আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমি (একটি ফেসবুকিয় ধারাবাহিক উপন্যাস)



অতৃপ্ত বাসনা থেকে অনেক কিছুর উদ্বেগ হয়। তখন জীবনের ইতিটা নির্ণয় করাটা সহজ হয়ে ওঠে না। আমি পেশায় ডক্তার। কেউ বলে মনো চিকিৎসক, কেউ বলে পাগলের ডাক্তার। কত শত রোগীর মনের রোগ নির্ণয়ের চেষ্টা করি দিন রাত।

কিন্তু নিজের মনের রোগটা সারানোর মত কোন ঔষুধ খুজে পাইনি।
ছোটবেলায় স্বচ্ছলতা খুজেছি। এখন সুখ খুজছি।
আট দশজন গ্রামের ছেলের মত কলেজের পাট চুকিয়ে ঢাকায় এসেছিলাম। ভর্তি হলাম মেডিকেল কলেজে।

কষ্ট করে গ্রামের লোকজন ধরে লজিং মাস্টার হলাম এক বাড়ীতে। কাজ ছিল তার তিন ছেলে মেয়েকে পড়ানো। তিনটাই ছিল একেবারে শয়তানের হাড্ডি। গাও গেরামের মানুষ। তিনবেলা ভাত আর শাক সবজি খেয়েই দিন কেটেছে।

ঢাকায় এসে লজিং বাড়ীতে সকালে নাস্তা দিত পাতলা দুটি রুটি, আলুর ভাজি আর এক কাপ চা। চায়ে চিনি না হলেও গরম পানি চুক চুক করে পান করতে হত। তারপর দুপুর তিনটায় ভাত। তাও মাপামাপা। রাতে পোলাপাইনদের পড়ানো।

পড়াতে পড়াতে চোখে ঘুম জড়িয়ে আসত। এত রাত পর্যন্ত জেগে থাকার অভ্যাস ছিল না। গ্রামে আমাদের জন্য যা মধ্যরাত ইট সুরকি ঘেরা ঢাকায় সন্ধ্যা। কিছু বলার নেই। টিকে থাকতে হলে সইতে হবে।


জীবনের এই দিকটা থেকে শুরু করলে শুরুটা হবে না। আমি গৃহস্থের ছাওয়াল। বাপ দেনার দায়ে জমি জমা খুইয়ে তিন বেলা অন্ন জোগাতে কামলা হয়ে খেটে গেছে। আর মা ছিলেন মমের পুতুল। চাউল আর শাক পাতা জোটাতে জোটাতে ছটফট করে সারাদিন শেষ।


মঙ্গা এলাকার মানুষ। না খেয়ে খেয়ে আমার খাবারে যে অরুচি হয়েছে তা জাক্তার হয়েও সারাতে পারিনি। এখনো ভাল মন্দ খেলে পেটে অসুখ হয়। বিদেশে গিয়েও বাঙাল বলে এ ঠাট্টাটা আমার হজম করতে হয়েছে। জমি নাই।

বাবা কামলাগিরি করেও খাবার জোটাতে হিমসিম খেত। তবুও আমার লেখাপড়া হল।
কলেরায় এক রাতেই বাবা মারা যায়। টাকার অভাবে জেলা হাসপাতাল পর্যন্ত বাবাকে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি। বাবা মারা গেল মা বেশি দিন টিকলেন না।

আমিও আব্বার সঙ্গে বর্গা দিতে যেতাম। আমার স্কুলে এক শিক্ষক ছিলেন। হিন্দু স্যার। আমাকে এত ভালবাসত কেন লোকটা বুঝতাম না। তিনিই আমাকে এ পর্যন্ত ঠেলে ঠেলে পাঠিয়েছেন।

তিনি তার বাড়ীতে আমাকে জোর করে নিয়ে গেলেন। তার বাড়ীর রান্না ঘর পরিস্কার করে আমায় থাকতে দিয়েছেন। মুসলমানের ছেলে। স্যার আমাকে পড়াতেন। বাংলা, ইংরেজি, অংক।

এভাবেই পার হলাম স্কুল, কলেজ।
আমরা দু’ভাই এক বোন ছিলাম। ভাইটা আমার ছোট ছিল। তখন বয়স কত সাত কিংবা আট। মিঞা বাড়ীর পোলার সঙ্গে খেলছিল।

ওই বাড়ীর লোকজন ঢাকা থেকে আনা দামি খেলনা খুঁজে পাচ্ছে না। দোষ পড়ল আমার ভাই খেলনা সরিয়েছে। চুরির অপবাদে জুটল বেদম মাইর। ঘরে এসে কাউকে কিছু বলল না। রাত থেকে বমি শুরু হল।

চুরির অপবাদ না, মাইরের আঘাতে ভাইটি মারা গেল জানি না। আমাদের ছাপোষা জীবনের মূল্য নির্ণয় করাটা কঠিন। একটি খেলনার চেয়েও দাম কম। আর একটা বোন ছিল। বোন আমার বড়।

বাবা নাম রেখেছিলেন চন্দ্রা। বাবা বলতেন তার বড় মেয়ের নাম রাখার পেছনে ছোট্ট ইতিহাস আছে। একবার এলাকায় যাত্রাপালা এসেছিল। ওরা পুরো এক মাস গ্রামে পালা দেখিয়েছে। বাবাও পালা দেখতে যান।

দেবদাস। ওই পালায় দু’জন নায়িকা ছিল পারু আর চন্দ্রামুখী। চন্দ্রামুখি রূপ তার অভিনয় দেখে বাবা যৌবনে মাতয়ারা হয়েছিলেন। সেই চন্দ্রামুখীর নাম থেকেই তার মেয়ের নাম রাখেন চন্দ্রা।
.......................(চলবে)


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.