আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জলদস্যুর তান্ডব সাগরে

বঙ্গোপসাগরে জলদস্যুতা আগের চেয়ে কমলেও কঙ্বাজারের উপকূলীয় দ্বীপ মহেশখালী-কুতুবদিয়া সমুদ্র চ্যানেলে জলদস্যুদের তাণ্ডব রয়েই গেছে। এসব জলদস্যু নিয়ন্ত্রণ করছেন স্থানীয় সমাজের মুখোশধারী জনপ্রতিনিধি ও প্রভাবশালী কয়েকজন ব্যক্তি। এমনকি তাদের অত্যাচারে টোকেন ছাড়া সাগরে যেতে পারছেন না জেলেরা।

সূত্র জানায়, দীর্ঘ দিন ধরে মহেশখালী ও কুতুবদিয়া চ্যানেলে জলদস্যুদের তাণ্ডব কিছুতেই রোধ করা যাচ্ছে না। জলদস্যুদের সিন্ডিকেটের রয়েছে একাধিক আস্তানা।

ওসব আস্তানা থেকে চালিয়ে যাচ্ছে তারা দস্যুতা।

এসব জলদস্যুকে দিয়ে চলছে ডাকাতি, মাঝিমাল্লাদের অপহরণ, খুন, চোরাচালান, দস্যুতা, মুক্তিপণ আদায় ও টোকেনের মাধ্যমে চাঁদাবাজির ঘটনা। সাগরে মাতামুহুরী নদীর মোহনা মহেশখালীর সোনাদিয়া চ্যানেল ও নদীর মোহনা সনি্নহিত এলাকায় নৌযান নিয়ে চলাচলকারী জেলেরা অতিষ্ঠ হয়ে উঠছে। ফলে জেলে পরিবারগুলো সব সময় আতঙ্ক, উদ্বিগ্ন ও উৎকণ্ঠার মধ্যে থাকে। বঙ্গোপসাগরের বিভিন্ন পয়েন্টে অব্যাহত ডাকাতি ও চাঁদাবাজির কারণে সর্বস্বান্ত হয়ে অনেক জেলে এ পেশা পাল্টাতে বাধ্য হয়েছে।

বর্তমানে সমুদ্রে আন্তজেলা জলদস্যু গ্রুপের অন্তত তিন-চার শ সদস্য সক্রিয়, যারা প্রতিনিয়ত সাগরে বিভিন্ন মাছধরার ট্রলার ডাকাতি করে চলেছে। কক্সবাজার মৎস্য ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদের সভাপতি জয়নাল আবেদীন জানান, কঙ্বাজার, মহেশখালী ও কুতুবদিয়ার বোট মালিকরা সাগরের মাছ আহরণ করার জন্য ট্রলার পাঠিয়ে দ্বীপে ফিরে না আসা পর্যন্ত ডাকাতের কবলে পড়ার আশঙ্কায় থাকেন। জলদস্যুদের কবল থেকে ফিরে আসা একাধিক জেলে জানান, বিশেষ করে সোনাদিয়া, ঘটিভাঙ্গা, ধলঘাটা, মাতারবাড়ী, কালার মার ছড়া, চকরিয়া ও কুতুবদিয়া এলাকার একটি সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেটের মাধ্যমে এসব নিয়ন্ত্রণ করা হয়।

সূত্র জানায়, পুলিশের সোর্স পরিচয় দানকারী বেশ কয়েকজন ব্যক্তির সঙ্গে এ সিন্ডিকেটের যোগসূত্রতা রয়েছে। কক্সবাজার ফিশিং বোট মালিক সমিতি সূত্র জানায়, কালার মার ছড়া এলাকার একটি গ্রুপের সঙ্গে কুতুবজোম, ঘটিভাঙ্গা, সোনাদিয়া ও ধলঘাট এলাকার খণ্ড খণ্ড কয়েকটি দস্যু গ্রুপের মধ্যে সেল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে এসব কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।

কিছু দিন আগে এ সিন্ডিকেটটি মহেশখালী, কুতুবদিয়া, বাঁশখালী ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকার বেশ কয়েকটি মাছধরার ট্রলারে দস্যুতা ও মোটা অঙ্কের চাঁদাবাজি করেছে। ওই বাহিনীর সদস্যরাই সাগরে জেলেদের হত্যা করে নৌকার মাছ ও মালামাল লুটপাট এবং টোকেনের মাধ্যমে চাঁদা আদায় করছে। এ পরিস্থিতিতে জলদস্যুদের কাছ থেকে টোকেন না নিয়ে সাগরে যেতে ভয় পাচ্ছেন জেলেরা। সূত্র আরও জানায়, টোকেন বিক্রি করে প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা আদায় করে চলেছে ওই জলদস্যুরা। ডাকাতদের প্রতি মাসে বোটমালিক ও মাঝিরা ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা চাঁদা দিতেন।

কোনো মাসে চাঁদা দিতে না পারলে নেমে আসত নির্মম নির্যাতন। আর এ চাঁদার টাকা লেনদেন হতো মোবাইল ব্যাংকিং বিকাশের মাধ্যমে। ফলে জলদস্যুদের হাতে জেলে পরিবারগুলো সব সময় জিম্মি।

এ ব্যাপারে একাধিক ট্রলার মালিক জানান, নিয়মিত মাসহারা দিতে অপারগ হলে পরবর্তী সময়ে ওই ট্রলার সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া মাত্রই জলদস্যুদের কবলে পড়ে। জলদস্যুরা ট্রলারের ইঞ্জিন, জাল, আহরণকৃত মাছ, তেল ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি লুট করে নিয়ে যায়।

খালি ট্রলারটি ফুটো করে সাগরে ডুবিয়ে দেয়। ফলে কিছু মাঝিমাল্লা সাঁতার কেটে তীরে ফিরে এলেও অনেকে সাগরে প্রাণ হারান। অনেক সময় জলদস্যুরা মাঝিমাল্লাদের অস্ত্রের মুখে অপহরণের পর জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায় করে। এ ছাড়া এ চ্যানেল দিয়ে মিয়ানমার থেকে আসা বেল্ডার লবণ, বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বিদেশি মদ, সিরামিক পণ্য এবং এখান থেকে মিয়ানমারে যাওয়া, জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি, বিভিন্ন ওষুধ, চোরাই কাঠসহ নানা চোরাচালান নিয়ন্ত্রণ করছে এ সিন্ডিকেট। মিয়ানমারের বিভিন্ন রাজ্যের দস্যুদের সঙ্গে এদের মোবাইলে যোগাযোগ থাকায় সিন্ডিকেটের সঙ্গে বনিবনা না করে কোনো চালান পাচার হতে পারে না।

আর হলেও দস্যুরা এসব ট্রলার উপকূলে এনে মালামাল খালাস করে নেয়।

অন্যদিকে বঙ্গোপসাগরে জলদস্যুদের ভয়ে কক্সবাজার জেলার অন্তত ৫০ হাজার জেলে চরম আতঙ্কে জীবন বাজি রেখে সাগরে মাছ ধরতে যাচ্ছেন। মহেশখালী থানা সূত্র জানায়, পুলিশ এরই মধ্যে অভিযান চালিয়ে একাধিক জলদস্যুকে গ্রেফতার করেছে। বাকিদের গ্রেফতারে জোর তৎপরতা চলছে। জলদস্যুতা বন্ধে মহেশখালী চ্যানেলের আশপাশে জোরদার করা হয়েছে পুলিশের টহল।

কক্সবাজার ফিশিং বোট মালিক সমিতির সভাপতি মুজিবুুর রহমান চেয়ারম্যান জানান, মহেশখালী ও কুতুবদিয়া চ্যানেলে বাঁশখালী ও মহেশখালীর ডাকাতরা বেশি তাণ্ডব চালায়। এদের রোধ করা না গেলে মাছ আহরণ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

এ ব্যাপারে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার আজাদ মিয়া জানান, গত বছর থেকে এ পর্যন্ত জলদস্যুদের বেশ কয়েকজন সর্দারকে অস্ত্রসহ আটক করে জেলে পাঠানো হয়েছে। এ কারণে জলদস্যুতা কমে এসেছে। সম্প্রতি মহেশখালী ও কুতুবদিয়া চ্যানেলে জলদস্যুতার খবরও পুলিশের কাছে রয়েছে।

এসব দস্যুদের শীঘ্রই আইনের আওতায় আনা হবে।

 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.