আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সেপ্টেম্বরে মাঠে নামতে চায় বিএনপি

আগামী সেপ্টেম্বর থেকে সরকারের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত লড়াইয়ে নামবে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৯-দলীয় জোট। কিছুটা সময় নিয়ে সর্বস্তরের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে লড়াইয়ে নামতে চায় তারা। তবে আন্দোলনে এবার নতুন কৌশল আসতে পারে। গতানুগতিক হরতাল-অবরোধের বাইরে রাজপথমুখী জনসম্পৃক্ত বিকল্প আন্দোলনের চিন্তাভাবনা চলছে। এর আগে দল গোছানোসহ নেতা-কর্মী-সমর্থকদের আন্দোলনমুখী করতে ১ মার্চ থেকে তৃণমূল সফর শুরু করবেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।

চূড়ান্ত আন্দোলনের আগে দলের কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন নির্বাহী কমিটি, মহানগর বিএনপি কমিটি, ছাত্রদল, যুবদলসহ অঙ্গ সংগঠনগুলোও পুনর্গঠন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। যে কোনো সময় ঢাকা মহানগর কমিটি দেওয়া হতে পারে। তবে উপজেলা নির্বাচনে বড় ধরনের 'ভোট ডাকাতি' হলে বিএনপি জোট এপ্রিল থেকেই আগেভাগে আন্দোলনে যাবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আন্দোলন একটি চলমান প্রক্রিয়া। দিন-তারিখ ঠিক করে আন্দোলন হয় না।

উপজেলা নির্বাচনে সরকারের প্রতি জনগণের অনাস্থা এটাও আন্দোলনের অংশ। সামনের উপজেলা নির্বাচনগুলোয় যেখানে সরকার বাড়াবাড়ি করবে সেখানেই জনগণ সমুচিত জবাব দেবে। এপ্রিলে আমরা কাউন্সিল করার কথা ভাবছি। এরপর রমজান, বর্ষা, ঈদ সব কিছুই আমরা বিবেচনা করব। নির্দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন না দেওয়া পর্যন্ত আন্দোলন ধারাবাহিকভাবে চলতেই থাকবে।

বিএনপির নীতিনির্ধারক পর্যায়ের একাধিক নেতার সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, সেপ্টেম্বরের আগ পর্যন্ত নতুন কোনো পরিস্থিতির সৃষ্টি না হলে স্বাভাবিক কর্মসূচিতেই থাকবে জোট। তবে সেপ্টেম্বরের মধ্যে সংলাপ-সমঝোতার মাধ্যমে নতুন নির্বাচনে সরকার এগিয়ে না এলে এর পর থেকেই টানা কর্মসূচি দেওয়া হবে। আন্দোলনের কর্মপন্থা নিয়ে বেগম জিয়া সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে যাচ্ছেন। নেতারা জানান, তাদের আন্দোলনের পাশাপাশি দেশি-বিদেশি নানা চাপে সরকারকে নির্দলীয় ব্যবস্থায় নির্বাচন দিতে বাধ্য করা হবে। তবে সংলাপ-সমঝোতার আশা ক্ষীণ জানিয়ে নেতারা বলেন, আন্দোলনের মাধ্যমেই সমস্যার সমাধান করতে হবে।

জানা গেছে, পুরো মার্চব্যাপী উপজেলা নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত থাকতে চায় সংসদের বাইরে থাকা প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। এ কারণে ফেব্রুয়ারি-মার্চে কেন্দ্রীয় নেতাদের সাংগঠনিক সফরও বাতিল করেছেন বেগম জিয়া। কেন্দ্রীয় নেতাদের পাশাপাশি বেগম জিয়া নিজেই এ নির্বাচন মনিটর করছেন। সরকারবিরোধী আন্দোলন মাথায় রেখেই উপজেলাগুলোয় জয়ের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। উপজেলায় জয়-পরাজয় দুটোতেই লাভ হিসাবে নেওয়া হচ্ছে।

সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনেও বিএনপি চেয়ারপারসন বলেছেন, নতুন কর্মসূচি দেওয়ার আগে কিছুটা সময় নিয়ে দল গোছানো হবে। সূত্রমতে, ১ মার্চ থেকে রাজবাড়ীর মাধ্যমে জেলা পর্যায়ে বেগম জিয়া সাংগঠনিক সফর শুরু করবেন। পর পর কয়েকটি জেলা সফর করে এপ্রিলের শেষে কিংবা মের প্রথম দিকে কাউন্সিল করার কথা চিন্তা করছেন তিনি। উপজেলায় বড় ধরনের কোনো অনিয়ম না হলে বর্ষা, রমজান, ঈদুল ফিতর, ঈদুল আজহা পর্যন্ত রাজপথের সাদামাটা কর্মসূচি দেওয়ারও সিদ্ধান্ত রয়েছে তার। সব কিছু গুছিয়ে উঠে সেপ্টেম্বর থেকে চূড়ান্ত আন্দোলন শুরু করবে বিএনপি জোট।

এরই মধ্যে বেগম জিয়া বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের সঙ্গে মতবিনিময়কালে আন্দোলনের রূপরেখা সম্পর্কে ধারণা দিয়েছেন। বিএনপি নেতারা বলছেন, উপজেলা নির্বাচনকেই আন্দোলনের নতুন ইস্যু বানাতে চান তারা। এ নির্বাচনে জয়-পরাজয় দুটোকেই ইতিবাচকভাবে নেওয়া হচ্ছে। সংখ্যাগরিষ্ঠ উপজেলায় বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত প্রার্থীরা জয়ী হলে দেশে-বিদেশে এর একটি ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হবে। ৫ জানুয়ারির নির্বাচন যে ভোটারবিহীন ও কারচুপির ছিল তা প্রমাণ করাও সহজ হবে।

অন্যদিকে, পরাজয় হলেও সংসদের মতো উপজেলায়ও ভোট ডাকাতির অভিযোগ তোলা যাবে। ক্ষমতাসীনদের অধীনে যে নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয় না তা উপজেলায় প্রমাণিত হবে। সব কিছু মিলিয়েই তৃণমূলে স্থবির হওয়া আন্দোলনে গতি আসবে বলে মনে করেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। দলের স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য তরিকুল ইসলাম জানান, ম্যাডাম মার্চ থেকে জেলা সফর শুরু করবেন। মূলত আন্দোলনের জন্য নেতা-কর্মীসহ দেশবাসীকে প্রস্তুত করতেই বেগম জিয়ার এ সফর।

এপ্রিল-মের মধ্যে কাউন্সিল করারও চিন্তাভাবনা চলছে। এর পর থেকেই মূলত ধাপে ধাপে আন্দোলন চূড়ান্ত পর্যায়ে যাবে। যুগ্ম-মহাসচিব মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি আন্দোলনে রয়েছে। উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা এ আন্দোলনেরই একটি অংশ। ৫ জানুয়ারি ভোটারবিহীন নির্বাচনের পর উপজেলায় সরকারের ভরাডুবি হচ্ছে।

তাই তারা ভোট ডাকাতি করতে কেন্দ্র দখল, জাল ভোট দিচ্ছে। নানা বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে জনগণ বিএনপি জোটকে সমর্থন দিচ্ছে। সামনের নির্বাচনে আবার ভোট ডাকাতির চেষ্টা করা হলে গণবিস্ফোরণ সৃষ্টি হবে। এটাই পরবর্তীতে গণআন্দোলনে রূপ নেবে।

 



অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.