আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গভীর খাদ্যসংকটে পড়তে যাচ্ছে দক্ষিণ সুদান




দক্ষিণ সুদানের জাতিগত দাঙ্গায় তীব্র খাদ্য সংকটে পড়তে যাচ্ছে দেশটি। সম্প্রতি ইউনিসেফ জানিয়েছে, পৃথিবীর মানচিত্রে নবীন এ রাষ্ট্রটির প্রায় ৩৭ লাখ মানুষ মারাত্বক খাদ্যঝুঁকিতে রয়েছে। গত ১৫ ডিসেম্বর প্রেসিডেন্ট সালভা কিরকে ক্ষমতাচ্যুত করতে ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানের চেষ্টার পর নবীন এ রাষ্ট্রটিতে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। এর ফলে প্রায় ৯ লাখ মানুষ উদ্বাস্তু হয়েছে, যাদের মধ্যে অর্ধেকের বেশি শিশু। জরুরি কোন ব্যবস্থা না নেওয়া হলে দেশটি ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি হতে পারে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।



প্রায় ৯০ লাখ জনগোষ্ঠীর খ্রিস্টান অধ্যুষিত মধ্য আফ্রিকার এই দেশটির সরকারি নাম দক্ষিণ সুদান প্রজাতন্ত্র। দক্ষিণ সুদান নামের এ অঞ্চলটি পূর্বে ব্রিটিশ ও মিশরীয় যৌথ মালিকানাধীন অ্যাংলো-মিশরীয় সুদানের অংশ ছিল। ১৯৫৬ সালে তা সদ্য স্বধীনতাপ্রাপ্ত সুদান প্রজাতন্ত্রের অংশ হয়। ১৯৭২ সালে প্রথম সুদানী যুদ্ধের পর দক্ষিণ সুদান স্বসাশিত অঞ্চলে পরিণত হয়। এ অঞ্চলটির অস্তিত্ব ছিল ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত।

এরপর দ্বিতীয় সুদানী গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। এই যুদ্ধের শেষে ২০০৫ সালে সামগ্রিক শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। সেই বছরের শেষভাগে দক্ষিনাঞ্চলের স্বায়ত্ত্বশাসন ফিরিয়ে দেওয়া হয় এবং স্বশাসিত দক্ষিণ সুদান সরকার গঠিত হয়। অবশেষে ২০১১ সালের জানুয়ারি মাসে গণভোটে দক্ষিণের জনগণ শতকরা ৯৮.৮৩ শতাংশ ভোট দিয়ে উত্তর থেকে আলাদা হয়ে যাওয়ার পক্ষে মত দেন। ফলে ২০১১ সালের ৯ জুলাই পশ্চিমা দেশগুলোর সহযোগিতায় সাবেক সুদানের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করে দক্ষিণ সুদান।

নতুন জন্ম নেয়া এই দেশটির নাগরিকরা দীর্ঘদিন গৃহযুদ্ধে লিপ্ত ছিল। স্বাধীনতার বছর দুয়েকের মধ্যে আবারও সহিংসতায় ডুবে যাচ্ছে দেশটি। দেশটিতে এখন প্রেসিডেন্ট সালভা কির ও ভাইস প্রেসিডেন্ট রিক ম্যাচারের সমর্থকদের মধ্যে যুদ্ধ চলছে। প্রেসিডেন্ট সালভা কিরের দিনকা জনগোষ্ঠী দেশটিতে সংখ্যাগরিষ্ঠ। অন্যদিকে গত বছরের জুলাই মাসে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া রিক ম্যাচার নুয়ের জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি।

দিনকারা সংখ্যালঘু নুয়েরদের উপর হামলা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। গত ডিসেম্বরের মাঝামাঝি শুরু হওয়া এ সংঘাতে রিক ম্যাচারের অনুগত সেনারা রাজধানীর উত্তরের বোর, বেনতিউসহ আরও কিছু এলাকা দখলে নিয়েছিল। বেনতিউ হলো তেল-সমৃদ্ধ প্রদেশ ইউনিটি স্টেটের রাজধানী। প্রেসিডেন্টের অনুগত সেনারাও আবার সেগুলোর পাল্টা দখল নেয়।

সাম্প্রতিক এই সংঘাতের সূত্রপাত যেখান থেকে, সেই ১৫ ডিসেম্বর রাতে রাজধানী জুবায় প্রেসিডেন্ট সালভা কিরের ক্ষমতাসীন দল সুদান পিপলস লিবারেশন মুভমেন্টের (এসপিএলএম) বৈঠক চলছিল।

বৈঠকে রিক ম্যাচারের সমর্থক কিছু সশস্ত্র সেনাসদস্য গুলি চালায়। এরপর প্রেসিডেন্ট সালভা কিরের সমর্থকদের একটি অংশের সঙ্গে বিদ্রোহী সেনাসদস্যদের সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষের প্রথম দু'দিনেই সাধারণ মানুষসহ কমপক্ষে ৫শ' নিহত হয়। দীর্ঘ আড়াই মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা এ সংঘাতে এ পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা কয়েক হাজার।
প্রেসিডেন্ট কির অভিযোগ করেছিলেন, সরকারবিরোধী নেতা ও সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট রিক ম্যাচার সমর্থিত সেনাবাহিনীর একটি অংশ তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করতে অভ্যুত্থান ঘটানোর চেষ্টা চালায়।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে রিক ম্যাচার যদিও বলেছিলেন, তিনি ক্ষমতা দখল করতে চান না, কিন্তু পরবর্তীতে একটি সংবাদসংস্থাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে আবার ঘোষণা করেন, তিনিই হতে যাচ্ছেন দেশটির পরবর্তী প্রেসিডেন্ট। দুই পক্ষের লড়াই ধীরে ধীরে জাতিদাঙ্গায় রূপ নিচ্ছে।

এ সংঘাত বন্ধে জাতিসংঘ গত ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে সেখানে জরুরি ভিত্তিতে শান্তিরক্ষী বহিনীর সংখ্যা দ্বিগুণ করে। সংঘাত শুরু হওয়ার পরপরই সুদানের প্রেসিডেন্ট ওমর আল বশিরসহ আফ্রিকান দেশগুলোর নেতারা তা বন্ধে তৎপরতা চালান। কিন্তু তাতে খুব বেশি ফল হয়েছে বলে মনে হচ্ছে না।

দক্ষিণ সুদানসহ বিশ্বের শান্তিকামী মানুষ এখন তাকিয়ে আছেন আরব লীগের আগামি শীর্ষ সম্মেলনের দিকে।



 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।