আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ধোঁয়ায় ইসলামী মূল্যবোধের বিসর্জন

২৫ তারিখ সকালে ফেবু খুলতেই দেখি আমার হোমপেজ ক্রিসমাসের উইশিংয়ে ভেসে যাচ্ছে। ভাবলাম, ঠিকই আছে হয়তো, হুজুগে মাতাল বাঙালি কিছু একটা পেলেই তো গণহারে শেয়ার করতে থাকে। ব্যাপারটা হয়তো সেখানেই শেষ হয়ে যেতে পারতো, কিন্তু এর পরে এমন কিছু ঘটনা ঘটল যার কারণে আজ এই লেখাটা না লিখে পারলাম না। ছুটির বিধায় বেশ আয়েশ করে টিভি দেখতে বসলাম। কিন্তু দেশী চ্যানেলগুলো দেখে মনে হচ্ছিল, যেন পাশ্চাত্যের কোন দেশে বসে টিভি দেখছি।

নিউজ রিডার থেকে শুরু করে নানা প্রোগ্রামের অ্যাংকর এমনকি রিপোর্টাররাও মাথায় সান্তা ক্লসের টুপি পরে পর্দায় উপস্থিত হয়েছে। এর কিছুক্ষণ পরে মেইল চেক করতে গিয়ে দেখি আমার এক বন্ধু আমাকে ক্রিসমাস উইশ করেছে। তাকে রিপ্লাই দিলাম যে আমি বা তুমি কেউই তো খ্রিস্টান নই, তাহলে এত ঘটা করে ক্রিসমাস উইশ করার কি হল? প্রত্যুত্তরে সে আমাকে জানাল, সে যেহেতু উদারমনা তাই সব ধর্মের উৎসবই সে অত্যন্ত উৎসাহ নিয়ে পালন করে। আমার মত ‘গোঁড়া’ মানুষদের কারণেই নাকি দেশ এখনও উন্নত দেশের কাতারে শামিল হতে পারেনি। এরপরে সন্ধ্যার দিকে দীর্ঘদিন পর আমার এক কাজিন কল করে ক্রিসমাস ক্যারল গাওয়া শুরু করল (যে কিনা আমাকে ঈদ এর সময় একটা এসএমএস ও পাঠায়না।

)। তার ফোনটা রাখার পরে ভাবলাম, সত্যিই বাংলাদেশি মুসলিমগণ ‘মুক্তমনা’, ‘উদারমনা’, ‘ অসাম্প্রদায়িক’ প্রভৃতি বিশেষণে নিজেদের বিশেষায়িত করতে গিয়ে নিজের আসল ধর্ম থেকে যে যোজন যোজন মাইল দূরে সরে যাচ্ছে তা হয়তো কোনদিন তারা খেয়ালই করছেনা। আর আমি এইটাও জানি, আমার এই লেখার পর আমাকে অনেকেই জামায়াতপন্থী মনে করবেন, কিন্তু তাদের বলতে চাই সবসময় ইসলামের দোষ খুঁজে বের করে পশ্চিমের আস্থাভাজন না হয়ে নিজের শিকড়কে চিনতে শিখুন। যতই আধুনিকমনা নাস্তিক হন না কেন, পারলৌকিক জগতে জবাবদিহিতা অবশ্যই আপনাকে করতে হবে। (১) আমার বন্ধুকে আমি যে কথাগুলো বলেছিলাম আমাকে ‘গোঁড়া’ বলার প্রেক্ষিতে, তা হল, তুমি যে এত উদারমনা হয়ে সবাইকে ক্রিসমাস উইশ করছ, তোমার নিজ ধর্ম পালনের প্রতি তাহলে তোমার এতটা ঔদাসিন্য কেন? এক মাস রোজা রাখতে গেলে তোমার প্রথম অজুহাত থাকে মুখে গন্ধ নিয়ে তুমি অন্য কার সামনে যেতে পারবে না , এতে তোমার সারাদিনের কাজকর্মে ব্যাঘাত ঘটবে কিন্তু সেই তুমি যখন এখানে ওখানে আধুনিকতার নামে পেগের পরে পেগ গিলতে থাক, তখন তোমার মুখে কোন গন্ধ হয় না? সারারাত ঘুম নষ্ট করে ঠিকই ডিজে পার্টিতে নাচতে পারবে কিন্তু কেন ঈদের দিন সকালে নামাজ পড়তে যাওয়ার সময় তোমার ঘুম ভাঙ্গে না।

সার্বজনীন উৎসবের ধোঁয়া তুলে তুমি যে মণ্ডপে মণ্ডপে ধুনুচি নৃত্য দেখ, প্রতিমা বিসর্জনে অংশ নাও। খোঁজ নিয়ে দেখ তো, তোমার কোন হিন্দু বন্ধু মসজিদের পবিত্রতা নিয়ে কতটুকু জানে বা ঈদের দিন তার কখনো ঈদগাহে ঈদের জামাতে শামিল হওয়ার ইচ্ছা জাগ্রত হয়েছে কিনা? খোঁজ নিয়ে দেখ, এরকম একজনও পাবে না। কারণ তারা তাদের ধর্মের বিধি লঙ্ঘনে অপারগ। আর আমরা বাংলাদেশি মুসলিমরা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির নামে ইসালামে নাজায়েজ অনেক কাজ হর –হামেশাই করে চলেছি। কেউ ভুলগুলো শুধরাতে এলে উলটো তাকে যুদ্ধাপরাধী, জামায়াতের দোসর এবং জঙ্গিবাদে সংশ্লিষ্ট বলে অভিহিত করছি।

আসলে ইসলামের মূল ধারা থেকে বিচ্যুত হয়ে আমরা ধর্মের ঊর্ধ্বে ওঠার নামে দিন দিন আগাছায় পরিণত হচ্ছি। আজকে কোন অনুষ্ঠানের সূচনালগ্নে মঙ্গলপ্রদীপ জ্বালানো হয়ে থাকে। এইটাকে বাঙালি সংস্কৃতির উপাদান হিসেবে বারবার বলা হলেও মূলত হিন্দু দেবদেবীর পূজার উপকরণ হিসেবেই প্রাচীনকাল থেকে এটি ব্যবহৃত হয়ে আসছে। মানলাম বাঙালি উৎসবপ্রিয় জাতি, কিন্তু এটাও সত্য যে ধর্ম ছাড়া মানুষের অস্তিত্ব অকল্পনীয়। তাই উৎসবের আনন্দে আত্মহারা হয়ে নিজের ধর্মীয় অনুশাসনগুলোকে বিসর্জন দিয়ে এস না।

নিজের ধর্ম ভালভাবে পালন করে তারপর অন্য ধর্মের প্রতি উদারতা প্রকাশ করতে থেক। (২) সংবাদ পাঠক- পাঠিকারা যে সকাল থেকে ক্রিসমাসের শুভেচ্ছা জানাতে জানাতে মুখে ফেনা তুলে ফেললেন আর প্রাণোচ্ছল যেসব আপুরা জেগিংস, ক্যাপ্রি পরে মাথায় লাল- সাদা টুপি পরে পুরোপুরি নিজেকে খ্রিস্ট ধর্মের অনুসারী করে ফেললেন, তাদের কাছে খুব জানতে ইচ্ছা করে আমাদের দুই ঈদের কোন সময় কি দেখেছেন, ইংরেজি চ্যানেলগুলোতে সংবাদ পাঠকরা গায়ে পাঞ্জাবি আর মাথায় টুপি পরে এসে অবিরাম ২৪ ঘণ্টা ‘ঈদ মুবারাক’ বলে যাচ্ছে? হয়তো তারা অনেকে জানেও না, যে দিনটি বিশ্বের কোটি কোটি মুসলিমের কাছে এক পরম আনন্দের দিন। একই কথা হিন্দু ধর্মের পূজার বেলাতেও খাটে। এদিন তো পাঠিকাগণ লাল পাড়ে সাদা শাড়ি পরে সিঁদুর খেলায় পর্যন্ত মেতে যান। ভাবুন তো, পবিত্র রমজান মাসে দাদাদের দেশের কোন উপস্থাপিকা মনের ভুলে একদিনের জন্যও শাড়ির আঁচল বা গায়ের ওড়নাটি টেনে মাথায় দিয়েছিল কিনা? ফ্যাশনেবল হওয়া ভাল, দেশ বিদেশের আচার-সংস্কৃতি সম্পর্কে ধারণা রাখাও বুদ্ধিমানের কাজ।

কিন্তু নিজের মূল্যবোধের অবক্ষয় ঘটিয়ে নানা রঙে-ঢঙে নিজেকে সাজিয়ে তুললেই ‘সমাজ সচেতন’ হওয়া যায়না। অনেক তো হল, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ধোঁয়া তোলা। এখন একটু নিজের দিকে তাকান। ১২% মানুষের মন রাখতে গিয়ে ৮৮% মানুষকে যে উদ্বাস্তু করে দিচ্ছেন, সে খবরটাও তো ব্রেকিং নিউজের থেকে কম না। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.