আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

যেভাবে বাড়লো গণু মোল্লার ফলোয়ার

ঢেকে রেখো হিংস্র ঢাল তলোয়ার। সৈনিক, এবার কলম চালাও...

অবশেষে মালয় বিমান হারানোর রহস্য উদঘাটন করলেন আমাদের গণু মোল্লাহ।

গণু মোল্লা এর রহস্য জানে কথাটা বাইরে ছড়ানোর মতো না। কিন্তু কিভাবে কিভাবে জানি একান-ওকান হয়ে কথাটা কিভাবে মালয় বিমান কর্তৃপক্ষের নিকট চলে গেল তা ঠের পাননি গণু মোল্লা।

এই বিচিত্র দুনিয়ায় বিশাল বিশাল রহস্য যিনি চোখ বন্ধ করেই তার আদ্যোপান্ত বলে দিতে পারেন তিনি হচ্ছেন গণু মোল্লা।

তার সাক্ষাত দর্শনে, বিমান হারানোর রহস্য উদঘাটনে সূদুর মালয় থেকে উড়ে এলেন তিন গবেষক। তারা গণু মোল্লার বাড়ির আঙ্গিনায় প্রবেশ নিলেন।

উঠোনভর্তি মানুষ। সবাই এক মনে গণু মোল্লার ওয়াজ শুনছিল। গণু মোল্লা তিনজন গবেষকের উপস্থিতি ঠের পেয়ে শুরু করলেন তার মিহি কণ্ঠের ওয়াজ।

গম্ভীর গলায় বললেন, শ্রদ্ধেয় মুরুব্বীয়ানে কেরাম। তিনি থামলেন। থামার মানেটা এই যে, ওয়াজের একটি পরিবেশ তৈরী করা। ওয়াজ শুনে কেউ যেন উচ্চকন্ঠে কান্না জুড়ে না দেয় তজ্জন্য তিনি একবার সতর্কবানীও জারি করলেন।

খোদাতাআলার কুদরত মানুষের বুঝার কোন ক্ষমতা নেই।

দাড়িতে আলগোছ হাত বুলিয়ে তিনি আবার বিগত বাক্য পুনরাবৃতি করেন। খোদা তাআলার ভেদ তারই বান্দার পক্ষে বোঝা কতটুকু অসম্ভব তা তিনি বেশ ভালো করেই বুঝিয়ে বললেন। সুললিত কন্ঠে কুরআনের একটি আয়াত পাঠ করেন। “ সুম্মা আমানু, সুম্মা কাফারু (ঈমান আনো, অস্বীকার করো- সুরা কাহার)”। তার অর্থ-অনর্থ না বুঝেই আস্তে আস্তে মজলিশ ভর্তি অনুগামীগণ কান্নার আওয়াজ বাড়াতে থাকেন।



অন্যদিকে তিন গবেষককে গণু মোল্লার সাগরেদরা বিভিন্ন গল্প বলে বোঝানোর উপক্রম হয় যে, গণু মোল্লার পক্ষে ঐ বিমানের রহস্য উদঘাটন করা ব্যাপারই না। পানি-ভাত।

অতি আগ্রহে গণু মোল্লাকে নিয়ে যাওয়া হলো নাসায়। পেৌছেই আরবি-ফার্সি মিশ্রন করে শ্লীল- অশ্লীল ভাষায় গালি নাজিল করলেন নাসা কর্তৃপক্ষ বরাবরে। জানতে চাইলেন বিমানের পাইলট হিন্দু না মুসলিম? বিমানে বেগানা নারী ছিল কি না? বিমানের ককপিটে যানবাহন চলাচলের দোয়া খোদাই করে লিখা ছিল কিনা?

সব প্রশ্নের উত্তর যখন অনুকুলে ছিল না তখন গণু মোল্লা সবাইকে চোখ বন্ধ করার নির্দেশ দেন।

খানিকক্ষণ পরে এক অভিনব ভঙ্গিতে গণু মোল্লা তার মিহি সুরে সুরা রাহমানের (আয়াত-৩৩,৩৪,৩৫) একটি আয়াত সবাইকে পড়ে শুনালেন।

যার বাংলা মমার্থ হলো এই যে, ‘কেউ যদি আকাশ সীমা অতিক্রম করতে চায়, তবে করে দেখুক না। সে পারবে না। তাকে আগুনের ধোয়ার সাথে মিশিয়ে দেওয়া হবে। ‘

বিমান ভ্যানিস- সিদ্ধান্ত দিলেন গণু মোল্লা।

বিমান ধোয়ার সাথে মিশে গ্যাছে!!

হুজরের লালা ঝড়া রোগ থাকার কারণে নাসা প্রধান মিস লিন্ডা কুরেটন ওরফে তেতুলসকে হুজুরের নির্দেশে আগে থেকেই সরানো হয়েছে।

সহ প্রধান মিষ্টার ট্রয় জেসিন্ঝ হুজুরের পায়ে ধরে কান্নাকাটি শুরু করে দিলেন। হুজুর এখন কি হপে গো? বিমানে ২৬০ জন যাত্রী ছিল, যাত্রীদের বাপ-মা কতটুকু কষ্ট পাচ্ছেন তা গণু মোল্লাকে বুঝানোর চেষ্টা করা হলো। কিন্তু গণু মোল্লার এক ধমকেই সব চেষ্টাই ব্যর্থ হলো।

গণু মোল্লা হাতের ঈশারায় পানি চাইলেন।

নিয়ে আসা হলো কারুকার্যে খচিত একটি গ্লাসে করে পানি। গণু মোল্লা এবার ডান হাতের তসবিটা বাম হাতে নিয়ে আরবি ভাষায় বললেন, যারা সাধারণ আমার ভাষাই বুঝে না তারা বুঝবে আল্লাহ তাআলার ভাষা? অজুর পানি চাইছি, খাবার পানি না। নাসিরেকের দল!!

তিনি ওজু করলেন। নামাজ পড়লেন। সিজদায় পড়ে খোদার নিকট ব্যাপক কান্নাকাটি করলেন।

সিজদায় থাকাবস্থায় হঠাত চিতকার করে ওঠলেন, ইউরেকা, ইউরেকা, পাইচি, পাইচি। কেউ একজন কি পাইছেন জানতে চাইলে গণু মোল্লা তাকে কাফের নাসিরিক, তুই কি বুঝবে বলে থামিয়ে দিলেন।

গবেষনাগার সম্পূর্ণ নিরব। গণু মোল্লা সবাইকে একটি গল্প শোনালেন। গল্পটা তিনি স্বজ্ঞানে মিথ্যা বলছেন।

তাই মনে মনে খোদা তাআলার নিকট ক্ষমা চেয়ে বার কয়েক তওবা কেটে ওয়াজের মতোই মিহি সুরে গল্প শুরু করলেন।

একদা হযরত বেলাল (রা তাঁর পায়জামা হারিয়ে ফেলছেন। পায়জামা না পেয়ে তিনি আকাশ পানে চেয়ে কান্নাকাটি করলেন। অবশেষে মনে হলো হুজুর (সা এঁর একটি হাদিস (মুসলিম হাদিস, খন্ড ০২, নং ১২১৬)।

ফজরের নামাজের পর সুরা ফাতিহা ৩বার, সুরা ইয়াসিন ২বার পাঠ করে উর্ধ্বাকাশে চেয়ে ৭ বার ফু দিলে হারানো জিনিস ফিরে পাওয়া যায়।

গল্প মিথ্যা বললেও তিনি হাদিস নিয়ে মিথ্যা বলেন না। তারপর হযরত বেলাল খুজে পেলেন তার পায়জামা। উপস্থিত সবাইকে ধমকের সুরে গণু মোল্লা বলেন, কন সুবাহানাল্লা!!

গণু মোল্লা খুব খেয়াল করে দেখলেন, গ্রামাঞ্চলে যখন তিনি ওয়াজ করেন তখন সেখানকার মানুষগুলো মুর্খ এবং অজ্ঞ হলেও তারা ছিলেন খোদাভীরু। নবী কিবা আল্লার নাম শুনলেই তারা কান্না জুড়ে দিত। এখানে গণু মোল্লা কোন কান্নার আওয়াজ তো পেলেনই না বরং কিছু ভাঙ্গা ভাঙ্গা ইংরেজিতে, বাজখাই কন্ঠে শুনলেন শুবআহাআনাআল্লা!!!

যেহেতু এখানকার সবাই ইহুদি/খ্রিষ্টান ছিলেন তাই ফু দেবার দায়িত্বটা গনু মোল্লার উপরই বর্তাল।

প্রত্যেহ ফজরের নামাজের পর গণু মোল্লা উল্লেখিত সুরাদ্বয় পাঠ করে ফু দিতে থাকেন। দিন যায়, সপ্তাহ যায় কিন্তু হারানো বিমানতো আর খুজে পাওয়া যায় না।

ওদিকে নাসা কর্তৃপক্ষ গনু মোল্লার আচরণে ক্ষিপ্ত, বিরক্ত। খায়, পরে, ঘুমায় তাও ভালো ছিল। কিন্তু সুযোগ পেলেই গণু মোল্লা কখনো নাসাকে, কখনো বুশকে, কখনো টনিকে গালি দিতেন।

কাফের, নাসারা, নাস্তিক, মুনাফিক, বেঈমান আরো কতরকমের গালি শুনতে শুনতে সবাই টায়ার্ড।

একদিন গনু মোল্লার গালির মাত্রা অতিক্রম করে গেলে নাসা কর্তৃপক্ষ গণু মোল্লাকে একটা বাসায় আটকে রেখে বাহির থেকে দিল তালা মেরে। দরজাটা এমন ছিল যে, ঘরের ভিতর থেকেই তালা খোলা যায়। গনু মোল্লার অজ্ঞাতসারে চাবিটা রাখা হয়েছিল তারই পাঞ্জাবীর পকেটে।

তিনদিন তিনরাত গণু মোল্লা চাবির জন্য কান্নাকাটি করলেন।

বাহিরে চেয়ে কান্দে, আকাশে চেয়ে কান্দে। কিন্ত চাবিতো আর মিলে না।

পাঞ্জাবীর পকেটে থাকা সামান্য চাবিটার সন্ধান যে জানে না, সে জানবে বিশাল আকাশে লুকিয়ে থাকা বিমানের সন্ধান?

কথা, কাজে, শাস্ত্রে, আচারে কোন মিল না পেয়ে প্যাদানী দিয়ে ভন্ড গনু গণু মোল্লাকে পাঠানো হলো দেশে।

দেশে প্রত্যাবর্তণ করেই গনু মোল্লা লোক সমাজে এই বলে প্রচার করে যে, নাসা কর্তৃপক্ষ তার প্রতি অনাচার করেছে, তাকে নামাজ পড়তে দেওয়া হয় না। এমনকি তাকে নাকি ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করার জন্যও বলা হয়।

তিনি তা না করাতে মারপিট করলো নাসা। সে তার পেটে-পিটে আঘাতের নীলাভ দাগ দেখিয়ে অনেক কান্নাকাটি করে দেশবাসীর কাছে বিচার চাইলো।

কত্তবড় সাহস, হুজুরকে পিডাইছে নাসা!! বক্রি সমাজ তখন প্রচন্ড আন্দোলনে আন্দোলিত।

নারায়ে তাকবীর ধ্বনীতে মিছিল হলো, গাড়ি ভাংচুর হলো, মন্দিরে আগুন দেওয়া হলো, বিদেশী দোতাবাসে বোমা ফেলা হলো। কি জানি কি ভেবে জাফর ইকবাল স্যারের কুশপুত্তলিকাও পুড়া হলো।



কিন্তু কোন কারণে হুজুরকে পিডাইছে তার প্রকৃত রহস্য কেউ জানে না। সবাই জানে হুজুর তার নোরানী তরিকায় বিমানের রহস্য খুজে বের করেছেন। বাড়তে থাকলো গণু মোল্লার অনুসারী....

ফেবুতে চাইয়া দ্যাখেন


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.