আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আত্মবিশ্বাস ফিরে পাওয়ার দিন

শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে চিরচেনা সে দৃশ্যটি আর নেই। চারদিকে সুনসান। স্টেডিয়ামের গেটে নেই দর্শকের লম্বা লাইন। অলসভাবে সময় কাটাচ্ছেন নিরাপত্তাকর্মীরা। প্রয়োজনের তাগিদে রাস্তা দিয়ে পথচারীরা হাঁটছেন ঠিকই কিন্তু স্টেডিয়ামের দিকে যেন কেউ তাকাচ্ছেনই না।

হয়তো ব্যস্ততার তাগিদে, নয় তো পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বেদনাদায়ক হারে ক্রিকেটের প্রতি অভিমান! স্টেডিয়ামে চলছিল ভারত-আফগানিস্তান ম্যাচ। গ্যালারিতে হাতে গোনা দর্শক। অথচ আগের ম্যাচে এই ভারতের সমর্থনেই স্টেডিয়ামে ছুটে এসেছিলেন হাজারো ভক্ত। কত উচ্ছ্বাস, কত উন্মাদনা। সব উত্তেজনাই যেন মাটি হয়ে গেছে পাকিস্তানের কাছে টাইগারদের পরাজয়ে!

নিকট অতীতে শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের এমন করুণ দৃশ্য চোখে পড়েনি।

কাল স্টেডিয়ামপাড়ার নীরবতা-নিস্তব্ধতার মধ্য দিয়েই ফুটে উঠেছিল ক্রিকেটভক্তদের বেদনার ছবি। চারদিকে শুধুই হাহাকার। টাইগারদের হারের মধ্য দিয়ে যেন রঙ হারিয়ে ফেলেছে এশিয়া কাপও। ফাইনালের আগেই দুটি ম্যাচ হয়ে গেছে নিছক আনুষ্ঠানিকতা। তার একটি কাল হয়ে গেছে।

আরেকটিতে আজ শ্রীলঙ্কার মুখোমুখি হচ্ছে বাংলাদেশ।

'অজেয়' শ্রীলঙ্কা আজকের ম্যাচটিকে ফাইনালের আগে ওয়ার্মআপ হিসেবে ধরে নিতেই পারে। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে নামার আগে নিজেদের ঝালিয়ে নেওয়া আর কী! তবে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ যেভাবে গর্জে উঠেছিল তাই টাইগারদের আর হালকাভাবে নেওয়ারও কিছু নেই। হয়তো নেবেনও না লঙ্কান অধিনায়ক অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস। কেননা এবারের পুরো সফরে এখন পর্যন্ত পরাজয় তাদের স্পর্শ করতে পারেনি।

বাংলাদেশের বিরুদ্ধে টানা টেস্ট, টি-২০ ও ওয়ানডে সিরিজ জয়ের পর এশিয়া কাপে টানা তিন জয়। তাই আজ ম্যাথুস কোনোক্রমেই চাইবেন না এ আনুষ্ঠানিকতার ম্যাচে হেরে তাদের টগবগে আত্দবিশ্বাসের অগি্নগিরিতে একটুখানি স্থিতি আসুক। বরং লাভার উদ্গিরণ যাতে আরও বৃদ্ধি পায় জিতে সে কাজটাই করবেন তিনি।

ক্রিকেট একটা 'মাইন্ড গেম'! একেকটি পরাজয়ে নিজের আত্মবিশ্বাসে যেমন আঘাত লাগে, তেমনি প্রতিপক্ষের মনোবল বাড়িয়ে দেয় বহু গুণ। তার পরেও ফাইনালের কথা চিন্তা করে আজকের ম্যাচে সেরা তারকাদের বিশ্রাম দিতে পারে শ্রীলঙ্কা।

তবে মাঠের লড়াইয়ে যে তারা বাংলাদেশকে এতটুকুও ছাড় দেবে না তা তো জানা কথা!

পাকিস্তানের বিরুদ্ধে হেরেছে বলেই যে টাইগারদের সব কিছু শেষ হয়ে গেছে তা তো নয়। হয়তো এশিয়া কাপের রঙ পাল্টে গেছে। তাই বলে ম্যাচটা কিন্তু মুশফিকদের কাছে নিছক আনুষ্ঠানিকতার নয়। আন্তর্জাতিক প্রতিটি ম্যাচই মহাগুরুত্বপূর্ণ। তা ছাড়া প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কা বলেই রয়েছে সম্ভাবনার অনেক জায়গা।

বাকি রয়েছে অনেক হিসাব-নিকাশও। ঘরের মাঠে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে একের পর এক পরাজয়ই তো টাইগারদের আত্দবিশ্বাসে চপেটাঘাত করেছে। মুশফিকদের ধারাবাহিকতা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন সমালোচকরা। গত দুই বছরে একটু একটু করে বাংলাদেশ যে ওয়ানডেতে পরাশক্তিতে পরিণত হতে যাচ্ছিল তা থামিয়ে দিয়েছে লঙ্কানরাই। যে দলটি আগের সিরিজেই নিউজিল্যান্ডের মতো দলকে 'বাংলাওয়াশ' করেছে তারাই কি না হয়ে গেল 'লঙ্কাওয়াশ'।

তাই শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে এ ম্যাচটি হতে পারে হারানো বিশ্বাস ফিরে পাওয়ার ম্যাচ। এ ম্যাচে প্রত্যাশার কোনো চাপ নেই। হারানোরও কিছু নেই। তবে প্রাপ্তির অনেক কিছুই আছে।

সপ্তাহখানেক পরেই শুরু হচ্ছে টি-২০ বিশ্বকাপ।

তাই এ ম্যাচে লঙ্কানদের হারাতে পারলে টাইগারদের আত্মবিশ্বাসের পালে নতুন করে হাওয়া লাগবে। সে জন্য অতীত ভুলে আজ নতুন করে জেগে ওঠার দিন। শেষ ম্যাচে অবশ্য মুশফিকরা ভালো কিছু করার ইঙ্গিতও দিয়েছেন। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ম্যাচটি যে শুধু হতাশাই বাড়িয়েছে তা তো নয়, প্রাপ্তিও ছিল অনেক। দলীয় সর্বোচ্চ রানের নতুন রেকর্ড তো বটেই, এ ম্যাচে বাংলাদেশ ফিরে পেয়েছে মনোবলও।

সাকিব নিষেধাজ্ঞার কবল থেকে ফিরেই যেন দলকে দারুণভাবে উজ্জীবিত করেছেন। ক্রিকেটারদের শরীরী ভাষায় এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। সবার মাঝে আবারও সেই লড়াকু মনোভাবটা ফিরে এসেছে, যা গত কয়েক ম্যাচে দেখা যায়নি। তাই শ্রীলঙ্কাকে হারিয়েই হয়তো আবারও স্বরূপে ফিরবে টাইগাররা। নতুন করে উজ্জীবিত হবে পুরো দেশ।

তাই আজকের দিনটা হোক মুশফিকদের আত্মবিশ্বাস ফিরে পাওয়ার দিন।

 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।