আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কাল্পনিক ফিচারিং রসুর ঘরঃ লইট্টা মাছের শুঁটকি ভূনা ও স্বর্গের একটি খাবারের রেসিপি।

মেধাহীন ব্লগারের ব্লগে স্বাগতম। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম http://www.facebook.com/kalponikvalo

প্রিয় সহব্লগার আশরাফুল ইসলাম দূর্জয় ভাইকে নিয়ে গতকাল দুপুরে বইমেলায় গিয়েছিলাম। দূর্জয় ভাই হলেন এবারের বই মেলার এনসাইক্লোপিডিয়া। অর্থাৎ কোথায় কোন স্টল, কোন বইটি ভালো কিংবা কোন বইটি সংগ্রহে রাখা উচিত, কোন বইটি বাজারে আসছে ইত্যাদি নানারকম তথ্যে তিনি পরিপূর্ন। অল্প সময়ে ভালো বই কিনতে গেলে তার বিকল্প নেই।

তাছাড়া গতকাল ছিল বইমেলার শেষ দিন এবং শুক্রবারও বটে। তাই ভেবেছিলাম দুপুরবেলা মানুষের ভীড় কিছুটা কম থাকতে থাকতে আরাম করে কেনাকাটা শেষ করে ফেলব তারপর বিকেল বেলা সবার সাথে একটা ম্যারাথন আড্ডা মারব। কিন্তু মেলায় ঢুকেই আমার চক্ষু চড়কগাছ, সেই ভরদুপুরেও বেশ ভালো মানুষজনের ভীড়। ফলে যতক্ষনে বইগুলো কেনা শেষ হলো ততক্ষনে এত সব বইপ্রেমী মানুষের ভীড়, রোদ এবং ধুলার যন্ত্রনায় আমার মাথা ধরে গেল। আমি মন খারাপ করে দূর্জয়ভাইকে বিদায় জানিয়ে বাসার চলে আসলাম।



বাসায় এসে বেশ কিছুক্ষন বিশ্রাম নেয়ার পর যখন কিছুটা ধাতস্থ হলাম ততক্ষনে প্রায় সাড়ে আটটা বেজে গিয়েছে। ভাবলাম আবার মেলায় যাই কিন্তু জ্যামের কথা ভেবে যাবার ইচ্ছে বাদ দিলাম। কিভাবে সময় কাটানো যায় তা চিন্তা করছিলাম। হঠাৎ মনে হলো, আজকে বাসায় সময় দিন। অনেকদিন রান্না করি না।

তাছাড়া কয়েকদিন থেকে আমার খুব শুঁটকি ভুনা খেতে ইচ্ছে করছিল কিন্তু আম্মুর শরীর কিছুটা খারাপ থাকায় আর বলতে পারছিলাম। মোক্ষম সময় এবং উপযুক্ত লক্ষন পেয়ে আমি আর দেরী না করে রান্নার আয়োজন শুরু করে দিলাম। আপনাদের তো খাওয়াতে পারব না, তাই ছবিই দিলাম।


লইট্টা শুঁটকি ভুনা।
যা যা লাগবেঃ (৩ জনের জন্য )
৫০ গ্রাম লইট্টা শুটকি
আধা কাপ কুচি করে কাঁটা পেয়াজ
আধা কাপের চেয়ে একটু কম কুচি করা কাঁটা রসুন
এক টেবিল চামচ পেঁয়াজ বাটা,
এক টেবিল চামচ রসুন বাটা
তেল এক কাপ
কেমন ঝাল খান তার উপর নির্ভর করে মরিচ, তবে অন্তত এক টেবিল চামচ দিয়েন, নইলে মজা হবে না।

আমি ১.২ টেবিল চামচ মরিচ দিয়েছি।
হলুদ, এক টেবিল চামচের কিছুটা কম। যদি দেশী হলুদ হয় তাহলে চাইলে সামান্য একটু কম দিতে পারেন।
লবন পরিমান মত,
একটা কোয়াটার লেবু,
একটা টমেটো আর ধনে পাতাকুচি






১) একটা পাতিলে পানি নিয়ে শুঁটকি গুলো ভিজিয়ে রেখে ৫/৬ মিনিট আগুনে সিদ্ধ করে নিন। এতে শুটকির সাথে থাকা বালি ও ময়লাগুলো দূর হয়ে যাবে।

তারপর পানি ঝরিয়ে ফেলুন। (সর্তকতাঃ এই সময়ে নাক অবশ্যই বন্ধ রাখবেন, নইলে আপনার অক্কা পাওয়া কেউ ঠেকাতে পারবে না। )


২) ঠান্ডা পানিতে শুঁটকিগুলোর কাঁটা পরিষ্কার করে ছোট ছোট টুকরো করে নিন।

৩) এবার কড়াইতে প্রথমে পরিমান মত তেল দিন (আধা কাপের একটু বেশি)। তেল কিছুটা গরম হয়ে এলে সেখানে প্রথমে পেঁয়াজ বাটা আর রসুন বাটা দিয়ে নাড়তে থাকুন, তারপর মরিচ ও হলুদ দিন।

তারপর আগে থেকে কুচি করা পেয়াজ দিয়ে কিছুটা মাখিয়ে নিন এবং নাড়তে থাকুন



৪) এরপর একটি পাকা টমেটোকে ভালো করে হাত দিয়ে চটকে অথবা কুচি করে পাতিলে দিয়ে দিন। তারপর কাটা শুঁটকিগুলো দিয়ে ভালো করে নাড়তে থাকুন। তারপর আপনি রসুন কুচি দিন। এই রসুন কুচি চাইলে আপনি কিছুটা আগেও দিতে পারেন। তারপর অর্ধেক বা সিকি কাপ লেবুর রস দিয়ে দিন।

এতে শুঁটকির অযাচিত গন্ধ কিছুটা হলেও কমে আসবে। স্বাদটা বেশি ভালো লাগবে। এরপর ঢাকনি দিয়ে ৫ মিনিট রেখে দিন। যখন দেখবেন তেল উঠে আসছে, তখন আধাকাপ পানি দিয়ে ভালো করে নেড়ে ১০ মিনিট মৃদ্য আঁচে ঢাকনি দিয়ে রেখে দিন।



৬) চুলা থেকে নামানোর আগে একটু আগে ধনে পাতা কুচি দিয়ে ঢাকনি বন্ধ করে রাখবেন, এবং একদম খাবার আগে ঢাকনি তুলবেন।

এতে যা হবে ধনে পাতার গন্ধটা শুঁটকি ভুনাতে ছড়িয়ে পড়বে। বিকেল বেলা আম্মু মামার বাসা থেকে আসার সময় কিছু কাঁচা তেজপাতা এনেছিলো। আমি ফ্লেভার এবং রং বৈচিত্রের জন্য একটা তেজপাতাও দিয়ে দিয়েছি।


সবশেষ এখন পরিবেশনের পালাঃ



সর্তকতাঃ এই ধরনের রান্না পোষ্ট দেয়ার আগে দয়া করে ক্যামেরাম্যান ঠিক কইরা নিয়েন। নিজেই যদি ক্যামেরা হ্যান্ডেল করতে যান, তাহলে অনেক ছবি মিস হবে প্লাস এই সব ঢং করতে গিয়া ক্যামেরার সাথে সাথে রান্নাও নষ্ট হইতে পারে।

যেমন আমার ক্যামেরার লেন্সে তেলের ছিটা পড়ছে।
হায় আমার প্রাগৈতিহাসিক অলিম্পাস ক্যামেরা!!!!!



স্বর্গীয় খাবারের ফ্রি রেসিপি-

বহু বছর পূর্বে একবার স্বর্গে বেড়াইতে গিয়েছিলাম। গিয়েই দেখি স্বর্গের রসুই ঘরে দুপুরের খাবারের প্রচন্ড ব্যস্ততা। আমাকে দেখেই প্রধান বাবুর্চি হা হা করে ছুটে এলেন। কাছে এসে বললেন, ওহে মুখপোড়া!! সারাদিন হুরদের সাথে লুলামি করলে কি চলবে? শরীর স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে হবে না?? নে'চল দুটো খেয়ে নিবি।


বলতেই না বলতে একটি হুর কি সুন্দর আমার সামনে গরম ধোঁয়া উঠা ভাত আর কি যেন একটা খাবার এনে রাখল। আমার তো বড়ই মেজাজ খারাপ হলো, কোথায় স্বর্গ ভ্রমনে এসেছি ভালো মন্দ কত কি খাব? তা না শুধু এই একটা আইটেম? যত্তসব!

এই দিকে প্রচন্ড খিদেও পেয়েছে কি আর করা! বিসমিল্লাহ বলে গরম ভাতের সাথে ঐ নরম ভর্তার মত জিনিসটা দিলাম মুখে চালান করে। খাবারটা গলা দিয়ে নামতে না নামতেই আমার মুখ দিয়ে ক্রমাগত আহা!! আহা!! আহ! আহ! বাহ! বেশ! ইত্যাদি বিকট শব্দে লজ্জা পেয়ে হুরটা পালিয়ে গেল।
আমি সব কিছু ভুলে খেয়েই যাচ্ছি, প্লেটের পর প্লেট নেমে যাচ্ছে। কানে কানে কে যেন বলল, হুরটা তো গেসে।

আমি বিরক্ত হয়ে বললাম, আহ!! মরন! স্বর্গে আবার হুরের চিন্তা কি? যত্তসব ফালতু আলাপ! খাবার সময় বিরক্ত করা আমি একদম পছন্দ করি না।

যাইহোক, ভরপেট খেয়ে আমি যখন দ্বিগুনের বেশি সাইজে পরিনত হয়েছি, ঠিক তখনই আমার ধরনীতে ফিরে আসার ট্রেন হুইসেল বাজানো শুরু করল। খাবারের পর কোথায় একটু বিছানায় পিঠ দিয়ে গড়াগড়ি করব, হুরদের সাথে খানিকটা 'দুষ্টামি' করব তা না লাফিয়ে উঠে এখন ট্রেন ধর!
কিন্তু এত চমৎকার খাবারটির নাম না জেনে আমার যেতে ইচ্ছে করছিল না। বাবুর্চিকে বহু রিকোয়েস্ট করলাম, ব্যাটা কিছুতেই নাম বলতে চায় না। তার একটাই কথা- স্বর্গের খাবার স্বর্গে, ধরনীর খাবার ধরনীতে।

তবে শেষমেষ বহু কষ্টে তাকে ছবিরহাটের বিখ্যাত 'ভেষজ' পাতার একটি চারা দেয়ার প্রতিশ্রুতি করে জিনিসটার নাম জানলাম। এর নাম আলুভর্তা।

আপনাদের কত ভালোবাসি তা নতুন করে বলার কোন দরকার নেই, তাই বিশেষ স্বর্গীয় খাবারের রেসিপি আপনাদের সামনে তুলে ধরলাম।

আলু ভর্তা (৪ জনের জন্য)
২ টি মাঝারি মানের আলু
কুচি করা কাটা পেয়াজ,
শুকনা মরিচ,
আগুনে পোড়া শুকনা মরিচ
খাঁটি সরিষার তেল / আচারের তেল
ধনে পাতা কুচি

প্রক্রিয়াঃ
প্রথমে আলু সিদ্ধ করে নিন। সিদ্ধ আলুর খোসা ছাড়িয়ে উপরে বর্নিত সকল জিনিসপত্র দিয়ে ছবি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহন করিবেন, তারপর গরম গরম ভাতের সাথে মুখে চালান দিবেন।

ব্যাস!!!!! তারপরই দেখবেন মজা কাকে বলে।




রিমিক্স হিসেবে সাথে ডালও রাখতে পারেন।


যাইহোক, পৃথিবীতে এখন পর্যন্ত ডাল ভাত, আলু ভর্তার উপরে কোন খাওয়া নাই আর হবেও না। পোষ্ট লিখতে লিখতে আবার দেখি খিদা লাইগা গেল!!!

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।