আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বৈদ্যুতিক দাম

আবার বিদ্যুতের দাম বাড়ছে- এমন একটা খবর শোনার পর থেকেই আমার পরিচিত এক দম্পতির মধ্যে কথা কাটাকাটি শুরু হয়ে গেছে। স্বামীটা কথায় কথায় আফসোসসূচক লম্বা নিঃশ্বাস ফেলে বলছে_বিদ্যুতের ভাগ্য দেখে বড়ই হিংসা হয়। কয়দিন পরপর বিদ্যুতের দাম বাড়ে। অথচ আমার পোড়া কপাল। আমার দাম তো বাড়েই না, বরং দিন দিন কমে।

মানুষ না হয়ে যদি বিদ্যুৎ হয়ে জন্মাতাম! তার কথায় তার বউয়ের প্রতিক্রিয়া এমন_তুমি বিদ্যুৎ হয়ে জন্মালেই তোমাকে আমি বাড়তি দাম দিতাম, এমনটা ভাবার কোনো কারণ নেই। প্রয়োজনে বিদ্যুতের বদলে হ্যারিকেন ব্যবহার করতাম, বুঝছো? বিদ্যুতের দাম বাড়ার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর নানা মহলে আরও নানা প্রকারের আলোচনা সমালোচনা শুরু হয়ে গেছে। আমি যে বিল্ডিংয়ে থাকি, সেই বিল্ডিংয়ের সিঁড়িতে একাধিক লাইট। এই লাইটগুলো সন্ধ্যায় জ্বালানো হয়, সকালে নেভানো হয়। যাতে সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করতে কারও কোনো সমস্যা না হয়, এ জন্য এই ব্যবস্থা।

কিন্তু ওইদিন বিদ্যুতের নাম বাড়ানোর খবর শুনে বাড়িওয়ালা ধনুকের মতো বেঁকে বসল। এখন থেকে সিঁড়ির লাইট সন্ধ্যার পরপরই নিভে যাবে। বাড়িওয়ালার সিদ্ধান্ত মোতাবেক কাজ হবে, এটাই স্বাভাবিক। পরশুদিন রাতে সিঁড়িতে হইচই শুনে বাইরে বের হয়ে শুনি আমার উপরতলার ভাড়াটিয়া উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় করছে বাড়িওয়ালার সঙ্গে। জানতে পারলাম অন্ধকারে সিঁড়ি দিয়ে ওঠার সময় সিঁড়িতে উষ্ঠা খেয়ে ভাড়াটিয়ার জুতা ছিঁড়ে গেছে।

বাড়িওয়ালার শক্ত অবস্থান-যত কাহিনীই শোনান, সিঁড়ির লাইট সন্ধ্যার পরপর বন্ধ হয়ে যাবেই। যেহেতু অন্ধকারে উষ্ঠা খেয়ে জুতা ছিঁড়ে যাচ্ছে, অতএব এখন থেকে যেটা করতে পারেন, জুতা খুলে হাতে নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করতে পারেন। গতকাল শুনি আরেক কেওয়াজ। আর এই কেওয়াজের হোতা স্বয়ং বাড়িওয়ালা। অন্ধকারে জুতা হাতে নিয়ে উঠতে গিয়ে জুতার তলায় লেগে থাকা জৈবসার দিয়ে কে বা কারা নাকি সিঁড়ির দুই পাশের ওয়ালের বারোটা বাজিয়ে ফেলেছে।

কে এই কাজ করেছে, এটা জানার জন্য বাড়িওয়ালা এখন ভালো কবিরাজ খুঁজছেন। উনি নাকি বাটিচালান দেওয়াবেন। তো বিদ্যুৎ বাড়ানোর খবরকে ইস্যু করে এই যে একের পর এক ঘটনা ঘটে যাচ্ছে, এসব ঘটনার শেষ কোথায় হয়তো জ্যোতিষীরাও জানে না। গতকাল একজন বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর বিষয়টাকে খুবই ইতিবাচক হিসেবে উপস্থাপন করল। তার কথা হচ্ছে, আরেক দফা বিদ্যুতের দাম বাড়লে আমাদের সামাজিক বন্ধনটা আরও মজবুত হবে।

আমরা একজন আরেকজনের বাসায় যাওয়া আসা বাড়িয়ে দেব। আমি বিস্ময়ের সহিত জিজ্ঞেস করলাম_কীভাবে? লোকটা বলল_দাম বাড়ার কারণে কেউ নিজের বাড়িতে মোবাইল ল্যাপটপ চার্জ দিতে চাইবে না। এই উসিলায় সেই উসিলায় অমুক তমুকের বাড়ি চলে যাবে মোবাইল ল্যাপটপ চার্জ দেওয়ার জন্য। যার মোবাইলে চার্জ বেশিক্ষণ থাকে না, সে হয়তো ঘন ঘন অমুক তমুকের বাড়ি যাবে। তার বন্ধনটা আরও সুদৃঢ় হবে।

আমি তার কথায় খুব চমক আশা করেছিলাম। কিন্তু তার চমকহীন সাদামাটা কথা শুনে হতাশ হয়ে বাসার দিকে হাঁটা দিলাম। তখন সন্ধ্যা হয় হয়। আমার মনে তখন ব্যাপক ভয়। আগে সন্ধ্যার পর ছিনতাইকারীর ভয় কাজ করত।

এখন ভয়- তাড়াতাড়ি বাসায় না গেলে বাড়িওয়ালা যদি সিঁড়ির লাইট বন্ধ করে দেয়! যদি উষ্ঠা খেয়ে জুতা ছিঁড়তে হয়! যদিও আমার জুতার সোল শক্ত আছে। ডাবল পিন মারা।

 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.