়ে: শতাব্দী ওয়াদুদ, রামেন্দু মজুমদার, ওয়াহীদা মল্লিক জলি, চিত্রলেখা গুহ, জ্যোতিকা জ্যোতি, প্রাণ রায়, তবিবুল ইসলাম বাবু, উত্তম গুহ, মৃণাল দত্ত এবং গ্রুপ থিয়েটারের সদস্যবৃন্দ।


___________________________________________________
**মুখ ও মুখোশ অনলাইন সিনে ম্যাগাজিন এর ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সংখ্যায় প্রকাশিত**

তথ্যসূত্র: বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.