আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কবুতর ফারুক

ছেলেটি ডান হাতের তর্জনি দিয়ে নাক খুঁটতে খুঁটতে আমাকে জিজ্ঞেস করল, আপনের নাম কবুতর ফারুক?
আমি খেয়াল করলাম নাকের ময়লা সে তার পিরানে মুছল। ভেজাল। আমি উত্তর না দিয়ে বললাম, পাকশালায় তোর কি কাম?
ছেলেটি বলল, আমি ময়দা মাখি। নান রুটির ময়দা।
মুখটা তিতা হয়ে গেল আমার একটু।

নানরুটি আমার অতি পছন্দের খাবার। কালকে রাতেও খেয়েছি পাঁচটা। সাথে যে পেটে এই ছেলের নাকের হিঙের তবারক গেছে এইটা এখন বুঝলাম। নাহ শান বাহাদুর কিল্লায় আর নান খাওয়া যাবেনা।
ছেলেটি আবার জিজ্ঞেস করল, আপনের নাম কবুতর ফারুক ক্যান? আপনে কি কবুতর রান্ধেন?
হা হা করে হেসে উঠলাম আমি।

পাশে একটা ইটের টুকরা রাখা, সেইটাতে উবু হয়ে বসে বললাম, কবুতর রান্ধি না রে বুরবক। কবুতরের খেল দেখাই আমি। কবুতরের খেল দেখছস কখনো?
ছেলেটির চোখ জ্বলে উঠল উত্তেজনায়, দেখি নাই কবুতরের খেল। আমারে দেখাইবেন?
নবাব সায়েবরে দেখামু বিকালে। উই মাঠে।

আহিছ।
দাঁত দেখিয়ে হাসল ছেলেটি, বলল বিকালেই যামু। আইচ্ছা কবুতরের খেল দেখাইলে নাম পাল্টায় কবুতর রাখতে হয়? আপনের নাম কবুতর ক্যান?
আমি গম্ভীর হয়ে মাথা নাড়লাম, এইটা হইল সম্মানের ব্যাপার। রাজা চোগান সিং রে আমি কবুতরের খেল দেখাইছিলাম যখন আমার বয়েস পনেরো। সেই খেল দেইখা খুশী হইয়া রাজা আমার নাম ফারুক থেইকা কবুতর ফারুক বানায় দিছে।

এরম তকমা যারে তারে মানুষ দেয় না রে। তোর নাম কি?
সেলিম।
সেলিম। আচ্ছা। সেলিম মনে কর তুই এত ভালো ময়দা মাখা শুরু করলি যে শান বাহাদুর কিল্লার সবাই তোরে ময়দা সেলিম নামে ডাকতে থাকল।

দারুণ হইব না জিনিষটা?
ছেলেটি মুখ শুকনা করে বলল, ময়দা সেলিম?
ময়দা সেলিম। কারণ তুই দুনিয়ার সেরা নান রুটির ময়দা মাখাস। সেইরকম ব্যাপার।
ময়দা সেলিম নামটা ভালো হয়নাই, ছেলেটি মাথা নেড়ে বলল, তকমা দিলে দেন বাঘা সেলিম। মাইনসে ভয় পাইব শুনলে।


আমি আবারও হা হা করে হেসে দিলাম। মজার আছে ছোকরা। একেই সাথে রাখা যাক। মাত্র দুইদিন আগে কিল্লায় এসেছি, কালকের মধ্যেই কাজ সমাধা করে দ্রুত সটকে পড়তে হবে। কিল্লার ভিতরে একটা লোক দরকার।

আমি সেলিমকে বললাম, কিল্লার উইদিক কি আছে জানোস?
হ। ঢাল।
ঢাল? আচ্ছা। গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। ঢাল দেখে আসা জরুরি।

সামনের দিক মোটামুটি মাথায় আছে, এঁকে ফেলা যাবে। পিছন দিকটা দেখা হয়নি এখনো। আমি উঠে সেলিমকে বললাম, দেখি কেমন বাঘা সেলিম হইছস। আমারে কিল্লাটা ঘুরায় দেখা চল।
আমরা দুইজন হাঁটতে হাঁটতে এগোতে থাকলাম।

ভারি চমৎকার বাতাস দিচ্ছে, বাগানের ঘাসে পানি দিতে ব্যস্ত মালির দল। একটু দূরে তেলের ভাণ্ড সামনে রেখে দুই উড়ে ব্যাপক ঝগড়া করছে। বিশেষত্বহীন এক দুপুর। পরশুদিনই সব ফানা ফানা হয়ে যাবে, ভেবে আমি একটু শ্বাস ফেললাম। সেলিম জিজ্ঞেস করল, আপনের কবুতর কয়টা?
তিনটা।

গুলজার, পেয়ারিজাদ আর আলমাস। আরো কবুতর আছে, আনিনাই ঐগুলি।
আলমাস আবার কেমন নাম?
আলমাস খুব ভালো নাম। আলমাস মানে হীরা। হীরার টুকরা কবুতর একটা।

এক টানে দশ চক্কর আর দুই কুড়ি বাজি দিতে পারে আলমাস।
দশ চক্কর আর দুই কুড়ি বাজি মানে কি?
ততক্ষণে আমরা কিল্লার পিছন দিক চলে এসেছি। আমি উত্তর না দিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগলাম। ঢালই বটে। বেশ গভীর খাদ।

তারপরে উঁচা পাঁচিল। এক কোণায় একসারি ঘর। মালিদের ঘর হয়তো। কোন চৌকিখানা দেখা যাচ্ছে না। খাদের কিনারে এক দেহাতি দেখলাম বদনা হাতে যাচ্ছে হাগতে।

আচ্ছা। সুতরাং শুধু গভীর খাদই নয় গু ভরা খাদ। বেশ বেশ।
আমি সেলিমকে জিজ্ঞাসা করলাম, পাইক লস্করের ঘর বুঝি ওগুলি?
না, মাথা নেড়ে সেলিম বলল, পাইক থাকে উইদিকে। গোলাঘরের পাশে।


এইদিক পাইক পাহারা দেয় না?
না। মাঝে মাঝে খালি পিশাব করতে আসে। উইদিক ভাঙ্গা দেওয়ালে।
ভাঙ্গা দেওয়াল? আমি মাথা ঘুরিয়ে সেলিমের দিকে তাকালাম সে কোনদিকে ইশারা করছে দেখতে, কোনদিকে ভাঙ্গা দেওয়াল?
উই বাড়ির পিছে। সবাই পিশাব করতে যায়, পিশাব বাইয়া বাইয়া পাহাড় দিয়ে নাইমা যায়।

গন্দো!
আমি মনে মনে টুকে নিলাম সকল তথ্য। মন্দ নয়।
…………………………………………………………………………
বিকেল।
খোপ থেকে তিন কবুতর বের করে পিঁজরায় ঢুকিয়ে আমি এগুতে থাকি মাঠের দিকে। খেলা দেখানোর সময়।

কোণায় দেখলাম মেলা লোক, আমাকে দেখে সকলে সসম্মানে জায়গা করে দিল। দেখলাম জাজিম পাতা গাছের তলায়। দুইপাশে চালের বস্তার মত ঢাউস তাকিয়া। তাইতে হেলান দিয়ে তরুণ নবাব আজিমুশশান রূপার পাত্রে শরাব গিলছেন। চোখ লাল।

আমাকে দেখে হলদে দাঁত বের করে হেসে বললেন, এই যে কবুতর ফারুক। সেই সক্কাল থেকে বসে আছি ইশকবাজি দেখার জন্যে। দেখাও দেখাও জলদি দেখাও কেমন তোমার তেলেসমাতি।
ইশকবাজি নামটা আকবর বাদশার চালু করা। ভালোবাসাবাসি।

আমি পিঁজরা থেকে পেয়ারিজাদকে বের করলাম। হাতের উপর রেখে কইলাম হুজুর, এই আমার পয়লা কবুতর। এর নাম পেয়ারিজাদ। বলখ এলাকার পক্ষী এইটা, কিসমিসি রঙ। এর বয়স দেড় বচ্ছর।

আজকে এ আপনাদের চক্কর বাজির খেল দেখাবে। হুজুর কি হাতে নিয়ে দেখবেন?
নবাব আজিমুশশান হাত বাড়িয়ে দিলেন। আমি সাবধানে একটা চামড়ার টুকরা তালুর উপর বেঁধে সেখানে পেয়ারিজাদকে বসালাম। পেয়ারিজাদের নখ তেমন লম্বা নয়, বিঁধার কথা না। কিন্তু এই নবাব রাজা মহারাজাগুলা সাধারণত মেয়েলি স্বভাবের হয়, একটু ব্যথাতেই খনখন করে ওঠে।

ঝুঁকি নিয়ে লাভ নেই তাই চামড়ার উপরেই বসালাম।
নবাব হাতে নিয়ে আদর করতে করতে বললেন, ভারি নরম পালক তো।
নরম লাগে বটে, কিন্তু খুব শক্ত এদের পালক হুজুর। বাজির খেল দেখানোর সময় এদের মাথা উলটা করে পাক দিতে হয়, নরম পালকে ঐ হয় না।
আচ্ছা বেশ, হাত বাড়িয়ে পাখি ফেরত দিলেন আমাকে নবাব, দেখাও কেমন বাজির খেল পারে পেয়ারিজাদ।


আমি কবুতরের মুখ একদানা খুদ দিয়ে বিশেষ সঙ্কেত দিয়ে উড়িয়ে দিলাম। পেয়ারিজাদ শুরু করল খেল। উড়তে উড়তে আবার ফিরে আসে, মাঝ আসমানে হঠাৎ চক্কর দেয় ডাইন থেকে বামে। আমি সাঙ্কেতিক শিষ দিলাম, শুনে পেয়ারিজাদ এগুতে এগুতে হঠাৎ মাথা নিচে পা উপরে দিয়ে আবার নেমে আসে স্বাভাবিকভাবে। সেই দেখে জনতার সে কি হই হুল্লোড়।

হাততালি দিয়ে ওঠেন নবাব, বলেন বহোৎখুব পেয়ারিজাদ, বহোৎখুব! এই বুঝি বাজির খেল?
আমি মাথা নাড়লাম। এই ই বাজির খেল।
আরো সতেরোটা চক্কর আর সাতটা বাজি দেখিয়ে নেমে আসে পেয়ারিজাদ আমার হাতে। আদর করে আরেকটা খুদ খাইয়ে দিলাম তাকে। নবাব কইলেন, অন্য কবুতরের খেল দেখাবে না ফারুক?
আমি পিঁজরা থেকে আলমাসকে বের করে আনলাম।


……………………………………………………………………
রাত।
রঙিন পুলাউ দিয়ে মাখামাখি কাবাবের তরকারি খেয়ে পেট এক্কেবারে ভরা। বাইরে দাওয়ায় বসলাম একটু হাওয়া খেতে। চাঁদের আলো আছে অল্প। বৃষ্টি হবে বুঝি, কেমন ভেজা বাতাস।

ভারি আরাম।
পাশে এসে কেউ দাঁড়ালো, কি হে কবুতর ফারুক, খানাদানা হল?
আমি তাকিয়ে দেখি নবাবের দেওয়ান গোলাম হোসেন। শশব্যস্তে উঠে দাঁড়ালাম, জ্বী হুজুর। খানা শেষ।
বসো বসো।

ভারি চমৎকার তোমার কবুতর, পেয়ারিজাদ আর আলমাস। লা জওয়াব। যা চক্করবাজির খেল দেখালো আমি তো মুগ্ধ। তবে পেয়ারিজাদ কয়টা কাতিফ দিয়েছিল কিন্তু, চক্কর হয়নি।
আমার মাথায় টংটং ঘন্টা বেজে উঠলো।

এই লোক কাতিফ চেনে? আমি তো ভেবেছি নবাবের গুষ্টিসুদ্ধা মহামুর্খ। কাতিফ মানে হল কাঁধ। কবুতরের চক্কর যখন পুরো হয়না, মাঝপথে বৃত্ত ভেঙে যায়, তাকে বলে কাতিফ। পেয়ারিজাদ দুইটা কাতিফ দিয়েছিল ঠিকই। আমি শুকনা মুখে বললাম, কই না তো।

সবগুলিই পুরা চক্কর দিয়েছে তো। মাঠে কত লোক দেখল চক্করবাজি কেউ তো কাতিফ কইল না।
হ্যাঁ তা বটে, মাথা নেড়ে দেওয়ান বললেন, আমার দেখার ভুল হতে পারে। এত দ্রুত ওড়ে তোমার পেয়ারি। আচ্ছা যাক, বাদ দাও।

তা বলো দেখি ফারুক, তিন নম্বর কবুতর খেলা দেখালো না যে?
আমি একটু চিন্তা করে বললাম, গুলজারের বুখার হুজুর। খেল আজকে হত না।
ওহোহো, বুখার তো বড় খারাপ জিনিস। ভালো যত্ন নাও তোমার গুলজারের। আমাকে জানিও কিছু লাগলে।


বলে তিনি উঠে পড়লেন। তারপর পিছন ফিরে হঠাৎ মনে পড়েছে এইভাবে বললেন, আচ্ছা গুলজার তো রথ কবুতর তাইনা?
আমার বুক ধড়াস ধড়াস করতে লাগল। আস্তে করে আমি বললাম, জ্বী হুজুর।
হেসে ফেরার পথ ধরলেন দেওয়ান। আমি স্পষ্ট দেখলাম তার চোখ হাসছিল না।


সর্বনাশ!
……………………………………………………………………
পরদিন ভোর।
সারারাত ঘুমাইনি। এই লোক কতদূর বুঝেছে? দ্রুত কাজ সারতে হবে, সময় নেই। ভেবেছিলাম সারাদিন সময় আছে, আস্তেধীরে নকশা আঁকা যাবে। সেইটা আর বুদ্ধিমানের কাজ নয়।

কাজ সারতে হবে এখনই। কাগজ আর কাঠকয়লা নিয়ে বসি বরং।
তাড়াহুড়োয় কিল্লার নকশা আঁকতে আরো বেশী সময় লাগল মনে হচ্ছে। যাকগে কি আর করা। কাজ শেষ সেটাই আসল কথা।

কাগজ চোদ্দ ভাঁজ করে বাম হাতের মুঠোর মধ্যে নিয়ে বেরুলাম দাওয়ায়। খোপের ভিতর গুলজার একদৃষ্টে চেয়ে আছে আমার দিকে। আমি হাতে নিয়ে একদানা খাবার দিলাম। হিন্দুস্তানের সেরা রথ পায়রা গুলজার। এর রঙ ফিকে নীল, গলার দিকটা সাদা।

ঠাস করে দেখলে পত্রবাহক রথ জাতের কবুতর বুঝতে পারার কথা নয়। দেওয়ানের চোখ আছে বলতে হবে।
পায়ের আংটায় চিটঠি বেঁধে উড়িয়ে দিলাম গুলজারকে। ডানা ঝাপটে উড়ে চলে গেল গুলজার। আমি দাওয়ায় বসে রইলাম।


…………………………………………………………………………
বিকেল।
সেলিম পেয়ারা খেতে খেতে জিজ্ঞেস করল, পাখিরে খেল কেমনে শিখাইছেন? পাখি ডিগবাজি শিখল কেমনে?
মাথার ভেতর একশটা জিনিস ঘুরছে। এই সময় এরকম বোকার মতন প্রশ্নে আমার বেশ আরাম লাগল। গুষ্টি মারি চিন্তাভাবনার, যা হয় হবে। বসে বসে সেলিমের সাথে গপ করি।

আমি তার দিকে তাকিয়ে বললাম, খেল শিখাইতে হয় ছুটোকালে। আধাবেলা একবেলা খাওয়াইতে হয় পয়লা মাস, পেটে খিদা থাকলে কথা শুনে। মাসখানেক বয়স যখন তখন এরে হাওয়ায় উড়াই। চক্কর বাজি কিসসু পারেনা তখন, খালি এদিক ওদিক বেতাল উড়ে। তারপরে হাঁপায় গিয়া পরে আর উড়তে পারেনা।


কন কি?
হুমম। তখন গুইণা দেখতে হয় পালক সবডি আছে কিনা। আট/নয়টা পালক পইড়া গেলে তখন আবার খাঁচায় রাইখা মাস দুয়েক দুইবেলা খাওয়াই। এরপরে পালক আবার নতুন কইরা গজায়। এই পালক হইল শক্ত পালক।

তখন ডিগবাজি শিখাইতে হয়।
এমন সময় ডানা ঝাপটে গুলজার এসে হাজির হয় আর আমার পায়ের কাছে এসে বসে। সেলিম হাততালি দিয়ে ওঠে, এই যে ফিরত আইছে। আমি তো ভাবছি হারায় গেছেগা। সেই সকালবেলায় উড়াইছিলেন।


আমি গম্ভীর হয়ে গুলজারকে হাতে নিলাম। পায়ের আংটায় কিছু বাঁধা নেই। আজ রাতেই তাহলে সরদার দোস্ত মোহাম্মদ হামলা করবে শান বাহাদুর কিল্লা। দ্রুত সরে পড়তে হবে। খুব দ্রুত।

কিন্তু দিনের আলোয় নয়, রাত ঘনালে পরেই। দেওয়ানের লোক ক্যাঁক করে ধরবে এখন গাট্টিবোঁচকা নিয়ে বের হলে।
এই কবুতরের নাম গুলজার ক্যান?
সেলিমের প্রশ্নে আমি ঘুরে তাকালাম। কালকে এই সময় এই ছেলের লাশ হয়তো ঝুলবে ডাবগাছের ডগায়। খারাপই লাগছে।

আমি জিজ্ঞেস করলাম, সেলিম তুই কার লগে থাকছ? তোর বাপ কি করে?
বাপ মা নাই। ভাই একটা ছিল গত বছর মইরা গেছে। বাবুর্চি জলিল আমার বাপেরে চিনত। হে কইছে আমার বাপজানে নাকি কাবুল থাকে। কাবুল চিনেন?
কাবুল।

হ চিনি। খুব ঠাণ্ডা। শীতকালে বিষ্টির মত বরফ পড়ে আকাশ থিকা।
চোখ গোল গোল হয়ে গেল সেলিমের, সত্য? এতো ঠাণ্ডা? মাইনষে কি লেপ মুড়ি দিয়া হাঁটে রাস্তায়?
হা হা করে হেসে উঠলাম আমি। তারপরে নিজেকেই আশ্চর্য করে দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, আমি কাবুলের দিকেই যাইতেছি।

লম্বা রাস্তা। যাবি আমার লগে?
কেন এই কাজ করলাম আমি ঠিক নিশ্চিত নই। একা থাকি, একাই তো ভালো। নতুন যন্ত্রণার কোন দরকার ছিলনা। হুট করে এই কাজ করা মনে হয় ঠিক হয়নাই।

আবার আরেকদিকে চিন্তা করলে মনে হয় যাক কবুতর গুলি দেখাশুনা করার মত একটা পিচ্চি থাকলে ভালোই হয়। এই ছেলে কিল্লায় থাকলে মারা যাবে খুব সম্ভব, তার চেয়ে নিয়ে যাই পরে ভাগায় দেওয়া যাবে।
সেলিম দাঁত বের করে হেসে বলল, যামু!
…………………………………………………
রাত।
কিল্লার পশ্চিম দিকের ছোট দরজার বাইরে গাছের তলায় দাঁড়িয়ে আছি কিছুক্ষন হয়। কবুতরগুলি আওয়াজ করছে, দাঁড়িয়ে থাকা নিরাপদ না।

আমি অন্ধকারে আরেকটু ঘেঁষে দাঁড়ালাম। আস্তে করে হৈ হৈ শব্দ শুনা গেল কি?
ভালো মত তাকিয়ে দেখলাম দূরে আলো দেখা যাচ্ছে একঝাড়। মশাল হাতে হামলা করতে আসছে দোস্ত মোহাম্মদের বাহিনী। আমার কাজ শেষ, এইবার জান নিয়ে পালানো যাক। কিন্তু সেলিম ছোকরা কই?
দরজা বন্ধ করে দিচ্ছে দেখি কিল্লার।

আচ্ছা, আর অপেক্ষা করে ফায়দা নাই। যাই হাঁটা ধরি। বহুদূর পথ পাড়ি দিতে হবে, এক রাতের হাঁটা নয়। দেরি করে লাভ নাই।
এগুতে নিয়েছি, এমন সময় শুনি পিছনে কেউ আসছে।

আমি কোমরবন্ধে রাখা ছুরিতে হাত দিয়ে নিঃশব্দে ঘুরে তাকালাম।
সেলিম।
হাঁপাতে হাঁপাতে সে বলল, আমগোরে মারতে আসতেছে। লন পলাই। পলায় কাবুল যাই।

পুরা রাইত হাঁটলে সকালবেলা কাবুল গিয়া পৌঁছাইতাম না?
আমি অন্ধকারে দাঁত বের করে হেসে দিলাম।

সোর্স: http://www.sachalayatan.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।